দশটি কবিতা
ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ
ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ
কাঁচের ঘরে অ্যালুমিনিয়ামের আকাশ
কাঁচের ভেতর ঘর,
ঘরের ভেতর স্বপ্ন,
স্বপ্নের ভেতর ফাটল—
এক ফোঁটা শব্দেই ভেঙে যায় অস্তিত্বের আয়না।
মাথায় ঝুলে আছে অ্যালুমিনিয়ামের আকাশ—
ধাতব নিস্তব্ধতায় ঘষে ঘষে
রক্তাক্ত হয় নক্ষত্রেরা,
পাখিরা উড়ে না, শুধু ডানা ঝুলে থাকে বিজ্ঞাপনের বেলকনিতে।
আমরা বাঁচি —
ভঙ্গুরতার ভেতরে দৃঢ়তা নিয়ে,
দৃঢ়তার ভেতরে ভঙ্গুরতা হয়ে।
আত্মাহীন প্রেম ও পাথরের শ্লোক
নোনা বাতাসে জমে থাকা কালের
কসটাফসিল গলতে গলতে,
ভোরের আগে একটা ল্যাম্পপোস্ট
হেঁটে যায় গুহাচিত্রের দিকে।
মেটাভার্সের গ্যালারিতে প্রতিধ্বনি
তোলে আদিম হাহাকার -
চোখে তার পাথরের ভাষা,
বুকে আগুনের প্রথম শ্লোক।
সময়ের ঘোড়ায় বদলে যায় ধর্ম, রাষ্ট্র,
স্মার্টফোন, বোমারু বিমান; আর আত্মাহীন পোস্টমডার্নি প্রেম।
পৃথিবী এখন আয়নার বদলে আগুনে মুখ দেখে—
ঘুম না আসা জন্মপূর্ব চিঠি
আমি ছিলাম এক অদ্রব ধূমজ ঘুমের নিচে চাপা পড়ে থাকা চিৎকার।
সে চিৎকার শব্দ হয়ে ওঠেনি,
হয়ে উঠেছিল এক রন্ধ্রহীন বিস্ফোরণ—
ফেটে পড়েছিল জলশূন্য গর্ভের নিষ্পলক দেয়ালে।
সেই থেকে আমি ঘুমালে জেগে ওঠে এক মৌন শোক!
সমুদ্রের চিঠি
শঙ্খ কানে দিলে
সমুদ্র এক অদৃশ্য শ্বাস ফেলে—
লোনা হাওয়ায় ভেসে আসে
ভাঙা স্বপ্নের নীল কালি,
কিন্তু আমার দরজায়
কখনো থামে না সেই চিঠিওয়ালা ঢেউ।
শূন্যতার ওজন কত?
মাকে ছুঁতে গেলেই
ফিরে আসে নীরবতার শূন্য হাত।
বাবার কবরফুল শুকিয়ে গেলে বুকের ভেতরের মাটি হয়ে ওঠে জমাট পাথর।
অধরা স্বপ্ন পুড়ে যায় অদৃশ্য আগুনে—
বুক জুড়ে দগদগে ক্ষত।
জীবনের মহাশূন্যে শূন্যতা শুধু অনুপস্থিতি নয়;
সে হলো অদৃশ্য পাহাড়, বুকের ভেতর চাপা ভার।
শূন্যতার অগণন ব্যথায়
নিজের হৃৎস্পন্দনও অচেনা লাগে হঠাৎ!
মোহঘূর্ণির চতুর্থতর স্পর্শ
আমরা একে অপরকে ছুঁই না,
আমরা একে অপরের প্রতিসরণে লেগে থাকি,
ঠিক যেন দুই ভিজে ছায়া—
পৃথক, অথচ একই অলীক জল।
তোমার ঘামে আমার ঈশ্বর হাঁটে,
নাভির নিচে একটা ত্রিমাত্রিক প্রার্থনা ফোটে,
যা তুমি উচ্চারণ করলেই
পৃথিবী থেমে যায়,
আর কেবল তুমি থেকে যাও—
একটা কাঁচের ভিতর ছটফট করতে থাকা নামহীন লালসা।
গোধূলি
সূর্য ডোবে না—
কেবল সরে যায়
আমাদের চোখের বিশ্বাস থেকে
আঁধারে ছড়িয়ে পড়ে
রক্তরঙের অনুচ্চারিত শোক,
পাখিরা ফেরে,
তাদের ডানায় জড়িয়ে থাকে—
দিনের শেষ প্রার্থনা।
ভেতরে আলো–ছায়ার ক্ষণিক নাট্য,
অতঃপর দিন যেভাবে মিশে যায় সন্ধ্যার মুখোশে
সেভাবে ছায়াও একদিন ছেড়ে যাবে তোমাকে-আমাকে।
বিনয় মজুদারকে উৎসর্গিত পিয়াস মজিদের কবিতা পড়ুন এখানে
poem by p.francis click here
ড. আলী রেজার প্রবন্ধ পড়ুন এখানে ক্লিক করে
মোহাম্মদ জসিমের ভিন্ন রঙের কবিতা পড়ুন এখানে
জিল্লুর রহমান শুভ্র'র ভিন্ন স্বাদের কবিতা পড়ুন এখানে
ওপার বাংলার বিখ্যাত কবি রবীন বসুর কবিতা পড়ুন ক্লিক
ওপারের কবি তৈমুর খানের কবিতা পড়ুন এখানে
নিয়তি
প্রতিদিন নিজেকে কফির কাপ থেকে চুমুক দিয়ে খাই,
চিনির বদলে ফেলে দিই কিছু ভুল সিদ্ধান্ত।
তবু সকাল নামে—
একটা পরিত্যক্ত ডায়েরির মত,
যার প্রতিটি পাতায় গতকালের অনুশোচনার জলছাপ।
জীবনের দরজা খুলে দেখি
এক টেবিলভর্তি সাদা কাগজ আর একটা ভাঙা কলম—
লেখা যায় না কিছুই,
তবু প্রতিদিন সেখানে জন্ম নেয় অদৃশ্য চুক্তি,
যাতে সই করি নিজের অজান্তেই।
অস্ফুট দেহজ জ্যোৎস্না
রাতের সবটুকু নীরবতা যখন জমে ওঠে তোমার কলারবোনে,
আমি তখন শব্দ ছাড়াই উচ্চারণ করি নিজের অনুপস্থিতি।
তোমার দেহে আলো পড়ে না—
তবু মায়া জন্ম নেয় গোপন প্রার্থনার মতো।
আমি ছুঁই না তোমাকে,
আমি স্পর্শের আকাঙ্ক্ষাকে ধরি—
যেখানে চামড়া নয়, লুকিয়ে থাকে লজ্জাহীন আলো,
যার উৎস বুঝে ওঠার আগেই নিঃশেষ হয় রাত।
তোমার নাভিমূলের পাশে কোনো ঈশ্বর নেই—
আছে কিছু পুরোনো কাঁপুনি,
যেগুলো বহু জন্ম আগের লজ্জাকে জয় করে নবসৃষ্টির আনন্দে!
একটা নদী চেপে ফেলি
রেলিংয়ে ইজি চেয়ারটা এখনো কাঁপে—
কেউ বসে না, তবু বিকেলে হঠাৎ দুলতে থাকে যেন তুমি এইমাত্রই উঠে দাঁড়ালে!
জানালার পর্দা ওড়ে না,
তবু হাওয়ার ভেতর তোমার হাঁচির শব্দ ঘুরে বেড়ায় উঠোন জুড়ে ।
ভাতের গন্ধ এলে,
ছুটির দিনগুলোতে আমার বুকের মধ্যে এক পুরোনো দুপুর চিৎকার করে ওঠে—
কানে বেজে ওঠে ঝংকার,
"তাড়াতাড়ি আয় রে বাপ, তোর মা খাবার রেডি করে বসে আছে।"
জলের গ্লাস এখনো রাত জেগে থাকে টেবিলের কোণে—
যদি কোনোদিন তুমি জেগে ওঠো,
যদি কখনো তোমার তৃষ্ণা পায়।
আমি বরং শব্দে শব্দে ভেঙে যাচ্ছি—
যতবার ‘আব্বা’ ডাকটা বুকের মধ্যে উঠে আসে,
আমি একটা নদী চেপে ফেলি দাঁতে, ঠোঁটে, চোখে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks