গুচ্ছকবিতা
মাহফুজুর রহমান সৌরভ
পোকামাকড় জীবন
যাপনের শাসিত বোধ, বিনির্মানে হেঁটে যাই
বহুমাত্রিক স্বপ্নতাড়িত ঘোরলাগা
সংসারে;
পরিত্যক্ত পচাঁ ফলের খোসার মতো
ধুলোবালি কণা ছত্রাক জমে
সনাতন মৌসুমে হয়তো কিছু পোকামাকড় জন্ম নিয়েছে
পচাঁ ফলের এই খোসার জন্ম ঋণ!
উর্ধ্বমুখী জাগরণে পোকামাকড় কি কখনো জানবে?
মানুষ কি মানুষ দ্বারা পিষ্ট হতে হতে
তারাও রেখে যায় ঋণ!
ক্রমশ দাহকাল এ পথের নিশানা
আজন্মই অন্ধগলিতে মিশে গেছে
পরাবাস্তব মাতাল পথিকের পা ছুৃঁযে...
যেখানে বেওয়ারিশ কুকুরের আনাগোনা
খুবলে খায় প্রতিটি মানুষের
পোকামাকড় জীবন।
শূন্য দশমিক সাত
যেমন চাঁদ তার চুমু দিয়ে যায়
রাতের ললাটে -
তেমনি আমিও হাত বাড়িয়ে দেই
শেষ ভোরের তারা পর্যন্ত।
ঘোর আনন্দে এতটাই ম্লান হয়েছি
পোয়াতি রাতের ঠোঁটে - চাঁদের চুম্বন!
গত জন্মের গ্লানি মুছে - ফের পূর্ণজনম
তুমি তোমার অন্তর চক্ষু দিয়ে
চেষ্টা করো
যার মধ্যে তুমি আমাকে খুঁজছো
আর আমি নিজেকে হারিয়েছি
জন্ম - জন্মান্তরে
সেই আশ্রয়স্থল যেখানে আমরা
এখনো খুঁজে পাচ্ছি না তাকে
নিঃসঙ্গ, সম্পূর্ণ নির্জনে দ্যাখো এবং আমি এখনও ... তোমার জন্য অপেক্ষা করছি...।
থিয়েটার
মানুষের মধ্যে সর্গ ও সুখ মিথ্যে নয়-
শুধু নিজের অহমিকায় পরিত্রাণের ধ্বংসে মানুষে মানুষে প্রজ্ঞাপন জারি করে
মহিমান্বিত আদম ভুলে গিয়ে চিরকাল হারিয়ে যায় মৃত্যু ও বিষাদ; যন্ত্রণায়
নিজের ভাগ্যে নির্মাণ করে বেদনার দলীল
উন্মাদের মতন দুঃস্বপ্নে হারিয়ে যায় কালান্তরে;
শান্তির উপাসনা উগরে দেয় আজন্ম পাপ
জন্মান্তরের পাটাতনে দাঁড়িয়ে বহুকাল- অন্ধকার ভুলে যায় মানুষ
প্রণোদিত এই জন্ম মৃত্যু বায়ুশূন্যর মানুষ
দীর্ঘ পর্যটন শেষে ভুল কীর্তন আর পাপ পূর্ণ ঋণে
সুখ ও সর্গের অসম সঙ্গীত ঘোরে হারিয়ে যাবে নির্ণিমেষ।
অন্তঃসারশূন্য নির্বোধ মানুষ, মানুষ বোঝে না
শ্বাশত সুখ ও সর্গ নিজের দৃশ্যপট
আর আয়ুষ্কাল মাত্র একটা থিয়েটার।
ভগ্নাংশ
জপমন্ত্র থেকে খসে পড়ে বহুরূপী মুখোশ
সময়ের বিবর্তনে ফিকে হয়ে যায় -
দুর দিগন্তের স্বপ্নের বাতিঘর;
আমাদের অভ্রভেদী কন্ঠ সযত্নে
শূন্যতার অমূল্য উচ্ছ্বাসে থেমে যায়।
শতাব্দীর নাভি হতে বহুবর্ণের প্রত্যাশা
গিলে খায় আততায়ীর মুখ ;
আটপৌরে বন্দনা শেষে আবার খুঁজে পাই
বিচ্ছেদ মুহূর্ত ভগ্নাংশ জীবন
বিনীত মার্জনা শেষে ফিরে আসুক
প্রীতি সম্ভাষণ!
বহুমুখি বিশ্বাসে প্রজ্জ্বলিত হোক
আমাদের সার্বভৌম সাম্রাজ্য।
ড.আলী রেজার প্রবন্ধ পড়ুনঃ এখানে ক্লিক করুন
ইমদাদুল হক মিলনের নুরজাহান নিয়ে প্রবন্ধ পড়ুনঃ এখানে
নিজের সঙ্গে নিজের দেখা
নিজের সঙ্গে নিজের দেখা
আমি সত্যিই বোকা!
নিজের সঙ্গে নিজের আড়ি করে
কতদিন হয় আয়না দেখিনা।
নিজের 'আমি'টাকে আজও দেখা হয় না।
অহর্নিশি নিজের ঘরে নিজের বাস হলেও
দেখা অদেখার মাঝে শুধু মায়াকান্না
পঞ্চতত্ত্বের ভেল্কী সেজে ধর্মতলায়
অদেখা হয় ভ্রান্ত মিছে
আমার 'আমি'কে পুষে রেখেও
স্বরূপে দেয় না ধরা অদেখা 'আমি'
অনন্তরুপ ধারন ছাড়া হয় কী বোকা!
নিজের সঙ্গে নিজের দেখা।
অবশেষে আমার সত্তা যে ভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে
দগদগে সাদা ক্লোজআপ নির্জাস
নিদ্রাহীন রাতের ফকফকা ঝুলন্ত চাঁদের মতো
বিশুদ্ধ চেতনার পরহেজগার মুমিনের তসবিহ দানার মতো যে ভাবে বিচ্ছুরণ ছড়ায়...
জাগতিক নেভিগেশন।
আশ্চর্য জলছবি
শব্দের রানওয়ে জুড়ে এখানেই থেমে যায়
তোমার আমার গোপন ভূমিকা
তথাপি তুমি আমি ভেঙেছি বৃত্তের খোলস
ঐশ্বর্যময় অবনত জলের বিহারে..
তোমার অরণ্য বীথি বুক ছুঁয়ে
খুঁজে পাই পৃথিবীর আশ্চর্য জলছবি
প্রকৃতির এ নিগুঢ় রহস্য ঘেটে
আমরা হেটে যাই মোমের স্বভাবে
জলবায়ু উষ্ণতায় সময়ের যৌথ খামারে।
রুপালী জ্যোৎস্নার অভ্রভেদী মায়াজাল
ঘিরে রাখুক আমাদের সমতল বন্ধন
জলের সমাহার
অভিবাদন তোমাকে শব্দমন্ত্র গেঁথে দিলাম
আমার গৃহস্থলি কসরৎ দেখে
কি অবাক কান্ড!
তুমি সূর্যরঙা হয়ে উঠো।
বিবর্তনের মানুষ আমরা
কে জানে কত রাত স্বপ্নেের তাঁত বুনে
একটা প্রার্থনা সকাল ফিরে আসবে
বহুকেল ধরে রাত্রির শরীর বেয়ে
দর্শন হয়েছে চেটে খাওয়া কুকুর স্বভাবের মতো
কিছু বিবর্তনের মানুষের সাথে
আহা! মানুষ যুগধর্মে পাল্টে নিয়েছে
কুকুরের স্বভাব
সবুজ দু হাত চেটে খেতে খেতে
গিলে খায় আরণ্যক পৃথিবী
শেকড়ের মাটি খুঁড়ে পুতে রাখে
উত্তরপুরুষে... স্বপ্নভূগোল।
মানুষ শূন্য গোলকে ছুটছে অনিঃশেষ
দৈবাৎ ঘূর্ণিপাকের অতলে হারিয়ে যায়
প্রতিহিংসার পতনে
আমরাই চেটে খেতে খেতে
আলোকে গিলে ফেলি
মানুষ মানুষকে নিক্ষেপ করি আস্তাকুড়ে
প্রোথিত হই অন্ধগহব্বরে।
যোগ বিয়োগ
মধ্য রাতের কোন একটি স্বপ্নে
আমি রবীন্দ্রনাথ নেপোলিয়ন নেলসন ম্যান্ডেলা
মাঠের এক কোণে বসে গল্প করছি যাওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথ বলে গেলেন
মনুষ্যত্বের শিক্ষাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন
বলে উত্তর দিকে চলে গেলেন
নেলসন ম্যান্ডেলা বললেন সম্পন্ন করার আগে সব কিছুই অসম্ভব মনে হয়
কোথায় শিক্ষিত জাতি তিনি চলে
গেলেন দক্ষিণ দিকে
নেপোলিয়ন বললেন তার বীরত্বের কথা।
তিনি চলে গেলেন পশ্চিম দিকে
আমি কিছুক্ষণ একা দাঁড়িয়ে রইলাম।
অট্টহাসিতে পূর্বদিকে হাঁটতে
মাহফুজুর রহমান সৌরভের কবিতা দুর্দান্ত।
উত্তরমুছুনকবিকে অভিনন্দন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks