বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭
সম্পাদকীয়ঃ জুলাই সংখ্যা। ২০১৭ইং।
সম্পাদকীয়, জুলাই ২০১৭ইং সংখ্যা।
সাহিত্যের জায়গাগুলোতে কতোইনা অবদানের কথা আমরা শুনেছি।ইতিহাস পড়ে জেনেছি।আসলে এটা অনুস্বীকার্য একটা অনুষঙ্গ।মানুষ যেমন প্রথাগতভাবে বেড়ে উঠছে তেমনি সাহিত্যের ধারা উপধারার মধ্যে প্রতিনিয়তই মাত্রার যোগ হচ্ছে। চেঞ্জ হচ্ছে কবিতার ভাবসৃষ্টির কলা।তেমনি গল্প উপন্যাসেও ভিন্ন মাত্রার উদ্ভব দেখতে পাই। এটা আমাদের বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে একটা নবজাগরন।নতুনত্বের কাছে আমরা সবাই ভীর করছি।
বলছিলাম,অবদানের প্রসঙ্গ। প্রত্যেক কবি সাহিত্যিকগণ যা-ই করেন, তা-ই প্রকৃতির তাগিদে করে থাকেন। এতে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিকভাবে কতোজনই বা সুবিধা পান।তবে মননের নিকট সবাই লেগে আছি।মানুষের জন্যই কলম ধরি,খাতা ধরি। তাই কলমের একটা খোঁচাও মানুষের জন্যই মেলে ধরেন।
কবিদের প্রত্যেক খোঁচার মূল্য আছে। সেটা অর্থিক দিক থেকে না হলে প্রজন্মের নিকট অঙ্কুরিত বীজের মতই ফলদায়ক।অবদান,মুল্যবোধ,দায় সব কিছুমিলে সকলেই ভালোবাসার প্রসারমান কলকাটি ধরে আছি।এটা একটা জায়গায় নিবেই হয়তোবা।
সূচীপত্রঃ জুলাই সংখ্যা। ২০১৭ইং।
প্রবন্ধঃ
সালু আলমগীর
অনুবাদ কবিতাঃ
আবুল কাইয়ুম,রুবেল পারভেজ
কবিতাঃ
নির্মলেন্দু গুণ,সুনীতি দেবনাথ,যুগান্তর মিত্র,
সাম্য রাইয়ান, সুশান্ত হালদার, দ্বীপ সরকার।
রম্য ছড়াঃইসলাম তারিক
কবিতাঃ
নাসির ওয়াদেন,পারমিতা চক্রবর্ত্তী,অনাদি বড়ুয়া,অপরাজিতা সরকার,মোঃনূরুল গনী, টিপু সুলতান, ইউসুফ তাপস, ওয়াসীম রহমান সানী,আলমগীর সরকার লিটন, চঞ্চল দেবনাথ, এলিজা আজাদ।
গল্পঃ
শ্রীলেখা চ্যাটার্জি
কবিতাঃ
শামীমা সীমা, মোকসেদুল ইসলাম, রায়ান নুর,তানভীর কালাম আজেমী, শহিদুল লিটন, মোঃ নাজমুল হাসান, রুপক চৌধুরী, সুমন আহমেদ, বিশ্বজিত বিশ্বাস, আহমেদ ফারুক মীর, অভিলাষ মাহমুদ, বাউল মজনু।
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭
প্রবন্ধঃ পদ্য ও গদ্যছন্দের পার্থক্য - সালু আলমগীর
অনুবাদ কবিতাঃ আচরনের প্রতীক - আবুল কাইয়ুম
অনুবাদ কবিতাঃ এক পাগলীর প্রণয়গীতি -রুবেল পারভেজ
লজ্জা - নির্মলেন্দু গুণ
লজ্জা
-----------
আমি জানি, সে তার প্রতিকৃতি কোনোদিন ফটোতে দেখেনি,
আয়নায়, অথবা সন্দ্বীপে বসে যেরকম
সর্বনাশা সমুদ্রে দেখা যায়, তার জলে
মুখ দেখে হঠাৎ লজ্জায় সে শুধুই ম্লান হতো একদিন ।
আমি জানি পিঠ থেকে সুতোর কাপড়
কোনোদিন খোলেনি সে পুকুরের জলে, -লজ্জা,
সমস্ত কিছুতে লজ্জা ; কন্ঠে, চুলের খোঁপায়, চোখের তারায়।
আমি জানি আসন্নপ্রসব-অপরাধে, অপরাধবোধে
স্ফীতোদর সেই নারী কী রকম লজ্জাশীলা ছিল।
অথচ কেমন আজ ভিনদেশী মানুষের চোখের সম্মুখে
নগ্ন সে, নির্লজ্জ হয়ে শুয়ে আছে
জলধারে পশু আর পুরুষের পাশে শুয়ে আছে।
তার ছড়ানো মাংশল বাহু নগ্ন,
কোমর, পায়ের পাতা, বুকের উথ্থান গুলো নগ্ন,
গ্রীবার লাজুক ভাঁজ নগ্ন; – কে যেন উন্মাদ হয়ে
তার সে নিঃশব্দ নগ্নতায় বসে আছে।
তার সমস্ত শরীর জুড়ে প্রকৃতির নগ্ন পরিহাস,
শুধু গোপন অঙ্গের লজ্জা ঢেকে আছে সদ্য-প্রসূত-মৃত সন্তানের লাশ।
তার প্রতিবাদহীন স্বাধীন নগ্নতা বন্দী করে এখন
সাংবাদিক, ঝুলন্ত ক্যামেরা নিয়ে ফটোগ্রাফার
ফিরে যাচ্ছে পত্রিকার বিভিন্ন পাতায়। অসহায়,
সূর্যের কাফনে মোড়ানো আমার বোনের মতো
এই লাশ আগের মতন আর বলছে না, বলবে না;
‘আমি কিছুতেই ছবি তুলবো না......।’
যেন তার সমস্ত লজ্জার ভার এখন আমার।
কেবল আমার।
পিতামহের স্বেচ্ছামৃত্যু - সুনীতি দেবনাথ
পিতামহের স্বেচ্ছামৃত্যু
মৃত্যু তোমাকে ছোঁয়নি কোনদিন
জন্মের মাহেন্দ্রক্ষণ একবার এসেছিলো
তুমি ঘর পালালে
অনুচ্চ অরণ্য পার হয়ে
খোলা ময়দানে তেজিয়ান কৃষ্ণ অশ্বের মত
দিনমান ছুটলে কেবল ছুটলে
অচেতনে ছোটার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হাজারো সাল
প্রজন্মের নিম্নতম সিঁড়ি থেকে বিস্ময়ে
তোমাকে দেখে হতবাক আমি
পাহাড়ের উত্তুঙ্গ শিখর টপকে পেরোলে
কোনো এক বর্ষা মেদুর দিনে
আকাশে ঘনঘটা বজ্র নির্ঘোষ
শিখরে শিখরে বজ্র শিখার নাচন
সে এসেছিল
কেশসজ্জায় ময়ূর পালক গুঞ্জামালা গলে
শবরী বিদ্যুৎবালা হৃদয়ে মোচড় দেয়
এই দেখি এই নেই আহা
ওগো বালিকা দেখা দাও
প্রতিটি শিখরে আলোচোখ মেলে পেলেনা আর
প্রজন্মের সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে এলে হাজার বছরে
মৃত্যু নেই জন্ম নেই অনুভব অনুভূতি নেই
আছে শুধু শূন্যতা ক্লান্তি অপার অসীম
জলকুণ্ড সামনে রেখে তুমি বসে গেলে
শ্যাওলা শ্যামল প্রস্তরখন্ডে
জলআয়না
তোমার দুটি চক্ষু অলৌকিক তৃতীয় নয়নে
আয়নায় দেখলো তাকে জলকেলি মত্ত
আহা ময়ূরপুচ্ছ আহা গুঞ্জামালা
ভেসে ভেসে যায় স্মিত হাসি বালিকার মুখে
ছলছলাৎ জল ছিটকালো তোমার অঙ্গে
পাথর হয়ে গেলে সহস্রের এপারে
স্বেচ্ছামৃত্যুধারী পিতামহ আমার জাদুমন্ত্রে
ফিসফিস উচ্চারণ করলে শুধু সেই চর্যাবাণী
উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই শবরী বালী।
মোরঙ্গী পিচ্ছ পহরিন শবরী গিবত গুঞ্জরী মালী।।
পিতামহ এখন তুমি ভাঙ্গাচুরা পাথরের স্ট্যাচু
কাজরী,
২১ মে, ২০১৭
সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি - যুগান্তর মিত্র
সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি
ভুল অনুবাদ ছড়িয়ে পড়ছে
তোমার গলি থেকে রাজপথে …
ধোঁয়া আর ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে সেতু।
তুমি চশমা খুলে রাখো।
আলো মাখা কলমে লেখো বৃষ্টির গান।
যেভাবে বরাবর সুর ছড়িয়ে পড়ে
নিকোনো উঠোনে,
যেভাবে জ্যোত্স্না এসে লুটোপুটি খায়
ঝুলবারান্দার কার্নিশে,
সেভাবেই তুমি এসো
তুলোবীজের মতো ছড়িয়ে পড়ছে
সন্ত্রাস সন্ত্রাস !
এসো পাগল হাওয়া,
উড়িয়ে দাও যাবতীয় রেণু-সংহার,
আমরা এখন এক্কাদোক্কা খেলব,
গোল্লাছুট খেলব
রাজারানীর উঠোনে।
ওরা বসে থাকুক নিজস্ব আসনে।
আমাদের হাসি গান থেকে শিখে নিক
বেঁচে থাকার নিজস্ব নিয়ম।
ভোঁতা অস্ত্র জমা হোক জঞ্জালের স্তূপে।
চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর পিচ্ছিল পথ - সাম্য রাইয়ান
চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর পিচ্ছিল পথ
দেহপুজারী স্বামির দিকে তাকিয়ে কেটে গ্যাছে কতো কান্নাক্লান্ত নিদ্রাহীন রাত
এসবই পুরনো পোশাক, সাজিয়ে রেখেছি নতুনের ছলে
আলমিরা ভরে যায় পোশাকে—পোশাকে শুধু, আবরণে
পোশাক মানে আবরণ, লুকিয়ে রাখার, লুকিয়ে থাকার
আমি পোশাক চাই না
আমার প্রকৃত শরীরে ঘৃণাস্বরে তাকিয়ে স্মৃতিচিহ্ন এঁকে দিও মন
তবু আমি পোশাক চাই না,পোশাক হল মিথ্যার আবরণ
লালটিপ - সুশান্ত হালদার
লালটিপ
রক্ত নদী সাঁতরিয়ে যখনই ধরতে গিয়েছি সূর্য
ঠিক তখনই পিছন থেকে কে যেন বলল
আমাকে বাঁচাও!চেয়ে দেখি সেই ধর্ষিতা
যে মায়ের কাফনের কাপড় কিনতে বেচে দিয়েছিল ইজ্জৎ
তারপর কত বসন্ত আসে, চলেও যায়
কোকিল ডাকে, পলাশ শিমুল শুকিয়ে মরে ডালে
তবুও ধর্ষিতার বুকে ফোটেনি ফুল
গোলাপ বাগিচার মতো করে
শুধু চৈত্রের দাবদাহে পুড়েছে
জমে থাকা কিছু না বলা কথা
চেয়ে দেখি সবুজ মাঠ পুড়ে খাক
এ কী আমারই দোষ
চেয়ে দেখি পূর্বপরুষ থেকে অর্জিত পতাকা ছিন্নভিন্ন
মায়ের বিমর্ষ মুখ,পিতার হতাশাগ্রস্থ নূয়ে পড়া দেহ
এ কী আমারই দোষ
নাকি তোমাদেরই ভুল
যারা রক্ত নদী সাঁতরিয়ে এনেছিল সূর্য পূর্ব দিগন্তে
শরীরের ঘামে যখন ভিজিয়েছি উত্তপ্ত রাজপথ
ছেঁড়া শার্টে বোতাম নাই বলে
প্রিয়তমা করেছে কত আফসোস
তবুও বলেছে মাথায় হাত বুলিয়ে
এ যে তোমারই দেশ
রাঙাতে হবে সবুজ শ্যামল প্রান্তর
শুধু কাজল কালো চোখে চোখ রেখে বলেছি তারে
আশ্বিনে না হয় দেবো নতুন শাড়ি এনে
আফসোস! জমাদার দেয়নি বর্গা
যেটুকু ছিল বাপের
রক্ত নদী সাঁতরিয়ে এসেছি প্রিয়ে
উঠে যদি সূর্য নতুন ভোরে পূর্ব দিগন্তে
পড়িয়ে দেবো তখন লালটিপ
তোমারই রক্ত রাঙা ললাটে!
প্রণয়পক্ষ - দ্বীপ সরকার
প্রণয়পক্ষ
একটা ঘটনার কূলুপে আটকে থাকা চারটি তৃষ্ণাচোখ
কিছু হৃদয়িক পরিবেশে ডুবে যাওয়া খরাচুল....
.
প্রণয়ের স্বীকার হওয়া কিছু দুঃখ,
কিছু ছ্যাঁকা খাওয়া রোদের প্রগাঢ় নিঃশ্বাস,
ওই গেঁও মেয়েটিকে নিয়ে
মায়াপথে ম্যারাথন কি আর হয়?
প্রথমতঃ বিশটি আঙুলের শপথে
প্রণয়চোখে সাঁতরিয়ে গিয়েছিলাম মধুচন্দ্রিমা রাত।
চেনা চোখে এ কেমন সুড়ুঙ্গপথ!
খালি মনে হয় স্যঁঁতসেঁতে নদী।
লেখাঃ১/৭/২০১৭ইং
কবি - ইসলাম তারিক
কবি
(রম্যছড়া)
আমি হলাম যুগের সেরা মস্তবড় কবি
সারাটি দিন যাচ্ছি এঁকে এই প্রকৃতির ছবি।
দূর আকাশের চাঁদটি পেড়ে কথার মালা গাঁথি
সন্ধ্যারাতের জ্বোনাকিরা হয় যে আমার সাথী।
বনবনানীর সবুজ পাতা নদীর ঢেউয়ের ছবি
গল্পকথায় আঁকাই কতো পূব আকাশের রবি।
এই সমাজের অনেক কিছুই বলছি মধুর সুরে
কবি বলেই নিজের কথা রাখছি অনেক দূরে।
সারাটা দিন কাব্যকথায় দেশের কথাই বলি
হৃদয় মাঝে সঠিক কথা মান্য করে চলি।
এত্তো কিছু করছি আমি সারাবছর ধরে
তবু বউয়ের মন পেলাম না নেয় না আমার ঘরে!
আমি না কি আমড়া কাঠের আস্ত একটি ঢেঁকি!
বউয়ের কথায় ভয়ে ভয়ে হচ্ছি আমি মেকি!
লিখতে পারি মহাকাব্য সবার হৃদয়কাড়া
কিন্তু ওসব পানসে লাগে বউয়ের হুমক ছাড়া!
কাব্য আমার যেমন প্রিয় বউটা প্রিয় তেমন
গরম ভাতে মাংসের সাথে যেমন প্রিয় লেমন।
এখন আমি কি যে করি? পাই না খুঁজে পথ
বউ ছাড়া ভাই কেমনে চালাই কাব্যছড়ার রথ?
স্বপ্ন- ধ্বনি - নাসির ওয়াদেন
স্বপ্ন-ধ্বনি
স্বপ্নের শ্মশানে ফোটে বিষাদের ফুল
কল্পনার জলাশয়ে ভাসে রাতের জোনাকি
রোদ আলো জ্বেলে নিশাচর খোঁজে
অন্ধকার হাতরায় চৌহদ্দি---
জিঘাংসা কাছে এলে প্রাণহীন হয় কবুতর
খাদ্য-শৃঙ্খলে আবদ্ধ প্রকৃতি পুরুষ
আলো খুবলে খুবলে খায় অন্ধকার ছায়া
অশরীরী হেমন্ত কুড়োচ্ছে শিলোঞ্ছ কণা
পরিপূর্ণ আগামী মাতৃ জঠর
নব জাতক দেদার পণ্য হয়ে রক্ষকের ভরে পকেট
সন্তানহীনা জননীর আঁখিজলে
সিক্ত ভোরের আজান, সান্ধ্য-ধ্বনি
ধ্বনি সকল বাজে শব্দের ফোয়ারা হয়ে
স্বপ্নের গালিচায় ভেসে ওঠে রঙ্ ছবি ।
নাম নেই - পারমিতা চক্রবর্ত্তী
নাম নেই
ক্রমে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসে শব ৷ একের পর এক জাহাজে তোলা হয় ৷ এত তঞ্চকতা দেখেছে কুকুর , বিড়াল ফুটপাথের অংশীদারিত্ব ফেলে শামিল হয়েছে মিছিলে ৷
এই যে লেখালেখি , মহুয়া বনের ধারে কয়লা খনির মধ্যে রেখে দেওয়া শ্রেয় ৷বোবা দেওয়ালটা দেখি সাদা হয়ে গেছে ৷ ২৫ শে বৈশাখের রজনীগন্ধার মালা পড়েছে ৷ তবু রবীন্দ্রনাথ আসে ...
ধীরে ধীরে সব কিছু জানা যায় ৷কাকেরা ও জেনে গেছে অনুর্বর মাটির ওপর ডিম পাড়ে ৷ যার কোন অভিবাবক নেই ৷ স্টিমারের ভোঁ ভোঁ শব্দ খালাসির রক্তাল্পতা দেখে অভ্যস্ত ...
তবুও ...
ট্রাফিক থমকায় , হোঁচট খায় কারখানার চোঙার ধোঁওয়ায় চলতে হয় ৷ অপেক্ষার অপর নাম প্রতিশ্রুতি ৷ যাকে রোজ
ছিটকানির উপরের অংশে দেখা ...
কখন বা
পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে ধর্মতলার মোড়ে অপেক্ষমান ...
গোপন দেউড়ী - অনাদি রঞ্জন বড়ুয়া
চল্ রাধীকা - অপরাজিতা সরকার
চল্ রাধীকা
আরব সাগরের মত,নীল জল তোর চোখে!
পাখিরা করে খুঁনসুটি মগডালে
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো চারপাশে,
আযান আর শঙ্খের ধ্বনি মিলে মিশে একাকার।
পিছন থেকে বললি তুই ডেকে,চল্ রাধীকা-
লাশের উপর প্রেমের পাহাড় গড়ি।
আমি বললাম হেসে
তুলসী তলা ফেলে কেন,যাব চাঁদের দেশে?
পাহাড়ে নৃত্য করতে গেলে,পায়ে পাবো ব্যথা
তার চেয়ে বরং আয় আমরা
কবিতায় বলি,অনাহারীদের কথা
বর্ষণ মদিরা - মোঃনূরুল গনী
বর্ষণ মদিরা
বর্ষণ মদিরায় আজ আমি
মীনের মত পুচ্ছ নাচিয়ে
ভাসবো নব জলে-তোমার আঙিনায় !
নেমে এসো সখি সন্তর্পণে
দু’হাতে উঁচিয়ে নীলাম্বরী জঙ্ঘা উন্মুক্ত করে !
ছুঁয়ে দিব তোমার পদ্ম চরণ
উন্মুখ ঠোঁটে !
মেখলা বেধেছো নিতম্বীনি
নিপুন রুপালী জরির ! এলো করে কবরী
নেমে আসো সলিলে
মেটাবো আশা আজ প্রাণে প্রাণে !
সব আনন্দের ভিরে একটা লাশ হবো - টিপু সুলতান
সব আনন্দের ভিড়ে একটি লাশ হবো
দেখি,
পার্থিবের খেরোখাতায় কোন সুনসান মোলায়েম
প্রভু শব্দটার ভাসাই সুর বেজে ওঠে কিনা;
কোনদিন।
যে প্রেমিকেরা
সারাক্ষণ
ভেঙ্গে যাবার
নিবিড় সম্পর্ক
উদ্বেগ
আর সব আনন্দ পুঁজি করে নিয়েছে
প্রতিশ্রুতির প্রাপ্তিতে,
পরস্পর গোত্র
এবং অকবির আলিঙ্গনে;
আমিই
তার অকিলতায়
সামুদ্রিক শামুক আর লালকাঁকড়ার মতো শ্যামা বাতাস থেকে
পৃথিবীর মোহনা এবং ধুকপুক স্মৃতির দ্যুতি পর্যন্ত
সকরুণ আউবাও বিলাপ সুর মুছে
আমার শেষ হুইসেল বাজিয়ে কিছু নৈশব্দ করুণার ষ্টেশনে
দুটি ভুরুর নিচে
চোখবুজে
সব আনন্দের ভিড়ে একটি লাশ হবো;
চুপিসারে!
ভিষণ রকম-
নাট্যদৃশ্যে তুমুল করতালি - ইউসুফ তাপস
নাট্যদৃশ্যে তুমু্ল করতালি
কে যেনো শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছড়িয়েছে দিগম্বর দৃশ্য
ঘরে ঘরে ভিডিও লিংক, উত্তাপ
ইজ্জতের বেইজ্জতি মুখ্য নয়--- নাটক আরো গভীরে
মানুষগুলো আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের প্রসঙ্গে ভাবছে
এরপর তাকেও দেখা যাবে জন্মদিনের নৃত্যে
চিল কিন্তু ঠিকঠিক ছিঁড়ে নেয় বেকুবের কান
উদ্ধারে কারা নামে হ্যামিলন ঢলে?
মোহন সুরে বাজছে বাঁশি--- নাট্যদৃশ্যে তুমুল করতালি।
মুসলিম - ওয়াসিম রহমান সানী
দেহরক্ষী রোজা - আলমগীর সরকার লিটন
দেহরক্ষী রোজা
দেহের মাঝে অশ্লীলিন কোষের সন্ত্রাসী বারে নিত্য ক্ষণে ক্ষণে কু-প্রস্তাব করে- রাজি ক্ষনে দেহটা উল্টে ক্যান্সারে শুধু মরে! আর কত ধর্ষণের ভয়ে কুয হবে রক্তনালী তার জন্য অটোফেজির প্রয়োজনে চৌদ্দ -পনের ঘন্টা বন্ধ রাখো খাদ্যনালী।
তাতেই যত অশ্লীলিন, সন্ত্রাসী, কু-প্রস্তাবরা মরার রাস্তা খুঁজে পাবে না – সু-শৃঙ্খিল দেহটা সতেজ হবে ! ঠিক ঈদ, বৈশাখীর আনন্দের মতো- সোনাই সোহাগে দীর্ঘদিন বেঁচ্চে থাকার স্বচ্ছ নিঃশ্বাসে- প্রত্যয় রবে ঘরে। ০৮-০৬-১৭
রঙধনু - কবিতা- চঞ্চল দেবনাথ
রঙধনু-কবিতা
না, এই প্রথম নয়।
অনেকবার দেখেছি অনেক বালিয়াড়ি ধ্বস,
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া ভেলা-ঘর।
আরো দেখেছি-
পাহাড় ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া গাংচিল
আর ঝর্ণায় নাইতে আসা পাহাড়ি মেয়ের নাচ।
সবই গতানুগতিক
চৈত্রের দুপুরের মতো একঘেয়ে।
কিন্তু কী আশ্চর্য!
যেদিন তোমার চোখের কোণে দেখেছি সমুদ্র
ঠিক সেদিনই হয়ে গেছি কবি।
আকাশজুড়ে লিখেছি রঙধনু-কবিতা,
তারায় তারায় মহাকাব্য।
অবশ্য জানি তা তোমার পড়ার অবসর হয়নি।
একদিন চলে এসো, কোনো এক অবসরে
তোমাকে সেই কবিতা শোনাবো।
কোন এক দিন -এলিজা আজাদ
কোনো এক দিন
কোনোএক দিন আমি আর থাকবোনা পৃথিবীর এই কোলাহলে-
ঠাঁই নেবে শরীর হিম ঘরে-
ক্ষুধাবোধ জাগ্রত হবেনা কোনোদিন-
হয়তো তখন আমি অচিন দেশের পথযাত্রী-
যার, ঘরবাড়ি-রোড নাম্বার নেই জানা-
ডাকবে না জারুল ফুল ইশারায়-
নীলরং শাড়ি পরে হারাবো না প্রেমিকের সাথে মায়াবী বনে-
খোঁপায় গুঁজে দেবো না প্রিয় ফুল বেলি-
মরিচ-লবন মেখে আমের ভর্তা খেয়ে চোখের জল ঝরাবো না আর;
আমার শূন্যতায় কারো বুকের পাঁজর এফোঁড়ওফোঁড় হবার নেই কোনোও সম্ভাবনা;
শুধু কিছু শালিক করবে হাঁচড়পাঁচড়
এবং সোঁদাযুক্ত মাটিই হবে শেষ ঠিকানা।
রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭
বেদনা শ্রীলেখা চ্যাটার্জি
বন্ধ্যা সময় - শামীমা সীমা
বন্ধ্যা সময়!
এই প্রাণ দহনে শীতল আজ
ঘোর বর্ষণে খাঁ খাঁ পুড়ছে হিয়া
ব্যাসবাক্যের ঘোমটা ঢাকা লাজ
পংতি আঁটে ড্যাশ ডট কমা দিয়া।
পাহাড় ভেংগে ছুটছে মেঘের পা
শীর্ণশ্বাসে ওড়ে জলের শরীর
মশকরাতে ভিজায় পাতার গা
আটকে থাকে সময় বন্ধ্যা ঘড়ির।
দ্বন্দ্ব কাঁদে শব্দঘাটের খেয়ায়
বিরাগ বিভাঁজ এলোমেলো ক্ষণ
বালিয়াড়ির বাঁকে দাঁড়ায় ঠাঁয়
একলা উদাস বিবাগী এ মন।
গন্ধম ফল - মোকসেদুল ইসলাম
গন্ধম ফল
রাতের আসরে বসলে ব্যাধি বেড়ে যায়
দূরত্ব মাত্র ষাটগজ
অথচ অন্ধ চোখে দেখি না কিছুই
ঘুণপোকায় খেয়ে ফেলেছে থৈ থৈ সুখ
শোকপর্ব শেষে হাত বাড়ালে কাচা ধানের গন্ধ পাবে তবু।
অসীম ক্ষত নিয়ে দূরবাসী হলাম
নদীর বুকে নৃত্য করে উন্মাদ বালুচর
রিহার্সেল শেষ করো দ্রুত
তুমি সাহস করে ডাকলেই হলো
শীতের খোলস ছেড়ে এবার ঠিকই বের হবো
জলের রেখায় ছুঁড়ে দেবো গন্ধম ফল।
আমি স্বপ্ন দেখতাম - রায়ান নুর
আমি স্বপ্ন দেখতাম
আমি স্বপ্ন দেখতাম একখানি মেঘ
নিত্য আমার জানালায় উকি দেয়,
আমি স্বপ্ন দেখতাম একটা নারী
যে প্রতি প্রভাতে বলবে,তুমি কেমন আছো?
আমি স্বপ্ন দেখতাম এমন এক উচ্চতা
যেখানে বসে দেখব হিমালয় চূড়া ৷
আমি স্বপ্ন দেখতাম এমন এক ভোর
যেখানে থাকবে পূবালী হাওয়া
যার স্পর্শে দেখব সূর্যোদয় ৷
আমি স্বপ্ন দেখতাম এমন এক হাসি
যা আমার হৃদয়ের ভাষায় রণিত হবে ৷
আমি স্বপ্ন দেখতাম একখানি লোকালয়
যেখানে পাবোনা কান্নার কোন আওয়াজ
পাগলের কোন প্রলাপ,উন্মাদের কোন স্বর
এমন নিরিবিলি পরিবেশে সন্ধ্যার আকাশে
ডানা ঝাপটায় দূর পারিজাতের দিকভোলা পারিন্দা ৷
এমন সকাল, এমন সন্ধ্যা কাল হয়তো
পড়বেনা চোখে,মানুষ কেবল প্রতারক ৷
প্রিয়জন কখনো প্রিয় নয়
অর্থ কেবল বিনিময় নয়
দেখো স্বপ্নকে কেমন নিভিয়ে দিল ৷
আজ রাতটুকু অসীম অন্ধকার
যার কোন ভোর নেই,
যাতে সূর্য নেই
চাঁদের আলো নেই
সম্ভবত এমন আধারে হয়ত স্বপ্ন নেই ৷
আমি স্বপ্ন দেখতাম অসীম ঘুমের
সেই স্বপন হয়ত সহজ কিন্তু অন্ধকার ৷
হে রাতের উত্তরের হাওয়া
হে চাঁদের রূপালী আলো
হে প্রভাতের আলো
হে লোহিত সূর্য
হে ডানা ঝাপটানো পাখি
হে উন্মাদ হাসির নারী
তোমরা কি স্বপ্ন দেখো?
তবে কেন ঘুমিয়ে দিলে
যে ঘুমে কখনো জাগেনা মানুষ
যে ঘুমে মানুষ স্বপ্ন দেখেনা
হে সুদূরের অখ্যাত কবি
তুমি কি রচবে আমার স্বপ্ন
যখন আমি ইতিহাসে খুঁজি নিজেকে
হে রাতের চাঁদ
তুমি কি অঙ্কিত করবে সে ছবি
হে প্রভাতের সূর্য
তুমি কি স্মরবে আমায় ৷
নাকি সবাই আমাকে ভুলে যাবে অমোঘ নিয়মে ৷
তাই ঘুমে আমার বলতে ইচ্ছে করে
আমি কখনো ছিলাম না
কখনো ছিলাম না
তোমরা যা দেখেছ সব ভ্রম
তোমাদের চক্ষু বড় প্রতারক ৷
কুমারী প্রেমের গল্প - তানভীর কালাম আজেমী
কুমারী প্রেমের গল্প
তোমার স্বপ্নীল চোখের সৌরভী স্বপ্নগুলো
ইচ্ছে ঘুড়ির মতো উড়ে বেড়ায় পঙ্কিল প্রহরে
আকাশের খোলা জানালায় উঁকি দিয়ে
ইশারায় ডাক দিয়ে যায় একাকী
এক শিশির ভেজা নৈঃশব্দ সকালের মায়ায়।
মধ্যরাত্রির ইচ্ছে গুলো অচল ছুঁয়ে নেমে আসে
কোন নির্জন স্বপ্নচারিণী রাতের সিঁড়ি বেয়ে
শিশির ভেজা বিন্যাস্ত ঘাসফুলের বুকে
প্রহরী জোনাকিগুচ্ছ সোনালী পিদিম জ্বালিয়ে
ছড়িয়ে দিয়ে যায় অদেখা প্রেমের মায়া।
শত শতাব্দী ধরে লালন করা স্বপ্ন
স্বর্ণালী আলোর প্রভাতী সুবাসিত আবীরের
সিক্ত ধারায় ভিজিয়ে যায় নির্দ্বিধায়
শিক বন্দী বাতায়নে নিভৃত রাতের প্রদীপ জ্বেলে
শূন্য হৃদয়ে পূর্ণতার দুর্লভ যাত্রায়।
অন্তরার সারথি চন্দ্রিকা রাতে
তারা ঝরার ঝরার মৌন প্রহরে যদি শুনতে পাও
রাট জাগা পাখির মুখরিত কলতান
স্বপ্ন চোখে পথিক প্রহরগুলো তোমায় শুনাবে
নিঃসঙ্গ রাতের বাসরে কুমারী প্রেমের গল্প।
মনের ভাঙ্গন- শহিদুল লিটন
মনের ভাঙ্গন
যখন যমুনায় জোয়ার আসে
তখন সুবোধ বালিকা
ঘোমটা ফেলে দেয়; নিয়ম ভুলে।
ঢেউ ওঠে,অভিযাত্রী দিক হারায়
মাঝি পণ করে, দাঁড় ধরে
প্রতিচ্ছায়া ক্ষেপে ওঠে,
বর্শা হাতে, কামিনী
আত্মার আদ্রতা বিলিয়ে দেয়
পদ্মার ভাঙনে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার গল্প - মোঃ নাজমুল হাসান
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার গল্প
খোকা তুই গল্প শুনবি মুক্তিযুদ্ধের গল্প,
স্বাধীনতার গল্প
তবে শোন;বলি সেই অভিজ্ঞতা অল্প অল্প:
হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ক্ষ্রীপ্ত হায়ানার দল,
রাতের আঁধার;রক্তের স্রোত আর যেন জ্যান্ত দাবানল।
চারদিকে শুধু কান্নার আওয়াজ
বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ,
মরছে পুড়ছে;তবুও পালাবার উপায় নেই
সবাই যেন অন্ধ।
নিমিষেই সব শেষ-
অবশিষ্ট কিছু করুণ আর্তনাদ,
পিপাসু হায়নারা যেন নিয়ে গেছে
উষ্ণ রক্তের স্বাদ।
সেই থেকে শুরু খোকা দীর্ঘ নয়টি মাস,
এভাবেই চলে হত্যাযজ্ঞের নির্মম পরিহাস।
শুধু কি তাই,
ধর্ষিত হলো হাজারো মা বোন
লুঠিয়ে পিশাচের পায়ে,
অনেকে দিলো আত্মহুতি
জ্বালিয়ে আগুন গায়ে।
কেউবা দিলো গলায় দড়ি
কেউবা পেটে মারলো ছুড়ি
কেউবা হলো পাগলপ্রায়,
ভাবলেই গা ছিমছিম করে
এ যেন মানা দায়।
আমরা বাঙ্গালী অলস হলেও
ছিলাম সেদিন ক্ষুব্ধ,
যার যা আছে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
হয়তো বেশি অস্ত্র ছিলো না
পরার ভালো বস্ত্র ছিলো না
ছিলো না তেমন খাদ্য,
তবুও যেন আগ্রাসী ছিলাম
বাজিয়ে মুক্তির বাদ্য।
রক্ত দিয়েছি আরো দেবো
কানে বজ্রপাত,
বদলে শুধু স্বাধীনতা চাই
মেলাও হাতে হাত।
একতাই ছিলো তখন শক্তি কর্ম বল,
চালিয়েছিলাম সেদিন মরণের যাতাকল।
লাশের উপর লাশ সাজিয়েছিলাম
পরাতে পারি নাই মালা,
তুই কি করে বুঝবি খোকা
পরাধীনতার জ্বালা।
অবশেষে মুক্তি পেলাম;দিয়ে লাখো প্রাণ,
তাই তো তুই আজ গাইতে পারিস
স্বাধীনতার গান।