মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

সম্পাদকীয়ঃ জুলাই সংখ্যা। ২০১৭ইং।


 






সম্পাদকীয়, জুলাই ২০১৭ইং সংখ্যা।


সাহিত্যের জায়গাগুলোতে কতোইনা অবদানের কথা আমরা শুনেছি।ইতিহাস পড়ে জেনেছি।আসলে এটা অনুস্বীকার্য একটা অনুষঙ্গ।মানুষ যেমন প্রথাগতভাবে বেড়ে উঠছে তেমনি সাহিত্যের  ধারা উপধারার মধ্যে প্রতিনিয়তই মাত্রার যোগ হচ্ছে। চেঞ্জ হচ্ছে কবিতার ভাবসৃষ্টির কলা।তেমনি গল্প উপন্যাসেও ভিন্ন মাত্রার উদ্ভব দেখতে পাই। এটা আমাদের বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে একটা নবজাগরন।নতুনত্বের কাছে আমরা সবাই ভীর করছি।

বলছিলাম,অবদানের প্রসঙ্গ। প্রত্যেক কবি সাহিত্যিকগণ যা-ই করেন, তা-ই প্রকৃতির তাগিদে করে থাকেন। এতে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিকভাবে কতোজনই বা সুবিধা পান।তবে মননের নিকট সবাই লেগে আছি।মানুষের জন্যই কলম ধরি,খাতা ধরি। তাই কলমের একটা খোঁচাও মানুষের জন্যই মেলে ধরেন।
কবিদের প্রত্যেক খোঁচার মূল্য আছে। সেটা অর্থিক দিক থেকে না হলে প্রজন্মের নিকট অঙ্কুরিত বীজের মতই ফলদায়ক।অবদান,মুল্যবোধ,দায় সব কিছুমিলে সকলেই ভালোবাসার প্রসারমান কলকাটি ধরে আছি।এটা একটা জায়গায় নিবেই হয়তোবা।

সূচীপত্রঃ জুলাই সংখ্যা। ২০১৭ইং।


প্রবন্ধঃ
সালু আলমগীর

অনুবাদ কবিতাঃ
আবুল কাইয়ুম,রুবেল পারভেজ

কবিতাঃ
নির্মলেন্দু গুণ,সুনীতি দেবনাথ,যুগান্তর মিত্র,
সাম্য রাইয়ান, সুশান্ত হালদার, দ্বীপ সরকার।

রম্য ছড়াঃইসলাম তারিক

কবিতাঃ
নাসির ওয়াদেন,পারমিতা চক্রবর্ত্তী,অনাদি বড়ুয়া,অপরাজিতা সরকার,মোঃনূরুল গনী, টিপু সুলতান, ইউসুফ তাপস, ওয়াসীম রহমান সানী,আলমগীর সরকার লিটন, চঞ্চল দেবনাথ, এলিজা আজাদ।

গল্পঃ
শ্রীলেখা চ্যাটার্জি

কবিতাঃ
শামীমা সীমা, মোকসেদুল ইসলাম, রায়ান নুর,তানভীর কালাম আজেমী, শহিদুল লিটন, মোঃ নাজমুল হাসান, রুপক চৌধুরী, সুমন আহমেদ, বিশ্বজিত বিশ্বাস, আহমেদ ফারুক মীর, অভিলাষ মাহমুদ, বাউল মজনু।

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

প্রবন্ধঃ পদ্য ও গদ্যছন্দের পার্থক্য - সালু আলমগীর

পদ্যগদ্যছন্দের পার্থক্য

আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না কোনটা পদ্যের ছন্দ, কোনটা গদ্যের ছন্দ। কেউ কেউ অন্ত্যমিলকেই পদ্য মনে করেন। আর অন্ত্যমিল ছাড়া হলে তাকে গদ্যকবিতা ধরেন। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে,অন্ত্যমিলের সাথে এই ধরনের ভাবনার কোনো সম্পর্ক নাই। অন্ত্যমিল একধরনের শব্দালংকার। যা পদ্যেও ব্যবহৃত হয়,গদ্যেও ব্যবহৃত হয়। আবার এদের ছাড়া গদ্যছন্দ যেমন লেখা যায় তেমন পদ্যও লেখা যায়। এতক্ষণে অন্ত্যমিলের বিষয়টা নিশ্চয় পরিষ্কার হয়েছে। এবার চলেন পদ্য ও গদ্যের মূল পার্থকের দিকে হাঁটি।
আমরা যদি খেয়াল করি তবে দেখব,পদ্যের ছন্দ প্রকাশিত। আর গদ্যের ছন্দ অপ্রকাশিত।
যদি জিজ্ঞেস করি,কীভাবে প্রকাশিত? তাহলে উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখব: পদ্যছন্দে চরণগুলো কতগুলো নির্দিষ্ট পর্বে ভাগ করা থাকে এবং যে পর্বগুলো যতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর তালে তালে পড়তে গেলেই তখন পদ্যছন্দ প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
অক্ষরবৃত্ত(পয়ার):
মহাভারতের কথা/অমৃত সমান//(৮+৬)
কাশীরাম দাস কহে/শুনে পুণ্যবান//(৮+৬)
মাত্রাবৃত্ত:
"এই খানে তোর/দাদীর কবর/ডালিম গাছের/তলে
(৬+৬+৬+২)
তিরিশ বছর/ভিজিয়ে রেখেছি/দুই নয়নের/জলে।"
(৬+৬+৬+২)
স্বরবৃত্ত:
বাঁশবাগানের/মাথার উপর/চাঁদ উঠেছে/ওই
(৪+৪+৪+১)
মাগো আমার/শোলক বলা/কাজলা দিদি/কই
(৪+৪+৪+১)
[(/) চিহ্ন দিয়ে মধ্যযতি, (//)পূর্ণযতি বোঝানো হয়েছে]
কিন্তু গদ্যছন্দে এইভাবে শৃঙ্খলা অনুসারে সমান মাত্রার পর্ববিন্যাস করা হয় না। 
★পদ্যের পর্বগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় শ্বাস ও ঝোঁকের উপর ভিত্তি করে। যা নিয়ন্ত্রণ করে যতি। 
★কিন্তু গদ্যছন্দে বাক্যাংশ বা পর্বগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় অর্থের উপর ভিত্তি করে। যা নিয়ন্ত্রণ করে ছেদ। 
★★এটাই পদ্যছন্দের সাথে গদ্যছন্দের মূল পার্থক্য। 
(মনে রাখতে হবে:যতি ও ছেদ দুটোর অর্থই বিরাম বা বিরতি হলেও,ছন্দে এ দুটো আলাদা অর্থ বহন করে।) 
নিচে ছেদ দিয়ে কীভাবে গদ্যছন্দের চরণ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তা দেখি:
ছেলেটার বয়স হবে*বছর দশেক,*
পরের ঘরে মানুষ,*
যেমন*ভাঙা বেড়ার ধারে আগাছা*--
মালীর যত্ন নেই,*
আছে*আলোক বাতাস বৃষ্টি*
পোকামাকড় ধুলোবালি*-- 
কখনও ছাগলে দেয় মুড়িয়ে,*
কখনও মাড়িয়ে দেয় গোরুতে,*
তবু মরতে চায় না,*শক্ত হয়ে ওঠে,*
ডাঁটা হয় মোটা,*
পাতা হয় চিকন সবুজ**।।
.
[* দিয়ে উপচ্ছেদ, ** পূর্ণচ্ছেদ বোঝানো হয়েছে।]
আমরা উপরে দেখে এসেছি, বিশেষ মাত্রাবিন্যাসের কারণে পদ্যে তরঙ্গের মতো এক ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়। আচ্ছা এমন যদি হয়,মাত্রাবিন্যাসের বন্ধন মানলাম না,আবার পদ্যের ধ্বনিভঙ্গিও রক্ষা করলাম। তাহলে কী হবে? তাহলে একধরনের স্পন্দিত গদ্যের সৃষ্টি হবে। মূলত এই স্পন্দিত গদ্যকেই আমরা ডাকি গদ্যছন্দ।
তবে মাত্রাবিন্যাসের বন্ধন এড়ানোর জন্য পয়ার থেকে গদ্যছন্দের ক্রমবিকাশ উপলব্ধি করাটা খুবই জরুরি।

অনুবাদ কবিতাঃ আচরনের প্রতীক - আবুল কাইয়ুম

আচরণের প্রতীক

মূল কবিঃ হার্ট ক্রেন

ভাষান্তর : আবুল কাইয়ুম

উপদ্বীপের কাছে বসেছিলো ভবঘুরে এবং আঁকছিলো
উপত্যকার মসৃণ সমাধিক্ষেত্র। যখন ধর্ম প্রচারক
করুণা ভিক্ষা দিলেন বশংবদদের, অগ্নিগিরিটি উদগীরণ করলো
গন্ধক এবং সোনালি শিলাকণা------
আনন্দ ভেসে চললো বিশাল আবরণে
জীবিতদের প্রলোভিত করে আধ্যাত্মিক ফটকের দিকে।
বাগ্মীরা অনুসরণ করেন বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের গতিবিধি
এবং বেতারযন্ত্র মান্য করে মানুষের সম্পূর্ণ বিধান,
ধর্ম প্রচারক শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে তাঁর চিন্তাকে সংক্রামিত করেন।
ইতিহাসবেত্তারা ভক্তির অলঙ্কারে পূর্ণ করেন সকল ভাণ্ড ও পেয়ালা-
ভোঁতা ওষ্ঠগুলোই করে আধ্যাত্মিক ফটকের স্মরণোৎসব।
ভবঘুরে অবশেষে এই বিশ্রাম ক্ষেত্রটিকে বেছে নেয়-
যেখানে সাগরকে উৎসাহিত করে স্ফটিক মেঘেরা
এবং যেখানে অবশেষে জন্ম নিয়েছিলেন একজন মনোনীত মহানায়ক।
ঐ সময়ে উবে গিয়েছিলো গ্রীস্ম এবং ধূঁয়ো।
ডলফিনরা তখনো খেলা করছিলো দিগন্তে খিলান তুলে
শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক ফটকের স্মৃতিগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য।
মূল কবিতাঃ
Emblems Of Conduct
-------------------------------
Hart crane
----------------
By a peninsula the wanderer sat and sketched
The uneven valley graves. While the apostle gave
Alms to the meek the volcano burst
With sulphur and aureate rocks ...
For joy rides in stupendous coverings
Luring the living into spiritual gates.
Orators follow the universe
And radio the complete laws to the people.
The apostle conveys thought through discipline.
Bowls and cups fill historians with adorations,
কবি-পরিচিতি : হার্ট ক্রেন ও তাঁর প্রসিদ্ধ কবিতাঃ
আধুনিকতাবাদী (modernist) ধারার এক স্বতন্ত্র কবি হার্ট ক্রেন (১৮৯৯-১৯৩২)। জীবন-যাপনেও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। জন্ম আমেরিকার ওহায়ো রাজ্যে। পিতা ছিলেন একাধারে বণিক ও মিছরি কারখানার মালিক। তিনি চাননি ছেলে পারিবারিক পেশা ছেড়ে কবি বা সাহিত্যিক হোক। পরিবারের প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হয়ে ক্রেনকে মাত্র ষোল বছর বয়সে গৃহ ত্যাগ করতে হয় এবং এরপর তিনি বিপদাপন্ন ও ছন্নছাড়া জীবনের মুখোমুখি হন। চষে বেড়ান কিউবা, প্যারিস ও নিউইয়র্ক। জীবনধারণের জন্য তাঁকে কারখানার শ্রমিক, মেকানিক, বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপিলেখক –এসব নানা ধরনের পেশায় কাজ করতে হয়। আর তাঁর অবসরের অধিকাংশ সময় কাটে কবিতা লিখে ও মদ পান করে এবং বাকিটা লেখক বন্ধুদের সাথে আড্ডায়। অবশেষে ম্যাকমোহন নামে এক ব্যাংকারের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক তাঁকে ‘দ্য ব্রিজ’ কাব্যটি লেখার সময় আর্থিক সহায়তা দান করেন। ১৯৩২ সালে মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে এই কবি মেক্সিকো থেকে নিউইয়র্ক ফেরার পথে জাহাজ থেকে সাগরে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
হার্ট ক্রেনের প্রথম দিককার কবিতাগুলো সুইনবার্ন, ইয়েটস্, ইংরেজ রোমান্টিক কবিকূল ও ফরাসী সিম্বলিস্ট কবিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলো। এরপর তিনি এলিয়ট ও লা ফর্গের প্যাটার্নে লেখা শুরু করেন। ‘দ্য ব্রিজ’ কাব্যেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও পরিণতি। তাঁর কবিতার ভাষা অত্যন্ত দৃঢ়সংবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাতে প্রায়শ অসমঞ্জস শব্দাবলীর বিন্যাস পরিদৃষ্ট হয়। তিনি প্রচুর রূপক-প্রতীকের ব্যবহার করেছেন।
হার্ট ক্রেন মাত্র দুটো কাব্যগ্রন্থের লেখক। ‘দ্য ব্রিজ’ (১৯৩০) –এর আগে ‘দ্য হোয়াইট বিল্ডিংস’ (১৯২৬) নামে আর একটি কাব্য লিখেছিলেন্। জীবদ্দশায় ছন্নছাড়া ও বিশৃঙ্খল জীবনযাত্রার জন্য অনেকের কাছেই ধিকৃত ছিলেন। কিন্তু তাঁর অকাল আত্মহনন এই ধিক্কারকে মুছে দেয়। সহসা তাঁর প্রতি আমেরিকার পাঠককূল অনুরক্ত হয়ে ওঠে এবং তাঁর কবিতা বিপুলভাবে পঠিত হয়। ক্রেনের প্রথম কাব্যটির বিষয় ছিলো এক প্রকার বিকৃত প্রেম। খোলামেলাভাবে লেখা এই কাব্যটিতে কিছু দার্শনিক মেজাজও ফুটে ওঠে। কিন্তু ক্রেনের দীর্ঘ কবিতা ‘দ্য ব্রিজ’-এর মাঝে মহাকাব্যের অনেক গুণ মেলে। তিনি ব্রুকলীন ব্রিজকে প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে এই কবিতায় মার্কিন জীবন ও মিথ উপস্থাপন করেন। টি, এস, এলিয়টের ‘দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’ ও উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম-এর ‘প্যাটারসন’-এর মতোই এটি আধুনিক কবিতার ইতিহাসে একটি মহৎ কাব্য হিসেবে বিবেচিত।

