রায়হান উল্লাহ এর গুচ্ছকবিতা।। poems by rayhan ullah—kuasha



রায়হান উল্লাহ এর গুচ্ছকবিতা

নদীকাব্য

লাহোড়ে আদি
তিতাসে কাঁদি,
বুড়ির ডাকে
মায়ার বাঁকে,
মেঘনা বলে
কেমন চলে?
পদ্মাকে চায়-
তাতেই যায়।
যমুনা দূরে
অজানা সুরে,
সুরমা মেখে
কালনী চোখে।
তিতাসে আসি
তিতাসে ভাসি
লাহোড়ে মিশি।

কৈফিয়ত

রাতের আকাশ মেঘময়
বেদনারা ফিসফিস করে-
কী যেন এক অজানা ভয়
অমানিশার বেভুল সুরে।
দেশ কেঁদে যায় মমতায়
স্তুতির আঁধার করিডোরে-
আলোর হাতছানি পাথেয়
বিস্মৃতির সংসার চরে।
ব্যথার মেঘমালা ত্বরায়-
ভাতের কথামালা জড়ায়।

ধড়ফড় করি

ভালোবাসার দেশ কেঁদে যায়। সন্তান যদি হই আমারও কান্না পাই। বেহিসেবি কূটচাল বিশ^ময়। আরাধ্য স্বাধীনতা আলোর সীমারেখা ছুঁয়ে যায়। প্রিয় দ্রোহীরা আমরণ তৃষ্ণার্ত। ক্ষুদিরামের আত্মা রজ্জুর কথায় হাসে। সোনার বাংলা গান হয়। তানপুরা হয় উল্লাসকর। সালাম-রফিক হয়ে মোস্তফার কবরে ভেসে আসে সেই সুর। কানে কানে আলোড়ন তুলে বদ্বীপ বাংলায়। বাংলা ছড়িয়ে পড়–ক বিশ্বময়। নদীর কুলকুল জল, দিগন্তময় বাতাস জুড়িয়ে দিক মাঝি-মাল্লায়। উপজাতীয় গোধূলী ছুঁয়ে যাক পাষাণ অন্তর। লালনের তল্লাটে শান্তি বিরাজিত হোক। নজরুলের বিদ্রোহ কি বৃথা যায়! আশ্বাস-প্রশ্নরা গুমরে মরে। অবিশ্বাসের দোলাচলে আজব হানাহানি। প্রাণের ভয়ার্ত শিহরণ। কী ধর্ম, কী চাওয়া; কীইবা পাওয়ার? যদি-বাংলারই গান গাই, বাংলারই ধান খাই। তবু আজব মোড়ল। সূর্যসেন-মোহাম্মদ হোসেন খসে যাওয়া তারা। দাম দিয়েই কিন্তু কেনা বাংলা। বাংলাকে ভালোবাসি, বাংলাতেই ভালোবাসি। তারপরও কথামালা। অচেনা প্রবঞ্চণ, বিহ্বল মধুরণ। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ বাংলায়। প্রিয়তমা কাঁদে হায়, আমিও ভেসে যাই। জলজ অক্ষরের বন্যায়। রক্তিম ক্ষরণে। সহজিয়া সন্তান হয়ে ধড়ফড় করি। আশায়- মায়াময় মা যেন হেসে যায়। আজন্মের লালিত তিয়াসায়।  


প্রশ্নের অক্ষর

কোনোকালেই কিছু পাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তবু জীবনের দ্বৈরথে। মিশ্র জগৎ বিম্বিত হয়। প্রশ্নেরা ওড়ে; হরেক প্রজাপতি। পাখায় উড়ি। উড়াই ফানুস জীবনের।রঙ্গলীলা দেখি; সাঙ্গ করি। ভেদাভেদ রেখা হয়ে ঝুলে। ইথার শুনি-কী হারিয়েছ তুমি, কী ছিল তোমার? তুমি-আমির সংসার। সবকিছু অক্ষর হয়ে যায়। সময়, জীবন, আমি, তুমি, সব। কী বলবে তুমি? আমি বলিনি কিছুই। যা কিছু খেদোক্তি, পাগলামি, কথামালা, সব ক্ষরণ। দুঃখ কিংবা সময় ভাগ করি। একটু জিরিয়ে নিই। এভাবেই দুদোল্যমান জীবন। আমি-তুমি ছুটোছুটি; জমানো বাহার। কাহার লাগিয়া কান্দ তুমি? সে তো অপরূপ। ছটায় বিহ্বল জীবন। এক একটি প্রশ্বাস। তাইতো সময় ছিল। সভ্যতা বিনির্মাণে আমি ছিলাম। তুমিও ছিলে; কখনো উৎসাহে, কিংবা সোৎসাহে। আগুন জ্বলে। কোন জলে নিভায় তারে? আমিই নিভে যাই। ইচ্ছেরা থেকে যায়। রাউর সময়। প্রাণজ শীৎকার। ইচ্ছেদের হাহাকার। জীবন এত ছোট কেন?

যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগ। চাওয়া-পাওয়া সব হয়। শিরোধার্য আশা। প্রাণের মাদল। ইচ্ছেরা কেঁদেই যায়। প্রশ্নের অক্ষর।


পথ, পথিক ও জীবন

পথ, পথ খুঁজে-নাগরিক বৈরিতা, পিচঢালা প্রহসন। গ্রামীণ পথ কাঁদে- প্রাথমিক পাঠ, কঞ্চির সপাং সপাং গল্প। পথের আধুলি- বালকীয় আইসক্রিম, গ্রীষ্মসুখ। পথ এগোয়- সাদা-নীল ভালোবাসা, ছায়াময় জ্ঞান, পৈত্রিক গাম্ভীর্য। পথ আলোকিত- বিজ্ঞান বিজ্ঞান খেলা। পথ প্রেমাতাল- জীবনের মস্করা। পথের মস্করা- অনেক হয়েছে গত, আর কত? পথের বাঁকে-ছলাকলা, জীবন, লেনদেন। পথের আকুতি- পথিক কোথা যাবি? পথ, পথ দেখায়- পথিক ও জীবন!


করোনাকাব্য ২

রোদ-বৃষ্টির ঢাকায়
করোনা স্থির চাকায়,
বোধ-সৃষ্টির ঝাঁকায় 
বরুণা স্থির তাকায়, 
শোধ-কৃষ্টির আঁকায় 
অরুণা স্থির ফাঁকায়। 

সংসার

কবিতা কিছুই মানে না
ববিতা কিছুই জানে না,
কবিতা কিছু কি মানে না-
ববিতা কিছু কি জানে না?
কবিতা কিছুই জানে না
ববিতা কিছুই মানে না।


নিয়তি

চারপাশে আশ্বাস
কথাদের বিশ্বাস,
ব্যথাদের নিশ্বাস
নাগরিক প্রশ্বাস।
সামাজিক আশ্বাস
লোভাতুর বিশ্বাস,
নিয়তির নিশ্বাস
জীবনের প্রশ্বাস। 

1 মন্তব্যসমূহ

Thanks

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks

নবীনতর পূর্বতন