দশটি কবিতা।। মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী।।10 poems by habibullah helali--kuasha






দশটি কবিতা
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী

বেদনার ছায়াগুচ্ছ

বিষন্ন মাছের জলকেলি প্রতীক্ষা কিংবা
ভাঙন-বিলাসী নদীর গল্প শোনাতে এসো না কবি
ভালোবাসায় প্রাপ্তির পূর্ণতা নেই বহুকাল
প্রতীক্ষার স্রোতেই ভেসে গেছে স্বপ্নেরা

আমি এখন রোজ বিকেলে প্রেম-চূর্ণ কবিতা নিয়ে  
রাধাচূড়া পাতাদের কাছে যাই
খোদ নদীর কাছেই বিক্রি করি পংক্তির দুঃখ

প্রণয়ের ঠোঁট মৌনব্রত; আহা আয়ুপোড়া পংক্তি
পংক্তিতে পংক্তির বিপুলা ঢেউ
ঢেউগুলো মেখে রাখি চোখের পাতায়
আর যাপিত কবিতার পাঠ নিই  
নর্দমা-বিলাসী ইঁদুরের কাছে
ভাবনার নির্ঝরে দুচোখে লিখে যাই বেদনার ছায়াগুচ্ছ...।



হাওড় কিশোরীর ইনবক্সে জমা জল

হাসনের দীর্ঘশ্বাস এখন ভয়েসনোট
পাঠানো হয়, শোনা হয় না
পাড়ার ছাপরা ঘরে
প্রেম-মজে
গুগল ট্রান্সলেট করা
ভুলবাল ইংরেজিতে
আত্মা বোঝে না দেহের ভাষা
তবুও সহবাসে জন্ম নেয় ব্যথা

করিমের গানের ছায়া পড়ে
ভিজে ওয়াই-ফাই
রাউটারে—সিগন্যাল নেই
সাড়া নেই জ্যোৎস্নালোকের
অথচ মানুষ প্রার্থনায় নিঃস্ব

নদীর টান? সেটাও এখন কনটেন্ট
জীবনের উৎস হয়েও
এলগোরিদমে হারায়
মানবতা হাওড়ের চুলায়
সিদ্ধ ভাত—জন্মায়
পুড়ে যায়, তবু খেতে হয়

লালনের মরমিয়া রিল ভিডিওতে নেই
মুছে যায় প্রতিটি স্ক্রল-স্পর্শে
তবুও সেই ইনবক্সে
হাওড় কিশোরী অপেক্ষায়
একটি বার্তা
অদৃশ্য নূরের মতো নীরব
অথচ উপস্থিত—অসীমের মতো...


মা: নকশিকাঁথার আশ্রয়

মা এক নকশিকাঁথা
ভাঁজে ভাঁজে শীতের রাত জেগে থাকে
আঁচলে তাঁর মাটির গন্ধ
কাঁচা ধানের হাসি গায়ে মেখে
চুলের খোঁপায় লুকানো শিউলি ফুল
ভোরবেলার প্রার্থনার মতো
মা হাঁড়িকুড়ির গানে গাওয়া
বিধ্বস্ত আশীর্বাদ
হাওরের জলে পাতার নৌকা হয়ে
ভেসে আসে তাঁর চরণচিহ্ন

মা থাকেন
বর্ণপরিচয়ের প্রথম ‘অ’-এর মতো
অদৃশ্য অথচ প্রাজ্ঞ
রান্নাঘরের ধোঁয়ায়
গন্ধে মিশে থাকে মেঠো আলুর গল্প
মা বসেন উঠোনে
চালকুমড়োর ছায়ায় জীবন বুনতে
মায়ের গলা যেন চরণামৃত
ঝর্ণার ধারে শোনা ধানের সুর
আমি যখনই হারিয়ে যাই
মা হয়ে ওঠেন ফ্ল্যাশলাইট

মা শুধু রক্তের সম্পর্ক নন
এক নীরব ভাষা
যার ব্যাকরণ শিখে মানুষ হৃদয়বান হয়...।



কাদার মানচিত্রে মেঘচিহ্ন

কাদার মানচিত্রে ধরা পড়ে হাঁটার ইতিহাস
প্রতিটি ধ্বংস
একটি জন্মের পূর্বাভাস

জল চোখে রাখে পুরাতন গান
ভাষাহীন সুরে বাজে নরম বিষণ্নতা
হাসিমুখ?
তা এক গোপন ক্লান্তি
যা আলোচিন সময়ের খামে পৌঁছায় না কখনো

মেঘ কেবল মেঘ নয়
তা এক চলমান সাক্ষ্য
যেখানে হারিয়ে যাওয়া মুখ
নিজেকে খুঁজে ফেরে জলরেখার ভিতর...।


অকবিতার সভ্যতা: অস্ত্রভাষ্যের জন্মচক্র

.
আকিকা হয়নি সভ্যতার
রক্তপাতে হয়েছে নামকরণ
মুখোশের ভিতর মুখোশ  
ভেতরে—
এক শূন্য আলিঙ্গনে জমে থাকা ভালোবাসা

সংস্কৃতি জন্মেছে শূলে চড়ে
আর
ধ্বংসের স্তন্য থেকে শিখেছে উচ্চারণের কলা

আমি?
আমি এক কবিতা
আত্মরক্তে লিখি মানুষের নাম...

২.
আমার কণ্ঠমুদ্রা বাজেয়াপ্ত
তবুও আমি
তালিকা বানাই চিৎকারের
তারপর
জিহ্বার মঞ্চে নামাই
একটা শুদ্ধ চিৎকার
যার ব্যাকরণ রাষ্ট্রের সঙ্গে মেলে না

তুমি তখন বর্ণান্ধ পতাকায় জড়িয়ে বলো
কবিতা নয়
এটা রাষ্ট্রদ্রোহ।


.
আমার জিহ্বা নেই-
তবুও কেউ লিখে দেয়
দিনপঞ্জির পেছনে আমার উচ্চারণ

মুখো মুখো হাওয়ায়
আমি চিনি না কণ্ঠ
শুধু
একটা রিংটোন বাজে
যেন প্রার্থনা
আধ-ডিলিটেড কোনো জ্যোৎস্নার নাম

তুমি বলেছিলে
শব্দহীন হলেই মানুষ চুপ হয় না
সে কাঁদে ইমোজিতে...।


.
আমরা বলি না কিছু
শুধু চেয়ে থাকি
ভেঙে যাওয়া স্ক্রিনে ঝুলে থাকা মুখের দিকে

কোথাও লেখা নেই আর
‘আমি’
‘তুমি’
‘আমরা’
শুধু একটা লোডিং চিহ্ন, চিরকাল

নির্বাকদেরও একদিন
জন্ম হয় নিজস্ব স্বরছায়ায়
সেদিন
একটি ‘শব্দ’
খুঁজে পায় তার
মৃত বানান...।



ঘ্রাণযাপন

যাদের নাম দিয়েছিলাম শান্তির ছায়া
তাদের করতলে ছিল
ভাঙা পিঞ্জরের ছুরি

আসলে এরা চেতনার নপুংসক
উত্তর-উপনিবেশ কালেও
যারা জল ঢেলে
আত্মজীবনী ধুয়ে ফেলতে চায়

তারা জানে না
আগুনে স্নান করলে ছায়াও পুড়ে যায়;
আর সেই ছায়ার ঘ্রাণ
পৃথিবীর বাতাসে জমে থাকে
জবানহীন পাখির মত

এই যে এত মুখোশের উল্লাস
গণিকার ভ্রু-পল্লব
পুরনো নুনের স্বাদ
লেপ্টে আছে জিহ্বায়

একটি থুথু গড়ায়
কাঠপিঞ্জরে জন্মানো ফুলের দিকে
সেই থুথু নয় ঘৃণা
বরং ইতিহাসের লালিত প্রতিবাদ

ভোরের আগে যে ডাহুক ডাকে
তার কণ্ঠে রক্ত জমে থাকে
যতদিন না সত্য
নিজের ছায়া থেকে উঠে দাঁড়ায়

দাগ মুছে ফেলা যায়
তবুও—
ঘ্রাণ রয়ে যায় সভ্যতার শ্বাসে...।



ইস্পাতের কান্না

সাইফুলের চাকা থেমে গেলে
ঘুরতে থাকে রাষ্ট্রের ঘূর্ণিপাক
বুলডোজারের দাঁতে গিলে ফেলে
একটা সংসার
একটা স্টিয়ারিং
এক শিশুর দুধপাত্র

নোটিশ পড়ে
নেই কারচুপি
আছে শুধু
ব্যাটারির আয়ু আর
ঘামে ভিজে ওঠা ঋণের ছাপচিত্র

প্রতিদিন
একটি স্বপ্ন নিষিদ্ধ হয়
একটি নীতির নামে
প্রার্থনার বদলে
রুটির পাশে রাখা থাকে
পেট্রোলঘ্রাণে পোড়া কান্না...

--

with thanks & regards____

image

দ্বীপ সরকার

editor of kuasha

+88001719751792

kuasha.mag@gamil.com

https://mkuasha.blogspot.com/

facebook

twitter

linkedin



Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন