শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

প্রচ্ছদ


সম্পাদকীয়ঃকুয়াশা ওয়েবজিন।। অক্টোবর সংখ্যা ।। ২০১৭ইং।।






সম্পাদকীয়ঃকুয়াশা ওয়েবজিন।। অক্টোবর সংখ্যা ।। ২০১৭ইং।।
--------------------------------------------------------------------
মায়ানমার, রোহিঙ্গা এই বিষয়গুলো বর্তামান প্রেক্ষাপটের আলোচনার মুখ্যবিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষের চিন্তা এবং চোখ, মুখ সে দিকেই উন্মুখ হয়ে আছে। 
এতোকিছুর মধ্যে আমরা সাহিত্যকে ভালোবেসে, কবিতাকে ভালোবেসে একটা কিছু করতে পারছি বলে মনকে বুঝাই । এই  সমস্ত বিড়ম্বনা সব সময়ই তাড়া করে বেড়ায়। কেউ তো বলেনি আমাকে কবিতাকে নিয় , এই দেশের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করতে, দু - কলম লিখতে। আথচ তাই করছি। আমরা যারা লিখিয়ে, আসলে আমাদের দায়বদ্ধতা কোথায়। অবশ্যই কোথাও না কোথাও আমরা আটকিয়ে আছি। কেউ আমাদিগকে ঈশারা করে লিখতে। কেউ তাড়া করে মানুষদের পক্ষে, দেশের পক্ষে কিছু একটা করতে। এর নামই হয়তো দায়বদ্ধতা। এটা চেতনার বিষয়। এটা ভালোবাসা থেকে নিংরিয়ে আসে। তাই আমরা লিখি,আঁকি,সম্পাদনা করি। নিজেকে প্রফুল্ল মনে করি। এটা নিছক নয়, হয়ও বটে।

কুয়াশা ওয়েবজিন হাঁটি হাঁটি করে বেশ এগিয়ে চলেছে। এ পর্যন্ত সাতটি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। 
তবে খুব দুঃখজনক  হলো প্রথম সংখ্যার সমস্ত প্রকাশনা হারিয়ে ফেলেছি । তাই ছয়টি প্রকাশনা দৃশ্যমান রাখতে বাধ্য হয়েছি । কুয়াশা ওয়েবজিন যতদ্রুত এগিয়ে একটা পর্যায়ে যেতে পেরেছে এটা অনন্য বিষয়। দেশ এবং দেশের বাইরের কবি লেখকগণ যতটা উৎসাহ উদ্দীপনা এবং সাড়া দিয়েছেন তা খুব ভালোলাগার বিষয় বটে। আমি সম্পাদক হিসেবে আনন্দিত যে, আমি দেশ,  দশের জন্য কিছু করছি এবং তার জন্য ভালোবাসা পাচ্ছি।

এই সংখ্যাটি অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কভারেজ দেয়া হয়েছে। তাই হয়তো কারো লেখা স্থান দিতে পারিনি বা ইচ্ছা থাকলেও তা হয়ে ওঠেনি। এটার জন্য আপনাকেই চর্চাশীল হতে হবে।
আপনাকে অধৈর্য্য হলে চলবেনা। লিখতে থাকেন , লেখা পাঠাতে থাকেন। আমরা আপনার পাশেই আছি। 

------------------------
সম্প্দক

সূচিপত্রঃ কুয়াশা ওয়েবজিন।। অক্টোবর সংখ্যা।।২০১৭।।

সূচিপত্রঃ কুয়াশা ওয়েবজিন।। অক্টোবর সংখ্যা।।২০১৭।।

প্রবন্ধঃ
নাসির ওয়াদেন

কবিতাঃ
মুহম্মদ নুরুল হুদা , সৌমিত্র চক্রবর্তী , রফিক হাসান , তাপস কিরণ রায় ,বর্ণালী চ্যাটার্জ্জী , এলিজা আজাদ , মোকসেদুল ইসলাম , দ্বীপ সরকার , রুবেল সরকার , পারমিতা চক্রবর্ত্তী , আতাউর রহমান রোদ্দুর , হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় , কবির হুমায়ুন , হিরণ্য হারুন , আবু তাহের , সজল মালাকার , সিদ্দিক প্রামাণিক , শ্রীলেখা চ্যাটার্জ্জী , সুশান্ত হালদার , কাজী আনিসুল হক।

উপন্যাসঃ
তৈমুর মল্লিক

কবিতাঃ
সুনীতি দেবনাথ, টিপু সুলতান, মেকলিন আজাদ , সাইফ ফাতেউর রহমান , বিশ্বজিৎ বিশ্বাস , আলমগীর ইমন , আলম-গীর আখন্দ , অনন্ত সুজন , কামরান চৌধুরী , জগদীশ আসোয়র।

গল্পঃ 
রওশন রুবী , মারুনা রাহী রিমি।

কবিতাঃ
শিস খন্দকার , শুভম রায়, আলমগীর সরকার লিটন , ইয়াসমিন আক্তার মনি , এনামুল মিয়াজি ,শামীম আহমেদ , বি এন কে মাহমুদুল হাসান , তপন সতপথী , অনন্যা রহমান অনু , রাসেল মোরশেদ , বোরহান মেহেদী, স্বপন শর্মা।

ছড়াঃ
মানসুর মুজাম্মিল , সৈয়দ আকরাম হোসাইন,বিচিত্র কুমার।

বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

প্রবন্ধঃকবিতা আন্দোলনে অনুকবিতার ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা ।। নাসির ওয়াদেন



কবিতা আন্দোলনে অনুকবিতার ভূমিকা ও  প্রাসঙ্গিকতা  

            

কবিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলতে চাই যে, কবিতা মানুষের জীবনের বিশেষ বিশেষ মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে পারে ।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ যারা তারা কবি, কবি যাই করুক, অপরাধমূলক কাজ করতে পারে না ।তাই আমি কবিদের পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মতো মনে করি ।শব্দ, ছন্দ, লয় তাল দিয়ে গানের সুরের ভেতর দিয়ে হৃদয়ে যেমন প্রবেশ করা যায়, তেমনি কবিতার শব্দ বন্ধনের মধ্য দিয়ে জীবন  নৈরাশ্যের, হতাশার অভিব্যক্তি, মগ্নচৈতন্যের ক্ষেত্রভূমিতে বারি সঞ্চার করে । তাই কবিতা আমার পরম প্রাণ বস্তু ।আধুনিক কবিতার বিবর্তনে কবিতা তার দিক যেমন পাল্টাচ্ছে, তেমনি আঙ্গিকে, অবয়বেও  নিয়ত রূপান্তর ঘটছে ।
       "অনুকবিতা কি অপারগতার শিল্প? না-বলা বাণীর ঘন যামিনী? আবেগের চাপে যে কথাকে আর বিশদ করতে পারলাম না, তারা তাই কি অনুকবিতা? "সৈকত মুখোপাধ্যায়ের কথা দিয়ে শুরু করছি বিষয়ের ।আধুনিক কবিতায় মিথের প্রয়োগ একটি সুনির্দিষ্ট বহুমাত্রিক প্রকরণ শিল্পের বহিঃপ্রকাশ । সাধারণ মিথ অতিলৌকিক   মিথ্যা, কল্পনাপ্রসূত রূপে ব্যাখ্যাত হলেও, মৌখিক সাহিত্য হলেও মিশ্র-সাংস্কৃতিক উপাদানে তার বিনির্মাণ বহু আলোচিত। মিথ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, কোন জনজীবনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, ব্যক্তিগত শিল্প সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে গোষ্ঠীজীবনের নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণা যা মুখ পরম্পরাগত বংশধরের গোষ্ঠী জীবনে যে সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, সেখানে চালু থাকা বিশ্বাস, সংস্কার, আচার অনুষ্ঠান , ক্রিয়াকলাপের মধ্য দিয়েই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো। কালে কালে তার বিস্তৃতি হলে লোকজীবনে নানান গোষ্ঠীর মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটতো এবং তাকে কেন্দ্র করে আচার অনুষ্ঠান পরিচর্চিত হয়ে আসত।আমাদের দেশে মহাকাব্য, বিভিন্নতা নিয়ে প্রতিভাসিত হয়েছে। পাশ্চাত্য সাহিত্যের সাহিত্যিকগণ তাকে লালন পালন করে নতুনত্বের মোড়কে উন্মোচিত করে এক নতুন দিগন্ত তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। বিশেষতঃ এলিয়ট, এজরা পাউন্ড, জেমস জয়েস, ফ্রানংস কায়ফা টমাসমান প্রভূত লেখকগণ এর নব কলেবর চিত্রায়িত করেছেন আধুনিক কবিতা সাহিত্যে ।
       তিরিশের দশকের কবিদের মধ্যে অমিয় চক্রবর্তী বহুল শব্দ ব্যবহার করেছেন, ত্রিশ পরবর্তী কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রাম বসু, সমর সেন, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবিগণও মিথের বিনির্মাণও ঘটিয়েছেন।ফলে, তিরিশ থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত অজস্র কবিতার মধ্যে নতুন নতুন কাহিনী নব আঙ্গিকে নির্মিত হয়ে--সাধনার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে এবং আচার অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে দেশ-কাল-পাত্র সংলগ্ন হয়ে বহুমাত্রিক রূপে প্রতিভাসিত হয়ে ঐতিহাসিক তত্বের অনুক্ত সূচিত হয়ে ওঠেছে। বিষয় স্বাতন্ত্র্য,ক্ষেত্রের অনুকূল ভূমি, পরিবেশিত আবহাওয়া, সূক্ষাতিসূক্ষ অনুভূতির বারি সিঞ্চনে নব-সত্ত্বার আচরণ উন্মোচিত হয়েছে । 
            যাই হোক, যে কথা নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে আলোকপাত, তার প্রসঙ্গে গিয়ে প্রথমেই বলা যেতে পারে যে, অনুকবিতার অবয়ব নিঃসন্দেহে সংক্ষিপ্ত ,ছোটাকৃতি।সময়ের বিবর্তনে মানুষের জনজীবনে চলাফেরা, জীবন জীবিকা সংগ্রহ, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। তেমনি কবিতার মধ্যে পরিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত। পরাবাস্তববাদ থেকে প্রতীকবাদে বিবর্তিত হয়েছে, তেমনি উত্তর আধুনিকতার নামে নতুন নতুন সংস্করণ ঘটছে, magic reality বা যাদু-বাস্তববাদে উন্নীতকরণ হয়েছে। যে কথা বলছিলাম যে, অনুকবিতা আঙ্গিকে যাই হোক, শব্দ বন্ধনে যা ঘটুক, নিগূঢ় তথ্যের সমবিহারে তার বক্তব্য অপূর্ণ মনে হলেও কোথাও যেন পূর্ণতা পেয়েছে। অন্তর্জাল সাহিত্যে নতুন নতুন বিন্যাসের নানান প্রকার প্রকরণ দেখে উচ্ছ্বসিত হচ্ছি, না অন্যকিছু ভাবছি সেটা আসল কথা নয়--সত্যটা হচ্ছে যে,অতি অল্প আয়াসে পূর্ণাঙ্গ ভাব-ভাবনার ইচ্ছাসমূহকে তুলে ধরে  নতুন আলোর মোড়কে মেলে ধরা।
            কবিতা সম্পর্কে শোপেন হাওয়ারের বক্তব্য : Everything in the world is capable of being found beautiful, perhaps in many different ways, if only we have been necessary genius. কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই অনুকবিতাটি উল্লেখ করে বলতে চাই যে, কবির মননশীলতা, অভিব্যক্তি ও নৈব্যক্তিকতার প্রকাশ কিভাবে ঘটেছে । " আমার কাছে একবেলা খাও, একবেলা /খাও ওর কাছে /পোকায় আমার কাটলে পাতা, ফুল /ফোটালে ওর গাছে।"বেদনা সিক্ত জীবনের চির আকাঙ্খার চিত্রকল্প কবি সুনিপুণ দক্ষ কারিগরি হাতে তুলিত করে হৃদয় মর্মে আঘাত হেনেছেন।এরপর আর কি কোন কথা থাকার প্রয়োজন আসে?আমরা দু লাইনের গল্প কিংবা উপন্যাস -এরকম ভাষ্য অন্তর্জাল ওয়েব ম্যাগে দেখি বা শুনি।একটা উদাহরণ তুলে ধরি --এক অতিশয় বৃদ্ধ তার প্রিয় মোবাইলখানি গলির মোড়ের মোবাইলের দোকানে গিয়ে বলে--ভাই, আমার খারাপ মোবাইলটা সারিয়ে দাও না!  মেকানিক্স মোবাইলটা খুলে অনেকক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বৃদ্ধকে জানাল যে, তার মোবাইল সচলই  আছে, শুনে দুচোখে অশ্রু ঝরিয়ে বৃদ্ধ শুধায়,তাহলে কেন তার

পৃথিবী এখন ভাসমান এক নাফ- ডিঙ্গা ।। মুহম্মদ নুরুল হুদা



পৃথিবী এখন ভাসমান এক নাফ-ডিঙ্গা


খুলেছে 
আকাশ 
আপন 
আঁখির 
অর্গল,
কাঁদছে 
আকাশ 
অনবরত 
অনর্গল;
রোসাং-অশ্রু ঝরছে বিশ্বে, বাংলায়
রক্তবন্যা নেমেছে নাফের দরিয়ায়;
নাফ বয়ে যায় বঙ্গ-বেমান-সাগরে
মহাদেশ আর মহাপৃথিবীর ঘরে ঘরে;
সুচিও অশুচি
বিকৃতরুচি
রক্ত খায়,
শান্তি-সুচির
মান খান-খান
ভেঙ্গে যায়;
অবাক পৃথিবী অবাক প্রকৃতি হুঁশ-মানুষ,
জাগো বিদ্রোহে জাগো প্রতিবাদে নারীপুরুষ; 
লাগাও আগুন জঙ্গিবাদের আস্তানায়, 
ব্যক্তি-জঙ্গি রাষ্ট্র-জঙ্গি মানুষ খায়;
মানুষখেকোরা
মানুষ নয়,
মা-ধরণীর
জাতক নয়,
বিনাশ তাদের
সুনিশ্চয়;
মানুষ বানায় ব্যক্তি, গোত্র আর জাতি
জগৎজুড়িয়া জগৎমানুষ এক জ্ঞাতি;
কে রোহিঙ্গা কে আফ্রিকি কে মার্কিনি
সবার ভিতর শুদ্ধশোণিত মানুষ চিনি;
ভেঙ্গে দাও সব
বানানো সীমানা
ভুল ভূগোল,
এক পৃথিবীর
একটি রাষ্ট্র -
দে দোল দোল;
হবে হবে জয় নেই পরাজয় যুক্তিযুদ্ধে মানুষ-অভয়
একটি ভুবন একটি ভবন এক মানবতা সুদূরে নয়;
কনফুসিয়স-বুদ্ধ-মুসা জ্ঞানী-ধ্যানী আর যিশু মুহম্মদ
জন্মশিশু এই পৃথিবীর, নেই কোনো যার সীমা-সরহদ। 
গোল পৃথিবীর 
নেই কোনো মেরু 
নেই তো শেষ,
এক পৃথিবীর
একটি রাষ্ট্র
একটি দেশ।
মানুষ চলেছে মানুষ চলেছে সেই দেশে,
শরণার্থী মানবতা যায় সাথে ভেসে;
কে রোহিঙ্গা? 
কে শোনে আজ 
কার শিঙ্গা?
পৃথিবী এখন ভাসমান এক নাফ-ডিঙ্গা।
১১.০৯.২০১৭

জংলা পরকীয় রাত্রী মোহে ।। সৌমিত্র চক্রবর্তী



জংলা পরকীয়া রাত্রি মোহে 

এই যে নিটোল অন্ধকারের দেহ চিরে ছায়া আবছায়া গাছের পাতা ডাল পালা মাঝেমধ্যে স্থির মাঝেমাঝে মাথা দেহ ঝাঁকিয়ে কিসের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করে চলেছে তারাই জানে।

ছোটনাগপুরিয়া ধামসা আর মাদল হাড়িয়ার ধুনকি চালে একটানা ছন্দে বেজে রক্তের শ্বেতকণার সাবধানী সতর্কতা ফুঁয়ে উড়িয়ে লালবিন্দুদের যুদ্ধ মাতনে দুলিয়ে দিচ্ছে ধিনকা ধিনা ... ধিনকা ধিনা ... ভাল্লা হাতে চল শিকারে চল শিকারে ...!

অন্ধকার গাঢ় হলেই আদিম মুন্ডা রমনীর ত্বক ঝলসে ওঠে তীব্র কামদহনে লাখ ওয়াটের ফ্লুরোসেন্ট আলোর ঝলকানিতে দেরে দ্রিম তুম না না তুম না না তুম না তুম না তুম দেরে না না দেরে না না...।

সরসর শব্দের মোলায়েম ছোঁয়ায় মাটিকে আদর করতে করতে ... করতে করতে দুই গাছের মাঝের মাহে আগাছার ঝোপের ফাঁকে খাবারের সন্ধানে চলে যায় ভয়ংকর চন্দ্রবোড়া।

ঝমঝম ঝমঝম লম্বা কাঁটার বিটে মোৎসার্ট সিম্ফনি বাজিয়ে বেরিয়ে আসে নির্বিরোধী লাজুক পাঁশুটে সজারু।

অন্ত্র হজম করা আব্রহ্মান্ড খিদে মাথায় করে অন্ততঃ এক পিস বনমোরগের অসতর্ক সেকেন্ড কাজে লাগানোর খল চাহিদায় ইতিউতি তাকায় গুলবাঘ।

দেশি খাঁটি মহুয়ায় নাক পর্যন্ত নেশা করে মাহাতো রাখোয়াল লাল আটার রুটি আর লহর দাল পাকানোর সূক্ষ্ম ফাঁকে দেশোয়ালির উত্তুঙ্গ স্তনের চিন্তা করে বিরহগান ধরে তরুনী জঙ্গলরাতে, কাঁহা গইলি রে পিয়া হামার হেনে আকেলাপন মারে মোহে ...

কাঠের ধিকিধিকি আগুনের হলদে লালচে নাচনের প্রতিবিম্ব প্রথম ফাল্গুনের না শীত না গরমেও ঘেমে ওঠা রাখোয়ালের নাক গাল চিবুকে আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় খেলা করে।

জঙ্গল রাত্রির নিজস্ব গায়ের গন্ধ অনেকটা অ্যাড্রিনালিনের ভেতরে গোঁজা অপ্রাকৃত কামান্ধ বাসের সমতুল বিকল্পহীন একক সম্রাট, অপরাজেয় কিন্তু ভয়াল।

ভালোবাসার চিঠি পুড়িয়ে তার ছাই অবশেষ উড়িয়ে সা রা রা রা রা রা হোলির মহাজাগতিক রঙ তৈরী শুরু হয়ে গেছে সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট তত্ত্বের উদ্গাতা জংলা ভূমের আনাচ কানাচে।

এই আকাশ কালো আর লালচে সিঁদুর খেলার মায়ায় একের পর এক আঁকে মোহমুদ্গর ছিন্ন করা নানান ছবি, যার আগেও নেই পিছেও নেই, নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ সৃষ্টি স্থিতি বিলয়ের একক ব্যক্তিত্ব।

এখানে অকারণ গাড়ীর ঝড়ের ধুলো নেই, পলি ভিনাইল ক্লোরিনের পুড়তে থাকা বিষগমণ নেই, একইসাথে পঞ্চপ্রেমের প্রেমহীন সঙ্গম নেই, মেকানিকাল হাসির তৈরী করা আস্তরণ নেই, আছে শুধুই দিগন্ত বিস্তৃত সত্যসন্ধান চরাচর আচ্ছন্ন করা ওহম শব্দব্রহ্মের কেন্দ্রস্থল।

রাখোয়াল মাহাতোদের বোধের ইসিজি করলে দেখা যাবে তার উত্থান নেই, পতন নেই, বক্রগতি নেই, সোজাসাপটা সরলরৈখিক, আপাত নজরে মনের অলিগলির অন্ধকারে হাঁটাচলা করা জটীল জীবের মনে হবে মৃত, কিন্তু এই আশ্চর্য সরল সাদাসিধে জগতের কল্পনাও তারা করতে পারবে না কোনোদিনই।

রাখোয়ালের পরকীয়া কিম্বা স্বকীয় বিভাজন বোধ নেই; তার প্রেম জ্যামুক্ত তীরের মত সোজা ছুটে গিয়ে বেঁধে, যার একপ্রান্তে সে আর অন্যপ্রান্তে দেহাতি ঘোমটা বিছানো মৈথিলি রমনী, মাঝে মহাশূন্য।

অম্বার চৌদ্দোশো তম উত্তরপুরুষ গর্ভের অতলে কোনোদিনই রোপিত না হওয়া বীজধানের খোঁজে মালেকাজানের কন্ঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় অনাবিস্কৃত সদ্য যুক্ত হওয়া বিকট ব্ল্যাকহোলের আগ্রাসী পেটে।

-সাঁইয়া মোরি তুহি বিছর যায়ে বারেবার...হো সাঁইয়া মোরি ...

সমুদ্র সিরিজ ১২ ।। রফিক হাসান



সমুদ্র সিরিজ--১২ 

এসেও যে ফিরে যাচ্ছো হে প্রণয় 
হে নিবিড় অহিফেন,
কে তোমাকে নিয়ে যায় সন্ধ্যার সঙ্গমে?

চুমু খেতে গেলে সরিয়ে নিয়েছো তুমি ঠোঁট
মারমেডে সূর্যাস্ত ফেলে সন্ধ্যারঙ 
নোনাপায়ে ফিরেছে একাই

যে কথারা বলে গেছে, যে-কথারা এখনো বলেনি
গোপনমনস্ক চোখ মুহূর্তের চোখে শুধু
দেখেছে ত্রিভুজ, কৃষ্ণঘোর তারার গুঞ্জন

দেখোনি যে গতজীবনের শোকে
তোমার রৌদ্রের নিচে ফুটে আছে 
থোকা থোকা রডোডেনড্রন

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

তাপস কিরণ রায় এর দুটি কবিতা


ময়না তদন্ত
ময়না তদন্ত কি পারে ?
সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি  ছিঁড়ে কেটে
সংযোগ খুঁজে ফেরা।
খোলা বুকের হৃদয় তখন মরে গেছে--
জীবন পৃষ্ঠাগুলি আর খুলবে না কোন দিন !
বেদনার ঝুলি খুলে সে আর কোন দিন পড়তে চাইবে না কিছু।
এখানেই থেমে গেছে সমস্ত স্মৃতি।
আড়াল
রং উচ্ছ্বাসে নেচে উঠলাম আমি।
সময়ে ক্ষণ দৃশ্যগুলি পাল্টে যায় অবিরাম।
রঙিন মোড়কের ভেতরে রাখা উৎসুক তুমি,
উঁকি দাও বারবার, স্মিত হাসি তুমি ধরে রাখো আপাত স্মৃতিতে।
ওই সেই মুখ, প্রতিদিনের ফুল ফোটার খেলায় তোমাদের লুকোচুরি--
যেন ফুলের উৎসবে ধরা আছে রং মেলা।
তবু তোমার ছিঁড়ে নিতে ইচ্ছে হবে একটি গোলাপ,
তুমি ত জানই কাঁটার আঘাতে ছিন্ন হবে তোমার অনামিকা,
বিক্ষিপ্ত তুমি তবু আড়াল থেকে ছিঁড়ে নিতে চাও ফুল।
নাসারন্ধ্রে টেনে নিতে চাও সে কোরক স্পর্শ।
তারপর পরখে খুঁটে নেবে তার চোখ নাক মুখ, কোমল দেহ।  

স্পর্শ যেভাবে ছোঁয় ।। বর্ণালী চ্যাটার্জ্জী



স্পর্শ যেভাবে ছোঁয়

হাত বাড়িয়ে ছুঁয়েছিস যাকে সব কি তাহলে তোর?
হাত বাড়িয়ে অস্থি ছুঁয়েছিস;পেয়েছিস পাঁজর? 
আঙুল বাড়িয়ে না ছুঁয়ে আমায় হৃদয় বাড়িয়ে ছোঁ,
একফোঁটা মেঘ ধার বাকি তোর,অবচেতনেই শো।
কবিতার কাছে স্পর্শ যেমন আলোআঁধারিতে মেশে,
চোখ বুলিয়ে মুক্তি খুঁজেছি ফিরে এসে অবশেষে।
যতোদূর তোর স্পর্শ পৌঁছয় ততোটুকু শুধু তোর, 
বাকি সংঘাতে স্পর্শকাতর রাত্রি যখন ভোর।
একদুটো হাত হাতরে যখন পৌঁছলি শেষ গলি,
আমি তখনই ফিরে এসে দেখি তোর দেশ ততোক্ষণে খালি।
যতোদূর তোর চোখ গেছে শোন্ স্পর্শও ততোখানি,
বাদ বাকী সব খোঁজা ফেরা শেষে আমারই রাজধানী।

বহুদিন ধরে ।। এলিজা আজাদ

বহুদিন ধরে
 

গালে গাল ছুঁয়ে স্পর্শ অনুভবে,
কতদিন হেঁটে গেছি যুগল পায়ে রৌদ্রের চিকন আলো ছোঁব বলে---
চোখ ভরে দেখেছি, সবুজ পাতার শব্দে থির থির সূর্যের আলোর কাঁপন---
তুমি আরও কাছে এসে বলেওছিলে, 
ভালোবাসি প্রাণের অধিক বেশি!

এরপর, নবান্নের মিঠে স্বাদ ফিরে আসেনি মিঠেরোদ নিয়ে!
আমিও রৌদ্রের চিকন আলোয় নিজেকে ভিজাইনি বহুদিন ধরে!!

মোকসেদুল ইসলাম এর দুটি কবিতা



অন্ধ হওয়ার আগে 

ক্রমশ হেরে যাচ্ছি ঢেউয়ের মতো করে ঈশ্বর! ঐ চোখ এবার বন্ধ করো। কেউ কেউ লিখে রাখছে সিংহ জাতকের বীর কাহিনী রাতের নিস্তব্ধতা দ্বিখণ্ডিত করে বেজে উঠছে ভায়োলিন তোমার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে অন্ধকার।

কোথাও ঠাঁই হয় না মানুষের কবরে গেলেও যন্ত্রণা পোহাতে হয় পোকামাকড়ের শুধু ঐ চোখ! দেখার চোখটা থাকতে হয় মানুষ অন্ধ হলে পৃথিবীর কিচ্ছু যায় আসে না।


দূর্বিসহ জীবনের ভাবনা 

জলের ধারা নামার আগেই ভেঙ্গে যায় দুপুরের ভাতঘুম আর আমি সন্ধ্যা নামবে জেনে দ্রুত পাহাড় থেকে নেমে পড়ি তোমার তো আবার পাহাড়কে বড্ড ভয়। কিছু কথা পড়ে থাকে একলা রাতের চরাচরে রপ্তানীযোগ্য পণ্যের মতো ভাবনারা ঘিরে ধরে আমায় বেঁচে থাকা! সেতো এক দূর্বিসহ জীবনের নাম।

কিছু কিছু ভাবনারা মাঝেমধ্যে নদী হয়ে যায় সেখানে দিব্যি খেলা করে হতাশ মাঝির জাল অথচ তুমি বিকেলের ভাবনায় স্নান সেরে নিচ্ছো বেঁচে থাকার এতোই তেষ্টা যখন পেয়েছে তোমার তবে দেয়াল ভাঙ্গো, ঠোঁট দুটো ভেজা থাকুক শুধু ঈশ্বর যেন বুঝতে না পারে।

কাজরীর দৃষ্টি ।। দ্বীপ সরকার


কাজরীর দৃষ্টি

একদা এক ভীষণ রাতে চিৎ হয়ে শুয়ে
দেখি একটা মাঠবৃক্ষ বুকের ওপর নুয়ে
তখন আমার বুকে একটা মাঠবৃক্ষ আঁকি
বীজতলা ভেবে তাতে প্রেম ঢালি অথৈ
লিখে রাখি চোখজুড়ে  বর্ষার খৈ।

বর্ষার খৈ যেনো উঠোনের মেঘ
বুকচেরা আকুতিতে বাড়ে উদ্বেগ।
চেনা উঠোন, চেনা প্রেম,চেনা এক বৃষ্টি
ধূয়ে নিলে কাজরীর চেনা খুব দৃষ্টি।

লেখাঃ ২০/৯/১৭ইং



জীবন ।। রুবেল সরকার

জীবন

পাল্টে নিয়েছি জীবন। এক কাঙাল বিকেলে,
একে ওকে ধাক্কা দিতে দিতে ঢের শিখেছি ব্রহ্মচর্য
ক্ষুধার স্লোগান ছেড়ে গিয়েছি খোদার স্লোগানে
সন্ত্রাস ছুঁড়েছি তার খোঁপায়। পাল্টে নিয়েছি জীবন
অর্ধেক সেলাই কেটে ভিতরে সে যাবে কি যাবে না...

আলো ।। পারমিতা চক্রবর্ত্তী


আলো 


দূরত্ব নিকটে এসে পান করো স্তনের বিষণ্ণতা
নেশাতুর আলো এগিয়ে চলেছে ক্রমশঃ 
আন্টার্টিকার পথে 
আদিম চিরকালই অন্তঃসত্তা থাকবে 
যে চর্মপিন্ডগুলো এতদিন সোজাসুজি থাকত 

আজ ....

তাকে দেখি জারজ যন্ত্রণার মাঝে 
 ভাবনার অন্তরালে বিফল হতে থাকি 
প্রশ্নচিহ্নে 
বাতাসী ঘুমের চোখ নেই কেন ...

সাত থেকে সতেরো উভয়ই মত্ত 
কথোপকথনের তীব্রতায় 
গাছকৌঠো উঠোন জুড়ে শুধু দেবদারু স্মৃতি এসো মেয়েবেলা অগ্রজ হও , অন্তিম আর্তনাদের মাঝে যা কিছু দেখো তাকে প্রাক্তন ভেবে দূরে ঠেলো না ...

হে নৈঃশব্দ চুম্বন করো অন্তঃসত্ত্বা 
জোনককে 
আরো আলো আরো আরো আলো ..

বস্তুত সম্পর্কের ব্লুটুথ একটি বিভাজিকা 
যার নেপথ্যে কোন অন্তর্বর্তীকালীন ইচ্ছা/ অনিচ্ছা থাকে ...

দুঃখগুলো যদিও বেওয়ারিশ নয় ।। আতাউর রহমান রোদ্দুর


দুঃখগুলো যদিও বেওয়ারিশ নয়

বারবার পানি দিয়ে মুছেও গিন্নির চোখে
লেগে থাকা তরল আগুন
সন্তানের মুখে পাহাড়ের ছায়া
নগ্ন বারান্দায় এনে রেখে যায় শুকনো পাতা
বাউণ্ডুলে বাতাস
না, শব্দগুলো কোনো কবিতা থেকে উঠে আসে নি

বাজার ঘুরে ভাঙা পায়ে হেঁটে ফিরে আসে
অন্ধকারে শরীর ভর্তি করে বাজারের ব্যাগ
উনুনে আগুনের অনিয়ম
দেয়ালে বৃষ্টি নামে শব্দহীন
নাম ভুলে যাই মাঝরাতে, কী নামে লোকে ডাকে আমায় !
পাশের বালিশ থেকে জল হেঁটে আসে
না, শব্দগুলো কোনো কবিতা থেকে উঠে আসে নি
চিরুনির অবহেলা
আয়নায় পড়ে নি মুখ বহুকাল
আবুলের দোকান থেকে এক শলাকা মৃত্যু জ্বালাতে গিয়ে মনে পড়ে
আমরাও একদিন সুরম্য জ্যোৎস্নার স্বপ্ন দেখেছিলাম
না, দুঃখগুলো কোনো কবিতা থেকে উঠে আসে নি
দুঃখগুলো যদিও বেওয়ারিশ নয়...

যুদ্ধ ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়







যুদ্ধ

যুদ্ধে জিতলে না হারলে সেটা বড় কথা নয়
যুদ্ধে বিপরীত দিকে দাঁড়ানো মানুষগুলোর বিরুদ্ধে
কতটা লড়াই দিতে পেরেছ সেটাই বড় কথা
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তোমার মুষ্টিবদ্ধ হাতের মধ্যে
কতখানি অনড় মানসিকতা কাজ করেছে সেটাই বড় কথা

সারা মাঠ জুড়ে নব্বই মিনিট অসাধারণ খেলে,
বিপক্ষ দলকে একবারের জন্য কাছে ঘেঁষতে না দিয়েও
মুহূর্তের ভুলে গোল হয়ে যায়
জানি খেলাটায় এই গোলটাই হাসি
লক্ষ ক্যামেরার আলোর ঝলকানি
কিন্তু তবুও বিজিত দলের লড়াই
আগামীর মনে চিরকাল বেঁচে থাকে

ইতিহাসের পাতায় হাঁটতে হাঁটতে
বুড়িবালামের যুদ্ধ আজও কিশোরের মনে প্রাণ পায়।

ভয়ঙ্কর সুন্দর ।। কবির হুমায়ুন


ভয়ঙ্কর সুন্দর!

ভয়ঙ্কর একটা সুন্দর বার্তা !
একটা ভয়ঙ্কর সুন্দর রাতের সময় !
ধুরু ধুরু বুকে -
অামি যেই সুন্দরটি ছুঁইতে গেলাম
অার পশ্চাতে টেনে ধরে
এক ভয়ঙ্কর অদৃশ্য হাত !
তােমার অামন্ত্রনের কুসুমবন,
চিনতে গেলে সময় লাগে।
অাবার অচেনাও থেকে যায় হাজার বছর।
কে দিতে পারে ঐ পথের সন্ধান ?
কুসুমবাগে ভ্রমরের গুঞ্জন
ফুলের পেয়ালায় তৃপ্তির চুমুক?
কি জানি গাে শঙ্কা জাগে !
অামি তাে অাকাশ দেখি
দেখি কােটি তারার ছলাকলা 
অার অপরুপা চাঁদের বাহানা !
অামি ভয়ঙ্করের সুন্দর মাখি
অমাবস্যার জ্যােৎস্না দেখি,
এসব কি গাে প্রেমের পাগলামি ? 

চন্দ্রবিন্দু সাঁতার ।। হিরণ্য হারুন



চন্দ্রবিন্দু সাঁতার


জল দেখলেই ইচ্ছা করে— যিশুর বুকে চালাই চাকু !
পৃথিবীতে বাডুক ঝর্না 
নদীর বুকে জল
প্রেমিকার বুকে পাহাড়
রাজপথে রক্তের স্রোত।
গণতন্ত্র রক্ষাপাক, ঘুমিয়ে যাক পরিবারতন্ত্রের হাত
ক্ষুধার্ত মানুষ পান করুক— রক্তিম সূর্য।
.
জলে বানে খেলা ছলে
বাইবেলের বর্ণিত ইশ্বর সাঁতার কাটে
কূলহীন পৃথিবী
মানুষ্যহীন রাত
মানবতাহীন গণতন্ত্র—  সাঁতারু সে এক অন্যায়। 
.

আলোর বেগে— তার চেয়েও কম
বিশ হাজার ভাগের একভাগ গতিতে
সাঁতার কাটি মহাবিশ্বে
দু'বছরের অন্যায়হীন গণতন্ত্রে ভবিষ্যৎ এগিয়েছে একশো আটানব্বই বছর!
এ-এক হেঁয়ালি-ব্যাপার, চন্দ্রবিন্দু সাঁতার। 
১৫.০৬.১৭

রিক্সাওয়ালা ।। আবু তাহের



রিকশাওয়ালা 

দাউদাউ করে জ্বলছে চৈত্র দুপুর
খড় রৌদ্রের অগ্নি উত্তাপে পরিপূর্ণ শহর
দুজন সাহেব ওঠে বসে রিকশার গদিতে
বৃদ্ধ অক্টোপাশের মতো পেঁচিয়ে ধরে হাতল
দাঁতে দাঁত ঠোকর বসিয়ে চালায় দাড়াশ পা।

স্টেশন, জজ কোর্ট মোড়, সদর হাসপাতাল, করতোয়া ব্রীজ পেরিয়ে চলে যায় ওপারে
হয়তো কোনো অাবাসিক এলাকায়, অথবা নিষিদ্ধ পল্লিতে।

বাস, ট্রাক, সিএনজি, অটোর বিশৃঙ্খল ভিরে
রিকশা চলে মন্থর গতিতে
অতিষ্ট অারোহী তীক্ষ্ণ কণ্ঠ খেঁকিয়ে ওঠে
জোরে চালাও, অারো জোরে।

বৃদ্ধের অনু-চক্রিকা বারুদের মতো জ্বলে ওঠে
মারাত্মক ফোনা তোলে অজগরের মতো
ফোঁস ফোঁস শব্দ বেরিয়ে অাসে প্রতিটি নিশ্বাসে নিশ্বাসে।

হঠাৎ রক্তবীথি নিস্তেজ হয়ে অাসে
বিষণ্ণ চিত্র গ্রাস করে জীবনের স্বস্তি
ফোটা ফোটা ঘাম গড়িয়ে পরে মাটিতে।

যৌবন হাঁরা বেশ্যার মতো সন্ধিহান দুটি চোখ
অাকাশের দিকে তাঁকায় ঈশ্বরের খোঁজে
চোখের সীমান্তে স্ত্রী-সন্তানের ক্ষুধাতুর ভৎস্য মুখ ভেসে ওঠে
ডাল, ভাত, অালুভর্তা হলে যাদের ক্ষুধার চিনচিনে ব্যথাটা মরে।

অন্ধকার ভাঙা সূর্য ওঠার সাথে সাথে
পচাঁ-বাসি ভাত খেয়ে বেরিয়ে এসেছে শহরের এ পথে
যে পথে মানুষ জীবনের চাহিদা মেটাতে অাসে।
রোদ-মেঘ, জ্যোৎস্না-অমাবর্সায়
দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ চলে যায়
তার জীবন যুদ্ধ থাকে অহর্নিশি!!

সুদিনের অপেক্ষা বিধবা মায়ের ।। সজল মালাকার



সুদিনের অপেক্ষা বিবধা মায়ের



দৈত্যের মতো নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে তমাল তরু
কৃষ্ণপক্ষের আধখানা চাঁদ
দিঘীর জলে হংসের মতো ভাসছে,
ক'টি তারার হাসিতে ঘুমভাঙা পাখির
ডানার শব্দে ভীত আরশোলা টের পাইনি
উৎ পেতে থাকা বিড়ালের অস্তিত্ব।
শেঁয়ালেরা হাঁকে; জানলার ফাঁকে
উঁকি মারে জোছনার আলো,
ঘুমন্ত যুবকের বুকে চুম্বনচিহ্ন এঁকে
চুপিসারে পালিয়ে যায় স্বপ্নাভিসারি।
আযানের ধ্বনিতে বয় ভোরের মিষ্টি হাওয়া
গ্রাম্যবধূর এলোচুলে অন্ধকার আত্মগোপন করে
পূবের আকাশে আগুন রাঙা সূর্যকে
অভিবাদন জানিয়ে দিবস ঘোষণা করে
বনের সবুজ এবং ভোরের পাখি।
দিন আসে দিন যায় বিবধা মায়ের
দশটি বছর ধরে সুদিনের অপেক্ষায়
ছেলে তার ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।

এন্টি মিসাইল ।। সিদ্দিক প্রামাণিক





এন্টি মিসাইল

আম্পায়ারের মতো যে সমালোচক আউটের
আঙুল তুলে বললো-
'এভাবে হবে না, আরো সন্তর্পণে খুলতে হবে
ফুলের পাপড়ি, গোপন অন্তর্বাস'
তার মুখ থেকেই উড়ে এলো ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান-
এটমের তীর

নিরিবিলি খুব ঘন হয়ে বসি রেস্তোরাঁয়,
কাটা চামুচে খাই মাংসের চপ, খেতে খেতে
সাবেক প্রেমিকাদের বিষয়ে ভাবি আর
এন্টি মিসাইলের মতো মেলে ধরি কাটার চামচ

আমার ভালোবাসা ।। শ্রীলেখা চ্যাটার্জ্জী

আমার ভালোবাসা
 
ভালোবাসা এসেছিল পর্বতের গা বেয়ে ,
নদীর বুক ভাসিয়ে সমুদ্র সঙ্গমে নেয়ে ! 
ভালোবাসা বলেছিল অন্তরের নিভৃতে 
গোপনে গাঁটছড়া বেঁধে রাখবে শোণিতে
|ভালোবাসা চেয়েছিল মনের গঙ্গা তীরে 
ঘর বাঁধা স্বপ্ন স্নান সূর্য কুসুম নীরে | 
ভালোবাসা দিয়েছিল বন্দি হবার ভাষা ! 
জেগেছিল পল্লবিত নতুন কিছু আশা ! 
রাতের আঁধারে হারানো অতীতের স্মৃতি 
ফুটেছিল ভালোবাসা শাখে সুবর্ণপ্রীতি | 
মনটাকে এই আমি চির নিদ্রায় বাঁধি  , 
দেখেছিল বেদনার বনে পুষ্প সমাধি  | 
বিপ্লব এঁকেছিল প্রেম-নদী খর--স্রোতা ! 
ভালোবাসি বুকজোড়া বিদগ্ধ ঋত্বিকতা |
 
আমি ভালোবেসে সাথী , অচিন দেশের পাখি হলাম | 
বাসন্তিকার চেরী হয়ে রং বিলিয়ে পাগল হলাম | 
মায়াবতী নীড়ে ম্যাপেল আমি হৈমন্তীর ধূলি মাঝে ,
হেমন্তিকায় রুদালি বিকেল ভালোবাসে নিত্য সাঁঝে | 
উড়াল পাখির নিত্য চাওয়া , পরবাসে আনাগোনা  ; 
ভোরের শিশিরে আলো ফুটে ফুটে ঊষার সুরঞ্জনা  | 
ফুলের হাসিতে , সাগরের সীমানায় ,  বালকাুতটে -- 
পাতাঝরা বেদনায় , আমার ভালোবাসা চিত্রপটে ; 
বান ভাসি উপকূলে থৈ থৈ প্রেম  তীরভাঙা কান্নায়  , 
পাষাণ প্রতিমা ভালোবাসা গোপনে কেঁদে মরে হায় | 
                       

কসম ।। সুশান্ত হালদার



কসম  
পেটে ক্ষুধা....
মুখে না বলা কথা
চোখে অগ্নিময় জ্বালা
গলায় পড়েছে দীর্ঘশ্বাস আটকা
কি করে বাঁচি বলো প্রিয়তমা?

বলেছিলে এখানে বারুদ থরেথরে ঠাঁসা
ফসফরাসের গন্ধে ঘুম আসে না
জোনাকিরা বলে যায় অজানা কথা
তবে কি মৃত্যু এখানে গড়েছে বাসা?

ভিক্ষুকের থালায় আধুলির টানাহেঁচড়া
কাঁটাতারে ঝুলে গেছে মানবতা
বন্দুকের নলে টার্গেট ফেলানিরা
তবে কি এখানে মানুষ, মানুষের হবে না?

নরম কেদারায় বসে দিব্যি করেছো তামাশা
গরীবের রক্ত চুষে উঠিয়েছো মুখে ফেনা
লালসায় ধর্ষক যেন হিংস্র হায়েনা
তবুও কি তিন্নি-রূপা হবে না এখানে বহ্নিশিখা?

রক্তের কসম
শরতের ভোরে যদি ফোটে নীলপদ্ম শতেক
মহিষাসুর বধে দেবী নেমে আসবে মর্তলোকে
কাশফুলের শুভ্রতায় শুধুই ভালোবাসবো তোমাকে!
   

মিথ্যার উৎসব ।। কাজী আনিসুল হক


মিথ্যার উৎসব
আজকাল মদ মাতাল করেনা
গাঁজার ধোয়া ছড়ায় না উন্মাদনা।
বেহিসেবি জীবন বড্ড এলোমেলো
বেচেঁ থাকা মানে ক্রমাগত যন্ত্রনা।
বিষদগ্ধ ভালোবাসা ব্যর্থমনোরথ
অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে গড়া অন্ধকার প্রাচীর।
ভাঙ্গতে পারিনা, গড়তে পারিনা নিজেকে
চারদিকে শুধু শূন্যতা, অশান্ত-অস্থির।
নারীর দেহে এখন আর নেই কামতা
অপ্সরী ছাড়িয়ে গ্রাস করেছে সমাজ।
পোশাকি ভদ্রতা মুখোশে সংসার
কংক্রিট জীবন লোকদেখানো লাজ।
জন্ম থেকে মৃত্যু, যুব থেকে বৃদ্ধ
মোহের পিছনে সবাই শুধু ছুটছে।
মরীচিকা সুখ ধোয়াসা যৌবন
মিথ্যের উৎসবে আসলে কি জুটছে!

উপন্যাসঃ স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় ।। তৈমুর মল্লিক







স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় 
                      (খণ্ড ৩) 


রিনি নিজের রুমে বসেই অদ্ভুত এক সময়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে টেনে নিয়ে চলেছে । এর আগে কখনও এমন হয়নি । ঘরের বাহিরে উজ্জ্বল রোদ, ঘরের ভিতরে কেন অন্ধকার এই প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই খুঁজে পায়না সে। কেনই বা আবার দেয়াল ঘড়িটা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না । 
এতসব চিন্তা করতে করতে বালিসে মুখ লুকায় রিনি ।
আচমকা দরজায় নক করার শব্দ ভেসে আসে কানে । কেউ ডাকছে তাকে । একলাফে উঠে দাঁড়ায় । তখন বাইরে থেকে ভেসে আসে – “রিনি দরজা খোল” । 
রিনি বুঝতে পারে এটা রুমির গলা । দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয় ।
কি হয়েছেরে তোর? তুই কি ভুলে গেছিস আজ সকালে আট্টায় একটা জরুরি ক্লাস আছে? তুই তো ক্লাস ফাকি দিসনা। 
রুমির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রিনি । 
কি হলো কথা বলিস না কেন ? 
রুমির এমন প্রশ্নে নিজেকে ফিরে পায় রিনি । 
এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কি করে উত্তর দেব আমি?
রুমি কিছুটা অবাক হয়ে - তোর ভিতরে কোন টেনশনই নেই যে? কটা বাজে দেখেছিস? 
রিনি রুমির সামনে থেকে চলে যায় । কোন উত্তর না দিয়ে ব্রাশ হাতে তুলে নিয়ে ওয়াস রুমের দিকে যেতে যেতে বলে , কয়টা বাজে দেখতো রুমি? 
রিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে - সাতটারও বেশি । 
রিনি এবার একেবারে স্বাভাবিক ভাবেই বলে - ও মাই গড। 
রিনির এই অদ্ভুত আচরণে অবাক না হয়ে পারে না ওরা । ফিস ফিস করে রুমি আর বিথি কিছু একটা বলে । 
এই রুমি জানালাটা একটু খুলে দে। 
রিনির কথায় রুমি ফিরে তাকায় জানালার দিকে , জানালা কি খুলবে , ওটাতো খোলাই । 
কি বলছিস রুমি , জানালা খোলাই আছে । 
এবার রিনি নিজেই এগিয়ে যায় জানালার দিকে । হাঁ তাইতো , রুমি ঠিক বলেছে । একটা স্থানে দাঁড়িয়ে চুপ হয়ে যায় সে। কে খুলেদিল জানালা? 
কথাটা বোলেই কিযেন ভাবতে লাগলো রিনি। 
রুমি এবার এগিয়ে এসে রিনির হাত ধরে বলে –তোর শরীর ঠিক আছেতো ? 
তেমন কিছুনা রুমি। একটা স্বপ্নের কথা ভাবছিলাম। 
এবার বিথি মুখ খোলে , রিমি কি হয়েছে ওর ? এমন করছে কেন? 
বুঝতে পারছিনা বিথি। 
এতক্ষণ পরে রিনি বিথিকে দেখতে পেলো , কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো সে, এতক্ষণ সে দেখতেই পায়নি বিথি দাঁড়িয়ে আছে ।
বিথি তুমি আমার রুমে? আমিকি ভুল দেখছি নাকি? 
না, তুমি ভুল দেখছ না রিনি । 
রিনি নিজেকে গুছিয়ে নিতে নিতে ভাবছে, আসলে কি হয়েছে আমার ‼ বিথিকে আমি এতক্ষন দেখিনি কেন?
রুমি, বিথি কি তোর সাথে এসেছে? 
কেন তুই দেখতে পাসনি? 
কোন উত্তর দেয়না রিনি। 
নিজেকে একটু আড়াল করে রাখতে চায় রিনি , তাই খোলাসা করে কারো কোন উত্তর না দিয়ে বলে- 
চল আমরা বের হয়ে যাই। অনেক দেরি হয়েগেছে।
।।

মোহনা ।। সুনীতি দেবনাথ




মোহনা
মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে পদচারণা করে

রূপ থেকে রূপান্তরে রূপায়িত হয়ে
আমি চলেছি অন্য ভুবনের অন্য এক
অমল জ্যোতির অনাস্বাদিত মোহনায়।
কে তুমি পেছনে থেকে অবিরাম,
কে তুমি আমার আঁচল ধরে টানো?
জানো না এ জগতে এ জীবনে
স্থির কিছু নেই সবই অস্থির চলমান!
চলিষ্ণুতা জীবনের একমাত্র সত্য,
জীবনের আরেক নাম পথ,  চলাই তার
সারসত্য গতিতে সমর্পিত অনির্বাণ সে! 



সেই কবে ছিল এক অন্ধকার অন্তহীন
তারই মাঝে ঝলকে উঠেছিল সুপ্রকাশ
আলোয় বিভাসিত অমিয় প্রাণকণা,
প্রাণকণা সেও তো রূপান্তরিত প্রতিক্ষণ
সেও তো চলমান চিরকাল অবিরাম।
অন্ধকার থেকে আলোর বৈভবে
জন্মের প্রথম দিনে কান্নার উতরোলে
বলেছি আমি কন্যা আমি পৃথিবীর নারী
অনন্তকাল মৃত্তিকাকন্যা নারীই শুধু।
আমার কি রূপান্তর নেই, স্থির প্রতিমা?

শুধু কোমল নবনী কন্যা, মোহিনী প্রিয়া
জায়া ও স্নেহদা জননী? আর কিছু নই?
রূপান্তরহীন গতিহীন এইমাত্র পরিচয়? 
সীমার বন্ধনে সীমায়িত রুদ্ধ আত্মা,
চিরন্তনী নারী তার বেশী কণামাত্র নই?
গতিশীল রূপান্তরে স্থির চিত্রকলা!



তাহলে আমি কি জীবিত নই, গতি নেই
প্রাণ নেই,  পিরামিডে স্থাপিত মমি
অজন্তার গুহাচিত্র, কোণার্কের নৃত্যপরা
ভাস্করের ছেনি খোদাই পাথর প্রতিমা!
দ্য ভিঞ্চির রহস্যময়ী মোনালিসা?
তার বেশী কোনদিনই কিছুই নই?
তাই যদি হয় প্রাণহীন আবেগ,
মৃত ভাবনার খোলশে জাবরকাটা
আর স্থবিরতায় আবদ্ধ নিষ্প্রাণতা
তার বেশী অন্য কোন পরিচয়
নারীর হতেই পারে না কোনদিন।
অথচ প্রতিটি দিন প্রতিটি পল
সুতীব্র এক গতিশীল আলোড়ন
রূপ থেকে রূপান্তরে অতিক্রমন
আমাকে ভেঙ্গে নিয়ে যায় সম্মুখে
পেছনে ফেরার পথ রুদ্ধ দেখি
প্রাণের অমোঘ প্রবাহে চলমান
আমার অস্তিত্ব হাহাকারে ভেসে
অনন্ত মোহনায় মিশে যেতে চায়
সব তাহলে মিথ্যা মরীচিকা মাত্র?
আমি বিশ্বাস করি না করবোও না।



আজ আমি প্রশ্ন করতে চাই কেন,
কেন প্রবঞ্চিত আমি যুগ যুগ ধরে?
কেন আমি অধিকার আর মুক্তির
নিশ্চিত দাবি করি যখন জীবনের
মৌল অধিকারে নখ দন্ত বিদারিত
তুমি প্রশ্ন তোল নারীই দায়ী মাটি দায়ী
পৃথিবীর তাবৎ যুদ্ধ আর শান্তিহীনতার?
আমার বিস্ময় আকাশ ছোঁয়া স্তম্ভিত!
মাটি তোমার ধাত্রীভূমি  নারী জননী
সেই সত্য ভুলে গিয়ে অধিকার মোহে
তাদের দায়ী করার আগে আয়নায় কি
একবারও দেখোনা স্বরূপ? স্বাধিকারে
প্রমত্ত তুমি ধাত্রী জননীকে ভাব সম্পদ
তারচেয়ে একবিন্দু কম বেশী  নয়।
আমি পৃথিবীর কন্যা আজ প্রশ্ন করি—
নারীকে শৃঙ্খলে বাঁধার অধিকার
নিয়ম রীতিনীতির স্রষ্টা তুমি,
পৃথিবীকে কৃত্রিম রেখাচিত্রে খণ্ডিত
করার অধিকার কে তোমার হাতে দিল? 


এবার প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হবে নিশ্চিত।
এ পৃথিবী ধাত্রী ভূমি আমার তোমার,
এই নারী মুক্ত কন্যা পৃথিবী মাতার,
এই পথ পাশাপাশি চলাচলের সকলের
আর অনন্ত এ মোহনা সবার মিলনের!
এই ভূমি, জল, আকাশ, বাতাস
বিভাসিত আলোকিত প্রাণের মহিমা
যতখানি তোমার ভাবো ঠিক ততখানি
সুনির্দিষ্ট সুনির্বাচিত তোমার আমার।
শত্রুপক্ষ কখনো ভাবিনি, মিত্র হয়ে
প্রসারিত করো হাত, হাত ধরাধরি করে
অবশ্যই পেয়ে যাবো আলোর মোহনা,
তোমার আমার স্বপ্নের সর্বশেষ ঠিকানা!





গ্রাস ।। টিপু সুলতান


গ্রাস  

আমাকে গ্রাস কর

তুলে দাও
বিষ পিঁপড়ের মুখে ওরা ছিঁড়েফুঁড়ে খাক
আমার চলন্ত দুটি পা,চোখের উন্নত লেন্স,প্রিয়তম;

নাহয় লেবু কাটা ছুরি দাও
মাংসের গভীরে একটি হৃদপিন্ড থাকে কুপিয়ে জখম করি।
সেখানে অসংখ্য সংসার আছে......
যেমন
মৃত্যু দেখেছি
কান্না দেখেছি
ভরাজলের রাজলক্ষ্মী নদীর রক্তাক্ত বুক দেখেছি-

সুখপাগল আকাশ দেখেছি-
বর্ণাক্ষরের অসুখ দেখেছি-
দেখেছি
জলের উপর ঢেউ,
এইসব উপমার ভাণ্ডার দেখে দেখে
উত্তর ভালবাসি,উত্তরণ ভালবাসি,উত্তীর্ণ ভালবাসি.......

বাহ্যিক ছায়াগুলো দোয়েল নাহয়ে কাক হয়ে যায়
বাস্তুতার সীমান্তমুখীতে..........
লাশ হই,
দারিদ্র্য হই,
বর্ণবাকুলে বিচ্ছি
ন্ন হই.....
আর ঈশ্বরের নির্দয়ায় শিকারি ওড়ে,
ওড়ে
হাওয়ার এপিঠ ওপিঠে
আর আমি হয়ে যায় শিকারির স্বাদ-
আমার মতো কেউ
জ্বলছে চন্দ্রগ্রহণে,সূর্যগ্রহণে.....
সমস্ত পৃথিবীর প্রাণসহ;