অনুবাদ কবিতাঃ এক পাগলীর প্রণয়গীতি -রুবেল পারভেজ

অনুবাদ কবিতাঃ

এক পাগলীর প্রণয়গীতি

মূল কবিঃ সিলভিয়া প্ল্যাথ (১৯৩২-১৯৬৬)

অনুবাদঃ রুবেল পারভেজ

আমি আঁখিযুগল বন্ধ করি আর মহাবিশ্ব যায় মরে;
যখন চোখের পাতা মেলি, পুনর্জন্ম হয় সবই।
(মনে হয়, তোমাকে গড়েছি আমার চিন্তা জুড়ে।)
নীল ও লালের ভেতর, তারা জেগে ওঠে জোড়ায় জোড়ায়, নৃত্য করে
আর স্বাধীন অন্ধকার ধেয়ে আসে ছুটন্ত ঘোড়ার বেগেঃ
আমি আঁখি যুগল বন্ধ করি আর মহাবিশ্ব যায় মরে;
স্বপ্ন দেখতাম, জাদুটোনা করেছ তুমি শয্যার শিথানে
আর চন্দ্রাহতের মত সুর তুলে, পাগল করে দিচ্ছো মাতাল চুম্বনে।
(মনে হয় তোমাকে গড়েছি আমার চিন্তা জুড়ে।)
ঈশ্বর দিচ্ছে খুলে আকাশের ছাদ, নরকের তেজ যাচ্ছে সরেঃ
ফেরেশতা, শয়তানেরা যাচ্ছে যেন কোনও সুদূরের বনে,
আমি আঁখি যুগল বন্ধ করি আর মহাবিশ্ব যায় মরে;
বিশ্বাস ছিল মনে, ওভাবেই ফিরবে তুমি, প্রতিজ্ঞা যতটা অনড়,
অথচ বুড়িয়ে যাচ্ছি আমি, তোমার নামও বিস্মৃতির পথে,
(মনে হয়, তোমাকে গড়েছি আমার চিন্তা জুড়ে।)
হয়তো ঢের ভালো ছিল বজ্রপাখিকে ভালোবাসা,
বসন্ত এলেই কূজনমুখর ওরা ঠিকই ফেরে।
আমি আঁখি যুগল বন্ধ করি আর মহাবিশ্ব যায় মরে;
(মনে হয়, তোমাকে গড়েছি আমার চিন্তা জুড়ে।)
Mad Girl's Love Song
"I shut my eyes and all the world drops dead;
I lift my lids and all is born again.
(I think I made you up inside my head.)
The stars go waltzing out in blue and red,
And arbitrary blackness gallops in:
I shut my eyes and all the world drops dead.
I dreamed that you bewitched me into bed
And sung me moon-struck, kissed me quite insane.
(I think I made you up inside my head.)
God topples from the sky, hell's fires fade:
Exit seraphim and Satan's men:
I shut my eyes and all the world drops dead.
I fancied you'd return the way you said,
But I grow old and I forget your name.
(I think I made you up inside my head.)
I should have loved a thunderbird instead;
At least when spring comes they roar back again.
I shut my eyes and all the world drops dead.
(I think I made you up inside my head.)"
কবি পরিচিতিঃ
আমেরিকান কবি, উপন্যাসিক ও গল্পকার সিলভিয়া প্ল্যাথ ১৯৩২ সালের ২৭ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যায়। দুঃখবোধ, মৃত্যু তাঁর লেখায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে। সিলভিয়া প্ল্যাথ ১৯৫৬ সালে তার সমসাময়িক কবি টেড হিউজকে বিয়ে করেন। দুর্ঘটনা বশত প্রথম সন্তানের ভ্রনাবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনা তাকে মারাত্মকভাবে ব্যথিত করে ও পরবর্তীতে তার মানসিক বিষাদ বৈকল্যর জন্য সুচিহ্নিতভাবে এই ঘটনাটিকে দায়ী করা হয়। এর ঠিক দুই বছর পরে তাঁর স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়। ১৯৬৩ সালের এক ভয়াবহ শীতে মানসিক অবস্থার চরম সীমা অতিক্রম করতে না পেরে গ্যাসের চুলায় আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাকে সমাহিত করা হয় ওয়েষ্ট ইয়র্কশায়ারে কবরস্থানে। তিনি ১৯৮২ সালে “দ্য কালেক্টেড পোয়েম" এর জন্য কবিতায় মরণোত্তর পুলিৎজার পুরস্কার পান।

লজ্জা - নির্মলেন্দু গুণ







লজ্জা 
-----------

আমি জানি, সে তার প্রতিকৃতি কোনোদিন ফটোতে দেখেনি,
আয়নায়, অথবা সন্দ্বীপে বসে যেরকম
সর্বনাশা সমুদ্রে দেখা যায়, তার জলে
মুখ দেখে হঠাৎ লজ্জায় সে শুধুই ম্লান হতো একদিন ।
আমি জানি পিঠ থেকে সুতোর কাপড়
কোনোদিন খোলেনি সে পুকুরের জলে, -লজ্জা,
সমস্ত কিছুতে লজ্জা ; কন্ঠে, চুলের খোঁপায়, চোখের তারায়।
আমি জানি আসন্নপ্রসব-অপরাধে, অপরাধবোধে
স্ফীতোদর সেই নারী কী রকম লজ্জাশীলা ছিল।
অথচ কেমন আজ ভিনদেশী মানুষের চোখের সম্মুখে
নগ্ন সে, নির্লজ্জ হয়ে শুয়ে আছে
জলধারে পশু আর পুরুষের পাশে শুয়ে আছে।
তার ছড়ানো মাংশল বাহু নগ্ন,
কোমর, পায়ের পাতা, বুকের উথ্থান গুলো নগ্ন,
গ্রীবার লাজুক ভাঁজ নগ্ন; – কে যেন উন্মাদ হয়ে
তার সে নিঃশব্দ নগ্নতায় বসে আছে।
তার সমস্ত শরীর জুড়ে প্রকৃতির নগ্ন পরিহাস,
শুধু গোপন অঙ্গের লজ্জা ঢেকে আছে সদ্য-প্রসূত-মৃত সন্তানের লাশ।
তার প্রতিবাদহীন স্বাধীন নগ্নতা বন্দী করে এখন
সাংবাদিক, ঝুলন্ত ক্যামেরা নিয়ে ফটোগ্রাফার
ফিরে যাচ্ছে পত্রিকার বিভিন্ন পাতায়। অসহায়,
সূর্যের কাফনে মোড়ানো আমার বোনের মতো
এই লাশ আগের মতন আর বলছে না, বলবে না;
‘আমি কিছুতেই ছবি তুলবো না......।’
যেন তার সমস্ত লজ্জার ভার এখন আমার।
কেবল আমার।

পিতামহের স্বেচ্ছামৃত্যু - সুনীতি দেবনাথ


পিতামহের স্বেচ্ছামৃত্যু

মৃত্যু তোমাকে ছোঁয়নি কোনদিন
জন্মের মাহেন্দ্রক্ষণ একবার এসেছিলো
তুমি ঘর পালালে
অনুচ্চ অরণ্য পার হয়ে
খোলা ময়দানে তেজিয়ান কৃষ্ণ অশ্বের মত
দিনমান ছুটলে কেবল ছুটলে
অচেতনে ছোটার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হাজারো সাল
প্রজন্মের নিম্নতম সিঁড়ি থেকে বিস্ময়ে
তোমাকে দেখে হতবাক আমি
পাহাড়ের উত্তুঙ্গ শিখর টপকে পেরোলে
কোনো এক বর্ষা মেদুর দিনে
আকাশে ঘনঘটা বজ্র নির্ঘোষ
শিখরে শিখরে বজ্র শিখার নাচন
সে এসেছিল
কেশসজ্জায় ময়ূর পালক গুঞ্জামালা গলে
শবরী বিদ্যুৎবালা হৃদয়ে মোচড় দেয়
এই দেখি এই নেই আহা
ওগো বালিকা দেখা দাও
প্রতিটি শিখরে আলোচোখ মেলে পেলেনা আর
প্রজন্মের সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে এলে হাজার বছরে
মৃত্যু নেই জন্ম নেই অনুভব অনুভূতি নেই
আছে শুধু শূন্যতা ক্লান্তি অপার অসীম
জলকুণ্ড সামনে রেখে তুমি বসে গেলে
শ্যাওলা শ্যামল প্রস্তরখন্ডে
জলআয়না
তোমার দুটি চক্ষু অলৌকিক তৃতীয় নয়নে
আয়নায় দেখলো তাকে জলকেলি মত্ত
আহা ময়ূরপুচ্ছ আহা গুঞ্জামালা
ভেসে ভেসে যায় স্মিত হাসি বালিকার মুখে
ছলছলাৎ জল ছিটকালো তোমার অঙ্গে
পাথর হয়ে গেলে সহস্রের এপারে
স্বেচ্ছামৃত্যুধারী পিতামহ আমার জাদুমন্ত্রে
ফিসফিস উচ্চারণ করলে শুধু সেই চর্যাবাণী
উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই শবরী বালী।
মোরঙ্গী পিচ্ছ পহরিন শবরী গিবত গুঞ্জরী মালী।।
পিতামহ এখন তুমি  ভাঙ্গাচুরা পাথরের স্ট্যাচু

কাজরী,
২১ মে, ২০১৭

সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি - যুগান্তর মিত্র

সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি

ভুল অনুবাদ ছড়িয়ে পড়ছে

তোমার গলি থেকে রাজপথে … 

ধোঁয়া আর ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে সেতু। 

তুমি চশমা খুলে রাখো।

আলো মাখা কলমে লেখো বৃষ্টির গান।

যেভাবে বরাবর সুর ছড়িয়ে পড়ে

নিকোনো উঠোনে,

যেভাবে জ্যোত্‍স্না এসে লুটোপুটি খায় 

ঝুলবারান্দার কার্নিশে,

সেভাবেই তুমি এসো

তুলোবীজের মতো ছড়িয়ে পড়ছে 

সন্ত্রাস সন্ত্রাস ! 

এসো পাগল হাওয়া, 

উড়িয়ে দাও যাবতীয় রেণু-সংহার,

আমরা এখন এক্কাদোক্কা খেলব,

গোল্লাছুট খেলব 

রাজারানীর উঠোনে। 

ওরা বসে থাকুক নিজস্ব আসনে। 

আমাদের হাসি গান থেকে শিখে নিক 

বেঁচে থাকার নিজস্ব নিয়ম। 

ভোঁতা অস্ত্র জমা হোক জঞ্জালের স্তূপে।

চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর পিচ্ছিল পথ - সাম্য রাইয়ান


চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর পিচ্ছিল পথ

দেহপুজারী স্বামির দিকে তাকিয়ে কেটে গ্যাছে কতো কান্নাক্লান্ত নিদ্রাহীন রাত

এসবই পুরনো পোশাক, সাজিয়ে রেখেছি নতুনের ছলে

আলমিরা ভরে যায় পোশাকে—পোশাকে শুধু, আবরণে

পোশাক মানে আবরণ, লুকিয়ে রাখার, লুকিয়ে থাকার

আমি পোশাক চাই না

আমার প্রকৃত শরীরে ঘৃণাস্বরে তাকিয়ে স্মৃতিচি‎হ্ন এঁকে দিও মন

তবু আমি পোশাক চাই না,পোশাক হল মিথ্যার আবরণ


লালটিপ - সুশান্ত হালদার

লালটিপ

রক্ত নদী সাঁতরিয়ে যখনই ধরতে গিয়েছি সূর্য

ঠিক তখনই পিছন থেকে কে যেন বলল

আমাকে বাঁচাও!চেয়ে দেখি সেই ধর্ষিতা

যে মায়ের কাফনের কাপড় কিনতে বেচে দিয়েছিল ইজ্জৎ

তারপর কত বসন্ত আসে, চলেও যায়

কোকিল ডাকে, পলাশ শিমুল শুকিয়ে মরে ডালে

তবুও ধর্ষিতার বুকে ফোটেনি ফুল

গোলাপ বাগিচার মতো করে

শুধু চৈত্রের দাবদাহে পুড়েছে

জমে থাকা কিছু না বলা কথা

চেয়ে দেখি সবুজ মাঠ পুড়ে খাক

এ কী আমারই দোষ

চেয়ে দেখি পূর্বপরুষ থেকে অর্জিত পতাকা ছিন্নভিন্ন

মায়ের বিমর্ষ মুখ,পিতার হতাশাগ্রস্থ নূয়ে পড়া দেহ

এ কী আমারই দোষ

নাকি তোমাদেরই ভুল

যারা রক্ত নদী সাঁতরিয়ে এনেছিল সূর্য পূর্ব দিগন্তে

শরীরের ঘামে যখন ভিজিয়েছি উত্তপ্ত রাজপথ

ছেঁড়া শার্টে বোতাম নাই বলে

প্রিয়তমা করেছে কত আফসোস

তবুও বলেছে মাথায় হাত বুলিয়ে

এ যে তোমারই দেশ

রাঙাতে হবে সবুজ শ্যামল প্রান্তর

শুধু কাজল কালো চোখে চোখ রেখে বলেছি তারে

আশ্বিনে না হয় দেবো নতুন শাড়ি এনে

আফসোস! জমাদার দেয়নি বর্গা

যেটুকু ছিল বাপের

রক্ত নদী সাঁতরিয়ে এসেছি প্রিয়ে

উঠে যদি সূর্য নতুন ভোরে পূর্ব দিগন্তে

পড়িয়ে দেবো তখন লালটিপ

তোমারই রক্ত রাঙা ললাটে!

              

প্রণয়পক্ষ - দ্বীপ সরকার

প্রণয়পক্ষ

একটা ঘটনার কূলুপে আটকে থাকা চারটি তৃষ্ণাচোখ

কিছু হৃদয়িক পরিবেশে ডুবে যাওয়া খরাচুল....

.

প্রণয়ের স্বীকার হওয়া কিছু দুঃখ,

কিছু ছ্যাঁকা খাওয়া রোদের প্রগাঢ় নিঃশ্বাস,

ওই গেঁও মেয়েটিকে নিয়ে

মায়াপথে ম্যারাথন কি আর হয়?

প্রথমতঃ বিশটি আঙুলের শপথে

প্রণয়চোখে সাঁতরিয়ে গিয়েছিলাম মধুচন্দ্রিমা রাত।

চেনা চোখে এ কেমন সুড়ুঙ্গপথ! 

খালি মনে হয় স্যঁঁতসেঁতে নদী।

লেখাঃ১/৭/২০১৭ইং

কবি - ইসলাম তারিক

কবি         

               (রম্যছড়া)

আমি হলাম যুগের সেরা মস্তবড় কবি
সারাটি দিন যাচ্ছি এঁকে এই প্রকৃতির ছবি।
দূর আকাশের চাঁদটি পেড়ে কথার মালা গাঁথি
সন্ধ্যারাতের জ্বোনাকিরা হয় যে আমার সাথী।

বনবনানীর সবুজ পাতা নদীর ঢেউয়ের ছবি
গল্পকথায় আঁকাই কতো পূব আকাশের রবি।
এই সমাজের অনেক কিছুই বলছি মধুর সুরে
কবি বলেই নিজের কথা রাখছি অনেক দূরে।

সারাটা দিন কাব্যকথায় দেশের কথাই বলি
হৃদয় মাঝে সঠিক কথা মান্য করে চলি।
এত্তো কিছু করছি আমি সারাবছর ধরে
তবু বউয়ের মন পেলাম না নেয় না আমার ঘরে!

আমি না কি আমড়া কাঠের আস্ত একটি ঢেঁকি!
বউয়ের কথায় ভয়ে ভয়ে হচ্ছি আমি মেকি!
লিখতে পারি মহাকাব্য সবার হৃদয়কাড়া
কিন্তু ওসব পানসে লাগে বউয়ের হুমক ছাড়া!

কাব্য আমার যেমন প্রিয় বউটা প্রিয় তেমন
গরম ভাতে মাংসের সাথে যেমন        প্রিয় লেমন।
এখন আমি কি যে করি? পাই না খুঁজে পথ
বউ ছাড়া ভাই কেমনে চালাই কাব্যছড়ার রথ?



স্বপ্ন- ধ্বনি - নাসির ওয়াদেন

স্বপ্ন-ধ্বনি     

      
স্বপ্নের শ্মশানে ফোটে বিষাদের ফুল 
কল্পনার জলাশয়ে ভাসে রাতের জোনাকি 
রোদ আলো জ্বেলে নিশাচর খোঁজে 
অন্ধকার হাতরায় চৌহদ্দি---

জিঘাংসা কাছে এলে প্রাণহীন হয় কবুতর 
খাদ্য-শৃঙ্খলে আবদ্ধ প্রকৃতি পুরুষ 
আলো খুবলে খুবলে খায় অন্ধকার ছায়া 
অশরীরী হেমন্ত কুড়োচ্ছে শিলোঞ্ছ কণা 
পরিপূর্ণ আগামী মাতৃ জঠর 

নব জাতক দেদার পণ্য হয়ে রক্ষকের ভরে পকেট 

সন্তানহীনা জননীর আঁখিজলে 
সিক্ত ভোরের আজান, সান্ধ্য-ধ্বনি 
ধ্বনি সকল বাজে শব্দের ফোয়ারা হয়ে 
স্বপ্নের গালিচায় ভেসে ওঠে রঙ্ ছবি । 

নাম নেই - পারমিতা চক্রবর্ত্তী

নাম নেই 

ক্রমে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে  আসে শব ৷ একের পর এক জাহাজে তোলা হয় ৷ এত তঞ্চকতা দেখেছে কুকুর , বিড়াল ফুটপাথের অংশীদারিত্ব ফেলে শামিল হয়েছে মিছিলে ৷  

এই যে লেখালেখি , মহুয়া বনের ধারে কয়লা খনির মধ্যে রেখে দেওয়া শ্রেয় ৷বোবা দেওয়ালটা দেখি সাদা হয়ে গেছে ৷ ২৫ শে বৈশাখের রজনীগন্ধার মালা পড়েছে ৷ তবু রবীন্দ্রনাথ আসে ...

ধীরে ধীরে সব কিছু জানা যায় ৷কাকেরা ও জেনে গেছে অনুর্বর মাটির ওপর ডিম পাড়ে  ৷ যার  কোন অভিবাবক নেই ৷ স্টিমারের ভোঁ ভোঁ শব্দ  খালাসির রক্তাল্পতা দেখে অভ্যস্ত ...

 

তবুও ...

ট্রাফিক থমকায় , হোঁচট খায়  কারখানার চোঙার ধোঁওয়ায় চলতে হয় ৷ অপেক্ষার অপর নাম প্রতিশ্রুতি ৷ যাকে  রোজ 

ছিটকানির উপরের অংশে দেখা ...

কখন বা

পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে ধর্মতলার মোড়ে অপেক্ষমান ...

গোপন দেউড়ী - অনাদি রঞ্জন বড়ুয়া

গোপন দেউড়ী

তারা কিভাবে জেনে গেছে, আমি
কবিতা লিখি মাঝরাতে।
নিঝুম নিশিরাত, একখন্ড নীলমেঘ
সেও জানে মধ্যরাতে আমার ঘুম ভাঙে ।
কি এক অভিনব বালিকা, কতো বলেছি
তারে, এ সময়টা সময় নয়।
নিরুদ্রুপ একটি রাতের প্রহরে
ছায়াপথ মারিয়ে কেন যে আসা ?
আমার বাগানের কাঠ গোলাপ,
রাঙা পাথরকুচি, তারাও কানাকানি করে
আমার কষ্ট শুরু হয় মধ্য মরুদ্যানে ।
পাথর ভাঙার বির্বণ কোলাহল, মাঝবয়সী
নারীর অপূর্ণ যত দুর্বিনীত শিখা-
কি করে বলে, আমার সূয্য জাগে 
নিশীত অন্ধকারে।
তারা কিভাবে জেনে গেছে
আমার যত কবিতা, বৃদ্ধা মাকে
একখন্ড ভালবাসার মেঘ ছায়া দেয়।
কিভাবে পথকলি গুটিশুটি ঘুমায়-
নিরুদ্রুপ শীতল বালুকনায়।
তারা কিভাবে জেনে গেছে
আমার সমস্ত ঘুম কেড়ে নেয়া এক একটি
যন্ত্রণা, পিচাশের উল্লাসে ভেঙে পরে রাত নিঝুমে
আমাকে নির্ঘূমে দেয় দু: খ বিভোরতা,
কষ্টের নিরুত্তাপ ভালবাসা জাগায়
দুঃখের গহীন রাত।
আমাকে মার্জনা করো 
তারা কিভাবে জেনে গেছে-
রাতের যত জোনাক, নিভে যাওয়া যতো আলো
আমাকে করেছে ঋণী।
বালিকা তুমি ফিরে যাও- হয়তোবা কোন কালে
ফের দেখা হবে কোন কবিতায়।।

চল্ রাধীকা - অপরাজিতা সরকার

চল্ রাধীকা

আরব সাগরের মত,নীল জল তোর চোখে!

পাখিরা করে খুঁনসুটি মগডালে

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো চারপাশে,

আযান আর শঙ্খের ধ্বনি মিলে মিশে একাকার।

পিছন থেকে বললি তুই ডেকে,চল্ রাধীকা-

লাশের উপর প্রেমের পাহাড় গড়ি।

আমি বললাম হেসে

তুলসী তলা ফেলে কেন,যাব চাঁদের দেশে?

পাহাড়ে নৃত্য করতে গেলে,পায়ে পাবো ব্যথা

তার চেয়ে বরং আয় আমরা

কবিতায় বলি,অনাহারীদের কথা

বর্ষণ মদিরা - মোঃনূরুল গনী

বর্ষণ মদিরা 

বর্ষণ মদিরায় আজ আমি

মীনের মত পুচ্ছ নাচিয়ে

ভাসবো নব জলে-তোমার আঙিনায় !

নেমে এসো সখি সন্তর্পণে

দু’হাতে উঁচিয়ে নীলাম্বরী জঙ্ঘা উন্মুক্ত করে !

ছুঁয়ে দিব তোমার পদ্ম চরণ

উন্মুখ ঠোঁটে !

মেখলা বেধেছো নিতম্বীনি

নিপুন রুপালী জরির ! এলো করে কবরী

নেমে আসো সলিলে

মেটাবো আশা আজ প্রাণে প্রাণে !

সব আনন্দের ভিরে একটা লাশ হবো - টিপু সুলতান

সব আনন্দের ভিড়ে একটি লাশ হবো

দেখি,

পার্থিবের খেরোখাতায় কোন সুনসান মোলায়েম

প্রভু শব্দটার ভাসাই সুর বেজে ওঠে কিনা;

কোনদিন।

যে প্রেমিকেরা

সারাক্ষণ

ভেঙ্গে যাবার

নিবিড় সম্পর্ক

উদ্বেগ

আর সব আনন্দ পুঁজি করে নিয়েছে

প্রতিশ্রুতির প্রাপ্তিতে,

পরস্পর গোত্র

এবং অকবির আলিঙ্গনে;

আমিই

তার অকিলতায়

সামুদ্রিক শামুক আর লালকাঁকড়ার মতো শ্যামা বাতাস থেকে

পৃথিবীর মোহনা এবং ধুকপুক স্মৃতির দ্যুতি পর্যন্ত

সকরুণ আউবাও বিলাপ সুর মুছে

আমার শেষ হুইসেল বাজিয়ে কিছু নৈশব্দ করুণার ষ্টেশনে

দুটি ভুরুর নিচে

চোখবুজে

সব আনন্দের ভিড়ে একটি লাশ হবো;

চুপিসারে!

ভিষণ রকম-

নাট্যদৃশ্যে তুমুল করতালি - ইউসুফ তাপস

নাট্যদৃশ্যে তুমু্ল করতালি 

কে যেনো শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছড়িয়েছে দিগম্বর দৃশ্য

ঘরে ঘরে ভিডিও লিংক, উত্তাপ

ইজ্জতের বেইজ্জতি মুখ্য নয়--- নাটক আরো গভীরে

মানুষগুলো আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের প্রসঙ্গে ভাবছে

এরপর তাকেও দেখা যাবে জন্মদিনের নৃত্যে

চিল কিন্তু ঠিকঠিক ছিঁড়ে নেয় বেকুবের কান

উদ্ধারে কারা নামে হ্যামিলন ঢলে?

মোহন সুরে বাজছে বাঁশি--- নাট্যদৃশ্যে তুমুল করতালি।

মুসলিম - ওয়াসিম রহমান সানী

মুসলিম

মুসলিম মুসলিম
ভেঙ্গে জঞ্জাল দাও তসলিম
দ্যাখো,আরবের প্রান্তর
আজ রক্তে রাঙাঘর
ক্রোধে সাগর সম ফুঁফে ফুঁফে উঠে –
আমির হামজা-হযরত আলী-ওমরের ঢাল তলোয়ার।
মুসলিম মুসলিম
ভেঙ্গে জঞ্জাল দাও তসলিম
দ্যাখো,রাসূলের কাঁধে হাসান হোসাইন নাচে
খুশিতে আত্মহারা/আরশ আজীম-হুর পরীরা,
জাএদাকে ক্ষমা করে/হোসাইনী ইতিহাস রচে।
মুসলিম মুসলিম
ভেঙ্গে জঞ্জাল দাও তসলিম
দ্যাখো,খোদার হাবীব দাঁড়ায়ে আরাফাত মাঠে
সকল মুসলিম ভাই ভাই,দেয় হাঁকে-
দ্বীধা দ্বন্দ ভুলে মিলাও বুক-বুকে।

দেহরক্ষী রোজা - আলমগীর সরকার লিটন

দেহরক্ষী রোজা 

দেহের মাঝে অশ্লীলিন কোষের সন্ত্রাসী বারে নিত্য ক্ষণে ক্ষণে কু-প্রস্তাব করে- রাজি ক্ষনে দেহটা উল্টে ক্যান্সারে শুধু মরে! আর কত ধর্ষণের ভয়ে কুয হবে রক্তনালী তার জন্য অটোফেজির প্রয়োজনে চৌদ্দ -পনের ঘন্টা বন্ধ রাখো খাদ্যনালী।

তাতেই যত অশ্লীলিন, সন্ত্রাসী, কু-প্রস্তাবরা মরার রাস্তা খুঁজে পাবে না – সু-শৃঙ্খিল দেহটা সতেজ হবে ! ঠিক ঈদ, বৈশাখীর আনন্দের মতো- সোনাই সোহাগে দীর্ঘদিন বেঁচ্চে থাকার স্বচ্ছ নিঃশ্বাসে- প্রত্যয় রবে ঘরে। ০৮-০৬-১৭ 

রঙধনু - কবিতা- চঞ্চল দেবনাথ

রঙধনু-কবিতা

না, এই প্রথম নয়।

অনেকবার দেখেছি অনেক বালিয়াড়ি ধ্বস, 

জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া ভেলা-ঘর।

আরো দেখেছি-

পাহাড় ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া গাংচিল

আর ঝর্ণায় নাইতে আসা পাহাড়ি মেয়ের নাচ।

সবই গতানুগতিক

চৈত্রের দুপুরের মতো একঘেয়ে।

কিন্তু কী আশ্চর্য!

যেদিন তোমার চোখের কোণে দেখেছি সমুদ্র

ঠিক সেদিনই হয়ে গেছি কবি।

আকাশজুড়ে লিখেছি রঙধনু-কবিতা, 

তারায় তারায় মহাকাব্য।

অবশ্য জানি তা তোমার পড়ার অবসর হয়নি।

একদিন চলে এসো, কোনো এক অবসরে 

তোমাকে সেই কবিতা শোনাবো।

কোন এক দিন -এলিজা আজাদ

কোনো এক দিন

কোনোএক দিন আমি আর থাকবোনা পৃথিবীর এই কোলাহলে-

ঠাঁই নেবে শরীর হিম ঘরে-

ক্ষুধাবোধ জাগ্রত হবেনা কোনোদিন-

হয়তো তখন আমি অচিন দেশের পথযাত্রী-

যার, ঘরবাড়ি-রোড নাম্বার নেই জানা-

ডাকবে না জারুল ফুল ইশারায়-

নীলরং শাড়ি পরে হারাবো না প্রেমিকের সাথে মায়াবী বনে-

খোঁপায় গুঁজে দেবো না প্রিয় ফুল বেলি-

মরিচ-লবন মেখে আমের ভর্তা খেয়ে চোখের জল ঝরাবো না আর;

আমার শূন্যতায় কারো বুকের পাঁজর এফোঁড়ওফোঁড় হবার নেই কোনোও সম্ভাবনা;

শুধু কিছু শালিক করবে হাঁচড়পাঁচড়

এবং সোঁদাযুক্ত মাটিই হবে শেষ ঠিকানা।

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

বেদনা শ্রীলেখা চ্যাটার্জি

 বেদনা   
        (ছোট গল্প) 


                  আমি মন | আমার ঘরে নিয়ত নিয়তির পরীক্ষা চলে | বেদনারা কথা বলে | আমি আমার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাই বাইরে ! সারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করি আমার দোসরকে | কত রংবেরঙের মনের সাথে প্রাণের কথা বলি | বন্ধুত্ব হয়না সবার সাথে | ম্যাচ করেনা আত্মার সাথে | হঠাৎ  গেলাম হারিয়ে | একা একা অন্ধকারকে জড়িয়ে ধরলাম | পেলাম সঙ্গীকে | নাম তার আদিত্য | বন্ধু হয়ে গেল আমার |কত কথা হল ! সে বললো তার বিরহের
কথা |  প্রিয়া তার চলে গেছে | বহু সংগ্রাম অনাহার , বহু অনাদরে বেদনার বলি হয়ে | আমিতো চেয়েছিলাম আদিত্যের হৃদয়ে স্থাপত্য গড়তে | কিন্তু পারিনি | বলেছিলাম একবার দীপ জ্বালাতে আমার ঘরে | কিন্তু জ্বালেনি ! অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আলোর পৃথিবীতে যাত্রা করলাম | চোখ ধাঁধিয়ে গেল ! চারিদিক ঘন সাদা রং ! হারিয়ে যাচ্ছি আমি | মনে হলো এ যে অন্ধকারের চেয়েও গাঢ় ! কিছুই দেখা যায় না ! যেতে যেতে আলোর দেয়ালে ধাক্কা খেলাম ! কে আমায়  টেনে নিল ! পরিচয়  হলো | নাম তার ঐশী ! সে খুঁজে চলে তার প্রিয়কে | কিন্তু ঐশীর সাথে ওরা কারা ? প্রাণেশ ও শিখা | ওরাই ঐশীর বল ভরসা ! 
                        ঐশীকে ডেকে বললাম -- তার প্রিয় চলে গেছে রাত্রির সাথে ! ওরা নতুন কোরে ঘর বাঁধবে | শঙ্খ  আর রাত্রি ঘর বেঁধেছে কালাপাহাড়ে ! 
তাদের নতুন বসতি ! ওরা ভালো আছে | খুব আনন্দে আছে | ঐশীর চোখ দুটো জলে ভরে গেল ! বাঁধ মানতে চাইছেনা | বললো --" জান মন আমরা অরণ্যের মাঝে শপথ করেছিলাম , কখনো কেউ কারুর হাত ছাড়ব না যতদিন বেঁচে থাকব | একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কেউ আমাদের আলাদা কোরতে পারবে না | আগুন ছিল সাক্ষী , অরণ্যের বৃক্ষরা ছিল সাক্ষী , নীলাকাশ তার রং বিছিয়ে দিয়েছিল , তারকারা মুগ্ধ নয়নে আলো জ্বেলে দিয়েছিল |  চাঁদ তার ভালবাসা ঢেলেছিল আমাদের মিলন শয্যায় |কিন্তু  বাতাস উতলা হয়েছিল ; কানে কানে বলেছিল দ্বিধা হও | " বাতাসের অঙ্গ জুড়ে এক অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল | তারপরেও আমরা একসঙ্গে এতগুলো বছর কাটিয়েছি |  শিখা আর প্রাণেশ কে পেয়েছি | সেদিন আদিত্যর ঘরে রাত্রির সাথে পরিচয় হয়েছিল | কিছু বুঝতে পারিনি ! এমন ও ঘটতে পারে ?"
হঠাৎ আদিত্যর কথা মনে পড়ায় ঐশী 
শিখা আর প্রাণেশকে নিয়ে আদিত্যের বাড়ি গেল | আদিত্য ঘরে ছোট্ট মেয়ে দীপ্তিকে নিয়ে বসে আছে | চারিদিকে ঘিরে আছে বেদনারা | ঐশী দীপ্তিকে নিজের কোলে তুলে নেয় | আদিত্য পুরুষ ; তাই নীরবতার আরশীতে তার কান্নাকে বন্দী করে | 
                    ছোট্ট মেয়ে দ্বীপ্তি ঐশীকে জড়িয়ে ধরে ছোট ছোট হাতদুটো দিয়ে |ঐশী তাকে কোলে তুলে নেয় ! কাঁদতে থাকে | আদিত্য মেঘের আড়ালে হারিয়ে যেতে থাকে | মন বললো "এমন কোরে জীবনকে অন্ধকারে নির্বাসিত করা কোনো প্রকল্প হতে পারে না | আদিত্য , তোমার স্থাপত্যে তুমি বিকীর্ণ হও ! মেঘকে বিদীর্ণ কোরে তোমায় প্রকট হতে হবে |রাত্রি কোনোদিন তোমার ছিল না ! সে যার তার কাছেই গেছে | " মন এবার ঐশী র অস্তিত্বে আদিত্যের উপলব্ধিকে একাত্ম কোরে 
শিখা দ্বীপ্তি ও প্রাণেশ কে স্থাপত্য দিল | তারা একসাথে জ্বলুক জীবনের সন্ধানে | বেদনারা আজো কথা বলে ! বলবে ! চিরদিন বলবে | এ যে আদিত্যের বেদনা | 
 


বন্ধ্যা সময় - শামীমা সীমা

বন্ধ্যা সময়!

এই প্রাণ দহনে শীতল আজ

ঘোর বর্ষণে খাঁ খাঁ পুড়ছে হিয়া

ব্যাসবাক্যের ঘোমটা ঢাকা লাজ

পংতি আঁটে ড্যাশ ডট কমা দিয়া।

পাহাড় ভেংগে ছুটছে মেঘের পা

শীর্ণশ্বাসে ওড়ে জলের শরীর

মশকরাতে ভিজায় পাতার গা

আটকে থাকে সময় বন্ধ্যা ঘড়ির।

দ্বন্দ্ব কাঁদে শব্দঘাটের খেয়ায়

বিরাগ বিভাঁজ এলোমেলো ক্ষণ

বালিয়াড়ির বাঁকে দাঁড়ায় ঠাঁয়

একলা উদাস বিবাগী এ মন।

গন্ধম ফল - মোকসেদুল ইসলাম

গন্ধম ফল 

রাতের আসরে বসলে ব্যাধি বেড়ে যায়

দূরত্ব মাত্র ষাটগজ

অথচ অন্ধ চোখে দেখি না কিছুই

ঘুণপোকায় খেয়ে ফেলেছে থৈ থৈ সুখ

শোকপর্ব শেষে হাত বাড়ালে কাচা ধানের গন্ধ পাবে তবু।

অসীম ক্ষত নিয়ে দূরবাসী হলাম

নদীর বুকে নৃত্য করে উন্মাদ বালুচর

রিহার্সেল শেষ করো দ্রুত

তুমি সাহস করে ডাকলেই হলো

শীতের খোলস ছেড়ে এবার ঠিকই বের হবো

জলের রেখায় ছুঁড়ে দেবো গন্ধম ফল।

আমি স্বপ্ন দেখতাম - রায়ান নুর

আমি স্বপ্ন দেখতাম

আমি স্বপ্ন দেখতাম একখানি মেঘ

নিত্য আমার জানালায় উকি দেয়,

আমি স্বপ্ন দেখতাম একটা নারী

যে প্রতি প্রভাতে বলবে,তুমি কেমন আছো?

আমি স্বপ্ন দেখতাম এমন এক উচ্চতা

যেখানে বসে দেখব হিমালয় চূড়া ৷

আমি স্বপ্ন দেখতাম এমন এক ভোর

যেখানে থাকবে পূবালী হাওয়া 

যার স্পর্শে দেখব সূর্যোদয় ৷

আমি স্বপ্ন দেখতাম এমন এক হাসি

যা আমার হৃদয়ের ভাষায় রণিত হবে ৷

আমি স্বপ্ন দেখতাম একখানি লোকালয়

যেখানে পাবোনা কান্নার কোন আওয়াজ

পাগলের কোন প্রলাপ,উন্মাদের কোন স্বর

এমন নিরিবিলি পরিবেশে সন্ধ্যার আকাশে

ডানা ঝাপটায় দূর পারিজাতের দিকভোলা পারিন্দা ৷

এমন সকাল, এমন সন্ধ্যা কাল হয়তো 

পড়বেনা চোখে,মানুষ কেবল প্রতারক ৷

প্রিয়জন কখনো প্রিয় নয় 

অর্থ কেবল বিনিময় নয়

দেখো স্বপ্নকে কেমন নিভিয়ে দিল ৷

আজ রাতটুকু অসীম অন্ধকার

যার কোন ভোর নেই,

যাতে সূর্য নেই 

চাঁদের আলো নেই 

সম্ভবত এমন আধারে হয়ত স্বপ্ন নেই ৷

আমি স্বপ্ন দেখতাম অসীম ঘুমের 

সেই স্বপন হয়ত সহজ কিন্তু অন্ধকার ৷

হে রাতের উত্তরের হাওয়া 

হে চাঁদের রূপালী আলো 

হে প্রভাতের আলো 

হে লোহিত সূর্য 

হে ডানা ঝাপটানো পাখি

হে উন্মাদ হাসির নারী 

তোমরা কি স্বপ্ন দেখো?

তবে কেন ঘুমিয়ে দিলে 

যে ঘুমে কখনো জাগেনা মানুষ 

যে ঘুমে মানুষ স্বপ্ন দেখেনা 

হে সুদূরের অখ্যাত কবি

তুমি কি রচবে আমার স্বপ্ন

যখন আমি ইতিহাসে খুঁজি নিজেকে 

হে রাতের চাঁদ 

তুমি কি অঙ্কিত করবে সে ছবি 

হে প্রভাতের সূর্য

তুমি কি স্মরবে আমায় ৷

নাকি সবাই আমাকে ভুলে যাবে অমোঘ নিয়মে ৷

তাই ঘুমে আমার বলতে ইচ্ছে করে

আমি কখনো ছিলাম না 

কখনো ছিলাম না 

তোমরা যা দেখেছ সব ভ্রম 

তোমাদের চক্ষু বড় প্রতারক ৷

কুমারী প্রেমের গল্প - তানভীর কালাম আজেমী

কুমারী প্রেমের গল্প 

তোমার স্বপ্নীল চোখের সৌরভী স্বপ্নগুলো 

ইচ্ছে ঘুড়ির মতো উড়ে বেড়ায় পঙ্কিল প্রহরে 

আকাশের খোলা জানালায় উঁকি দিয়ে 

ইশারায় ডাক দিয়ে যায় একাকী 

এক শিশির ভেজা নৈঃশব্দ সকালের মায়ায়।  

মধ্যরাত্রির ইচ্ছে গুলো অচল ছুঁয়ে নেমে আসে

কোন নির্জন স্বপ্নচারিণী রাতের সিঁড়ি বেয়ে 

শিশির ভেজা বিন্যাস্ত ঘাসফুলের বুকে 

প্রহরী জোনাকিগুচ্ছ সোনালী পিদিম জ্বালিয়ে 

ছড়িয়ে দিয়ে যায় অদেখা প্রেমের মায়া।

শত শতাব্দী ধরে লালন করা স্বপ্ন 

স্বর্ণালী আলোর প্রভাতী সুবাসিত আবীরের 

সিক্ত ধারায় ভিজিয়ে যায় নির্দ্বিধায় 

শিক বন্দী বাতায়নে নিভৃত রাতের প্রদীপ জ্বেলে 

শূন্য হৃদয়ে পূর্ণতার দুর্লভ যাত্রায়।

অন্তরার সারথি চন্দ্রিকা রাতে 

তারা ঝরার ঝরার মৌন প্রহরে যদি শুনতে পাও

রাট জাগা পাখির মুখরিত কলতান 

স্বপ্ন চোখে পথিক প্রহরগুলো তোমায় শুনাবে

নিঃসঙ্গ রাতের বাসরে কুমারী প্রেমের গল্প।   

মনের ভাঙ্গন- শহিদুল লিটন

মনের ভাঙ্গন

যখন যমুনায় জোয়ার আসে

তখন সুবোধ বালিকা

ঘোমটা ফেলে দেয়; নিয়ম ভুলে।

ঢেউ ওঠে,অভিযাত্রী দিক হারায়

মাঝি পণ করে, দাঁড় ধরে

প্রতিচ্ছায়া ক্ষেপে ওঠে,

বর্শা হাতে, কামিনী

আত্মার আদ্রতা বিলিয়ে দেয়

পদ্মার ভাঙনে।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার গল্প - মোঃ নাজমুল হাসান

মুক্তিযুদ্ধস্বাধীনতার গল্প

                

খোকা তুই গল্প শুনবি মুক্তিযুদ্ধের গল্প,

স্বাধীনতার গল্প

তবে শোন;বলি সেই অভিজ্ঞতা অল্প অল্প:

হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ক্ষ্রীপ্ত হায়ানার দল,

রাতের আঁধার;রক্তের স্রোত আর যেন জ্যান্ত দাবানল।

চারদিকে শুধু কান্নার আওয়াজ

বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ,

মরছে পুড়ছে;তবুও পালাবার উপায় নেই

সবাই যেন অন্ধ।

নিমিষেই সব শেষ-

অবশিষ্ট কিছু করুণ আর্তনাদ,

পিপাসু হায়নারা যেন নিয়ে গেছে

উষ্ণ রক্তের স্বাদ।

সেই থেকে শুরু খোকা দীর্ঘ নয়টি মাস,

এভাবেই চলে হত্যাযজ্ঞের নির্মম পরিহাস।

শুধু কি তাই,

ধর্ষিত হলো হাজারো মা বোন

লুঠিয়ে পিশাচের পায়ে,

অনেকে দিলো আত্মহুতি

জ্বালিয়ে আগুন গায়ে।

কেউবা দিলো গলায় দড়ি

কেউবা পেটে মারলো ছুড়ি

কেউবা হলো পাগলপ্রায়,

ভাবলেই গা ছিমছিম করে

এ যেন মানা দায়।

আমরা বাঙ্গালী অলস হলেও

ছিলাম সেদিন ক্ষুব্ধ,

যার যা আছে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি

শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

হয়তো বেশি অস্ত্র ছিলো না

পরার ভালো বস্ত্র ছিলো না

ছিলো না তেমন খাদ্য,

তবুও যেন আগ্রাসী ছিলাম

বাজিয়ে মুক্তির বাদ্য।

রক্ত দিয়েছি আরো দেবো

কানে বজ্রপাত,

বদলে শুধু স্বাধীনতা চাই

মেলাও হাতে হাত।

একতাই ছিলো তখন শক্তি কর্ম বল,

চালিয়েছিলাম সেদিন মরণের যাতাকল। 

লাশের উপর লাশ সাজিয়েছিলাম

পরাতে পারি নাই মালা,

তুই কি করে বুঝবি খোকা

পরাধীনতার জ্বালা। 

অবশেষে মুক্তি পেলাম;দিয়ে লাখো প্রাণ,

তাই তো তুই আজ গাইতে পারিস

স্বাধীনতার গান।