মুস্তফা হাবীব এর দশটি কবিতা।। poems by mustafa habib. kuasha

মুস্তফা হাবীব।। কবি।। কবিতা
মুস্তফা হাবীব এর দশটি কবিতা

জীবনযুদ্ধ

শূণ্য থেকে যাত্রা
ষড়ঋতূর রঙ -চিত্র দেহ ও মননে, 
পেছনে ফেরা মানেই শেকড়ের  কাছে আত্মসমর্পণ। 
ঝড় বৃষ্টির কষাঘাত ও রৌদ্রের দহন মেনে 
পথ চলার অভিপ্রায় যার
দুর্বার গতিতে অমিত সাহসে 
জীবনযুদ্ধে  জিতে যায় সে অবশেষে ।
ঝড়ের মাতাল আগ্রাসন দেখেছি
শিলাবৃষ্টি  পরাস্ত করতে পারেনি
আগন্তুক অন্ধকার গিলতে পারেনি
মিথ্যর কাছে করিনি মাথা নত, 
পথের ক্লান্তি ঘটাতে পারেনি  বিমূর্ত ছন্দপতন।
এইতো আমি
জীবনযুদ্ধে হামাগুড়ি দিয়ে এখনও সমুদ্রমুখি
কে আমাকে হারাবে

আজও তোমাকেই দ্যাখে

আমার কি দোষ!
জুকার বার্গের নবতর সৃষ্টির আয়নায়
রোজ ভেসে উঠো তুমি 
মনোলোকে এঁকে যাও আলো ঝিলমিল সন্ধ্যাতারা । 
মুগ্ধ নয়নে তোমাকে দেখে ফিরে যাই  প্রথম যৌবনে
কচিপাতার ছোঁয়ায় উদ্বেলিত হতে হতে নিজকে হারাই। 
আমি তো ভুলতে চেয়েছি নদীর ঠিকানা,
রূপঝর গ্রামের মেঠোপথ, 
শিশিরে ভেজা রক্তাভ ঠোঁটের আলিঙ্গন, অনিন্দ্য শিহরণ।
কেন পারিনা ভুলতে সেই স্বপ্নবোনার দিনগুলি ! 
যেদিন চন্দ্রাবতী জোছনায় ডাগর চোখে শুধালে 
'লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া ....
যেদিন  তোমার প্রেমে বিভোর হয়ে
খোঁপায় গেঁথে দিলাম একগুচ্ছ প্রণয়তারার ফুল!
মায়াকাজল মুছে উদাস পথিকের মতো  
কাঁকর বিছানো পথ পেরিয়ে
গোধূলির রঙে আবিষ্ট দুচোখ আমার
 তোমাকে খোঁজে, আজও তোমাকেই  দ্যাখে বারেবারে।

কোথাও ভুল হচ্ছে

চশমার ক্ষমতা নেই পথ দেখাবার, 
যখন চশমানির্ভর হয়ে পথে নামি
সমতল ভূমি ও শীতার্ত নদীকে মনে হয় মরুর পাহাড় ।
কানে শো শো শব্দ
জুতায় আটকানো যায়না পা, ঝিনঝিন অবশ অবশ 
নির্ঘুম চোখ, পাশ ফিরি বরফশীতল বিছানায়
রাত গভীর হলেই টের পাই মাথার তালুতে গ্রীষ্মের রোদ; 
নিঃসঙ্গ পথিকের মতো এসব একাই নীরবে সয়ে যাই।
কষ্টের কথা কাউকে শেয়ার করা যায় না
বন্ধুরা ভাবছে, এখনও আমি পঁচিশ বসন্তের যুবক
গায়ে নাকি  খেলা করে উদ্যত যৌবন .!....
ওদের  ভুল হচ্ছে কোথাও !
তাইতো দেখতে পায়না ভেতরের ভাঙন, শরীরী ছলনা
আমি তো জানি, 
কিছুদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবো একাকী
সীমান্ত অতিক্রম করে পাড়হীন সমুদ্রের ওই পাড়ে।

প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরে বাইরে

যাদের নিয়ে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা  লালন করি বুকে
মনোলোকে বুনি গোলাপের বীজ, আশালতা 
 তারা সবাই এখন আমার কাছে যবরদস্ত স্মার্ট পীর
 যখন খুশি তালিম দিচ্ছে কর্কশ ভঙ্গিমায়।
গোধুলিবেলা, বৃষ্টিতে ভিজলেও কষ্টের আগুন নেভেনা
যে দিকে তাকাই দেখি অদৃশ্য দিগন্ত, মানুষ দেখি না
এভাবেও কি বেঁচে থাকা যায়?
বেতসবনের নিষ্ঠুর কাঠঠোকরা যেনো
নিবিড় ও পরম ভালোবাসার মহিমা উপেক্ষা করে
ঠোঁট উঁচু করে, চোখ রাঙায়, লাফায় চার হাত পায়ে
অবাঞ্চিত অহংকারে আঘাত করে মর্মেমূলে।
প্রভু, তুমি তো আমার ভেতরের খবর সব জানো
বিষবৃক্ষের মতো বাতাসে ঢেলে দেইনি একফোঁটা গরল
তবে কেন শেল ছুড়ে মারো এই  সরল বুকে?
পথের ক্লান্তি অক্টোপাসেের মতো জড়িয়ে ধরেছে আজ।
মনে হচ্ছে, এই জনসমুদ্রে একজনও  আপনজন নেই
প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরে বাইরে সর্বত্র  !



ছিন্নপত্র
 
আকাশে কাগুজে ঘুড়ির বেপরোয়া নৃত্য দেখি, 
দেখি বাহাদুরি, সীমা লঙ্গনের সর্বাত্মক চেষ্টা
ঘুড়ি মূল ছেড়ে শূণ্যে রাজত্ব চায়,  ওড়ে ঘূর্ণিতালে
ডান বাম ভুলে ছড়ায় ভোমরের গুঞ্জন। 
অথচ ঘুড়ি এক মুহূর্তও মনে রাখেনা,
নাটাইয়ের সুতোয় টান পড়লে পতন নির্ঘাত 
নাটাই যার হাতে তাকে অগ্রাহ্য করে 
কেউ কি টিকতে থাকতে পেরেছে এই পান্থশালায়? 
সবকিছুর শেষ আছে, 
ফণাতোলা আচরণের মূল্য নেই প্রভুর কাছে
বাতাস থেমে গেলে ফিরতে হবে মূলে
ছিন্নপত্রের মতো মাটিতেই লুটাতে হবে একদিন ।


বিপ্লবী ও কতিপয় খান্দানি রাজহাঁস
 
মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করে যে সম্মুখে যায়
 পেছনে ফিরে আসার বিন্দুমাত্র ফুসরত  নেই যার
সে প্রকৃত বিপ্লবী।
নিজের কল্যাণের কথা ভাবেনা
সত্যের পক্ষে বুলেটের সম্মুখে পেতে দেয় বক্ষ, 
অন্ধকার তাড়াবর জন্য
আলোর দিগন্ত উন্মোচনের জন্য জীবন বাজী রাখে।
শৈশবে একাত্তর দেখেছি, রক্তঝরার দিনগুলি, 
ভোগবাদীরা নিরাপদ আবহে  রিসোর্ট গড়েছিল
দিবানিদ্রায় সুখ খুঁজেছিল
মেরিলিন মনেরো সদৃশ ভাড়াটে রমণীর বুকে।
পড়ন্তবেলায় ছত্রিশ জুলাই দেখেছি
মায়া রাক্ষসির ধুম্রজাল ছেঁড়ার প্রত্যয়ে
আবালবৃদ্ধবনিতার ঘর ছেড়ে বাইরে যাবার দুঃসাহস


কালবৈশাখী। 
অথচ সেই বিপ্লবের ফসল  ঘরে তুলেছে সানন্দে 
বিদেশ ভূঁইয়ে থাকা পার্থিব সুখব্রত পোশাকি তারকারা
এবং কতিপয় খানদানি রাজহাঁস।



english poem's here read
দুরুত্বের অদেখা প্রাচীর পড়ুন এখানে
শারদুল সজল এর কবিতা পড়ুন এখানে
নকিব মুকশি'র কবিতা পড়ুন এখানে
ভাবুক মাস্টারের পাথর পড়ুন এখানে
কবিতার বরপুত্র আসাদ চৌধুরি এখানে পড়ুন
english article here
poem by timur khan here
বাস্তুহারা তারার ইশতেহার পড়ুন এখানে
সুশান্ত হালদারের কবিতা পড়ুন এখানে
মায়াপথিক এখানে
নয়ন আহমেদ এর কবিতা এখানে 
article of law and literature : click here

লতিফ জোয়ার্দারের কবিতা পড়ুন এখানে


চাঁদফুলের সৌরভ


কখনও ভাবিনি 
দিনের আলোয়ে দেখতে পাব
দূর অরণ্যে  ফুটে থাকা  চাঁদফুলের সৌরভ ! 
বিনামেঘে আনন্দ বৃষ্টি,  কবিতার শিল্পবাড়ি । 
কখনও ভাবিনি
ঘুমঘোরে ছোট্ট জলাধার  হয়ে যাবে নদী  
মরাবিল হয়ে যাবে তীরহারা ঢেউয়ের সমুদ্র
এবং রাজপরীর শরীর থেকে ঝরবে তারার দ্যুতি, 
ঘুম ভাঙার পর 


কর্পুরের মতো উড়ে যাবে রাতের আনন্দ ।
তুমি অসম্ভবকে সম্ভব করে 
জয় করেছো আমার মনোভূমি ও স্বপ্নের আকাশ
মুখোমুখি বসে ছড়িয়েছো শরীরী সুগন্ধ 
তুমি চলে গেলে, রেখে গেলে অনন্য পরশ।
একাকিত্বের হিজাবে মুখোমণ্ডল ঢেকে 
পাড় করেছি শাশ্বত যৌবন , 
তোমার অবর্তমানে খুঁজিনি  আর কোনো 
বকুল গন্ধরাজ হাস্নাহেনা মধুমালতি
প্রস্তুত করিনি বিকল্প সস্তা  প্রণয়নের বীজতলা।


শেষ বিকেলর রৌদ্র 

তুমি এসেছিলে শেষবিকেলের রোদে ভিজে
মনোবাতায়নে জ্বালিয়ে দিলে কবিতার প্রদীপশিখা 
মুখোমুখি বসোনি, ছুঁয়ে দাওনি হাত
তবু তোমায় ভেবে কাটাতাম রাতের নিঝুম প্রহর।
ভা্গ্যিস দেখা হলো কনক বাগিচায়
পাশে বসে ছড়ালে রজনীগন্ধার  নিটোল ঘ্রাণ
চিরচেনা স্বজনের মতো চোখ বাড়িয়ে বললে
এসো বন্ধু রামপুরায়, হাতিরঝিলে ফোটাব কুমুদিনী। 
ভেবেছিলাম ফের দেখা হবে দুজন দুজনাতে
কথা হবে অপার অনিন্দ্য পরম মমতায়
বৃষ্টি মিনা ও স্থল শকুন শকুনির চোখ এড়িয়ে  
দুজনে গাঁথব কবিতার চন্দ্রহার শতরূপে শতবার। 
তারপর কতবার ফুটল  ফুল শেফালি বকুল
নদী হাসলো মৃদুমন্দ জোছনামদির শরত সন্ধায়
তুমি রয়ে গেলে তোমাতে একা নিকুঞ্জ পথে  
আমি রয়ে গেলাম নিঃসঙ্গ দূর দখিনের জানালায়


পাথরেও ফুল ফোটে

বন্ধু, সুদিন এলে মরা নদীতে বান ডাকে
শীতের শেষে বসন্তে মৃত্যুপ্রায় বৃক্ষে ফোটে ফুল
সতেরো বছর প্রতিবাদী থাকার পর ভাবছিলাম
স্রোতের অনুকূলে ভাসবে সার্বজনীন সৃষ্টি।
বাড়ছে দলাদলি, উড়োচিঠি কড়া নাড়ছে বাতাসে
বাড়ছে বহুমাত্রিক বৈষম্য ও কোটার শাখা প্রশাখা 
সময়ের টানে বাড়ছে আদিমতা, অনাকাঙ্খিত মৃত্যু
কুসুম বনে খেলছে পোশাকি অজগর।
বন্ধু,  আর কিছুদিন অপেক্ষা কর
রৌদ্রের ছোঁয়া পেলে কুয়াশা কেটে যাবে সহসাই
তারাভরা রাতে হাসবে ঝিকিমিকি জোসনা 
ফুটবে গুচ্ছ গুচ্ছ বাসন্তী গোলাপ স্বপ্নের বাংলায়। 
এখন সর্বত্র মাঘের কুহেলিকা, 
তবু শীতবস্ত্র জড়িয়ে আছি সত্যের পথে অবিচল
বিশ্বাস রেখো, রাত পোহালে পাথরেও ফুল ফোটে।



লেখা থাকবে ইতিহাসে 

কিছুই ধামাচাপা থাকবে না মিথ মিথ্যার প্রলেপে, 
গণতান্ত্রিক দেশে তোমার প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের পর 
দেশ হারালো যুক্তিযুদ্ধের সমর নায়ক মেজর  জিয়াকে, 
তার বিদায়ে তোমার গভীর ষড়যন্ত্র ছিল।
তোমার ভাড়াটে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালো 
জেহাদ,  নূর হোসেন আরো নাম না জানা ছাত্র জনতা, 
আগুন লাগিয়ে গাড়ি ও বস্তি পোড়াতে
মানুষ মেরে লাশ বানাতে অপূর্ব  নৈপূণ্যে তোমার। 
তুমিই পেরেছো কাগুজী অভিযোগে সুফী সাধকদের ফাঁসিতে ঝুলাতে, বিষপানে সাঈদীকে মারতে, 
লগি বৈঠায় পল্টনে, পেশাদার জল্লাদ দিয়ে পিলখানায়, স্বদেশি কুকুর দিয়ে  নৃশংস বিভৎস কাণ্ড ঘটাতে। 
নিরঙ্কুশ ক্ষমতার জন্য ভুলে গেছো  অমাবশ্যা পূর্ণিমা, 
মেধাবী ও গুণীজনদের অসম্মান অপদস্থ করাতেও
তোমার যতো কারিশমা!  সব লেখা থাকবে ইতিহাসে 
লেখা থাকবে পরাজয় - পতনের সবিস্তার বর্ণনা।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন