গুচ্ছকবিতা
তমিজ উদ্দীন লোদী
আমি কে, নির্বাসন ছাড়া
আমি সেই, যাকে তুমি নাম দাও না
যার ছায়া দেয়ালে লেগে থাকে অচেনা অক্ষরে।
আমি সময়ের ভিতরে এক ফাঁকা কক্ষ
যেখানে প্রতিধ্বনি নিজেকেই খুঁজে ফেরে।
আমাকে ছুঁয়েছে সূর্য, বৃষ্টি, আর বাতাস,
তবু আমি শুধু স্পর্শের সীমানা।
আমাকে ধরেছে দর্পণ, কিন্তু প্রতিবার
ভেঙে যায় ছবি, কাঁচের ধারালো কানায় ।
আমি স্রোতে ভাসা এক টুকরো কাঠ
নদীও জানে না আমার গন্তব্য।
আমি আলোর নেশায় এক উড়ন্ত পাখি
যার ডানা আছে, কিন্তু কোনো স্বর্গ নেই।
নির্বাসন ছাড়া, শুধু এই শরীর—
একটি চেনা ঘর, যার চাবি হারিয়ে গেছে।
আমি নিজেই নিজের অদৃশ্য সীমানা
আমি কে, এই প্রশ্নই আমার শেষ ঠিকানা।
নামুক তুমুল বৃষ্টি
আজ বৃষ্টি নেমেছে
ধুয়ে গেছে বিগত দিনের বরফ
ঝকঝক করছে ছাদ , পবিত্র-স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে টিউলিপ-বাগান
স্বস্তি স্বস্তি লাগছে , বুক ভরে টানছি বাতাস
বিবর্তিত হচ্ছে উদ্ভিদের বীজ ও জিন
ধূসর রঙগুলি নানারঙের খেলায় মজেছে
ফুসফুস ভরে গেছে সুবাসে
আমাদের বারান্দায় পুচ্ছ নাড়ছে বিচিত্র লাইলাক ।
খুব ইচ্ছে হয়
আমার জন্মভূমিতেও নামুক বৃষ্টি তুমুল
ধুয়ে যাক কাদা ও জঞ্জাল
ফুটুক রজনীগন্ধা , গোলাপ কি বেলি
মানুষ দেখুক বাগান- দৃশ্য , বুকভরে টানুক সুবাস
আমার
ব-দ্বীপেও স্বস্তি স্বস্তি হোক , সুস্থিত হোক মানুষের বসবাস
তুমি যা তুলে আনলে গোধূলি-আলোকে
পাতা ঝরার মতো প্রেম ডুবে গেলো সরোবরে
তবু তুমি ডুব সাঁতারে তুলে আনলে তা
আকর্ষণ ও অবজ্ঞার দোলাচলে যা দুলছিল
জলে ডোবা চাঁদের মতন
তাই উঠে এলো সোনার ডিমের মতো সোনার থালায়
একদা আমরা কাছাকাছি এসেছিলাম
পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্য ও রূপকথা নিয়ে
'হাজার এক রাত্রি ' , 'দ্য লর্ড অফ দি রিংস '
কিংবা 'ইউলিসিস' , ' আন্না কারেনিনা '
ডুবে যেতে যেতে ঘোর এসেছিল চোখের পাতায়
আমরা জেনেছিলাম রঙের মাত্রিকতা
মানুষের ত্রিমাত্রিক আর পায়রার মতো
পাখিদের পঞ্চমাত্রিক
তুমি হেসে বলেছিলে আহা যদি পায়রা হওয়া যেতো !
তুমি যেমন পায়রা হতে পারনি আমিও না
শুধু আমরা ভুলে যেতে বসেছিলাম ভালোবাসাকে
তুমি যা তুলে আনলে গোধূলি-আলোকে ।
একজন প্রান্তিক কিংবা চরমপন্থী
তার চোখে আগুন, যা পুড়িয়ে দেয় সব রঙ । শুধু ছাই-ধূসর এক জগৎ ।
যেখানে প্রতিটি ছায়া হলো তার শত্রু । প্রতিটি বিরুদ্ধ মতে সে অসহনীয় ।
তার হাতে একমাত্র সত্য তার বিগত দিনের সব ভেঙ্গে যাওয়া আয়না
যেখানে সে শুধু নিজের মুখ দেখে অন্ধকারের ভেতর ।
তার নিজস্ব প্রতিটি প্রতিধ্বনি হলো একেকটি শপথ।
তার পথে কোনো ফুল নেই, শুধু পাথর-কঙ্কর,
যে পথ চলে যায় শূন্যের দিকে, যেখানে সময় থেমে থাকে
একই জিজ্ঞাসায়, একই উত্তরে।
সে বিশ্বাস করে শুধু প্রান্তে দাঁড়িয়ে ,
যেখানে পৃথিবী শেষ আর শুরু হয় ।
তার নিজস্ব আকাশ, যেখানে সূর্য ওঠে না, চাঁদ ডুবে না
শুধু জ্বলে একটাই তারা নিঃসঙ্গ, দগ্ধ, চরম।
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
তার হাতের আঙুলগুলো শিকারের গন্ধে ভরা।
একটি সাদা কাগজের উপর লাল ওয়াইনের ফোঁটা
শব্দহীন শব্দের মতো ছড়ায়।
সামনে সমুদ্র। পিছনে তুষারমুখী পর্বত।
মধ্যে একাকী যোদ্ধা
যার ঢাল তৈরি অনুপস্থিতির ধাতু দিয়ে।
টাইপরাইটারের তারায় লটকে আছে মাছের কঙ্কাল।
প্রতিটি টুং টাং শব্দ সময়কে বিদ্ধ করে
ঝুলন্ত তলোয়ারের নীচে।
বার্ধক্যের অবয়বে কোথা থেকে উড়ে আসে
‘ দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী’র সেই শান্তিয়াগো।
সাগরের লবণসিক্ত হাওয়া
সন্ধ্যা নামে বন্দুকের নলের মতো নিঃশব্দে।
আর তার চোখে অসমাপ্ত ষাঁড়ের লড়াই
এবং কখনো না শুকানো নদীর গল্প।
মায়াকোভস্কি
একটি কণ্ঠস্বর লাল,
যার ছায়া পড়ে না,
যার প্রতিধ্বনি ভাঙাচোরা ইট হয়ে ঝরে।
একটি সর্পিল সিঁড়ি,
উঠছে ধোঁয়া আর বিদ্রূপের মেঘে,
পায়ের তলায় পিচগলানো রাস্তা জমাট বাঁধে।
তার হৃদয় একটি কারখানা
ঢালাই হয় লৌহ-অক্ষর,
ঝংকার তুলে ফোটে ফুটন্ত সীসার ফুল।
ঘুমের মধ্যে সে বুনে যায় বিপ্লবের জাল,
প্রতিটি ফাঁক জুড়ে জ্বলে অসমাপ্ত চাঁদ।
সে নিজেই এক উল্কাপিণ্ড,
যার দহন শেষ হয় না,
যার আলোড়নে ক্যানভাস ফেটে যায়।
তার মুখোশের নিচে আরেকটি মুখোশ,
প্রতিটিতে রক্তজবার দাগ,
প্রতিটিতে একেকটি সময়ের আত্মহনন।
সে এখনো হাঁটে শব্দের ভেলায় চড়ে,
নির্বাক নক্ষত্রের ভিড়ে,
তার কবিতার ধ্বংসস্তূপে জন্ম নেয় নতুন ভোর ।
রোকসানা ইয়াসমিন মণির কবিতা পড়ুন এখানে
মতিন বৈরাগীর কবিতা এখানে পড়ুন
মাসুদ মুস্তাফিজের কবিতা পড়ুন এখানে
অমিত চক্রবর্তীর কবিতা পড়ুন এখানে
বড় ও বিখ্যাত কবির কবিতা পড়ুন এখানে
জিয়াবুল ইবন এর কবিতা পড়ুন এখানে
কাজুও ইশিরোগুরের উপন্যাস বিশ্লেষন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
শূন্য ও আকাশের প্রতি পড়ুন এখানে
অনলাইন সাহিত্যের গুরুত্ব পর্যালোচনা পড়ুন এখানে
এমরান হাসানের কবি পড়ুন এখানে
পোয়াতি ধানের কবিতা পড়ুন এখানে
দুরুত্বের অদেখা প্রাচীর পড়ুন এখানে
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন
যুগের পর যুগ ধরে
নিঃশব্দে জমাট পাথরের স্তরে
লুকিয়ে আছে সূর্যাস্তের স্মৃতিকথা
আর বৃষ্টির প্রতিশ্রুতি
কলোরাডো নদী একটি নীল সূত্র
বেঁধে রাখে গভীরতার রহস্য
গিরিখাত জাগে চাঁদের আলোয়
যখন তার বুকে অনন্ততা হাঁটে
একটি পাথর জানে সময়ের ওজন
এক ফোঁটা জলে লেগে থাকে সৃষ্টির স্বাদ
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন শুধু একটি গহ্বর নয়
পৃথিবীর খোলা চোখ যা দেখে মহাবিশ্বের জন্ম
English article read here
english poem's here read
english article here
poem by timur khan here
article of law and literature : click here
nobel prizev:2025 on litterature here
poem by p.francis click here
পোড়োবাড়ির আঙ্গিনা থেকে
সন্তদের কোনো সতর্কসংকেত কিংবা
নির্দেশ আমাকে স্পর্শ করেনি
ভূতলে পড়ে থাকা ভিখিরির রোদন
আমাকে বিগলিত করেছে।
প্রাসাদের পোড়োবাড়ির আঙ্গিনা থেকে,
চূড়া থেকে উড়ে গেছে বাজপাখি
দড়ির মতো নেতিয়ে পড়ে আছে চাবুক
মিশে আছে রক্তের হাহাকার ।
যদিও ভেঙে গেছে বাহ্যত প্রাচীর
তবু অসংখ্য অদৃশ্য প্রাচীর দাঁড়িয়ে গেছে
ঈষৎ ঝুঁকে থাকা বটবৃক্ষ থেকে ঝুরি নেমে
সেঁধিয়ে গেছে মাটিতে
পরগাছাগুলোকে পরগাছা বলে চেনা যায় না আর ,
বৃক্ষকে ঢেকে আছে ।
ক্ষমতা ও গরিমার আঙ্গুল গলে গলে পড়েছে যে মোম
তা থেকে জ্বলে উঠেছিল কি কোনো আগুন, কোনো শিখা ?
তার কোনো ইতিহাস লেখা না হলেও ধ্বসে যাওয়া এই
প্রাচীন স্থাপনা থেকে রণিত হয় করুণ চিৎকার
শীৎকারের অদৃশ্য ধ্বনিতে কেঁপে ওঠে ইট-কাঠ
কঁকিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে পুরনো চৌকাঠ ।
একদা ক্ষমতার আঙ্গুলে নেচে উঠতো যে গরিমার শিখা
তা এখন ছাই হয়ে নিভে আছে
অধঃপতিত মানুষের মাথা উঁচু হবার প্রয়াসে ঋজু হয়ে আসছে
অন্ধকারের ওপাশে জ্বলে উঠছে একচিলতে আলো ।

ভালো লাগলো কবিতাগুলো
উত্তরমুছুনতমিজ উদদীন লোদীর ৮টি কবিতাই পড়লাম। ভাবনার অনন্যতা এবং তার সাথে কবিতার শৈল্পিক সৌকর্য উভয় মিলে ব্যঞ্জনা নিবিড় ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে কবিতাগুলি। “ আমাকে ছুঁয়েছে সূর্য, বৃষ্টি, আর বাতাস,
উত্তরমুছুনতবু আমি শুধু স্পর্শের সীমানা।
আমাকে ধরেছে দর্পণ, কিন্তু প্রতিবার
ভেঙে যায় ছবি, কাঁচের ধারালো কানায় । “---- এই কাব্যশিল্প ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks