জিয়াবুল ইবন এর ১০টি কবিতা।। 10 poems by ziabul ebun.kuasha

জিয়াবুল ইবুন।। কবি


জিয়াবুল ইবন এর ১০টি কবিতা


নিভতে যাওয়া নদী

এখানে লুণ্ঠন
নিভতে যাওয়া নদী যেমন অনালোড়িত

উৎখাতের কোনো জাহাজ ভিড়ছে না
ড্রেনেজ কালো জলের মতোই
বিষবহুল কুকুরের সতর্ক স্নেহ

নিগূঢ়ে পলেস্তারা খসা সম্পর্কগুলো ইরিধান ভাবছে
বৃষ্টিশেষে নাড়াবনে কৈ মাছ ধরতে যাচ্ছে
কোথাও কানকোর আঁচড়ে রক্ত চলে আসছে

হৃৎপিন্ডে স্পষ্টত
এক ফ্যাসিবাদ দানা বাঁধছে দেখি


কোয়ারেন্টাইন রাত্রি

একটা কোয়ারেন্টাইন রাত্রি পার হয়ে
ফিরে যাচ্ছি

আলকাতরা রং নদীদের কাছে
যেখানে নিরঞ্জন থাকে
যেখানে মাছ পাথর খেয়ে বাঁচে

শ্যাওলাদের নৃত্য দেখে
জলের কিনারে দাঁড়িয়ে পড়ে কাক

সামান্য দূরে
বাক্সের ভেতর থেকে বেরিয়েছে গোখরো সাপ
তার শরীর মোচড়ানোর ঢং
ধীরে ধীরে একাগ্র হচ্ছে

কফিনগুলো অপেক্ষায় আছে
শবদেহ কখন নিজেদের বিমুক্ত করবে


হাওয়া বিরহ

এক অন্ধ আতরের ঘ্রাণ ভেসে আসে
আমি কাতরাই নীলনদের কুলে
বলি তোমরা তাকাও একাগ্রে
প্রার্থনায় নত হয়ে পান করো সুরা

দুরারোগ্য সুখ নিয়ে এসো না আদম
তোমরা বরং পোড়ো হাওয়া বিরহে

সন্ধ্যার উপবন

সন্ধ্যার উপবন ডিঙিয়ে
কুয়াশা ভাঙতে ভাঙতে
চাঁদের বেহালা নিভে যায়
গাঢ় হয় শীতজ শস্যের যাপন

আলুখেতে বিছানো নাড়ার ঘ্রাণ
ঘামের গঞ্জনা শেষে
কুঁড়িপাতায় আলো পড়ে
শেকড়গুলো যায়
গহনে গহিনে আরও

নদীর এবাদত

তুমি যে খোদার এবাদত করো
সমুদ্রবর্তী কোনো পাহাড়ের খাঁজে
সে এক পানকৌড়ি হবে হয়ত
ডুব সাঁতারে পারদর্শী
বড়শির মতো বাঁকানো সরু ঠোঁট
বুকের মিশকালো পালক
তোমাতে নদী নামাতে জানে

নদীতে নানা রকম ঘাট
নানা রঙের খেয়া
নাগর আসে নগরের কাঁচামাল নিয়ে

কাজুও ইশিরোগুরের উপন্যাস বিশ্লেষন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
শূন্য ও আকাশের প্রতি পড়ুন এখানে
অনলাইন সাহিত্যের গুরুত্ব পর্যালোচনা পড়ুন এখানে
এমরান হাসানের কবি পড়ুন এখানে
পোয়াতি ধানের কবিতা পড়ুন এখানে
english poem's here read
দুরুত্বের অদেখা প্রাচীর পড়ুন এখানে
শারদুল সজল এর কবিতা পড়ুন এখানে
নকিব মুকশি'র কবিতা পড়ুন এখানে

রক্তগোলাপ

দরজা খুলতে গিয়ে
নিষিদ্ধের সীমা পেরিয়ে যাওয়া
কেবল কিছু কাঁটাইই রক্তগোলাপ ফুটায়
অন্যান্য পাপীরা প্রস্ফুটনের আগেই শুকিয়ে মরে
মুমিনদের করে নিথর মৃতদেহ

তারপর তারা শুয়ে পড়ে ন্যায়ের সোপানে
সমাজের কবরে
মাকড়সার জাল বিছিয়ে রাখে
আগাছা হয়ে ওঠে তাদের সঙ্গী

মৃত্যুর সেই অন্ধকারের মধ্যেও
রক্তগোলাপ লুকিয়ে রাখে রহস্য
যা ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে
নিষ্পেষিত ফিসফিসানির মতো



মাইনর স্কেলে বৃষ্টি

গিটারে বর্ষা শুরু হয়
তবু মাইনর স্কেল থাকে স্পর্শের বাইরে 

হাওয়া যেন ডাকপিয়ন
মুমূর্ষু হয়ে আসে জানালার পাশে  

ধুলোয় মুছে যাওয়া সিগনেচারে হোঁচট খেয়ে  
মেঘ খসনোর তাড়না ধেয়ে আসে 
তবলার অসংগতির দিকে  


আমি ও আমার বোকাদের বেঁচে থাকার ধরন

শুকনো মাটিতে কড়কড়ে কিছু ঝরাপাতা পড়ে থাকুক
গাছ না-রাজী হয় হোক  
কী রকম বেজে ওঠে 
তার সন্দেহের ভঙ্গুরতা

পায়ে পায়ে আমি হাঁটছি 
নিঃশ্বাস বসে যাওয়ার তারতম্যগুলো বুকে নিয়ে 
রোদের ঝলকে মিশে কেমন হাসছে সমতল

পাহাড় চূড়োয় দাঁড়িয়ে 
আমি ও আমার বোকাদের বেঁচে থাকার ধরনটা দেখছি

মোড়ের আগে 

একটু পরেই
মোড় পেরিয়ে আলাদা হয়ে যাব

তার সামান্য আগে
আবছায়া
ভেতরের নোনাজল ঘুরপাক
ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে

ব্রিজের রেলিঙে বসে
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি

জলে পড়া বেচারা চাঁদ
সামান্য মাছের ঠোকরও সহ্য করতে পারছে না

তরমুজের দেশ

তরমুজ কাটা মানেই বিদ্রোহ
লাল রক্তপাত কালো শোক সবুজ মাটি সাদা মরুভূমি
পতাকা নিষিদ্ধ হলে রং হাঁটে
রং হেঁটে যায় চোখে
শত্রুরা কাঁপে
কারণ তরমুজের ভেতর লুকানো এক দেশ

তারা বলে আঁকবে না পতাকা
তাই আমরা আঁকি ফল
আঁকি ভাঙাঘর কাটা তরমুজে
আঁকি মায়ের হাসি বোনের কান্না
তারা সব বাজেয়াপ্ত করে
তবে হৃদয়ের রং চুরি করতে পারে না

একদিন এক শিশু হাতে ধরে ছিল তরমুজ
সে জানত না এটা অস্ত্র
জানত এটা তার বাবার মুখের গর্বিত ফাটল
এই লালটুকু তার ভাইয়ের রক্ত
এই সাদাটুকু তার দাদির চাদর
এই কালোটা ধোঁয়ার মতো ধরা না পড়া শোক
এই সবুজ জমিন যা আর তার নয়

তারা বলে ছাব্বিশে থাকবে না আর মাওবাদী
তারা বলে থাকবে না আর তরমুজ
তবে যারা তরমুজ দেখে পতাকা চিনে নেয়
তারা জানে লড়াই কেবল শুরু
যতদিন তরমুজ বাঁচে পতাকা বাঁচে
পতাকা মানে আদিবাসী শিশুর জন্মের অধিকার

তুমি যদি তরমুজ খাও
তবে ইতিহাস খাচ্ছ
স্বাধীন দেশের স্বপ্ন কামড়াচ্ছ
কাটছ রক্তের বীজ
হয়ত বুঝবে না
ওই ফলের ভেতরে একটি পতাকা উড়ছে
একটি দেশে তরমুজের ফালি কেটে স্বপ্ন দেখছে শিশুরা







1 মন্তব্যসমূহ

Thanks

  1. আনোয়ার রশীদ সাগর।

    জিয়াবুল এর প্রথম তিনটি কবিতা খুবই ভালো লেগেছে। তাছাড়া সবগুলো কবিতায় পড়ার মতো।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks

নবীনতর পূর্বতন