বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

প্রচ্ছদ। আগষ্ট সংখ্যা।২০১৭ইং।


সম্পাদকীয়ঃ আগষ্ট সংখ্যা।২০১৭ইং।





সম্পাদকীয়ঃ আগষ্ট সংখ্যা।২০১৭ইং।

প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি অনলাইন এবং আকাশ সংস্কৃতিতে ব্যাপক বিবর্তন দেখে পুলকিত না হয়ে পারা যায়না।মানুষ যেমনে সামনের দিকে ছুটছে তাতে আকাশ সংস্কৃতি সত্যি সত্যি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।জগতজুড়ে যা ঘটছে তা তাৎক্ষনিক তথ্য সরবরাহ করতে এই অনলাইন পদ্ধতিই পেরেছে মানুষের একেবারে হাতের নাগালে পৌঁছাতে।প্রিন্ট মিডিয়া পাড়ায় যখন রাত বারোটা এতক্ষনে অনলাইনগুলো অনেক কিছুই প্রচার করে ফেলেছে। মানুষকে জানান দিয়ে ফেলেছে। তবে এর ঝুঁকিও আছে যা প্রিন্টের ক্ষেত্রে জিরো।যে কোন সময় অনলাইন হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,বা চুরি হওয়ার ভয় থেকে যায়।যা প্রিন্ট সংস্করনে মোটেও নেই।আবার টেকসই চিন্তা থেকেও প্রিন্ট সংস্করন নির্ঝঞ্জাট। অনলাইনে তা নেই।হারিয়ে যাবার ভয় থাকে। যদিচ ফিরে পাওয়ার উপায় আছে তবু হাওয়ায় ভাসা তথ্য বলে কথা। এভাবে অনেক সফ্টওয়্যার,ওয়েবসাইট, ব্লগ হারিয়ে যাবার দৃষ্টান্ত আছে। এক্ষেত্রে ছাপা কাগজ অটল।তবে পুঁজি বিনিয়োগ, মার্কেট প্লেস তৈরী,সব মিলে প্রিন্ট সংস্করন অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

"কুয়াশা ওয়েবজিন,, প্রিন্ট সংস্করন না হলেও এর গুরুত্ব কম নয়। বরাবর সব কটি সংখ্যা প্রশংসার দ্বারে পৌঁছোছে।সকলের প্রশংসায় ভূষিত।নবীণ - প্রবীণের সম্মেলন ঘটানোয় কুয়াশা,র প্রধান উদ্দেশ্য।এখানে যারা লিখিয়ে,
যারা নিয়মিত লেখা দিয়ে সহযোগীতা করছেন তাদের মননেও সরল দাগ কেটেছে।
সকলের প্রতি শ্রোদ্ধা রইলো।

সূচীপত্রঃ আগষ্ট সংখ্যা। ২০১৭ইং।

সূচীপত্রঃ আগষ্ট সংখ্যা। ২০১৭ইং।


স্বাক্ষাতকারঃ
কবি সুনীতি দেবনাথ এর মুখোমুখি। 

প্রবন্ধঃ 
আবুল কাইয়ুম। 

কবিতাঃ
আল মাহমুদ,মহাদেব সাহা,আহমেদ মুনীর,  সৈয়দ রনো, মতিন বৈরাগী,ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী,যুগান্তর মিত্র,অমরেশ দেবনাথ।

উপন্যাসঃ
তৈমুর মল্লিক।

রম্যগল্পঃ
সিকদার আবুল বাশার, এস পি শাহীন।

কবিতাঃ
তানজিলা ইয়াসমিন,দেবজ্যোতি কাজ, রাহুল রায়, সিদ্দিক প্রামানিক, রুদ্র আমিন,অনিমেষ সিংহ, শ্রীলেখা চ্যাটার্জি,রায়ান নূর, জহিরুল কায়সার তালুকদার, জেবু নজরুল ইসলাম, রেবেকা ইসলাম, নকিব মুকশি,নাজমুল কবির, দ্বীপ সরকার, মাসুম মীকাঈল, সুনীতি দেবনাথ, সুশান্ত হালদার,সতেজ মাসুদ, আতাউর রহমান রোদ্দুর, যাযাবর জিয়া, দালান জাহান,সিউলি সিরাজ, বর্ণালী চ্যাটার্জ্জী, নাসির ওয়াদেন।

গল্পঃ
দেবাশিষ রায়, আফরোজা হীরা, রওশন রুবি,জুঁই জেসমিন,এস আই জীবন।

কবিতাঃ
রুপক চৌধু, শিহাব আহমেদ, তন্ময় হাসান, আরণ্যক শুভ্রন,আহমেদ শরীফ শুভ, এনাম রাজু, কৃপা আচার্য, চঞ্চল দেবনাথ, মোঃ নুরুল গনী, সাদাফ আমিন, ডঃ মিন্টু দেবনাথ, অজয় বৈদ্য অন্তর। 

ছড়াঃ
শিকদার বাসীর, মানসুর মুজাম্মিল, তরু তালুকদার, স্বপন শর্মা, মোহাম্মদ কবির সরকার, আল মামুন মাহবুব আলম, বিচিত্র কুমার।

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭

স্বাক্ষাতকারঃকবি সুনীতি দেবনাথ


স্বাক্ষাতকারঃ


"কুয়াশা ওয়েবজিন” এ নবীন কবি সাহিত্যিকদের স্বাক্ষাতকারের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি সংখ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লেখকদের স্বাক্ষাতকার প্রকাশ হবে। আগষ্ট সংখ্যা থেকে শুরু। এ সংখ্যায় কবি গল্পকার,প্রাবন্ধিক নাট্যকার সুনীতি দেবনাথ এর স্বাক্ষাতকার প্রকাশ করা হলো।

সুনীতি দেবনাথ বর্তমান বাংলা সাহিত্যে এপার ওপার উভয় পারেই সমান সমাদৃত।
জন্ম বাংলাদেশের সিলেটের বিয়ানীবাজার সাবডিভিশনের পঞ্চখণ্ডে । পিতা ৺হরিমোহন নাথ এবং মাতা  ৺মানদা নাথ। ১৯৪৫  সালে অবিভক্ত ভারতে ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম।  ১৯৫০ সালে দেশবিভাগজনিত দাঙ্গার কারণে সপরিবারে পাঁচ বছর বয়সে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উদ্বাস্তু হয়ে আগমন ও স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এম.এ.,বি. এড.এবং ওয়ার্ধা থেকে হিন্দী সাহিত্যে কোবিদ পাশ।ধর্মনগর সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বালিকা   ললমবিদ্যালয়ে বিষয় শিক্ষিকা হিসেবে চাকরিতে কর্মরত ছিলেন। ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সংস্থা সি.সি.আর.টি.থেকে জাতীয় স্তরে শিক্ষক পুরস্কার লাভ করেন। বিশিষ্ট সংস্কৃতি কর্মী ও নাট্যকার তথা নাট্য পরিচালিকা হিসেবে কৃতিত্ব। রবীন্দ্রনাথের চণ্ডালিকা ও স্বরচিত মহেশ ( শরৎচন্দ্র রচিত ছোটগল্প অবলম্বনে নাট্যরূপ)  -এর পরিচালনায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন।

স্বাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন কুয়াশার সম্পাদক দ্বীপ সরকার।
.....

কুয়াশাঃ এখানে সাড়া দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সুনীতিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সুযোগ দেবার জন্য। 

কুয়াশাঃ ব্যক্তিগত জীবনে আপনি কি করেন/ আপনার পেশা কি ?
সুনীতিঃ ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মনগর  সরকারি বালিকা.  দ্বাদশশ্রেণী বিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিষয় শিক্ষিকা ছিলাম। ২০০৩ সালের এপ্রিল থেকে অবসরপ্রাপ্ত। এখন সাধ্যমত সর্বক্ষণ লেখালেখি নিয়ে থাকি। 

 কুয়াশাঃ আপনি বিয়ে করেছেন কিনা ?  করে থাকলে আপনার ছেলে মেয়ে কতজন ? তারা কি করেন ?
সুনীতিঃ হ্যাঁ আমি বিবাহিতা। কিন্তু আমার স্বামী ২০০৯ সালের ২৯ আগস্ট হার্ট অ্যাটাক হয়ে প্রয়াত হন। আমার এক মেয়ে মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ কলকাতায় বিয়ের পর আছে। কবিতা লেখে। বিগত কলকাতা বইমেলায় ওর প্রথম কাব্যগ্রন্থ " রৌদ্র ছাপা উঠোন " প্রকাশিত হয়েছে। আর একমাত্র ছেলে অরূপ দেবনাথ ত্রিপুরা সরকারের পি.ডব্লিউ. ডি.- তে ইঞ্জিনিয়ার। ফটোগ্রাফি ওর নেশা। 

কুয়াশাঃ খুশি হলাম আপনার মেয়ে মৌসুমী মন্ডল দেবনাথ এর কৃতিত্বে। 
এবার বলুন আপনার পিতা- মাতার আপনি কতো নম্বর সন্তান ?  
সুনীতিঃ আমার পিতামাতার আমি প্রথম সন্তান। ছোট চার ভাই। 

কুয়াশাঃ এবার বর্তমান বিষয় নিয়ে কথা বলি।ঠিক কোন সময়/ সাল থেকে আপনি লেখা লেখি শুরু করেন ?
সুনীতিঃ ক্লাশ থ্রি ফোর থেকে লেখা শুরু করি। ত্রিপুরা, আসাম,  পশ্চিমবঙ্গের নানা পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। দুর্ভাগ্য আমার প্রচুর লেখা নষ্ট হয়ে  গেছে। 

কুয়াশাঃ এই জগতে আপনি আসলেন কেনো? অনুপ্রাণীত হলেন কিভাবে ? 
সুনীতিঃ সাহিত্য ভালোবাসার সূত্রে এ জগতে আসা। মানুষকে, দেশকে, পৃথিবীকে সার্বিক মানবতাকে ভালবাসার সূত্রে আসা। আমি মনে করি সাহিত্যে এসব কিছুর মূল সূত্র গ্রথিত আছে। ছোটবেলা থেকে বাংলা সাহিত্য প্রচুর পড়েছি। এই পড়াশুনা সাহিত্যের সঙ্গে ষূক্ত হবার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। 

কুয়াশাঃ ধন্যবাদ। সাহিত্যের কোন শাখায় আপনার বেশি পছন্দ ?
সুনীতিঃ কবিতা আমার শ্রিয়ভূমি। প্রবন্ধ,  ছোটগল্প, নাটক খভ এরপরের ভালোবাসা। 

কুয়াশাঃ আপনার প্রথম লেখা কি  এবং কোথায় আপনার লেখা প্রথম প্রকাশ হয় ? সে সময়ে আপনার অনুভূতি কেমন ছিলো ?
সুনীতিঃ আমার প্রথম লেখা কি আজ আর মনে নেই, মনে নেই কোথায় প্রকাশিত হয়। উদ্বাস্তু জীবনের অনুষঙ্গ বেদনা আর যন্ত্রণা প্রাথমিক জীবনকে উদ্ভ্রান্ত করে রেখেছিল। 
কুয়াশাঃ আপনি কি বিষয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করেন মানে দেশ, মাটি,মানুষ,স্বাধীনতা - এই বিষয়গুলীতে? 
সুনীতিঃ দেশ, মাটি, মানুষ, স্বাধীনতা তো আমার লেখার ভিত্তি ভূমি। এছাড়া অবক্ষয়িত সমাজকে বদলানো, সাম্য -মৈত্রীর সুন্দর একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা আমার স্বপ্ন। আমি একজন নারী , নারী জীবনের বেদনা, পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর লাঞ্ছনা বঞ্চনার কথা আমি অনুভব করি। চাই নারীর মুক্তি, অধিকার ও ক্ষমতায়ন। এসব আনুষঙ্গিকভাবে আমার লেখায় আসে। 

কুয়াশাঃ ধন্যবাদ।এখন বলুন  আপনি কখন, কোন সময়ে বেশি লেখেন ?
সুনীতিঃ আমার লেখার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যখন সময়, সুযোগ পাই, অন্তরে তাগিদ অনুভব করি, তখনই লেখি।আমি জানি সংসারের সহস্র কাজে সময় আমার জন্য দুর্মূল্য। 

কুয়াশাঃ আপনার প্রকাশিত বই/ পত্রিকা / ম্যাগাজিন কতটি এবং কি কি ? কোন সালে এবং প্রথম বই প্রকাশের পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিলো ?
সুনীতিঃ মানবিক প্রত্যয় এবং সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য সচেতনতায় - ত্রিপুরা, আসাম, দুই বাংলার নানা মুদ্রিত পত্র পত্রিকা সহ অনলাইন ম্যাগাজিন ও নিউজ পেপারে  আমার কবিতা ,প্রবন্ধ ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ - সকালের জন্য প্রতিবাদী কবিদের কবিতা সংকলন, বর্ণমালা প্রকাশন, / গবেষণাধর্মী বই - ম্যাজিসিয়ান ডি মুরারী : প্রেক্ষিত পূর্বোত্তরের জাদুচর্চা ..প্রকাশক 'জ্ঞান বিচিত্রা / কাব্যগ্রন্থ —ঋদ্ধ সত্য অনুভবে আসে, প্রকাশক —জ্ঞান বিচিত্রা / ইবুক ★ স্বগত সংলাপ / কাফে কবিতা সংকলনঃ বারোজন কবির কবিতা নিয়ে, দোসর প্রকাশন।
অন্য বইয়ের কথা বাদ দিয়ে একটি বইয়ের কথা শুধু বলবো।  "ম্যাজিসিয়ান ডি মুরারী: প্রেক্ষিত পূর্বোত্তরের জাদুচর্চা। আমার স্বামীর মৃত্যুর প্রায় দশমাস পরে তাঁকে নিয়ে বইটি লেখা সেই মৃত্যুর বেদনা তখনো আমাকে ক্ষত বিক্ষত করছে। বইটি বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। আমার স্বামী সরকারি চাকরির পাশাপাশি শখের ম্যাজিসিয়ান ছিলেন। জাদুসম্রাট পি. সি.সরকারের প্রিয় শিষ্য। জুনিয়র পি.সি. সরকার পিতৃস্মৃতিতে পৃথিবীতে প্রথম পি.সি.সরকার মেমোরিয়াল ট্রফি প্রদান করেন। এ ইতিহাস! 

কুয়াশাঃ আপনি কি মনে করেন কবিতায় মানুষের মুখের কথা এবং মানুষের নিজস্ব ভাষাতেই কবিতা লেখা উচিত ? যা এখন আধুনিক কবিতায় বৈচিত্র এনেছে এবং ভিন্ন মাত্রার সৃষ্টি করেছে ?
সুনীতিঃ এটা একটা আঙ্গিক হতে পারে মাত্র। আমি এমনটা ভাবিনা। এতে ভাষা সৌকর্য্যকে আহত করা হয়। ভাষা সম্পদ বিনষ্ট হয়। দিনদিন যে ভাষা সম্পদশালী হবার কথা তাতে দৈন্য দেখা দেয়। আঞ্চলিক মুখের ভাষায় তো সব অঞ্চলে সাম্য নেই। সাম্যের প্রয়োজনকে ভাষার স্বার্থে অবহেলা করা চলে না। 

কুয়াশাঃ আমাদের সাহিত্যে প্রধান অভাবগুলে কি কি? এবং কোন সাইটগুলোতে সাহিত্য এগিয়ে আছে?
সুনীতিঃ একটা উন্নত মানের সাহিত্য তখনই সৃষ্টি হতে পারে , যখন ব্যবহৃত ভাষা হবে বিশুদ্ধ, সম্পদশালী। মননশীল ভাবনা চিন্তার ভার বহন ক্ষমতা ভাষার অবশ্যই থাকতে হবে। আর নয়তো দেশ বা জাতির ভাবনার ঘর ফাঁপা থেকে যাবে। তেমনি সমৃদ্ধ সাহিত্য পথ চলতে পায়ে পায়ে হোঁচট খাবে। অনুশীলনের ধৈর্যের অভাবও সাহিত্যকে পঙ্গু করে। আমার মনে হয় সাহিত্যের কোন শাখাই উল্লেখযোগ্য ভাবে সবল নয়। অনুকরণ বৃত্তি এজন্য অনেকটা দায়ী। সব শাখাতেই এটা ব্যাপক ভাবে চলে। তবু বলা যায় কাব্যসাহিত্য ও কথাসাহিত্য   অনেকটা এগিয়ে আছে। তুলনামূলকভাবে প্রবন্ধসাহিত্য, সমালোচনাসাহিত্য, রম্যসাহিত্য, নাট্যসাহিত্য পিছিয়ে আছে। এতে সাহিত্যের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। 





কুয়াশাঃ আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে কবিদের কোন বিষয়ের প্রতি আপনি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলবেন?
সুনীতিঃ আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে এতো গুণীজন ভাবিনা। কবিতা পড়তে ভালোবাসি, বিশেষ করে ভালো কবিতা  হলে কথাই নেই। কবিতার আঙ্গিক, ছন্দপ্রকরণ, অলঙ্কার, শব্দযোজনা      নিঃসন্দেহে কবিতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, মানোন্নত করে সমৃদ্ধ করে। তবে গতানুগতিক পদ্ধতি কবিতাকে হাটে মারে।ভাষার কারুকার্য দিয়ে গড়ে তোলা হয় সার্থক কবিতা। তাই ভাষার বিশুদ্ধতা সার্থক কবিতার প্রথম শর্ত। উপযুক্ত শব্দ যথাযথ স্থানে ব্যবহার করার জন্য সতর্ক হতে হয়।একটা কবিতা লিখে কয়েকদিন  ফেলে রাখুন, এরপর পরপর কয়েক বার সেটা পড়ুন। দেখবেন উপযুক্ত শব্দ নতুনভাবে পেয়ে যাবেন, যা কবিতাকে মাধুর্যময় করে তুলবে। ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। বানান ভুল গুরুতর অপরাধ। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশের কবিদের বলবো কবিতা লেখার সময় হাতের কাছে " বাংলা একাডেমি বাংলা বানান অভিধান" বইটি রাখতে। পশ্চিমবঙ্গের কবিদের "সংসদ বাংলা অভিধান " লেখার সময় কাছে রাখতে বলবো। এতে বানান ভুল সমস্যা এড়ানো যাবে। কাব্যরস প্রদানই কবিতার লক্ষ্য, বীভৎস রস নয়। 

কুয়াশাঃ এক্কেবারে নবীনদের জন্য আপনার উপদেশ/ পরামর্শ কি?
সুনীতিঃ একেবারে নতুন কবিদের কবিতা লেখায় সমস্যা বহুতর। কেউ কেউ ভাবেন কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করে দুর্বোধ্য, জটিল কবিতা লেখায় বাহাদুরী। শুধু আমি কেন বেশির ভাগ কাব্যও.বোদ্ধা তা মানবেন না। কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অলঙ্কার ব্যবহার করা হয়, দুর্বোধ্যতা সৃষ্টির জন্য নয়। অপরপক্ষে সরলতা হচ্ছে কাব্যের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। তাই মননশীল হৃদ্য বিষয় আন্তরিকভাবে ব্যবহার করলে মনোজ্ঞ কবিতা সৃষ্টি হতে পারে। নবীন কবিরা নতুন নতুন দিগন্তে পাড়ি দিন। রবীন্দ্র নজরুল তিরিশের আধুনিক কবিরা এবং জীবনানন্দকে অতিক্রম করে বাংলা কবিতা বলয়ে উন্নততর সৃষ্টি করুন এই কামনা করি। 

কুয়াশাঃ সাহিত্যের জন্য আপনার ভবিষ্যৎ চিন্তা কি বা মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা আছে কিনা?
সুনীতিঃ বয়সের প্রান্তরে অনেক পথ হেঁটেছি। এখন রুগ্ন ক্ষীণবল। নতুন কোন পরিকল্পনা নেবার সুযোগ নেই। তবুও স্বপ্ন দেখি অনেক অনেক কবিতা লিখে যেতে হবে মানুষের কবিতা মানুষের জন্য কবিতা। কিছু কিছু স্বপ্ন থাকে যাদের শুরু আছে শেষ নেই। মানুষ, মানুষের পৃথিবীকে নিয়ে আমারও তেমনি স্বপ্ন আছে। যতদিন বাঁচবো সেগুলিকে বাস্তবায়িত করে যেতে চাই। 

কুয়াশাঃ খাবারের মধ্যে আপনার পছন্দ কি?
সুনীতিঃ ঝাল, নোনতা  টক, নিরামিষ খাবার আমার পছন্দ ছিলো। বর্তমানে হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস, নার্ভাস ড্যামেজ ও এলার্জির কারণে ডায়াটিশিয়ানের পছন্দ ও নির্দেশনা আমার পছন্দ। 

কুয়াশাঃ আপনার কোন রং পছন্দ?
সুনীতিঃ লাল রঙ আমার পছন্দ।দেহের শিরা ধমনিতে প্রবাহিত জীবন সঞ্চারিনী রক্তধারার রঙ লাল। প্রেম প্রণয়ের স্বপ্নিল প্রবাহের রঙ লাল। উদিত সূর্যের রশ্মি রেখার রঙ লাল। বসন্তে প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া, রঙ্গন,গুলমোহর,পলাশ শিমুলের রঙ লাল।বিপ্লব মহাবিপ্লবে বিপ্লবীর নিঃস্বার্থ রক্তস্রোতে রঞ্জিত পতাকার রঙ লাল। তাই আমি ভালোবাসি লাল রঙ। 

কুয়াশাঃ আপনার জীবনে কতগুলো প্রেম এসেছে এবং প্রথম প্রেমের অনুভূতির কিছু বলুন? সে বিষয়টা আপনার সাহিত্যে / কবিতায় কতোটা প্রভাব ঘটিয়েছেন?
সুনীতিঃ আমার জীবনে প্রেম একবারই এসেছে, এটাই শেষবার। এর পরিণতি পরিনয়। আমার সাহিত্য বা কাব্যে ব্যক্তিগত প্রেমের প্রভাব পড়েনি।একবার শুধু স্বামীর মৃত্যুর পরে ত্রিশটি কবিতা লিখেছি। সেগুলো www.Shyahi.com Publishars platform আহমেদাবাদ থেকে' স্বগত সংলাপ '  নামে  ebook হয়ে বের হয়েছে। এখন Niharika Prakashani থেকে কিছুদিনের মধ্যে print media -তে বের হবে। নিসঃন্দেহে এগুলো প্রেম বিষয়ক। 

কুয়াশাঃ আপনি কি মনে করেন সাহিত্যে নবজাগড়ন ঘটছে?
সুনীতিঃ না আমি এমন ভাবি না। আমার কেন জানি মনে হয় সাহিত্য খুঁড়িয়ে চলছে।যে দেশ ও ভাষার কবি দীর্ঘদিন আগে কাব্য সাহিত্যে নোবেল পান, যদিও আমরা সে নোবেলকে সুরক্ষা দিতে পারিনি, তেমনি সেই ভাষা ও সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। এ আমাদের দুর্বলতা। 

কুয়াশাঃ এখানে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
সুনীতিঃ আপনাদের সঙ্গে থাকতে পেরে, আমার স্বল্প জ্ঞানে কথা বলে আনন্দ পেলাম। ধন্যবাদ ও শুভকামনা। 

সভ্যতা ও শান্তির সংকট : শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা- আবুল কাইয়ুম


সভ্যতা ও শান্তির সংকট : শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা


সামাজিক ক্রমবিকাশ ও সভ্যতার অগ্রযাত্রা অনবরত গ্রহণ ও নেতিকরণের প্রক্রিয়ায় মানুষেরই প্রবৃদ্ধি। অন্য কথায়, মানুষ যে বড় হচ্ছে চিন্তায়, মেধায় ও মননে –এই ক্রমবর্ধিষ্ণু সমাজ-সভ্যতা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ অশান্তি, অরাজকতা ও বিনষ্টিকে যত ত্যাগ করতে পেরেছে এবং শান্তি, সুখ ও কল্যাণকে যত আঁকড়ে ধরেছে ততই পরিশুদ্ধ হয়েছে মানব সভ্যতা।  সমাজ-সভ্যতার প্রবৃদ্ধি প্রযুক্তিনির্ভর তো বটেই, তবে তা জীবনঘনিষ্ঠ কর্মকাণ্ড নিয়েই বিকশিত হয়, জীবনবিমুখতা তার হন্তারক। সমাজের উপাদান যেমন মানুষ, সমাজের লক্ষ্যও মানুষের জাগতিক উন্নতি বিধান করা। মানুষই এখানে চূড়ান্ত, মানুষের উন্নয়নই সমাজ-উন্নয়নের মাপকাঠি। ম্যাক্সিম গোর্কি একবার লেভ তলস্তয়কে লিখেছিলেন, “পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে মহোত্তর কিছু নেই, --- মানুষই একমাত্র বাস্তব সত্য”।  মানুষের বাঁচার তাগিদ প্রবল বলেই সে কিছু আবশ্যক হিতকর নীতির সাথে আপস করতে চায়, সর্বদা চেয়েছেও। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে সহায়ক এ সব অভিজ্ঞতালব্ধ আদর্শিক সূত্রাবলী মানুষই উদ্ভাবন করেছে। বেঁচে থাকার জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবকল্যাণ ও সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে যে সব কর্ম ও ধারণা কাজে এসেছে তাই গ্রহণ করেছে মানুষ। সে সাথে সে বর্জন করতে চেয়েছে অকল্যাণ ও অহিতকে, কুৎসিৎ ও মন্দকে। ভালোমন্দ বাছাইয়ের এই ক্ষমতা আছে বলেই সে শ্রেষ্ঠ, মেধাবী ও মননশীল। মানুষ জেনেছে, বাস্তব জ্ঞান প্রায়োগিক সফলতা থেকেই বিকশিত হয়। সে দেখেছে, ধান ভূমিতে জন্মে, আকাশে নয়। এর জন্য আবশ্যক জমিকর্ষণ, বীজবপন, সেচ, সার ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় শস্য রক্ষার কৌশল, অর্থাৎ একটি বিশেষ পদ্ধতি। হাজার হাজার বছরের সাধনায় মানুষ এ ধান বোনার পদ্ধতিটি শিখেছে, আবার হাজারো বছরের অভিজ্ঞতায় মানুষ চাষাবাদের প্রক্রিয়াকে আধুনিক করতে পেরেছে। এসব অর্জিত জ্ঞান ও কৌশলকে সে অস্বীকার করে না। এ ছাড়া ফসল উৎপাদনের কোন পন্থা মানুষের জানা নেই। সে জেনেছে, এই পদ্ধতিকে অস্বীকার করার নিশ্চিত পরিণতি অপমৃত্যু।  শুরুতে মানুষ ছিল আদিম, বর্বর, হিংস্র ও অসভ্য। তার আত্মবোধ জন্মেছিল বলেই সে মানবসংহারী নৈরাজ্য দূর করতে অনাক্রমণ চুক্তি করেছিল নিজেদের মাঝে। সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে কোন সার্বভৌম বা ‘সাধারণ ইচ্ছে’র কাছে কুর্নিশ জানিয়েও সেই বর্বরতাকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারেনি মানুষ। তবু একটি নিয়মের কাছে সমর্পিত হয়ে সে সভ্য ও সামাজিক হয়ে উঠেছে।  মানুষ শান্তি ও মঙ্গলের জন্য সমাজ গঠন করলেও তার শান্তিতে নানা আকারে-প্রকারে হুমকি ও বিনষ্টি এসেছে বার বার, অসংখ্য অসংখ্য বার। আর তা সময়ের সাথে তীব্র হতে তীব্রতর হয়ে মারাত্মক রূপ পরিগ্রহ করেছে। আজকের ভীতি পাথুরে বল্লম নয়, ক্রুশকাঠ কিংবা গিলোটিন নয়, এমনকি চেঙ্গিস বা নেপোলিয়নের মতো দুর্ধর্ষ খুনি সেনাপতিও নয়। আজকের প্রধান ভীতি বিভিন্ন পরাশক্তি ও  তাদের দোসরদের হাতে মওজুত লক্ষকোটি আধুনিক সমরাস্ত্র, হাজারো পরমাণু বোমা ও রাসায়নিক বোমা।  আদিকালে মানুষ সাধারণত পাথরের অস্ত্র ব্যবহার করতো  ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য পশু শিকারে এবং হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায়। আর আজকের কতিপয় যুদ্ধবাজ মানুষ তৈরি করছে যত আধুনিক সমরাস্ত্র মানব জাতিকেই ধ্বংসের জন্য এবং ধ্বংস করে চলছেও। শুধু জীবনকে নিয়ে নয়, যুদ্ধ যেন আজ সারা বিশ্বকে নিয়ে এক মর্মান্তিক হোলিখেলায় মেতেছে। হিটলার পিঁপড়ের মতো টিপে টিপে হত্যা করেছিল মানব সন্তানকে। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যন্ত্রণা দিয়ে কিংবা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে, বোমা মেরে শহর নিশ্চিহ্ন করতে ও জনপদ উড়িয়ে দিতে তার বাঁধেনি। সেই হিটলার আজ ভূত হয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা পৃথিবীর বুকে। হিরোসিমা ও নাগাসাগিতে তাৎক্ষণিক ও বংশানুক্রমিকভাবে লাখ লাখ জীবন নিয়েও এদের সাধ মেটেনি। শুধু আমাদের বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতেই নয়, কোরিয়া, হাঙ্গেরি, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তান, ইরাক সহ বিশ্বের অনেক জনপদ রঞ্জিত হয়েছে কোটি মানুষের রক্তে। আজ পৃথিবীর মানুষের প্রধান উদ্বেগ, এ নরবলির কী শেষ নেই! দেশে দেশে সংঘটিত নিপীড়ন, দমন আর হত্যার পরিণাম কী হবে! আর কতো দিন চলবে নিরীহের উপর অত্যাচারীর, দুর্বলের উপর সবলের, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের রক্ত থাবা!  আমরা দেখেছি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে ততই বিশ্বময় যুদ্ধের বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের ধারণা ছিল, মানব সভ্যতা হয়তো অমর। কিন্তু আজ যুদ্ধবাজদের রণহুঙ্কার ও দুষ্কর্মের মুখোমুখি হয়ে আমাদের সে বিশ্বাস ক্রমান্বয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এ আধুনিক রণ-উন্মত্ততা আদিম বর্বরতার চেয়েও কুৎসিৎ। একে সভ্যতা বলা চলে না, এ এক জঘন্য উল্টোযাত্রা, আদিমতার চরমে প্রত্যাগমনের পাঁয়তারা। বিশ্বের কয়েক’শ কোটি মানুষ এই মহা-আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে আজ সোচ্চার। প্রচণ্ড ঘৃণায় তারা এই যুদ্ধ আর সভ্যতা-বিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্রের ধ্বংস কামনা করছে। আমরা দেখেছি আদিম, মধ্যযুগীয় বা আধুনিক –কোন অত্যাচার বা যুদ্ধকেই মানুষ মেনে নেয়নি, সে চির প্রতিবাদী। সহস্র বছরের ধ্বংস ও হননের শিকার হয়ে মানুষের চেতনায় সেঁটে গেছে এ চিন্ময়তা, এ সংগ্রামী আত্মবোধ।  যুদ্ধ সব সময় সুবিধে কাড়ে এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এক মানুষের উপর অন্য মানুষের, এক জাতির উপর অন্য জাতির। যুদ্ধ সব সময় নিষ্পেষণ করে, বিভেদ সৃষ্টি করে এবং ধ্বংস করে। কিন্তু শান্তি চায় সমতা, শান্তির মানেই হলো সহনশীলতা, একে অপরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার সহ্যশক্তি। মানবতা. সততা, সংহতি, স্বাধীনতা ও প্রগতির নিরুপদ্রব মহৎ অবস্থাটির নামই শান্তি। যুদ্ধ মানুষ ও সভ্যতাকে ধ্বংস করে, কিন্তু শান্তি মানুষের সমাজ ও সভ্যতাকে নির্মাণ ও অগ্রগামী করে। এই গ্রহের একমাত্র প্রত্যাশাই আজ শান্তি। এ ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় পন্থা নেই। 
যুদ্ধবাজ ও অশান্তির হোতাদের ধর্ম হলো প্রতিনিয়ত বাস্তবতাকে, সত্য ও ন্যায়কে অস্বীকার করা। অন্যায়কারী বা অপরাধীর কোন হিতজ্ঞান নেই, মানুষের জীবন তার কাছে মূল্যহীন। কিন্তু মানুষকে যে ভালোবাসে সে কখনো তার ক্ষতি করে না, বরং তাকে কাছে টানে, যূথবদ্ধ হয় সমাজ নির্মাণে। শান্তি আরাধ্য বলেই প্রগতি তার লক্ষ্য, সুন্দর তার সাধনা। সে অন্তরে সর্বদা লালন করে প্রেমময় সত্তা। প্রকৃত মানুষ মানুষেরই কথা বলে, মানবকল্যাণে কাজ করে এবং মানুষের হিত কামনায় ছবি আঁকে, গান গায়, সাহিত্য গড়ে। লোলুপ ও সংকীর্ণ ইচ্ছেকে অবদমন করে বিশ্বশান্তি ও সমাজ গঠনের অদম্য আর্তনাদ ছড়ায় সে তার কবিতা, সাহিত্য ও শিল্পে। সকল আস্ফালন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে বনে গেছে প্রগতির তরিৎকর্মা সৈনিক। মানুষের প্রধান লক্ষ্য যে শান্তি তাই আজ শিল্পসাহিত্যে মুখ্য উপজীব্য হয়েছে বিশ্বময়। বর্বরতা ও নৃশংসতার এ যুগে শিল্পসাহিত্য মানুষকে মানবতার পক্ষে একত্রিত করেছে। এই পৃথিবীতে একটিই অস্ত্র থাকা উচিত, -তা হলো লেখকের কলম। এ কলমই শান্তির অমিয় বাণী ঝরাবে, আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমিত করবে এবং মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে বন্ধুত্ব ও সমঝোতা এনে দেবে।  সভ্যতা সংরক্ষণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৃথিবীকে অস্ত্রমুক্ত করার বিষয়টি এড়িয়ে নিছক স্বকপোলকল্পিত রূপকথা নির্মাণ বা আকাশচারিতায় মগ্ন থাকা এ যুগের শিল্পী-সাহিত্যিকদের উচিত নয়। ভবিষৎ পৃথিবীর অস্তিত্ব ও আগামি দিনের বংশধরদের জীবনের অনিশ্চয়তাকে জিইয়ে রেখে উদ্ভট ইউটোপিয়া নির্মাণের ধ্যানের মাঝে যে সকল লেখক নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখেন তাঁরা প্রকারান্তরে ঘাতক দলেরই সেবক। স্বার্থ ও কাল্পনিকতার ধূম্রবলয় থেকে তাঁদেরকে মুক্তি পেতে হবে। মানবহিতৈষণাই হওয়া উচিত তাঁদের মিশন। জাতীয়-সামাজিক ও গোষ্ঠীগত অনাচার-অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানব-বিবেক জাগ্রত রাখার দায়িত্ব শিল্পী-সাহিত্যিকদেরও। মানুষের স্বাধীনতা ও সুখের দিশা তাঁরাই দেবেন। তাঁরাই আনবেন পূর্ণ ও স্থায়ী শান্তির সূর্যকে ছিনিয়ে।  শিল্পীর কল্পনা বাস্তব জীবনকে ঘিরে ও মানবকল্যাণকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা উচিত। বস্তুনিষ্ঠ কল্পনা থাকবে, কিন্তু নিছক কল্পনাবিলাসী হওয়া তার জন্য পাপ। আমার মতে, শিল্পসাহিত্যের সম্ভোগে মানুষের চিত্তে জাগরিত আনন্দময়তার কারণ আর কিছু নয়, সে মানবিকতা। এ আনন্দও অতিলৌকিক কিছু নয়, এ হলো মানব-মনে ভালোবাসার উদ্রেক। মানুষের এ ভালোবাসা কখনো অশান্তি, অনাচার ও অপ্রয়োজনীয় আবর্জনাকে আশ্লেষ করে না। মানুষ ভালোবাসবে মানুষকে, মানুষের শান্তি ও কল্যাণকে। বিশ্বশান্তি, মানুষের স্বাধীনতা ও আত্মবিকাশের পথটি ছেড়ে নিষ্ফলা কল্পনাবিলাসের সাথে শিল্পীসাহিত্যিকদের, এমনকি কোন মানুষেরই সখ্য গড়ে উঠতে পারে না। 

নোলক- আল মাহমুদ







নোলক
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে ?
-হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিৎ টিয়ে করে রে ঝিকমিক।
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।
কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি নাতো !
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।

একটি প্রার্থনা - মহাদেব সাহা


একটি প্রার্থনা

যারা পিছিয়ে পড়া বেঁচেও মরা,
জীবন তাদের ঝলমলিয়ে উঠুক,
তারা সকালবেলার ফুলের মতো ফুটুক ;
ক্ষুধায় তাদের অন্নজল জুটুক ।

যারা হতমান ক্লিষ্ট প্রাণ ভরা
নদীর মতো তারা ছলমলিয়ে উঠুক,
রুগ্ন ভগ্ন জীবন থেকে মধু তারা লুটুক ;
দুই হাতে গোলাপ তাদের ফুটুক ।

যারা অন্ধকারে বর পাখির মতো তারা কলকলিয়ে উঠুক,
নুয়ে-পড়া জীবন তাদের ফুলের মতো ফুটুক ;
সকল বাধা সকল ভয় এবার তাদের টূটূক ;
শুষ্ক ভগ্ন রুদ্ধ জীবন ঝলমলিয়ে উঠুক ।

শেষ কথা -আহমেদ মুনীর

শেষ কথা 
তোমার সাথে কথা বলা না বলা সমান সরল কথা 
তুমিতো বনফুল ছড়াও সুগন্ধী সৌরভ 
মধুকর আসে যায় ঝাকে ঝাকে 
অকৃপণভাবে দাও তুমি তোমার সুধা 
তুমিতো ভালই আছো তোমারই মত 
যা চেয়েছ যেমন চেয়েছ যা চাও যেমনটা চাও 
দুঃখটা সরিয়েছো এটাই এখন তোমার সুখ 
নিত্য নব নব সাধে ভরে রাখ তোমার মন 
ভরে তুল সুখ।। 
কী আর এখন প্রয়োজন তোমাকে আমার 
অতিষ্ঠ জঞ্জাল সরিয়ে এখন তুমি ব্যস্ত রানী মহারানী 
তোমার মৌচাকে 
এখনও তোমার জীবন ভরা ভাদরের যৌবন 
রূপ সুধা বিতরণেই যত সুখ পাও তুমি 
এটাই গ্রহণ এটাই কামনা সাধনা তোমার 
ভাললাগার ভালবাসার নিত্য নব অভিসারে 
এখনও অনন্যা প্রেমিকা তুমি ।। 
সৃষ্টিকর্তার মনে কী আছে জানেন তিনিই আরও 
জেনে থাকতে পার তুমিও 
আমি জানি না কিছুই 
আমি থাকি আমারই কাছে 
আমার ভাললাগা ভালবাসার সাথে 
এখানে মধুকর মধু কিছু্ই নেই
এখানে আসে না কেউ 
এখানে নেই গুন গুন গুঞ্জণ 
এখানে হয় না কোন অভিসার 
এ এক ভিন্ন জগত দেখবে না তুমি 
দেখবে না মধুকরেরাও 
এইভাবে ভাল থাকা ভাল আছি 
বেচে থাকা বেচে আছি 
থাকব বেচে থাকব ভাল ।। 
তাই তোমার সাথে কথা বলা না বলা সমান মরল 
অযথা বাক্য ব্যয়ে ভাঙ্গাবোনা তোমার ধ্যান 
তুমিও ভেঙ্গ না আমার সুখ 
এইটুকুই রইল শেষ কথা শেষ নিবেদন।।

খেলারাম খেলে যা - সৈয়দ রনো

খেলারাম খেলে যা

কয়েক বছর আগের দেখা
সেখান থেকে গল্প শেখা
এখন সবাই চুপ
খেলার মাঠে ঝগড়া বিবাদ
তখন ছিলো খুব।
ইচ্ছে মাফিক ফাউল করে
ঠ্যাং ভেঙ্গেছে গায়ের জোরে
কানায় দিতো বাঁশি
লাইসম্যান কয় সব দেখেছি
রেফরি দলের দাসি।
এক খেলাতে ফাউল হলে
অন্য খেলায় ফাউল ধরে
ইচ্ছে স্বাধীন কাজ
খেলার মাঠের রাজনীতিতে
মাথায় পরে বাজ।
খেলা দেখে মন্ত্রী হাসে
হচ্ছে খেলা চাড়াল দাসে
সব খেলোয়ার চুপ
বোবার মুখে ভাষণ শুনে
আনন্দ পায় খুব।
ভোটের মাঠে ভোটার কাদে
আম জনতা আটকে ফাদে
লজ্জাতে লাল মুখ
মামলা ভয়ে আতঙ্কিত
অনাহারির বুক।
খেলার ড্রেসে লাল স্যালোয়ার
মুক্ত আছে এক খেলোয়ার
চাপরাশি দেয় গোল
রেফরি বলে একাই খেলুক
কীসের হট্টগোল।
শর্ত ছিলো গোল দেওয়াতে
অট্টহাসি মানা
বিজিত দল শর্ত ভেঙ্গে
দিচ্ছে ঘরে হানা।
রেফরি বলে হাত পা বেঁধে
জিতলি তোরা ছলে
এখন কেন মারিশ ওদের
ধার করা সেই বলে।
মন্ত্রী হয়ে ঠ্যাং তুলে যেই
জোরসে মারে হাচি
দুর্বল কয় বোম ফেটেছে
কেমনে এখন বাঁচি।
রাত পুহাতেই জলের ভেতর
ফসকে গেলো পা
রেফরি বলে উচিৎ বিচার
মরার খাওয়া খা।

মৃত্যু পায়ে পায়ে হাঁটে - মতিন বৈরাগী

মৃত্যু পায়ে পায়ে হাঁটে

হঠাৎ ঘুম এসে গেলে জাগবো না এই সত্য আমার;

চৈতন্য ঘুমিয়ে গেলে পড়ে থাকবে স্তব্ধতার ভাষা অন্য সম্ভবনা

মুছে যাওয়া বোধ উল্কায় উল্কায় রঙ হারালে 

সমভূমি তৃষ্ণায় রূপ নেবে অমর অজর অক্ষর স্মৃতির লতাপাতা

মুছে যাবে

বিনাশী এই ঘুম মানুষের অঙ্গের মগজের হাড়ের ও রক্তের

যার যার তার তার নেয় না কেউ কাঁধে আর 

অথবা করে না বিনিময়

কেউ যায় না সেই ঘুমের অন্দরে, যেখানে পড়ে আছে সে

পড়ে থাকবে কোনো নিরাপদ গুহায় অথবা প্রজ্জলনে

মিলাবে আকাশগঙ্গা অদৃশ্য হাওয়ায়-

এই ঘুম আসে মানুষের প্রাণের বিস্তারে একার নিভৃতি

যেনো একটা ঢিলের বিস্তার জলে কেঁপে কেঁপে নেমে গেলো আরেক দিগন্তে

বিশাল বিস্তৃত জলধি গ্রাস করে নিলো সবটুকু শুষে

সেই ঘুম নামলে চোখে ঘুমিয়ে যায় কাকাতুয়া ঘুমের আঁধারে

যার যার তার তার এক নিয়ম নিরন্তর মহাশূন্যের

অথবা নিয়ম করে নেয় কেউ নিজের নিয়মে

কেউ আর আসে না অচঞ্চল মেঘের সীমায় 

মৃত্যুই আসে; ফেলে যেতে পারে না বলে তারে 

নিজের সৃষ্টির বিপরীত বিহারে

জন্ম থেকে মৃত্যু পায়ে পায়ে হাঁটে।

চাকমা - ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী

চাকমা 

চাকমাদের চিতার নিভু আঁচে 

রক্ত মাখা নতুন পৃথিবীতে 

সোনার বাংলার জননীর জঠরে 

আলোর স্তুপ পেরিয়ে 

উড়িয়ে দিয়েছ তোমাদের বিজয় ধ্বজ I 

এযাবত সব ধংসের ইতিহাস থেকে জেনেছি 

ধংসের প্রাক মুহূর্ত ঠিক এমনই হয় 

যেখানে মানুষের অন্তর্বাসের উষ্ণতা বেড়ে যায় ,

বেড়ে যায় বৃষ্টির নাভির গভীরতা I 

যেখান থেকে উঠে আসে 

ঘুর্নিঝড়ের যাবতীয় উপাদান I 

আগামী পুজো সংখ্যায় 

ঢাকাই জামদানী পরে ফুল ছড়িয়ে দিও 

পাহাড়ের গায়ে ঝরনার অঙ্গ-সুবাসে I 

আর নথ পরিয়ে সভ্যতার রাজ্যাভিষেক কোর 

মমিদের শহরে ...

সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি - যুগান্তর মিত্র

সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি

ভুল অনুবাদ ছড়িয়ে পড়ছে

তোমার গলি থেকে রাজপথে … 

ধোঁয়া আর ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে সেতু। 

তুমি চশমা খুলে রাখো।

আলো মাখা কলমে লেখো বৃষ্টির গান।

যেভাবে বরাবর সুর ছড়িয়ে পড়ে

নিকোনো উঠোনে,

যেভাবে জ্যোত্‍স্না এসে লুটোপুটি খায় 

ঝুলবারান্দার কার্নিশে,

সেভাবেই তুমি এসো

তুলোবীজের মতো ছড়িয়ে পড়ছে 

সন্ত্রাস সন্ত্রাস ! 

এসো পাগল হাওয়া, 

উড়িয়ে দাও যাবতীয় রেণু-সংহার,

আমরা এখন এক্কাদোক্কা খেলব,

গোল্লাছুট খেলব 

রাজারানীর উঠোনে। 

ওরা বসে থাকুক নিজস্ব আসনে। 

আমাদের হাসি গান থেকে শিখে নিক 

বেঁচে থাকার নিজস্ব নিয়ম। 

ভোঁতা অস্ত্র জমা হোক জঞ্জালের স্তূপে।

দহন - অমরেশ দেবনাথ

দহন

আমি কতটা আর হয়েছি পুরনো, তোমারে চিনেছি নতুনে নতুনে,

আমি হারাই চেনা পথ, পথ হারানোর মাদকতায় নিজেরে ভাসিয়ে,

ভোরের কিরণে কুড়েছি কুসুম, মনেতে ছিল প্রতিদানের দুন্দুভি, 

তাই হলনা দেওয়া সেই যে ফুল সকল দানে, নিয়মে দিয়েছি অঞ্জলি,

হয়ত তোমার প্রেমের শীতল ধারায় ভিজেনি হৃদয়, ছিটলনা মঞ্জুরি,

তবু উড়ে প্রাণের পাখি, লাগে হাওয়া দখিন হতে ভেসে; উড়ে হে উত্তরী। 

আমি কতটা আর পেরেছি দিতে তোমার চরণে সকল দানে, নিবিড় সমর্পণে,

জীবনধরে ছিলেম কৃপণ পূজার থালের আয়োজনে, শুধুই বিষয় সঞ্চয়ে,

তবু যখন খুলেছে চোখ, দেখি একি সবই শূন্য, নিয়েছে বিদায় শশী,

গহন আঁধারের ভীষন ঝড়ে উঠল কেঁপে হৃদয় আমার, রিক্ত কেতকী,

শূন্য ডালে পাইনি খুঁজে একটিও ফুল, ফুটে আছে আমারই পথ চেয়ে,

আমারই পাপের দাবানলে, পুড়েছে যত সবুজ শাঁখ অসীম বেদনাপ্রবাহে,

কোথায় আর ঝরেছে শ্রাবণ, প্রেমের বাদলে নিবিড় ছন্দে গুনগুনিয়ে,

তাই নিয়েছে সবুজ বিদায় আমার গানেতে বিরহ দিয়ে মৃত লিপিতে,

তুমি দেবে প্রাণ প্রেমস্পর্শে হারানো বাগানের মৃত ডালে নতুন জীবনে,

তাইতো আসি ঘুরে, বারেবার ফিরে ফিরে একই ভাবের ছন্দ বহে নিয়ে,

যখন তোমার প্রেমের সুধায় হবে গান পূর্ণ আমার, সকল গরল পানে,

সে বিষেরেই অমৃত গুনে হব প্রেমিক নীরব দাহে চোখের জলেতে।

             

স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় - তৈমুর মল্লিক

স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় -

                      ১ খণ্ড

আচমকা লাফ দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল রিনি। চারদিক অন্ধকার , তাহলে কি সকাল হয়নি ? 
চোখ কচলিয়ে বার বার দেখার চেষ্টা করলো চারিদিকে। না- যা দেখছে সেতো সত্যি। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। এরকমতো আর কখনও হয়নি । এই ভাবে সকাল হবার আগেই জেগেও ওঠেনি কোন দিন । তাহলে আজ কেন এমন হলো ? 
একটা চিন্তার সহজ ভাঁজ কপালে ভেসে ওঠে । কিছুটা ঘাবড়েও যায় সে । 
চেষ্টা করলো মনে করতে, গতরাতে কি ঘোটেছিল—
স্পষ্ট মনে পড়ছে রিনির,রাত তখন আনুমানিক ১১ টা- 
সে পড়ার টেবিলে বসে পড়াশুনা করছিল, একটা সময় ক্লান্ত বোধ হয়। বইটা হাতে নিয়ে আস্তে করে চলে আসে নিজের বিছানায়। 
এরপর আর কিছু মনে নেই। বুঝতে পারে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। সত্যি কি এখনও সকাল হয়নি?
একটু ভয়ে ভয়ে দেয়ালে ঝুলন্ত ঘড়িটার দিকে তাকায়। ও মাই গড--- 
সকাল সাতটা বাজে? 
ঝটপট করে বিছানা ত্যাগ করতে গিয়েও থমকে যায় আবার---কিন্তু একি ? চারিদিকে এত অন্ধকার কেন? 
প্রচন্ড ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে রিনি, অন্ধকারের মাঝেও ঘড়ীর সময় ঠিক দেখতে পেয়েছে সে, কিন্তু কিভাবে ? কিছুই বুঝে উঠতে পারে না । অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় জানালার কাছে যাবার।
আস্তে আস্তে জানালার দিকে এগিয়ে গেলে জানালার পাল্লা বন্ধ দেখতে পায় । হ্যা তাইতো , মনে করার চেষ্টা করে গত কালের কথা । বেশ ভালো ভাবেই মনে পড়ে – সে গতকাল ঘুমাবার আগে জানালা বন্ধ করেনি । তাহলে জানালা বন্ধ কেন ? বুকের মধ্যে চিন চিন করে ওঠে অজানা শঙ্কায় । 
অনেকটা সাহস সঞ্চার করে ভয়ে ভয়ে জানালা খোলে রিনি।
বাইরে চকচকে উজ্জ্বল রোদ। ঝলমল করছে চারিদিকে। তাহলে ঘরে কেন এত অন্ধকার? 
একবার বাহিরে দিকের তাকায় আবার ঘরের মধ্যে তাকায় সে। কোন কিছুই তার মাথায় আসছে না। অজানা একটা ভয় নিয়ে ফিরে আসে বিছানায় ।
সাগর, কোথায় চলেছিস এভাবে হন-হনিয়ে? 
রুমির ডাক উপেক্ষা করে কোন উত্তর না দিয়ে চলে যায় সাগর। 
রুমি কিছুটা হতবাগ হয়ে সাগরের চলে যাবার পথে তাকিয়ে থাকে।
কিছুটা অবাক হয়ে রুমি ভাবতে থাকে কি হয়েছে সাগরের? 
গত রাত পর্যন্ত ভালই ছিল সে। আজ আবার এমন কি হলো । ভাবনার গভীরে তলিয়ে গেছে রুমি । কোন কিছুই বুঝতে পারে না সে। 
আচমকা ভাবনা ছিন্ন হয় , কেউ যেন ডাকছে তাকে । পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় বিথি দাঁড়িয়ে আছে ।
কিরে রুমি দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস? 
বিথি তুই এখানে? 
আমি এই পথেই যাচ্ছিলাম , তোকে একা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলাম । কি হয়েছে তোর? 
না-রে তেমন কিছু নয় । 
কিছুতো একটা বটেই। কি হয়েছেরে, বল আমাকে। 
না বিথি আসলেই কিছুনা। কোথায় যাচ্ছিস ক্লাসে তো?
হাঁ
চল তাহলে...
চলবে......

রবীন্দ্রানুরাগী চোর - সিকদার আবুল বাসার

রবীন্দ্রানুরাগী চোর

-আদালতে পুলিশ: মহামান্য আদালত, এই কাপড়ের পুঁটলিতে কিছু কাপড় চোপড়, থালা বাসন ও জুতো সমেত কাঁধে করে ধানমন্ডির একটা বাড়ীর পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর সময় গ্রেফতার করেছি।

-বিচারক: "তুমি চুরি করেছো?"

-চোর: "না হুজুর, আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নির্দেশ। পালন করেছি শুধু।"

-বিচারক: "তার মানে?"

-চোর: মাঝরাতে কানে ভেসে এলো কবিগুরু বলছেন, "আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে।" তাই জোৎস্না রাতে বের হলাম। শুনতে পেলাম, "এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে।" দেখলাম বাড়ীটি খালি-আমন্ত্রনে সোজা ঢুকে পড়লাম।  ঢুকেই শুনতে পেলাম- "ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে" খুব খুশি হলাম, আর তখনই কানে ভেসে এলো- "এবার উজাড় করে লও হে আমার যা কিছু সম্বল"- কি আর করি, কবিগুরুর নির্দেশ তো আর অমান্য করা উচিত হবে না- এতে সব মালপত্র বেঁধেছি সঙ্গে সঙ্গে কানে ভেসে এলো- "আজ দখিন দুয়ার খোলা"-বুঝলাম পেছনের দরজা খোলা- সেখান দিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম-

সঙ্গে সঙ্গে এই মূর্খ পুলিশটা এসে আমায় ধরলো। ওকে কত বোঝাবার চেস্টা করলাম আমি চুরি করিনি শুধু রবীন্দ্রনাথের নির্দেশ পালন করেছি তো ব্যাটা বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের নামই শোনেনি। সোজা ধরে নিয়ে গেল।আজ আপনার কাছে নিয়ে এসেছে। আপনিই বলুন হুজুর- "আমার কি দোষ।"

-বিচারক: "ঠিক আছে; তোমাকে ছয় মাসের সাজা দিলাম। এই বিষয়ে তোমার রবীন্দ্রনাথ কিছু বলেছেন"। 

-চোর: "এ পথে আমি যে গেছি বারেবার, ভুলিনিতো একদিন ও..........."

-বিচারক: "জেলে যখন থাকবে, তখন তোমার রবীন্দ্রনাথ কি বলবেন?" 

-চোর: "ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে?"

মহা পন্ডিতের পন্ডিতিজ্ঞান - এস পি শাহীন

মহা পন্ডিতের পন্ডিতিজ্ঞান 

            

( না হাসিলে দাঁত বের করবেন না)

হাসুর মা'র চোখ ইয়া বড়ো বড়ো হয়ে একবার উপরে আরেকবার নিচে নামছে,।দু'হাতে চেপে আছে গরম কড়াই,সবেমাত্র রান্না করে চুলোয় থেকে নামিয়ে আনা। মুখে আশ্চর্য্য আর ভয়ংকর হতাশের চিহ্ন।তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো কাউকে যেনো তার সামনে অন্য কেউ কুপিয়ে মারছে।আসলে কি মারছে? না,কেউ কাউকে মারেনি।তার স্বামী ঘর থেকে নামতে গিয়ে পিচলা খেয়ে পড়েগেছে ইয়া বড়ো এক কলাগাছের মতো আশপাশ মাটি কাঁপিয়ে পড়ে গড়াগড়ি করছে আর উঠতে পারছেনা। তারপড়ে  যাবার কারণ হলো নিজের পন্ডিতি জ্ঞান জাহির --

হাসুর মা রান্না করে কড়াই চুলো থেকে নামিয়ে আসার সময় বাপবেটাকে বলে আসলো--

-- এই রান্না হয়েগেছে তোরা খেতে আয়,,বলে রান্না ঘর থেকে নামার সময় পড়েগেছে।পড়াটা স্বাভাবিক কারণ রান্নাঘর উঁচু, বৃষ্টি বাদলের দিন।পিচ্চিল হতেই পারে ঘরের ফিঁড়া (দরজার সামনের জায়গা)।তাছাড়া উঁচু ঘরের সাথে নিচু উঠোনের সমতাল রাখার জন্য কিছু মাটি হেলানো ফিঁড়ার মুখে রান্নাঘরের উঁচু ভিটার সাথে।হাসুর মা যেই পা রাখলো ফিঁড়ার মুখে ,পা পিচলিয়ে ছেল ছেল করে এক্কেবারে নিচে উঠোনে পড়লো, তার হাতের গরম কড়াইটা আবার শরীরের তাল রাখতে গিয়ে পাশের সাইটে ধপ করে ছেড়ে দিলো। পড়ার শব্দ পেয়ে বাপবেটা সাপলডু খেলার  "ল ছক্কা,,ল কানা " তাল ছেড়ে দরজার সামনে দৌড়ে দাঁড়ালো আর দেখলো কড়াইয়ের তরকারির জুল এপাশওপাশ কিছুটা পড়ে আছে। হাসুর মা পড়ে গিয়ে হাসতে হাসতে গা'য়ের কাদামাটি ঝাড়তে ঝাড়তে কড়াই নিয়ে দাঁড়াতেও পারলোনা,তার স্বামির জ্ঞানবাণী ঝরতে শুরু করলো---

--- তোর মতো বেক্কলেরা তো এমনেই পড়ে।হাঁটার কোন তাল নেই,,ফাগাইয়া ছিগাইয়া উপরের দিকে হা কইরা হাঁটলে তো এমনই অইব,,এমনেই পড়ন লাগবো।

--- হ,আমার পড়ার মধ্যেও তোমার উকিলি যুক্তি দেখাও।

-- এই বেত্তমিজ,,এইডা উকিলি যুক্তি অইলো? উচিৎ কথা কইলেই গা জ্বালা ধরে? তাল রাইখা নামতে পারলেনা?ঐ হাসুয়া--- তোর মা'ডা আসলে বেচোদা, হের লাইগা আইজ আমার এমন দশা ।

---- ""হিহিহি-- 

 ও বাবা বেচোদা কি?

বাবা পোলার জবাব দেবে কি?

নিরব রয়ে যায়,

নিজের মতে নিজের বুলি

নিজে আওড়ায়,

তোড়া(কম) বুদ্ধিতে খোঁড়া যুক্তি

আবার দাঁড় করায়--

তেলে জলে গুলে

আবার বউরে বলে---

নামাতে পারলেনা এমনে -----? 

আমি চলি যেমনে?

আগে না দেখলে,এখন চাইয়া দেখ

না শিইখা থাকলে একটু শেখ---"

     বলে তিনি নিজে তার শরীরটাকে একটা মুডে নিয়ে দাঁড় করালো ।ডানের বাহু বাম দিকে বামের বাহু ডান দিকে নিয়ে পাছাটাকে হেলিয়ে দুলিয়ে কিভাবে মুড নিয়ে হাঁটতে হয় তা নিজেই দেখানোর জন্য রান্নাঘর থেকে নামছিলো।কিন্তু যেই পা রাখলো আর হরুৎ আওয়াজে ধপাস করে হাতি পড়ার শব্দ হলো। এমন পড়া পড়লো আর উঠতে পারছিলোনা,দু'মিনিট ধরে গড়াগড়িই করলো এপাশ ওপাশ  আর হাসুর মা'র চোখ পুকুরের মতো বড়ো হয়েগেলো।কোনমতে উঠে বলল--

-- এই জাগা এতো পিচলা কে জানতো-? পড়ছি তো তোর কথা ভাবতে গিয়ে, নইলে পড়তাম?

ছেলে যে দাঁড়ানো ছিলো সে বলল---

ও বাবা, তুমি মাইনসের দোষ খুঁজো, নিজের দোষটা দেখনা। তোমার মতো কেউ স্টাইল করে নামে?দেখো আমার মতো নামলে তোমরা কেউ পড়তে না।বলে ছেলে বাপকা বেটা হতে গেছিলো,,কিন্তু সেও পড়লো এমন করে ?একপা এদেশে আরেক পা ওদেশে চিৎ হয়ে পড়েগিয়ে গড়াতে গড়াতে দশহাত দূরেগিয়ে উঠে দাঁড়াতে হলো।বাপে ছেলের পড়া দেখে মা'য়ের দিকে তাকিয়ে বলে --

--- সব এই তোর মা'র দোষ।এইডা একটা অলক্ষ্মী।

 "" হাসুর মা হাসুরে ডেকে কয়

বেশি জানলে এমনি হয়

এই হাসু বাবা , তোর বাপেরে শোধা

আমার বাপে না হয় একটু জানে কম 

তাই আমি হইছি এমন

তোর বাপে তো বেশি জানে

তবে এমন কেন তোর ধরণ--?"

  ছেলে মুখ বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে

এ্য-- মা-,আমি আবার কি করলাম?

বাবা সব দেখে, মেজাজ আরো গেলো চড়কে

 ধমকে বলে --"আমার সব ঠিক ছিলো,

তোর বেচোদাতে আমার ছেলে এমন হলো"

--- শোন,পরের দোষ দেখিও না,, নিজের তরকারিতে লবন দেও।

--- হ দেমুনে,,তোর হাতের তরকারি আমার উপর ঢেলে দে, ,আর আমি কই আমার দোষে আমার এই দশা।

কথা গুলো যখন বলছিলো পন্ডিতের মতো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে,,তখন হাতের বাড়িখেয়ে হাসুর মা'র কড়াই হাত থেকে ছুটেগিয়ে এক্কেবারে মাথার উপরে উপুর হয়ে সবটা গরম তরকারি পন্ডিতের মাথা ,শরীরে। 

হাসুর বাবা ,ওরে বাবারে ওরে মারে বলে নাচতে নাচতে বলল--

--- কইতে না কইতে তুই ঢেলে দিলে? অত্তো বেক্কল তুই?  আইজ বুঝলাম।

   মূর্খ পন্ডিতের কত্তো জ্বালা

       তাদের গজায় শাখায় শখায়

         জ্ঞানের শত ডালপালা

জ্যোৎস্নার মৌনতায় - তানজিলা ইয়াসমিন

জ্যোৎস্নার মৌনতায়

সময়ের উঠোন পেরিয়ে অপেক্ষার দুয়ারে-
আমার ভালোবাসার চেনা মুখের প্রত্যাবর্তন
ভুলে যাওয়া সময়কে আর প্রশ্ন করিনা
ও চোখে চেয়ে চেয়ে খুঁজে যাই ফেলে আসা উত্তর
এখনো শিহরিত হই তোমার চেনা হাসির শব্দে;
বারবার নীরবে ভুল করে বলে ফেলি-" আমি তো তোমারই"
ঘোর লাগা ক্ষণ কখন যে বাস্তবতায় হারায়
স্পন্দনের প্রতিটা মুহূর্তে দুজনার দীর্ঘ শ্বাস
কথা ছিলো পরিচিত পথে হাঁটবো পাশাপাশি
রংধনুর সব রং জড়িয়ে যুগল প্রেমের সন্ধ্যায়,
আবীরের ছোঁয়ায় আজ না বলা অনুভূতির মৃত্যু!
দেখো, আমাদের প্রতীক্ষার আকাশে ভরা জোৎস্না
চুপিচুপি বলে যায়-" এই জ্যোৎস্নায় ভেজাবে মন"
এক লহমা তুমিহীন কবিতারা কেমন শব্দহীন
ফিরে পাওয়া ক্ষণ গুলো তোমার ভালোবাসায় সমর্পিত
মৃত আনন্দ গুলো আজ যেন সদ্য ফোটা গোলাপ!
চাইনা রাতের আকাশের জ্বলে থাকা বোবা চাঁদ
চাই শুধু ভিজে যেতে অপেক্ষার জোৎস্নার মৌনতায়!!

সিরিজ কবিতা - দেবজ্যোতি কাজল

সিরিজ কবিতা

খটকা

আমি যখন কবিতা লিখতে বসি

অনুভব করি আমার ভিতরে

                         কিছু একটা ঘটতে ।

আমি তখন নিজেকে বুঝে উঠতে পাবি না

আমার চামড়ার নিচে কে আগুন হয়ে জ্বলে

হঠাৎ-

একটা কবিতা এসে দাঁড়ায় 

আমি ভয়ে কুঁকড়ে উঠি মনে

আমি তখন বুঝতে পারি

লেখার টেবিলে আমি মিসিং

তাই আমার একা বোধ গুলো

খুঁজে পায় বিস্তার অবিস্তারে ।

কিন্তু এবার ভেবেছি আমি-

অনেকটা পথ এগোব , অনেকটা

মিত্রাক্ষর কবিতার হাত ধরে হাঁটব

বহু দূর অবধি , বহু অজানা দূর ।

সকল

সব যে থেমে যাবে , ভেঙ্গে-ভাঙ্গা হবে

আলগা হয়ে সব একদিন হারিয়ে যাবে ।

তখন ,আমি তোমার শ্বাস নিব , দুঃখ নিব

কিন্তু তোমার মৃত দেহ নিতে পারব না ।

চলি

আমি তোমাকে বিদায় বলতে পারি নি

শ্রেষ্ট সময়েও বলতে পারি নি চলি ।

তোমাকে এখনি বলতে হবে বিদায়

আমি দ্বিতীয়বার বিদায় নিতে পারব না ।