সোহরাব হোসেন এর গুচ্ছকবিতা।। poems by sohrab hossain--kuasha



সোহরাব হোসেন এর গুচ্ছকবিতা

   কতিপয় বাঙালির স্বভাব  


ভালো মানুষও সাধু সেজে মিথ্যা কথা বলে, 
অন্যর ভালো সহ্য হয়না ভণ্ডামি করে চলে। 
পরিবেশ পরিস্থিতি খুব খারাপ সজাগ হয়ে চলো, 
এখান সেখানে সবার সাথে ভাব বুঝে কথা বলো। 

অর্থ নাই সম্পদ নাই আজাইরা হৈচৈ নাহি করো, 
অযথা হৈচৈ বিপদের কারণ শক্ত অবস্থান ধরো। 
খুন খারাপি ও ধর্ষণ অকাতরে হচ্ছে দিনে দুপুরে, 
অবৈধ সম্পদ লুটপাট, রাখছে নদী কিম্বা পুকুরে। 
বিনা কারণে জুলুম করা কতিপয় বাঙালির স্বভাব, 
সত্য বলতে কোন জীবনে ফুরাবে না ওদের অভাব। 

অলিগলিতে বাড়ছে নেতা, হোক শিক্ষিত কিম্বা মূর্খ, 
অসৎসঙ্গ আর অবৈতনিক চিন্তায় গড়ে অর্থের দূর্গ। 
প্রত্যাশা সবার একই রকম কবে আসবে দেশে শান্তি, 
অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগণ দেহে বইছে ক্লান্তি। 
       


অসভ্যের জ্বালায় সভ্যরা অতিষ্ঠ 
 

সভ্য যারা ভালোর উদ্দেশ্যে সামনে এসেছিল,
তারাও আজ পথ হারিয়ে নিশ্চুপ, আর -
যারা সাথে থেকে উৎসাহিত করতো, 
তারাও আজ অনেকটা বিপথে নিরুৎসাহিত ! 

একটু দুচোখ বুজে খানিকটা ভেবে দেখুন ;
আলোর পথে অস্বস্তিতে ভরা,
অসভ্য নেতৃত্বে স্বার্থপর যারা। 
সবকিছুর পরে অসভ্যতা হয়েছে বেশ হতভম্ব, 
একা দাঁড়িয়ে বেহায়ার মতো নিস্তব্ধতায় ভিজে সর্বদা।
আহাম্মুকি চেহারা ঘেমে গড়ছে ফোঁটা ফোঁটা জল, 
যে দু-চারজন পাশে ছিল, তারাও নেই, 
যারা আসতে চেয়েছিল তারাও হারিয়েছে অকারণ। 

একা আজ একাকী দাঁড়িয়ে নির্ঘুম নিরন্তর হতাশায়, 
সবাই যদি এভাবে হারিয়ে যায় -
সবাই যদি এভাবে শূন্যতার সৃষ্টি করে, 
তাতে অসভ্য নেতৃত্বের কিছুই আসবে যাবে না। 
কারণ অসভ্যতা এখন ভীতি কাটিয়ে
একা দাঁড়িয়ে থাকা শিখে ফেলেছে,
অসভ্যের জ্বালায় সভ্যরা সততই অতিষ্ঠ ! 
না হোক উন্নতি সুসভ্য সুশীল ব্যক্তিদের !
তবুও সে একা চলতে থাকবে সারাপ্রহর।

       

রঙিন প্রচ্ছদ 


তোমরা যে চাকচিক্যময় সমাজটাকে দেখছো 
ওখানে মানুষ আছে মনুষ্যত্ব নেই -
স্বার্থ আছে কিন্তু বিবেক বোধ নেই, 
সুতরাং যারা আছে তারাও মানুষ তবে অনেকটাই 
রঙিন কাগজের মলাটে সাজানো প্রচ্ছদ ! 
ঠিক যেন লাল শাড়িতে পুতুলের বিয়ে ;
কেউ মুচকি হেসে চলছে আবার কেউ চোখের জলে ;
কথা হলো মুচকি হেসে চলা মানুষেরা কেউ -
পিছন ফিরে কাউকে দেখে না !
সবকিছুই দৃশ্যমান আবার যেন অদৃশ্য !  
কি সব অদ্ভুত নিয়তির - উদ্ভট রীতি -
বেদনার হাসিতে কান্না জড়ানো দুঃখের ঢেউ। 

সমাজের মধ্যে তৈরি উঁচু উঁচু ভবন আর 
বিছরানো চাদরে ঢাকা মাটির উপরিভাগ 
এ-সবের অন্তরালে চাপা পড়েছে হারানো আত্মার চিৎকার। 
কেমন জানি কেউ কারোই নয়, 
কেউ কারো দুঃখ শুনতে চায় না, 
সব যেন রঙিন প্রচ্ছদে সৃষ্ট অভিনয়ের কারিশমা। 
সমস্ত সম্পর্ক এখানে চুক্তিবদ্ধ স্বাক্ষরে বলীয়ান 
বসন্তের কোকিল উড়ুক্কু মেঘের ভাঁজে, 
ভালবাসা ভালো থাকা গুলো  চৈত্রের প্রচন্ড খরতাপে 
মরুর প্রান্তরে শুধুই ডুকরে কেঁদে মরে !



আমরা ও প্রকৃতি 


আমি প্রত্যেহ হাঁটি শহর থেকে লোকালয়, 
আমি মাঝে মধ্যে আবার দাঁড়িয়ে অবলোকন করি চারপাশ,
কত ধরনে সাজানো গোছানো সুন্দর প্রকৃতি, 
কেউ কাটছে আবার কেউ লাগাচ্ছে বা রোপণ করছে ; 
আমি যখন প্রকৃতির সবুজ বৃক্ষরাজি নিয়ে চিন্তা করি 
তখন মনে হয় ওরা কেউ কেউ আমাকে বলে
আমরা আমাদের মতো বেড়ে উঠতে চাই, 
আমাদের বাড়তে সহায়তা করো,
আমরাও জীব আমরাও প্রকৃতি সাজিয়ে সুন্দর করি। 

যখন আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকাই আকাশের পানে,
দেখে মনে হয় মায়াবী ছায়ায় মেলে ধরেছে
তার নীলাভ বিছরানো চাদর।
রং বদলে অনবদ্য কোথাও সাদা,কোথাও কালো ধূসর, 
কোথাও দিয়ে যায় অনবরত বৃষ্টি, যেন প্রেম কীর্তনে 
সত্যিই মহারাজ! 
দিনের আলো হারিয়ে রাত্রীকালে ছড়িয়ে দেয় বেদনার রং। 
ক্লান্তির সঙ্গ জিড়িয়ে আনমনে নীড়ে ফিরতেই-
পায়ের তলে নুয়ে পড়ে কত শত ঘাস তৃণলতা, 
ওরাও বিনয়ের সুরে বলে ভুল অভিমানে 
মুছে দিওনা মোদের স্বার্থপরের মতো। 
আমরাও কিন্তু প্রকৃতির শোভা বর্ধনে কম নই !

তোমরা যখন চলে যাও, 
আমরা কেউ দাঁড়িয়ে উঠতে পারি
আবার কেউ মাথা ভেঙে নতুন কুশি গজাতে অপেক্ষা, 
অযথা দিও না দুঃখ প্লিজ একটু দেখে চলিও! 

কথা হলো মানুষ আমরা সবাই - তবে, 
কেউ গড়তে বাঁচাতে লাগাতে ও সাজাতে ব্যস্ত, 
আবার কেউ কেউ কাটতে, ভাঙতে, ডলতে, ছিলতে, এমনকি
কালো ধোঁয়া উদিগিড়নে, স্বার্থপর বিবেকহীন মনুষ্যত্বে ব্যস্ত। 
অথচ  সমাজে আমরা সবাই মানুষ এটাই বাস্তব !


তিন ঘন্টার সিনেমা 


সমাজের অস্বাভাবিক বিশৃঙ্খল পূর্ণ সভ্যতায় আজ
থেমে গেছে শুদ্ধ সভ্যতার চাকা । 
কার্যধারায় উদ্ভট ইচ্ছাশক্তির শিরদাঁড়ার উপর পৌছানো 
সামাজিক গন্তব্যে ; বলা হচ্ছে এটাই না-কি স্বাধীনতা ! 

অতঃপর স্তব্ধতায় বুকের জমিনে হাত রেখে অনুভবে দেখি।
অতীত স্মৃতিরা যেন অনিশ্চিত ইতিহাস, 
আর আমার দীর্ঘ জীবন চিত্রটি দৃশ্যমান তিনঘন্টার সিনেমা ! 


এটাই বুঝি মৃত্যু 


চারিদিকে শুন সান নিরবতা গভীর রাত, 
কে যেন খানিকটা পরপর, খিড়কিতে খটখট 
শব্দে ডাকছে আমায় ! শুধু আমিই শুনছি ! 
তাহলে ডাক আর শব্দ দুটোই কি আমার জন্য ! 
হয়তো তাই, তাহলে শুনছে না কেন অন্যরা ? 
 
গভীর রাত 'না ফেরার ডাক এলো শূন্যতা ঘিরে'
বলছে মৃদু স্বরে সুমিষ্ট ভাষায় যেন ভয়হীন উচ্চারণ! 
অথচ তার অদ্ভুত অদৃশ্য দু'হাতে গলা চেপে ধরলো, 
কাউকে ডাকার আগেই হারিয়ে গেলাম নিমিষেই, 
' না ফেরার দেশে ' এটাই বুঝি মৃত্যু ! 

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন