দশটি কবিতা
সাব্বির আহমাদ
বিসর্গ
ম্যারিগোল্ড
মনের কথা মনের মধ্যে গেঁথে রয়।
আমার কোনো দেরাজ নেই। নেই চিঠি রাখার খাম।
যতটুকু ছিলো ইতিকথা তা ভুলে আমি এখন নিঃস্ব।
ফুল চিরকাল তার সৌরভ নিয়ে ছুটে অর্থের পিছনে।
মোহের পিছনে। আর বসন্তে বসন্তে প্রেমিকাদের খোঁপায়
যে গুঞ্জন ওঠে মালার; মৌতাত ঘ্রাণের;
তা তুমি বলতে পারো একটা অর্থ লোভী ফুল;
ফুটপাত থেকে এক জোড়া পিপাসিত চোখ,
কামার্ত হৃদয় বেচে;
উড়ে বসেছে কোনো মিথ্যে চূড়ার প্রাসাদে।
মিথ্যে বন্ধন
মায়ার পালক
কোলাহল থেকে পালিয়ে একটা ছায়া নিথর হয়ে পড়ে আছে। এখানে নিরবধি ধ্যান ভঙ্গ করে একটা জানালা। তার কপাট বেয়ে ঝুলছে বেতাপ এক গুচ্ছ দুপুর।
চোখে, চোখে চোখ পড়লে —
শুনি পাঁজরের ভিতর গেয়ে ওঠছে এক নীলকন্ঠ মানব;
যার কন্ঠে বেদনার গান। এমন আনচান করা তার সুর, এমন দগ্ধ বিঁধুর যেন লক্ষ লক্ষ মায়ার পালক উড়ে যাচ্ছে কোথাও। উপশম ঘটে হৃদয়ে। নিভৃতে উপশম ঘটে মন ও মগজে। আর প্রেমের ছলে বারবার ভেঙে পড়ে বুকের ভিতর সযত্নে গড়া ওঠা মোহের প্রাসাদ।
তোমাকে মনে পড়ার পর
তোমাকে মনে পড়ার পর,
ধরো একটা অনামিকা ফুল।
রাত্রের নিগ্রহে;
অসীম এক ব্যথার বোঝা কাঁধে নিয়া
সারাক্ষণ ঝইড়া পড়তেছে।
অপহরণ
সে হয়তো ডুবে মরার ভান জানতো।
মাঝে মধ্যে এমন আরোহী চোখে তাকাতো ;
মনে হতো একটা জোয়ার ভাঙা ঢেউ সমস্ত ব্যকুলতা
নিয়ে আছড়ে পড়ছে বুকে।
ফুটফুটে জোছনা রাতের দৃশ্যরা অপহরণ করতো আমায়। দূরের দাঁড়িয়ে থাকা একটা পাহাড় ক্রমশ নূজ্ব্য হয়ে
বলে যেতো ; মৃত্যুর জন্য একটা প্রহর ভিষণ ভাবে থেমে আছে এখানে। আর নগ্ন পায়ে বিছিয়ে আছে তার নরোম বিভ্রম হাসির ঢেউ। তুমি অন্ধ ও বধির। তুমি অবশ ও ব্যথিত। তুমি ; তুমি এখানে এসো। এবং উজাড় করে খুলে দাও তোমার বেবাক বিতৃষ্ণার গুঞ্জিত হাহাকার ।
সে হয়তো অভিনয়ও জানতো।
মাঝে মধ্যেই এমন ভাবে খুলে দিতো পাঁজরের হাড় ;
দ্যাখতাম সেখানে একটা ভিষণ একাকী এক ফুল —
দ্রোহের অনলে মগ্ন হয়ে পুড়ছে।
পাখির ফসিল
উজানে একটা খরস্রোতা নদী নিঃশেষ হয়ে গ্যাছে। ক্রমশ ধাবমান হাওয়ার পিঠে, কোথাকার এক ভুলোমনা পাখি; যোজন যোজন কিলোমিটার দূরে এসে ঠোঁট থেকে ঝেড়ে দিচ্ছে রূপক মায়ার পশরা। সে পরিবার ত্যাগী বুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।
তাকে মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে'নি কোনো যশোধার মায়াবী চোখ; আর ডজন খানেক ওম ওম আলিঙ্গনের উষ্ণতা।
মাটি ও ফুলের বিপরীতে, একথোকা আগুন রঙা মেঘ যতটা নিকটতম মনে হয় তোমার অন্তর্বাসে !
আসলে ততটাও কাছে নয় সূর্যের সোনালী রোদ।
যতবার স্বদিচ্ছায় এসেছ নেশাত্বক চুম্বনের ছায়ায়।
তুমি বারবার ভুলে গ্যাছো এই দেহ এক উজান ভাটির—
রেখে যাওয়া পাখির ফসিলের মাত্র।
বৃষ্টি মূলত তৃপ্তির সারে গামা
ডানা নেই পিঠে; তবুও
বাহিরে বাড়িয়ে দিলাম হাত দিগন্ত ছুঁবো বলে;
আমার হাত বড়ে গ্যাছে বৃষ্টির জলে।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সুরের পৃথিবীতে বৃষ্টি মূলত তৃপ্তির সারে গামা। কোথাও গলে পড়ছে গান। রঙিন শব্দে ঢেকে যাচ্ছে দূরত্বের যাবতীয় পথ। আর কোথাও গলে গলে পড়ছে মোহকর শব্দের তান; ঐন্দ্রজালিক জলের মায়া।
প্রতিনিয়ত যে জলজ গন্ধে ভেঙে পড়ে নাগরিক দম্ভের শ্বাস; বৃষ্টি সে যত যাইহোক আনন্দের বার্তা।
ঐরাবত রঙের হাসি
রুহ
রাতের নিগূঢ় অন্ধকার বেজায় চুপ হয়ে আছে।
কোনদিক থেকে যেন ডাকছে সময়ের প্রহেলিকা!
রুহ ; আমার বদনের সুপ্ত আলোকছটা,
দোদুল্যমান হয়ে নীরবে দ্যাখে নিচ্ছে ;
থকিত এই দেহের ভগ্ন দশা।
নিজেকে ভাঙি। আনন্দে। শিহরণে। দুপুরের রোদ অপহরণ করে রঙ মাখি শালিকের পায়ে। প্রতিনিয়ত খুঁড়ে খুঁড়ে পাথরের বুকে আঁকি দ্রোহের গান। শীতল মেঘ, ক্ষণকাল ধরে ঝরে পড়ে হৃদয়ে। শৈবাল বেয়ে যায় গ্রাফিতি আঁকা ঢেউয়ে। বুকের ভিতর আস্তো নদী। বুকের ভিতর আস্তো পাহাড়। বুকের ভিতর আস্তো এক অরণ্য; দুলে ওঠে রোজ গভীর শূন্যতা নিয়ে। কবিতা আমার আয়নার প্রতিবিম্ব! জানি, কবিতাই আমার আদি স্টাকচার। নিজের ভাঙা,থেঁৎলানো রূপ নিয়ে দাঁড়াই শব্দের সমীপে। দ্যাখি শব্দই আমার প্রার্থনার অবয়ব। শব্দই আমার ঈশ্বরের রূপ। আমার চোখে শব্দই উড়তে থাকে একটা প্রজাপতি হয়ে । আমি শব্দের কাছে মেলে ধরি নিজের ভিতর থমকানো আস্তো এক আকাশ; যার ছায়াগ্রাম পথ শেষ হয় দূরের একটা পথের বাঁকে। যেখানে শব্দের গান বাজে হৃদয়ের কানে; আর কবিতার আয়নায় দ্যাখতে পাই — পূর্বের জন্মে আমি একটা শব্দের বিসর্গ ছিলাম।
ম্যারিগোল্ড
মনের কথা মনের মধ্যে গেঁথে রয়।
আমার কোনো দেরাজ নেই। নেই চিঠি রাখার খাম।
যতটুকু ছিলো ইতিকথা তা ভুলে আমি এখন নিঃস্ব।
ফুল চিরকাল তার সৌরভ নিয়ে ছুটে অর্থের পিছনে।
মোহের পিছনে। আর বসন্তে বসন্তে প্রেমিকাদের খোঁপায়
যে গুঞ্জন ওঠে মালার; মৌতাত ঘ্রাণের;
তা তুমি বলতে পারো একটা অর্থ লোভী ফুল;
ফুটপাত থেকে এক জোড়া পিপাসিত চোখ,
কামার্ত হৃদয় বেচে;
উড়ে বসেছে কোনো মিথ্যে চূড়ার প্রাসাদে।
মিথ্যে বন্ধন
এ যেন বরফ শীতল অনুভূতির মতো গলে গলে পড়ছে সময় গুলো। যে আমি ধরতে পারছি না। আমি এতোই আনাড়ি; আমি এ-তোই অসহায় এই ধরায়, আমার দেহ সজলে ভিজিয়ে দিচ্ছে এই উত্তাপহীন সময়ের বিবর্ণ রঙ। সন্ধ্যারা দল ছুট পাখিদের মতো উড়ছে মাথার উপর। আর মাথার ভিতর চিরস্থায়ী শূন্যতা গোসাগ্রে গিলছে একেকটা প্রহর। একলক্ষ বিভীষিকাময় আর্তস্বর থেকে আমি শুনতে পারছি এই দৌরাত্ম শহরে আমার কোনো ছায়া নেই। আত্মীয় নেই। আমি পথহীন। পা থেকে ক্রমশ দূরে ছুটছি মিথ্যা বন্ধনের টানে।
মায়ার পালক
কোলাহল থেকে পালিয়ে একটা ছায়া নিথর হয়ে পড়ে আছে। এখানে নিরবধি ধ্যান ভঙ্গ করে একটা জানালা। তার কপাট বেয়ে ঝুলছে বেতাপ এক গুচ্ছ দুপুর।
চোখে, চোখে চোখ পড়লে —
শুনি পাঁজরের ভিতর গেয়ে ওঠছে এক নীলকন্ঠ মানব;
যার কন্ঠে বেদনার গান। এমন আনচান করা তার সুর, এমন দগ্ধ বিঁধুর যেন লক্ষ লক্ষ মায়ার পালক উড়ে যাচ্ছে কোথাও। উপশম ঘটে হৃদয়ে। নিভৃতে উপশম ঘটে মন ও মগজে। আর প্রেমের ছলে বারবার ভেঙে পড়ে বুকের ভিতর সযত্নে গড়া ওঠা মোহের প্রাসাদ।
তোমাকে মনে পড়ার পর
তোমাকে মনে পড়ার পর,
ধরো একটা অনামিকা ফুল।
রাত্রের নিগ্রহে;
অসীম এক ব্যথার বোঝা কাঁধে নিয়া
সারাক্ষণ ঝইড়া পড়তেছে।
অপহরণ
সে হয়তো ডুবে মরার ভান জানতো।
মাঝে মধ্যে এমন আরোহী চোখে তাকাতো ;
মনে হতো একটা জোয়ার ভাঙা ঢেউ সমস্ত ব্যকুলতা
নিয়ে আছড়ে পড়ছে বুকে।
ফুটফুটে জোছনা রাতের দৃশ্যরা অপহরণ করতো আমায়। দূরের দাঁড়িয়ে থাকা একটা পাহাড় ক্রমশ নূজ্ব্য হয়ে
বলে যেতো ; মৃত্যুর জন্য একটা প্রহর ভিষণ ভাবে থেমে আছে এখানে। আর নগ্ন পায়ে বিছিয়ে আছে তার নরোম বিভ্রম হাসির ঢেউ। তুমি অন্ধ ও বধির। তুমি অবশ ও ব্যথিত। তুমি ; তুমি এখানে এসো। এবং উজাড় করে খুলে দাও তোমার বেবাক বিতৃষ্ণার গুঞ্জিত হাহাকার ।
সে হয়তো অভিনয়ও জানতো।
মাঝে মধ্যেই এমন ভাবে খুলে দিতো পাঁজরের হাড় ;
দ্যাখতাম সেখানে একটা ভিষণ একাকী এক ফুল —
দ্রোহের অনলে মগ্ন হয়ে পুড়ছে।
পাখির ফসিল
উজানে একটা খরস্রোতা নদী নিঃশেষ হয়ে গ্যাছে। ক্রমশ ধাবমান হাওয়ার পিঠে, কোথাকার এক ভুলোমনা পাখি; যোজন যোজন কিলোমিটার দূরে এসে ঠোঁট থেকে ঝেড়ে দিচ্ছে রূপক মায়ার পশরা। সে পরিবার ত্যাগী বুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।
তাকে মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে'নি কোনো যশোধার মায়াবী চোখ; আর ডজন খানেক ওম ওম আলিঙ্গনের উষ্ণতা।
মাটি ও ফুলের বিপরীতে, একথোকা আগুন রঙা মেঘ যতটা নিকটতম মনে হয় তোমার অন্তর্বাসে !
আসলে ততটাও কাছে নয় সূর্যের সোনালী রোদ।
যতবার স্বদিচ্ছায় এসেছ নেশাত্বক চুম্বনের ছায়ায়।
তুমি বারবার ভুলে গ্যাছো এই দেহ এক উজান ভাটির—
রেখে যাওয়া পাখির ফসিলের মাত্র।
বৃষ্টি মূলত তৃপ্তির সারে গামা
ডানা নেই পিঠে; তবুও
বাহিরে বাড়িয়ে দিলাম হাত দিগন্ত ছুঁবো বলে;
আমার হাত বড়ে গ্যাছে বৃষ্টির জলে।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সুরের পৃথিবীতে বৃষ্টি মূলত তৃপ্তির সারে গামা। কোথাও গলে পড়ছে গান। রঙিন শব্দে ঢেকে যাচ্ছে দূরত্বের যাবতীয় পথ। আর কোথাও গলে গলে পড়ছে মোহকর শব্দের তান; ঐন্দ্রজালিক জলের মায়া।
প্রতিনিয়ত যে জলজ গন্ধে ভেঙে পড়ে নাগরিক দম্ভের শ্বাস; বৃষ্টি সে যত যাইহোক আনন্দের বার্তা।
ঐরাবত রঙের হাসি
অরণ্য থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরেই বহুজাতিক রোদের গতরে এলায়া আছে ঐরাবত রঙের হাসি। ওইসব হাওয়া ; ওইসব নয়নাভিরাম দৃশ্য ; দূরের দেশের নাকি কোনো অপেয়া পাখি। ওরা,ওরা প্রজনন বাহিত রোগের মুখ নিয়ে উড়তে থাকে ; আর কৌশলে বেবাক তৃষ্ণা মিটায়া দেয় ছায়াভ্রম গন্ধমে। ওরা, ওরা জানে না সংগীতের ব্যঞ্জনায় কিভাবে রঙিন হয় মর্গের নামহীন লাশ। আর শহরের রূপের ভিতর সান্দ্র হয়ে ছড়িয়ে থাকে এক মগ্ন আরাধ্যা সকাল। আমাদের এখানে সকাল মূলত প্রগাঢ় মমতায় আবদ্ধ রবীন্দ্রনাথের গান। এখন না শীত, এখন না গরম। এখন এমন উষ্ণ চাদরে আবৃত এক প্রহর — যা লবনে ঘেরা সমুদ্রের নোনা হাসির কোল থেকে পালিয়ে আসা হরিৎ কৃষ্ণবন।
রাতের নিগূঢ় অন্ধকার বেজায় চুপ হয়ে আছে।
কোনদিক থেকে যেন ডাকছে সময়ের প্রহেলিকা!
রুহ ; আমার বদনের সুপ্ত আলোকছটা,
দোদুল্যমান হয়ে নীরবে দ্যাখে নিচ্ছে ;
থকিত এই দেহের ভগ্ন দশা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks