মহা পন্ডিতের পন্ডিতিজ্ঞান
( না হাসিলে দাঁত বের করবেন না)
হাসুর মা'র চোখ ইয়া বড়ো বড়ো হয়ে একবার উপরে আরেকবার নিচে নামছে,।দু'হাতে চেপে আছে গরম কড়াই,সবেমাত্র রান্না করে চুলোয় থেকে নামিয়ে আনা। মুখে আশ্চর্য্য আর ভয়ংকর হতাশের চিহ্ন।তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো কাউকে যেনো তার সামনে অন্য কেউ কুপিয়ে মারছে।আসলে কি মারছে? না,কেউ কাউকে মারেনি।তার স্বামী ঘর থেকে নামতে গিয়ে পিচলা খেয়ে পড়েগেছে ইয়া বড়ো এক কলাগাছের মতো আশপাশ মাটি কাঁপিয়ে পড়ে গড়াগড়ি করছে আর উঠতে পারছেনা। তারপড়ে যাবার কারণ হলো নিজের পন্ডিতি জ্ঞান জাহির --
হাসুর মা রান্না করে কড়াই চুলো থেকে নামিয়ে আসার সময় বাপবেটাকে বলে আসলো--
-- এই রান্না হয়েগেছে তোরা খেতে আয়,,বলে রান্না ঘর থেকে নামার সময় পড়েগেছে।পড়াটা স্বাভাবিক কারণ রান্নাঘর উঁচু, বৃষ্টি বাদলের দিন।পিচ্চিল হতেই পারে ঘরের ফিঁড়া (দরজার সামনের জায়গা)।তাছাড়া উঁচু ঘরের সাথে নিচু উঠোনের সমতাল রাখার জন্য কিছু মাটি হেলানো ফিঁড়ার মুখে রান্নাঘরের উঁচু ভিটার সাথে।হাসুর মা যেই পা রাখলো ফিঁড়ার মুখে ,পা পিচলিয়ে ছেল ছেল করে এক্কেবারে নিচে উঠোনে পড়লো, তার হাতের গরম কড়াইটা আবার শরীরের তাল রাখতে গিয়ে পাশের সাইটে ধপ করে ছেড়ে দিলো। পড়ার শব্দ পেয়ে বাপবেটা সাপলডু খেলার "ল ছক্কা,,ল কানা " তাল ছেড়ে দরজার সামনে দৌড়ে দাঁড়ালো আর দেখলো কড়াইয়ের তরকারির জুল এপাশওপাশ কিছুটা পড়ে আছে। হাসুর মা পড়ে গিয়ে হাসতে হাসতে গা'য়ের কাদামাটি ঝাড়তে ঝাড়তে কড়াই নিয়ে দাঁড়াতেও পারলোনা,তার স্বামির জ্ঞানবাণী ঝরতে শুরু করলো---
--- তোর মতো বেক্কলেরা তো এমনেই পড়ে।হাঁটার কোন তাল নেই,,ফাগাইয়া ছিগাইয়া উপরের দিকে হা কইরা হাঁটলে তো এমনই অইব,,এমনেই পড়ন লাগবো।
--- হ,আমার পড়ার মধ্যেও তোমার উকিলি যুক্তি দেখাও।
-- এই বেত্তমিজ,,এইডা উকিলি যুক্তি অইলো? উচিৎ কথা কইলেই গা জ্বালা ধরে? তাল রাইখা নামতে পারলেনা?ঐ হাসুয়া--- তোর মা'ডা আসলে বেচোদা, হের লাইগা আইজ আমার এমন দশা ।
---- ""হিহিহি--
ও বাবা বেচোদা কি?
বাবা পোলার জবাব দেবে কি?
নিরব রয়ে যায়,
নিজের মতে নিজের বুলি
নিজে আওড়ায়,
তোড়া(কম) বুদ্ধিতে খোঁড়া যুক্তি
আবার দাঁড় করায়--
তেলে জলে গুলে
আবার বউরে বলে---
নামাতে পারলেনা এমনে -----?
আমি চলি যেমনে?
আগে না দেখলে,এখন চাইয়া দেখ
না শিইখা থাকলে একটু শেখ---"
বলে তিনি নিজে তার শরীরটাকে একটা মুডে নিয়ে দাঁড় করালো ।ডানের বাহু বাম দিকে বামের বাহু ডান দিকে নিয়ে পাছাটাকে হেলিয়ে দুলিয়ে কিভাবে মুড নিয়ে হাঁটতে হয় তা নিজেই দেখানোর জন্য রান্নাঘর থেকে নামছিলো।কিন্তু যেই পা রাখলো আর হরুৎ আওয়াজে ধপাস করে হাতি পড়ার শব্দ হলো। এমন পড়া পড়লো আর উঠতে পারছিলোনা,দু'মিনিট ধরে গড়াগড়িই করলো এপাশ ওপাশ আর হাসুর মা'র চোখ পুকুরের মতো বড়ো হয়েগেলো।কোনমতে উঠে বলল--
-- এই জাগা এতো পিচলা কে জানতো-? পড়ছি তো তোর কথা ভাবতে গিয়ে, নইলে পড়তাম?
ছেলে যে দাঁড়ানো ছিলো সে বলল---
ও বাবা, তুমি মাইনসের দোষ খুঁজো, নিজের দোষটা দেখনা। তোমার মতো কেউ স্টাইল করে নামে?দেখো আমার মতো নামলে তোমরা কেউ পড়তে না।বলে ছেলে বাপকা বেটা হতে গেছিলো,,কিন্তু সেও পড়লো এমন করে ?একপা এদেশে আরেক পা ওদেশে চিৎ হয়ে পড়েগিয়ে গড়াতে গড়াতে দশহাত দূরেগিয়ে উঠে দাঁড়াতে হলো।বাপে ছেলের পড়া দেখে মা'য়ের দিকে তাকিয়ে বলে --
--- সব এই তোর মা'র দোষ।এইডা একটা অলক্ষ্মী।
"" হাসুর মা হাসুরে ডেকে কয়
বেশি জানলে এমনি হয়
এই হাসু বাবা , তোর বাপেরে শোধা
আমার বাপে না হয় একটু জানে কম
তাই আমি হইছি এমন
তোর বাপে তো বেশি জানে
তবে এমন কেন তোর ধরণ--?"
ছেলে মুখ বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে
এ্য-- মা-,আমি আবার কি করলাম?
বাবা সব দেখে, মেজাজ আরো গেলো চড়কে
ধমকে বলে --"আমার সব ঠিক ছিলো,
তোর বেচোদাতে আমার ছেলে এমন হলো"
--- শোন,পরের দোষ দেখিও না,, নিজের তরকারিতে লবন দেও।
--- হ দেমুনে,,তোর হাতের তরকারি আমার উপর ঢেলে দে, ,আর আমি কই আমার দোষে আমার এই দশা।
কথা গুলো যখন বলছিলো পন্ডিতের মতো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে,,তখন হাতের বাড়িখেয়ে হাসুর মা'র কড়াই হাত থেকে ছুটেগিয়ে এক্কেবারে মাথার উপরে উপুর হয়ে সবটা গরম তরকারি পন্ডিতের মাথা ,শরীরে।
হাসুর বাবা ,ওরে বাবারে ওরে মারে বলে নাচতে নাচতে বলল--
--- কইতে না কইতে তুই ঢেলে দিলে? অত্তো বেক্কল তুই? আইজ বুঝলাম।
মূর্খ পন্ডিতের কত্তো জ্বালা
তাদের গজায় শাখায় শখায়
জ্ঞানের শত ডালপালা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন