মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০১৭

সম্পাদকীয়। কুয়াশা ওয়েবজিন।জুন ১৭।


সম্পাদকীয়

এ দেশে ধীরে ধীরে ছন্দ মন্ডিত এবং সুচারুপাঠবিমুগ্ধ শিশুতোষ লেখার কদর হ্রাস পাচ্ছে। দৈনন্দিন কবি লেখক তৈরী হচ্ছে বটে তবে কিশোর ও যৌবনদীপ্ত কবিতা তারা প্রাধান্য দিচ্ছে। অথচ  শিশুদের নিয়ে তেমনটি লেখেননা।

কুয়াশা ওয়েবজিনের এ সংখ্যাটি এই দৃষ্টিভঙিতেই আয়োজিত। চেষ্টা করেছি শিশুদের নিয়ে ভালো লেখা স্থান দিতে। তবে কতোটা সাকসেস হতে পেরেছি সেটা আপনাদের বিচার।
সকল ছড়াকার ও গল্পকারকে আমার ভালবাসা।সাথে রমজান মাসের সূচীত পবিত্রতা বজায় থাক এই কামনা সবার তরে।

সূচীপত্রঃ কুয়াশা ওয়েবজিন শিশুতোষ সংখ্যা।জুন,২০১৭ইং।

সূচীপত্রঃ শিশুতোষ সংখ্যা।জুন,১৭।

ছড়া
১. জগলুল হায়দার

২. মানসুর মুজাম্মিল

৩.আবু সাঈদ

৪. সৈয়দ শরীফ

৫. দ্বীপ সরকার

গল্প
৬.তাসরুজ্জামান বাবু

ছড়া
৭.তরু তালুকদার

৮. শ্রীলেখা চ্যাটার্জী

৯. এ আর মাকবুল

১০. শীলতা পারভেজ

নির্বিরোধী - জগলুল হায়দার

নির্বিরোধী

কে আর এখন নির্বিরোধী?

ডালডাগুলা ঘি'র বিরোধী

পায়েশগুলা ক্ষীর বিরোধী

কে আর এখন নির্বিরোধী?

কে আর এখন নির্বিরোধী?

ঢেউগুলা সব তীর বিরোধী

হিংসুটেরা বীর বিরোধী

কে আর এখন নির্বিরোধী?

কে আর এখন নির্বিরোধী?

শেয়ার সূচক থির বিরোধী

মোল্লারা কেউ পীর বিরোধী

কে আর এখন নির্বিরোধী?

কে আর এখন নির্বিরোধী?

কফিগুলা টি'র বিরোধী

বোকাগুলা ধী'র বিরোধী

কে আর এখন নির্বিরোধী?

কে আর এখন নির্বিরোধী?

উপরিআলা ফী'র বিরোধী

মিরাক্কেলও মীর বিরোধী!

কে আর এখন নির্বিরোধী?

কে আর এখন নির্বিরোধী?

সমাজপতি শির বিরোধী

ভিআইপিরা ভিড় বিরোধী

কে আর এখন নির্বিরোধী?

পাঁচটি ছড়া - মানসুর মুজাম্মিল

আজ নতুনের ডাক

আজ নতুনের ডাক
নতুন দিনের স্বপ্নে সবাই
দুঃখ ভুলে থাক।
আজ নতুনের ডাক
রাগ গোস্বা হিংসাটারে
জুতার তলায় রাখ।
আজ নতুনের ডাক
গলা ছেড়ে পাখিগুলো
জীবনের গান গাক।

আজ নতুনের ডাক
মাথাতুলে দাঁড়িয়ে যাবার
সবাই শক্তি পাক।

চার ডাক্কু

চুপিচুপি ঘরে আসে
চারচার ডাক্কু
তিনটাই মোচওয়ালা
একটাই টাক্কু।

খুন আর ডাকাতিতে
চারটাই পাক্কু
বের করে শর্ট গান
বের করে চাক্কু ।

নাক ডাকা ঘুমে ছিলো
তোরাবালী কাক্কু
ডাকাতের একজন
ভাঙে তার নাক্কু ।
সবকিছ ুনিয়ে নেয়
ঘরখানা ফাক্কু
সেই বড়ো ডাকাতির
আমি এক সাক্কু ।

হাঁটতে হাঁটতে

হাঁটতে হাঁটতে নদী
হাঁটতে হাঁটতে রেইল
বনের ভেতর হেঁটে দেখি
বনপাখিদের খেইল।

হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়
হাঁটতে হাঁটতে গাঁ
মনটা আমায় বলে কেবলÑ
আরো দূরে যা।
হাঁটতে হাঁটতে সুর্য
হাঁটতে হাঁটতে রাত
চমকে উঠি- আমার কাঁধে
পরীর শীতল হাত!

সামনে

সামনে একটা নদী
এই নদীটা ভাষার
লক্ষ প্রাণের আশার... 
সামনেএকটা গাঁ
এ গাঁটি মায়ের
স্বচ্ছ আলো ছায়ের...

সামনে একটা বন
গাছে গাছে বনপাখিরা
ব্যস্ত সারাক্ষণ...
সামনে একটা দেশ
যুদ্ধ এবং ভালবাসার
আনন্দ অশেষ ।

বৃষ্টিঝরে

বৃষ্টিঝরে পাতার ওপর
কালোডাটের ছাতার ওপর
রিক্সাঅলার হুডের ওপর
বৃষ্টিঝরে টুপ ! 
চালতা গাছে বাঁদর নাচে
দৌড়ে পালায় বোয়াল মাছে
ডিপফিরিজে মুরগি আছে
আম্মু রাঁধে স্যুপ।

রাজ্য জুড়েবিশালআঁধার! 
বৃষ্টি মাথায় ফিরলো ফাদার
হাঁসগুলো আজ
খায়নি আধার
ব্যাঙাবেঙির ঝুপ।
ইলেকট্রিকের বাতি গেলো
ঘরে নতুন কুটুম এলো
ড্রয়িং রুমটা ভিজিয়ে দিলো
কী বিচ্ছিরি রূপ !

ছয়টি ছড়া - আবু সাঈদ


নিম খ্যাতি

জঙ্গী রে তোর পায়ের নীচে 
একটুখানি মাটি নাই,
র‍্যাব পুলিশ আর গোয়েন্দারা
সোনার মতো খাঁটি তাই।

ক্যামন করে জঙ্গী মরে
হইল নারে হুস তোদের,
করবে না তো ক্ষমা কেহ
তোদের মতো দুষ্টদের।

হয় ভালো হ, নয় জলে যা
কেউ পাবি না সিমপ্যাথি।
একুল ওকুল দু'কুল যাবে
পাবেই শুধু নিম খ্যাতি।

মোবাইলের অপব্যবহার

টিনেজারদের হাতে দেখি
দামী ব্রান্ডের মোবাইল,
আনলিমিটেড ডাটা কিনে
অপকর্মে সবাই ইল।

সুযোগ পেলেই ছেলে মেয়ে
তাল মিলিয়ে সমানে,
পর্ণো ছবি দ্যাখে নাকি
যাচ্ছে পাওয়া প্রমানে।

ভবিষ্যতে দেশ চালাতে
হবে যারা কর্ণধার,
কেমন হবে? তারা যদি
হয়ে যায় রে পর্ণো-কার?

ক্লিনিক

গরিব হাবুর ব্যামো ছিল
ক্লিনিকে সে গেলো,
তিনশো টাকা উপরি দিয়ে
সিরিয়াল টা পেলো।

ডাক্তার নিলো হাজার টাকা
টেস্টেতে ছয় হাজার,
দাঁড়িয়ে থেকে সারাটা দিন
বিষ হলো তার মাজার।

সবি গেলো টেস্ট ভিজিটে
পকেট এখন খালি,
টাকার কথা ভেবে সে যে
নিজেকে দেয় গালি।

ওষুধ কেনা তার হলো না
কষ্ট করে রোগে,
হাবু মিয়া রোগের সাথে
টাকার শোকেও ভোগে।

সময় থাকতে হও হুশিয়ার
নইলে হবে সর্বনাশ,
পেকে গেলে করবে ওরাই
বাবা মায়ের গর্ব নাশ

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসায়

সব চে বেশি মেধাবীগণ
উনারাই হয় ডাক্তার,
দুর্নীতির জাল পাতলে তারা 
রাখে না রে ফাঁক তার।

উচ্চ ফি আর সাইড থেকে
পাচ্ছে তারা কমিশন,
বিক্রি করতে হয় রোগীদের
চিকিৎসাতে জমি শোন্ ।

রোগীর প্রতি নাই মনযোগ
হচ্ছে রে ভুল চিকিৎসা,
রোগীই জানে ডাক্তারগণের
কতরকম কী কিচ্ছা!

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাতেও
বিরাজে নৈরাজ্য,
সাধারণের জন্য খরচ
সত্যি কি তা বাহ্য?

রাখছি নয়ন অনিমেষ

সরকারি সব কর্মচারী
আমরা তো নই ব্রহ্মচারী
সুযোগ পেলেই করি লুট
সরকারী মাল হরিলুট।

ব্যাংক বীমা আর অফিসে
একে অপরের কপি সে
থাকলে পাশে দলের দাদা
লুটে খেতে নেই কো বাধা,
তাই তো খেয়ে দিচ্ছি ছুট
সরকারী মাল হরিলুট।

পুকুর চুরির দিন তো শেষ
কী অনুকুল পরিবেশ!
সাগর চুরির দিকেই এখন
রাখছি নয়ন অনিমেষ।

ভয় আমাদের একটাই
হঠাৎ যদি হিসাব দিতে 
দুদুকেতে ঠ্যাকখাই!

জাল  টাকা

ফালু মিয়া 
আলু নিয়া
বেচতে গেল বাজারে,
হাজার টাকার 
নোট পেয়ে তার
মনটা হলো তাজা রে!

টাকা পেয়ে 
চলে ধেয়ে
কিনতে বউয়ের শাড়ি ওই,
দোকানদারে 
বলছে তারে
বলো তোমার বাড়ি কই?

ব্যাপারটা কী! 
বুঝতে বাকি
ফালু মিয়া বোকা রে!
পুলিশ ডেকে 
বলছে একে
ঢুকিয়ে দাও লকারে।

কারণটা কী? 
টাকা নাকি
সবই ছিল জাল যে!
ফালুর মতো 
শত শত
হয় লোকের এই হাল যে!

জালটাকার এই 
কারবারেতেই
আছে যত জোঁক রে!
চক্রটারে 
ধরতে পারে
এমন আইন হোক রে!

পাঁচটি ছড়া - সৈয়দ শরীফ


 পশুপাখির ডাক

   

গরু ডাকে 'হাম্বা-হাম্বা'

ছাগল ডাকে 'ম্যা'

মোরগ ডাকে 'কুক্কুরুকু'

ভ্যারাও ডাকে 'ভ্যা' !

কোকিল ডাকে 'কুহু-কুহু'

পায়রা 'বাকুম-বাক'

শালিক ডাকে 'কিচিরমিচির'-

'কা-কা' ডাকে  কাক ! 

শেয়াল ডাকে 'হুক্কাহুয়া'

বিড়াল ডাকে 'মিঁউ'

ব্যাঙও ডাকে 'গ্যাঙর-গ্যাঙর'

টুনটুনি 'পিঁউ' 'পিঁউ'

খুকির ঈদ

'ঈদ মোবারক' কলতানে

ঈদের খুশি লাগলো প্রাণে

কী যে,

আজকে খুকি পণ করেছে

রাঁধবে সেমাই নিজে ! 

সেমাই রেঁধে ঘুরতে যাবে

নাগরদোলায় উড়তে যাবে

হি হি,

সঙ্গে যাবে বান্ধবীরাও

টিনা, মীনা, মিহি ! 

ঘোরা শেষে আসবে ফিরে

বান্ধবীরাও তাদের নীড়ে

ছুটবে,

স্বজনদেরও সাথে সবাই

ঈদের মজা লুটবে !

     খোকা গেলো কই?

     

     আজ রেঁধেছি মাংশ ভুনা

     সঙ্গে আছে রুই,

     ডাকছি তোরে, খোকা আমার-

     কই পালালি তুই?

     সেই সকালে বের হয়েছিস

     এখন কোথায়? বল, 

     জানিস খোকা? সকাল থেকে-

     খাইনি কোনো জল ! 

     রাগ করে না লক্ষ্মী আমার

     জলদি বাড়ি ফেরো, 

     নইলে যে মা যাবে চলে

     পাবে না'কো টেরও ! 


 ঘোড়ার ডিমের খোঁজে

                    

আজকে খোকা বের হয়েছে ঘোড়ার ডিমের খোঁজে,

ঘোড়ার তো ডিম পাড়তে মানা, জানতো না তা' ও যে ! 

বের হয়েছে যখন খোকা, আনবে সে ডিম নিয়ে,

ভয় ঠিকই পায়—  আটকে নি যায়, ডিমটা আনতে গিয়ে !

সাহস করে ভাসায় দিলো নদীর মাঝে ভেলা,

পাচ্ছে না তো, যাচ্ছে ঠিকই — খুব দ্রুত'ই বেলা ।

নদীর কূলে দেখলো খোকা- বিরাট গোল এক কী যে, 

সেই দেখাতেই মারলো সে ঝাঁপ, তাই যে গেলো ভিজে !

যাচ্ছে খোকা নদীর তীরে জোরসে সাঁতার কেটে,

হঠাৎ সে হায় পড়লো ঢুকে বিরাট মাছের পেটে !

বের হলো সে নখের ধারে মাছের উদর ছিঁড়ে, 

অবশেষে উঠলো খোকা সেই নদীটার তীরে !

গোল সেগুলো কী হবে? হায়, সেটাই খোকা ভাবছে,

ভেবে-ভেবে ভয়টি পেয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে !

একটু কাছে গিয়ে খোকা বলছে 'এটাই ডিমটি'

তাই সে হঠাৎ মারলো জোরে নিজ শরীরে চিমটি !

ধরতে গিয়ে বুঝলো খোকা এটা তো এক পাথর,

ডিম না পেয়ে হলো শেষে হতাশাতেই কাতর ।


ছিলো এখন নেই

ওইখানে এক সাঁকো ছিলো

অনেকরকম ঝাঁকও ছিলো

পাখি এবং হাঁসেদের,

একটি কুঁড়েঘরও ছিলো

আমার বন্ধু রাশেদের । 

ঘরের পাশে পুকুর ছিলো

ছোট্ট একটি কুকুর ছিলো

ওইখানে,

কুকুরটিকে বলতো রাশেদ

'দই খা নে' । 

এখন তো আর কুকুরও নেই

ঘরের পাশে পুকুরও নেই

বিল্ডিংয়ে-

ইয়া বড় দালান হলো 

ঝিল ডিঙে ! 

বন্ধুটি-ও 'সাহেব' হয়ে

মাঝে-মাঝে গায়েব হয়ে

গ্রাম ছাড়ে,

অনেক টাকা বখশিশও দেয়

চামচারে !

তর্কই তর্ক - দ্বীপ সরকার

তর্কই তর্ক

তর্ক দিয়ে তর্ক শুরু
যে জিতে সেই মহাগুরু
তর্ক শেষে শক্ত করো
নাকের ওপর বাঁকা ভুরু।

তর্ক দিয়েই চলছে দেশ 
যেচ্ছা ইচ্ছে তেচ্ছা বেশ 
তুচ্ছ পুচ্ছ গাল মন্দে
ঘেন্না ছুঁড়েই তর্ক শেষ?

তর্কে কেউ ধনী ভালো
তর্কের নিচেই একটু আলো
তর্ক কেউ করতেই পারে
মাথার চুল ক্যান যে কালো? 
লেখা ৩/১/১৫ইং

রবিবার, ৪ জুন, ২০১৭

লোকটা - তাসরুজ্জামান বাবু

লোকটা

সেদিনের ঘটনাটি মনে পড়লে আজও শরীরটা কাঁটা দিয়ে ওঠে । এর কোনো ব্যাখ্যা আজ অবধি খুঁজে পাইনি। 
এক বছর আগে আমি একটা কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতাম। রোজার ঈদের কয়েকদিন আগে ঘটেছিল ঘটনাটি । কয়েকদিন পর ঈদ বলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা দোকান খুলে রাখা হত । 
সেদিন রাত এগারোটার দিকে মালিকের ছেলে দোকানে এসে বলল, ‘বাবা ! দাদীর অবস্থা ভালো না!’ 
মালিকের আম্মা কয়েকদিন থেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী ছিলেন । ছেলের মুখে এ কথা শুনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন । 
আমাকে বললেন, ‘নাসির, দোকান বন্ধ করে দেব নাকি?’ 
আমি বললাম, ‘অনেক কাস্টমার আসবে । আমি তো আছিই, আপনি চলে যান ।’ 
তিনি বললেন, ‘ভয় করবে না তোর?’ 
‘নাহ্, কীসের ভয়?’
‘আচ্ছা, তাহলে থাক । অবস্থা ভালো হলে আমি চলে আসব ।’
‘আচ্ছা !’
দোকানটা ছিল হাটের মধ্যে  । আশে পাশে আর কোনো দোকানপাট ছিল না, শুধু কাঁচাবাজার বসত। কিন্তু সন্ধ্যার কিছু পরেই কাঁচা বাজার শেষ হয়ে গেলে শুধু আমাদের দোকানটাই খোলা থাকত । এমনি সময় বিক্রিবাট্টা যেমনই হোক, ঈদের মৌসুমে ভালোই চলত দোকান । এমনিতেই ভয়ের কোনো কারণ ছিল না । কিন্তু মালিক যাবার পাঁচ মিনিট পরেই আমার সব ইন্দ্রিয় কেন জানি সজাগ হয়ে উঠল । ভাবলাম, দোকানে ক্রেতা নেই বলেই হয়তো একাকিত্ব আমাকে পেয়ে বসল । গ্রামাঞ্চলে রাত ১১ টা মানে অনেক রাত । আজ ক্রেতা একটু কমই, মনে মনে এসব ভাবছিলাম আমি । 
হঠাৎ মনে হল, দোকানের আড়ালে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে । আমি জোরে হাঁক দিলাম, ‘কে ওখানে?’
আমার গলাটা কেঁপে উঠল , কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম মনে হয় ।
সাথে সাথে দেখি লোকটা চোখের পলকে দোকানের সামনে চলে এসেছে । 
‘আমার একটা কাফনের কাপড় দরকার ।’ জড়ানো গলায় লোকটা বলল ।
আমি স্বাভাবিকভাবে তার প্রয়োজনমতো কাপড় কাটতে লাগলাম । একবার মাত্র লোকটার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম । কুকুরের চোখের মতো জ্বলছিল চোখদুটো । ‘সামান্য একজন ক্রেতাকে দেখে আজ এত ভয় পাচ্ছি কেন আমি?’,  মনে মনে নিজেকে  প্রচন্ড ধিক্কার লাগালাম । চেষ্টা করলাম লোকটার সাথে ফ্রি হবার । কিন্তু যাই জিজ্ঞেস করি লোকটা কাটা কাটা জবাব দেয় । 
‘আপনার নাম কী?’ জানতে চাইলাম ।
‘ফজলুর রহমান ।’
‘থাকেন কোথায়?’
‘কাশিয়াডাঙ্গা ।’
‘আপনার আব্বার নাম?’
‘বজলুর রহমান ।’
পিতার নাম বলার পরেও লোকটাকে আমি চিনলাম না । লোকটা চলে যাওয়ার সময় আমি পেশাদারি বিদায় জানাতে হাত বাড়িয়ে দিলাম ।  মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম, ‘ওকে, থ্যাংক ইউ! আবার আসবেন ।’ লোকটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল এমনভাবে যেন আমার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা তার পছন্দ হয়নি । আমি তার শীতল চাহনীতে শিউরে উঠলাম । হাতটা ফিরিয়ে নিতে যাব এমন সময় সে আচমকা আমার হাতটা চেপে ধরল । আরো একবার শিউরে উঠলাম, কারণ লোকটার হাত বরফের মত ঠান্ডা!
আমি তাড়াতাড়ি হাতটা ছাড়িয়ে নিতেই লোকটা চলে গেল । অন্যদিন এত রাতেও প্রচণ্ড ভীড় থাকে । আর সেদিন যেন লোকজন আসছিলই না । আমার ঝিমুনি এসে গেল । হঠাৎ একদল লোকের গলা শুনতে পেলাম । ঝিমুনি ছুটে গেল । লোকগুলো বলল, ‘ভালো কিছু কাফনের কাপড় দেখাও তো বাবা ।’
আমি নব্বই, একশো আর একশো বিশ টাকা গজের কাফনের কাপড় তাক থেকে ফেলতে ফেলতে বললাম, ‘আজ কত মানুষ মরছে!’
‘কেন? আর কেউ মরেছে নাকি?’ একজন বলল । 
‘জ্বী । একটু আগেই আরেকজন এসেছিল ।’
আমার খুব অবাক লাগল একটু আগে লোকটা যে পরিমাণ কাপড় নিয়ে গেল এরাও সে পরিমাণ কাপড় কাটতে বলল দেখে । 
বললাম, ‘আপনারা কোত্থেকে এসেছেন ভাই?’
‘কাশিয়াডাঙ্গা ।’ একজন জবাব দিল । 
আরো একবার চমকে ওঠার পালা আমার । 
‘মৃতের নামটা জানতে পারি?’
‘ফজলুর রহমান। কেন বাবা, চেন নাকি তাকে?’ লোকটা বলল । 
ততক্ষণে আমার হার্টবীট বেড়ে গেছে । কোনো রকমে বললাম, ‘জ্বী-জ্বী না । এমনি । বা-বার নাম কী তার?’
‘বজলুর রহমান । কিন্তু তুমি অমন করছ কেন? অসুস্থ?’ 
লোকটা আরো কীসব বলল । কিন্তু আমার কান তখন ঝাঁ ঝাঁ করছে, কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে সড়সড় করে ।
প্রচন্ড আতংক গ্রাস করল আমাকে । তবে কি একটু আগে লোকটার আত্মা এসেছিল আমার কাছে? নিজের কাফনের কাপড় নিজেই কিনে নিয়ে গেল! এই কথা কি বিশ্বাস করবে এরা?
আমি সেই আত্মার সাথে কথা বলেছি! চোখে চোখে তাকিয়েছি! হ্যান্ডশেক করেছি! 
ওমাগো... আমি আর ভাবতে পারলাম না । কখন যে দাঁত কপাটি লেগে পড়ে গেছি বলতে পারব না । জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি লোকগুলো দ্বিধান্বিত চোখে আমার দিকে ঝুঁকে আছে । 
তারপর থেকে আমি সেলসম্যানের চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছি । 

লেখকঃ সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী, বাংলাদেশ রেলওয়ে ।

ইংরেজী স্যার - তরু তালুকদার

 ইংরেজী স্যার 

ইংরাজী পড়ান স্যারে , 

ভুল করলেই মারে ।

খাচ্ছি আমি রোজ ,

কেউ নেয় না খোঁজ ।

কেঁদে কেঁদে পড়ি ,

পড়া শেষ করি ।

স্যার ইংরাজী ধরে ,

সব এক এক করে।

বানান অর্থ যত

বলি সঠিক মত।

স্যার খুশী হন ,

আদর করে কন -

ভেরি গুড বয় ,

এইতো করেছো জয়।

পড়তে কেন ভয় ?

মনোযোগ দিলেই হয়।

চাঁপা ফুলের স্বপ্ন - শ্রীলেখা চ্যাটার্জী

 চাঁপা ফুলের স্বপ্ন 

ছোট্ট আমি চম্পক ফুল ,

সাদায় হলুদ মাখি ,

ভোরের আলোয় স্বপ্ন ছুঁয়ে 

 আকাশে তাকিয়ে থাকি |  

ছোট্ট পাখি দোয়েল চড়াই 

আমার বন্ধু হয়ে 

গল্পে গানে ভরলো আমায় 

সকল দুঃখ সয়ে |

প্রজাপতিরা লুটবে আমার 

সকল রূপের ছটা ,

গুনগুনিয়ে আসবে ভ্রমর 

মউ লুটেরার ঘটা | 

বন্ধু যবে ছটফট করে 

শিকারীর বেঁধা তীরে ; 

কান্না ভেজা পাপড়ি আমার 

মূর্চ্ছিত হয় ধীরে | 

তাদের সাথে রাখী বন্ধন 

হয় যেন চিরকাল ;

অশ্রু দিয়ে পূজা সমাপন 

মন দিয়ে বুনি জাল ! 

গল্প কত,কত গান গাঁথা ,

সব শেষ হোল ঝড়ে ; 

কাঁদি যখন ঝরার ব্যথায়,

মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ! 

ছোট্ট মেয়ে অঞ্চলে ভরে মায় তুলে ,

আদরে স্নেহে ছড়াবে আমায় 

দেবতার পদমূলে || 

  লেখাঃ ৩০/১০/২০১৬ ইং

জননীর তরে - এ আর মাকবুল

জননীর তরে

মা যে হলো শ্রেষ্ঠ সম্পদ
এই পৃথিবীর বুকে,
আল্লাহর অলি হলো অনেক
মায়ের দেওয়া ফুঁকে।

রাত জেগে মা বসে থাকে
সন্তান কোথায়ও গেলে,
কত খুশি হয়যে মায়ে
দুমুঠো ভাত ফেলে।

মা হলো ভাই দোয়ার সাগর
জীবনেরি আলো,
মা যাদেরি বেঁচে আছে
কপাল তাদের ভালো।

ছেলেমেয়ের জন্য মায়ের
অশ্রু ঝরে পড়ে,
কোটি কোটি দোয়া রইল
শ্রেষ্ঠ মায়ের তরে।

বৃষ্টি মানে - শীলতা পারভেজ

বৃষ্টি মানে

বৃষ্টি মানে 

দৃষ্টি জুড়ে নিপুণ তালের ছন্দ;

বৃষ্টি মানে 

বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলের গন্ধ ।

বৃষ্টি মানে 

টিনের চালায় নূপুর বাজা নৃত্য;

বৃষ্টি মানে 

দিন-দুপুরে ব্যাকুল করা চিত্ত ।

বৃষ্টি মানে 

তোমার খোঁপায় গুঁজা কদম ফুল আমার নাকে গন্ধ;

বৃষ্টি মানে 

হৃদয় খুলে অতীত ডাকা ঘরে চৌ-দরোজা বন্ধ !