জীবনযুদ্ধ
শূণ্য থেকে যাত্রা
ষড়ঋতূর রঙ -চিত্র দেহ ও মননে,
পেছনে ফেরা মানেই শেকড়ের কাছে আত্মসমর্পণ।
ঝড় বৃষ্টির কষাঘাত ও রৌদ্রের দহন মেনে
পথ চলার অভিপ্রায় যার
দুর্বার গতিতে অমিত সাহসে
জীবনযুদ্ধে জিতে যায় সে অবশেষে ।
ঝড়ের মাতাল আগ্রাসন দেখেছি
শিলাবৃষ্টি পরাস্ত করতে পারেনি
আগন্তুক অন্ধকার গিলতে পারেনি
মিথ্যর কাছে করিনি মাথা নত,
পথের ক্লান্তি ঘটাতে পারেনি বিমূর্ত ছন্দপতন।
এইতো আমি
জীবনযুদ্ধে হামাগুড়ি দিয়ে এখনও সমুদ্রমুখি
কে আমাকে হারাবে
আজও তোমাকেই দ্যাখে
আমার কি দোষ!
জুকার বার্গের নবতর সৃষ্টির আয়নায়
রোজ ভেসে উঠো তুমি
মনোলোকে এঁকে যাও আলো ঝিলমিল সন্ধ্যাতারা ।
মুগ্ধ নয়নে তোমাকে দেখে ফিরে যাই প্রথম যৌবনে
কচিপাতার ছোঁয়ায় উদ্বেলিত হতে হতে নিজকে হারাই।
আমি তো ভুলতে চেয়েছি নদীর ঠিকানা,
রূপঝর গ্রামের মেঠোপথ,
শিশিরে ভেজা রক্তাভ ঠোঁটের আলিঙ্গন, অনিন্দ্য শিহরণ।
কেন পারিনা ভুলতে সেই স্বপ্নবোনার দিনগুলি !
যেদিন চন্দ্রাবতী জোছনায় ডাগর চোখে শুধালে
'লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া ....
যেদিন তোমার প্রেমে বিভোর হয়ে
খোঁপায় গেঁথে দিলাম একগুচ্ছ প্রণয়তারার ফুল!
মায়াকাজল মুছে উদাস পথিকের মতো
কাঁকর বিছানো পথ পেরিয়ে
গোধূলির রঙে আবিষ্ট দুচোখ আমার
তোমাকে খোঁজে, আজও তোমাকেই দ্যাখে বারেবারে।
কোথাও ভুল হচ্ছে
চশমার ক্ষমতা নেই পথ দেখাবার,
যখন চশমানির্ভর হয়ে পথে নামি
সমতল ভূমি ও শীতার্ত নদীকে মনে হয় মরুর পাহাড় ।
কানে শো শো শব্দ
জুতায় আটকানো যায়না পা, ঝিনঝিন অবশ অবশ
নির্ঘুম চোখ, পাশ ফিরি বরফশীতল বিছানায়
রাত গভীর হলেই টের পাই মাথার তালুতে গ্রীষ্মের রোদ;
নিঃসঙ্গ পথিকের মতো এসব একাই নীরবে সয়ে যাই।
কষ্টের কথা কাউকে শেয়ার করা যায় না
বন্ধুরা ভাবছে, এখনও আমি পঁচিশ বসন্তের যুবক
গায়ে নাকি খেলা করে উদ্যত যৌবন .!....
ওদের ভুল হচ্ছে কোথাও !
তাইতো দেখতে পায়না ভেতরের ভাঙন, শরীরী ছলনা
আমি তো জানি,
কিছুদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবো একাকী
সীমান্ত অতিক্রম করে পাড়হীন সমুদ্রের ওই পাড়ে।
প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরে বাইরে
যাদের নিয়ে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা লালন করি বুকে
মনোলোকে বুনি গোলাপের বীজ, আশালতা
তারা সবাই এখন আমার কাছে যবরদস্ত স্মার্ট পীর
যখন খুশি তালিম দিচ্ছে কর্কশ ভঙ্গিমায়।
গোধুলিবেলা, বৃষ্টিতে ভিজলেও কষ্টের আগুন নেভেনা
যে দিকে তাকাই দেখি অদৃশ্য দিগন্ত, মানুষ দেখি না
এভাবেও কি বেঁচে থাকা যায়?
বেতসবনের নিষ্ঠুর কাঠঠোকরা যেনো
নিবিড় ও পরম ভালোবাসার মহিমা উপেক্ষা করে
ঠোঁট উঁচু করে, চোখ রাঙায়, লাফায় চার হাত পায়ে
অবাঞ্চিত অহংকারে আঘাত করে মর্মেমূলে।
প্রভু, তুমি তো আমার ভেতরের খবর সব জানো
বিষবৃক্ষের মতো বাতাসে ঢেলে দেইনি একফোঁটা গরল
তবে কেন শেল ছুড়ে মারো এই সরল বুকে?
পথের ক্লান্তি অক্টোপাসেের মতো জড়িয়ে ধরেছে আজ।
মনে হচ্ছে, এই জনসমুদ্রে একজনও আপনজন নেই
প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরে বাইরে সর্বত্র !
বন্ধু, সুদিন এলে মরা নদীতে বান ডাকে
শীতের শেষে বসন্তে মৃত্যুপ্রায় বৃক্ষে ফোটে ফুল
সতেরো বছর প্রতিবাদী থাকার পর ভাবছিলাম
স্রোতের অনুকূলে ভাসবে সার্বজনীন সৃষ্টি।
বাড়ছে দলাদলি, উড়োচিঠি কড়া নাড়ছে বাতাসে
বাড়ছে বহুমাত্রিক বৈষম্য ও কোটার শাখা প্রশাখা
সময়ের টানে বাড়ছে আদিমতা, অনাকাঙ্খিত মৃত্যু
কুসুম বনে খেলছে পোশাকি অজগর।
বন্ধু, আর কিছুদিন অপেক্ষা কর
রৌদ্রের ছোঁয়া পেলে কুয়াশা কেটে যাবে সহসাই
তারাভরা রাতে হাসবে ঝিকিমিকি জোসনা
ফুটবে গুচ্ছ গুচ্ছ বাসন্তী গোলাপ স্বপ্নের বাংলায়।
এখন সর্বত্র মাঘের কুহেলিকা,
তবু শীতবস্ত্র জড়িয়ে আছি সত্যের পথে অবিচল
বিশ্বাস রেখো, রাত পোহালে পাথরেও ফুল ফোটে।
লেখা থাকবে ইতিহাসে
কিছুই ধামাচাপা থাকবে না মিথ মিথ্যার প্রলেপে,
গণতান্ত্রিক দেশে তোমার প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের পর
দেশ হারালো যুক্তিযুদ্ধের সমর নায়ক মেজর জিয়াকে,
তার বিদায়ে তোমার গভীর ষড়যন্ত্র ছিল।
তোমার ভাড়াটে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালো
জেহাদ, নূর হোসেন আরো নাম না জানা ছাত্র জনতা,
আগুন লাগিয়ে গাড়ি ও বস্তি পোড়াতে
মানুষ মেরে লাশ বানাতে অপূর্ব নৈপূণ্যে তোমার।
তুমিই পেরেছো কাগুজী অভিযোগে সুফী সাধকদের ফাঁসিতে ঝুলাতে, বিষপানে সাঈদীকে মারতে,
লগি বৈঠায় পল্টনে, পেশাদার জল্লাদ দিয়ে পিলখানায়, স্বদেশি কুকুর দিয়ে নৃশংস বিভৎস কাণ্ড ঘটাতে।
নিরঙ্কুশ ক্ষমতার জন্য ভুলে গেছো অমাবশ্যা পূর্ণিমা,
মেধাবী ও গুণীজনদের অসম্মান অপদস্থ করাতেও
তোমার যতো কারিশমা! সব লেখা থাকবে ইতিহাসে
লেখা থাকবে পরাজয় - পতনের সবিস্তার বর্ণনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks