বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

প্রচ্ছদ ।। ডিসেম্বর সংখ্যা ।। ২০১৭ইং ।।


সম্পাদাকীয়ঃ কুয়াশা ওয়েবজিন।। ডিসেম্বর সংখ্যা।। ২০১৭।।








সম্পাদাকীয়ঃ কুয়াশা ওয়েবজিন।। ডিসেম্বর সংখ্যা।। ২০১৭।।

আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য মন্ডিত মাস ডিসেম্বর মাস। ডিসেম্বর আসলেই আমরা যারা বাঙ্গালী, আমাদের আত্নার ভেতরে বিজয়ের সুর বেজে ওঠে। কেঁদে ওঠে প্রাণ। চারদিকে বিজয় আর স্বাধীনতার সঙ্গীতে মুখরিত হয়। এটাই আমাদের মহাযুগের পাথেয় বিষয়। বিজয় মাস যখন এসে যায়, মনে হয় আমরা অনেক নির্ভেজাল একটা জাতিতে পরিনত হয়েছি। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। আমরা খুব গৌরব বোধ করি। আমাদের সবচে' বড় গৌরব যে আমরা এমনি এমনি এই মাতৃভূমি পাইনি। আমার মা - বোনদের ইজ্জত দিতে হয়েছে। রক্তের নদী বইয়ে দিতে হয়েছে। সাত কোটি মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা এ দেশকে নিজেদের মত করে পেয়েছি। এটা আমদের জীবনের চেয়ে কম মূল্যের নয়। এই চেতনাকে ধরে রাখতেই প্রতিবৎসর আসে ১৬ই ডিসেম্বর। আসে শোক শোক গন্ধমাখা স্মৃতি নিয়ে। 

এ দিনটি বাঙ্গালী জাতির স্বরনীয় বরনীয় দিন। শিল্প সাহিত্যের নতুন করে গর্জে ওঠার দিন। শিল্পী - আঁকিয়েদের কণ্ঠে এবং আঁচরে চিত্রায়িত হবার দিন। খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বুকে জরিয়ে ধরার দিন। একে অপরে শোক বিনিময়ের দিন। তবে আমরা আর কাঁদিনা। কান্নাকে আমরা এতোদিনে শক্তিতে রুপান্তরিত করে নিয়েছি। তাই তো মাঝে মধ্যে গর্জে উঠি। হুংকার দেই। জাতির জনকের সেদিনের হুংকার আমাদিগকে সে রকম করেই শক্তিতে পরিনত করেছে। এই মাসটা তাই অনেক স্মৃতিময় এবং স্মৃতিবিজরিত মাস।


" কুয়াশা ওয়েবজিন,, এই মাসকে ঘিরে বিশেষ আয়োজন হিসেবে বিজয়ের লেখাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ৭১,র চেতনা ধরে রাখতে কুয়াশা,র পরিবার ভালো ভালো লেখা দিয়ে কুয়াশাকে আরো মানের, আরো পাঠকপ্রিয় করে তুলতে সহযোগীতা করেছেন। ২০১৭ইং প্রথম বর্ষের শেষ সংখ্যা এটি। আসছে জানুয়ারি হবে ২য় বর্ষে পদার্পনের বিশেষ সংখ্যা। 

সকলকে বিজয় মাসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। 

সূচিপত্রঃ কুয়াশা ওয়েবজিন ।। ডিসেম্বর সংখ্যা ।। ২০১৭ইং ।।

সূচিপত্রঃ কুয়াশা ওয়েবজিন।  ডিসেম্বর সংখ্যা। ২০১৭ইং

বই আলোচনাঃ 
আবুল কাইয়ুম। 

কবিতাঃ
শোয়েব শাহরিয়ার, ভাস্কর চৌধুরী, মেহেদী ইকবাল,  হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কামরুজ্জামান হেলাল, নাসির ওয়াদেন, আবু আশফাক্ব চৌধুরী, আহমেদ মুনীর, ওবাইদুল্লাহ সাইফ, মোঃ আশতাব হোসেন।

উপন্যাসঃ
তৈমুর মল্লিক।

কবিতাঃ
টিপু সুলতান, মোঃ নূরুল গনী, প্রতীক ওমর, এলিজা আজাদ, সাইদুর রহমান, মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান খসরু, শ্রীলেখা চ্যাটার্জ্জি, সজল মালাকার, মোঃ বশিরুজ্জামান, মনিরুজ্জামান জীবন, সুশান্ত হালদার, চঞ্চল দেবনাথ।

গল্পঃ
রওশন রুবী, আফরোজা হীরা, দ্বীপ সরকার।

কবিতাঃ
আনজালা ডালিয়া, মুহাম্মদ কবির সরকার, আহমেদ ফারুক মীর, সিয়ামুল হায়াত সৈকত, কবির হুমায়ুন, ইয়ার ইগনিয়াস, মোঃ আহসান হাবিব, রাকিবুল হাসান শ্রাবণ, ইয়াসমিন আক্তার মনি, রুপক চৌধুরী।

ছড়াঃ
মানসুর মুজাম্মিল, পলক রায়, কে এম বায়েজিদ, বিচিত্র কুমার। 

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭

বই আলোচনাঃ কবি এবিএম সোহের রশিদ এর কাব্যগ্রন্থ "পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ,, ।। আবুল কাইয়ুম




পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ

প্রকাশকঃ নন্দিতা প্রকাশ,ঢাকা

মূল্যঃ ২০০/-

‘পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ’ কবি এবিএম সোহেল রশিদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। অমর একুশে বইমেলা, ২০১৭ উপলক্ষে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঢাকার বিশিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নন্দিতা প্রকাশ। ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণকারী এই কবি একটি অত্যুজ্জল পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং মা একজন কারুশিল্পী। কবি প্রায় তিন দশক ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। একজন সাহিত্য সংগঠক হিসেবে নবীন কবি-সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। তিনি অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি। শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে এবিএম সোহেল রশিদ একটি পরিচিত নাম। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই কবি টেলিভিশন, মঞ্চ ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা, গীতিকার, স্ক্রিপ্ট ও ডকুমেন্টারি লেখক, অনুষ্ঠান আয়োজক ও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করে থাকেন।
‘পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ’ কাব্যে কবির আশিটি কবিতা স্থান পেয়েছে। বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক বিভি রঞ্জন গ্রন্থটির ভূমিকায় অল্প কথায় এ কাব্যে উপস্থাপিত যে ইতিবাচক দিকের কথা উল্লেখ করেছেন তা হলো- “সম্পর্কের টানাপোড়েনের পাশাপাশি মানবতা, দেশপ্রেম ও শ্রেণিসংঘাত”। তিনি আরো বলেছেন, “মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনে ঢাকা শহরের নাগরিক বলয়ে বেড়ে ওঠার কারণেই তাঁর লেখনীতে নগরযন্ত্রণার গৌরব-সৌকর্যের পাশাপাশি প্রেম-বিচ্ছেদ-বিরহ এসেছে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। মৃত্তিকাও বাদ যায়নি। লেখকের দৃষ্টির সীমানায় সময় নদীর স্রোতে বিরহও রঙ বদলেছে বার বার। দুঃখ-মেঘে জমানো খুনসুটি ও কষ্টসমুদ্রের নানান অনুষঙ্গ কাব্যরসের বিচ্ছুরণে এবিএম সোহেল রশিদ শৈল্পিক উচ্চারণের সাহস দেখিয়েছেন।” কাব্যটির বিষয়সম্ভার সম্পর্কে এই মূল্যায়নের পর আর কিছু বলার থাকেনা। আমি কেবল কবির কাব্যশৈলীর দিকটি নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করবো।
কাব্যটির শৈলীগত উজ্জ্বল দিকটি হচ্ছে এর অনাস্বাদিতপূর্ব চিত্রময়তা। চিত্রকল্প ছাড়া তাঁর কবিতার স্তবক নেই বললেই চলে, এমনকি পংক্তিও তেমনটা নেই। চিত্রকল্পই যে কবিতা এবং সুচারু চিত্রকল্পের ব্যাপক ব্যবহার কবিতাকে কী মাত্রায় ভাবসম্পদে ধনী করে তুলতে পারে তা তাঁর কবিতাগুলো পাঠ করলেই বোঝা যাবে। জীবন, নিসর্গ, স্বদেশ প্রভৃতি ক্ষেত্রের অসংখ্য অনুষঙ্গ সাজিয়ে তিনি এই কাব্যটিতে নানা হৃদয়জ ছবি এঁকেছেন। এসবের বর্ণনা দিতে গেলে পৃথক একটি গ্রন্থ হয়ে যাবে। চিত্রকল্পগুলো কেবল কবির হৃদয়ে লালিত আবেগগুলোরই প্রতিচ্ছবি নয়, তাঁর তীক্ষ্ন ধী-শক্তিরও পরিচয়বহ। তাঁর চিত্রকল্প গঠনে উপমা-উৎপ্রেক্ষা বা কোন অলঙ্কারের বাহুল্য নেই, শব্দ-বিশেষণের গাঢ়বদ্ধ বুননে একটি স্বতন্ত্র শৈলীতে হৃদয়ের ছবিগুলো একেবারে কবির নিজস্ব হয়ে উঠেছে। তাঁর চিত্রকল্পসম্ভার হতে অল্প কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো-
১. আবেগের ছেঁড়া কাঁথায় লুকায় হারানো প্রেমগুচ্ছ/ বোধের দেয়ালে স্মৃতির পেরেকে নিয়তির প্রলয়
২. করতলের বেহিসেবী অনুরাগে লজ্জায় লাল জামরুল
৩. বালকের বুক পকেটে একমুঠো রোদ্দুর
৪. চিত্রকল্পে অচেনা আত্মার নির্দয় চপেটাঘাত
৫. প্রত্যুষের রোদে নোয়ানো মাথায় উৎকণ্ঠার দণ্ড
৬. বুকের পাটাতনে ঝরে ছোট ছোট ব্যথার ফুল
৭. শঙ্খচিলের ঠোঁটে বুকের উঠোনে কষ্ট-মুক্তির আরাধনা
তাঁর কবিতার ভাষা সমৃদ্ধ। শব্দ-বিশেষণ প্রয়োগে তিনি যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কখনো গুণবাচক বিশেষ্যগুলোতেও স্বকীয় শৈলীশক্তির দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর চরিত্র আরোপ করে বাণীবন্ধ গড়েছেন, কখনো বিশেষণের ব্যতিক্রমী প্রয়োগে অর্থ বা ভাবের ক্ষেত্রে নান্দনিক বৈশিষ্ট্য আরোপ করেছেন, কখনো বা একাধিক শব্দকে জুড়ে দিয়ে চিত্রল যুগ্মশব্দ গড়েছেন। চিত্রকল্প গড়ার তাড়না থেকে এমন একটি কাব্যশৈলী গড়তে চেয়েছেন বলেই হয়তো তিনি রীতিসিদ্ধ ছন্দ এড়িয়ে গেছেন এবং তথাকথিত কাব্যোপযোগী শব্দমালাকে আমল দেননি। এটাই স্বাভাবিক যে, একজন আধুনিক কবি সমগ্র বাংলাভাষার শব্দাবলীকেই তাঁর কাব্যভাষার অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং চিত্রকল্পকেই প্রাধান্য দেবেন। অবশ্য ব্যতিক্রমী চিত্রকল্প বা গভীর ভাবার্থমূলক বাণীবন্ধ নির্মাণে প্রয়াসী হয়েও অনেক কবি আবার গদ্যছন্দপ্রবাহের দিকে নজর দেন। কিন্তু রচনাশৈলী যার যার নিজস্ব, সর্বদা রীতিসিদ্ধ ছন্দ ও স্বচ্ছন্দ প্রবহমাণতা থাকতে হবে এমন কথা নেই। তবে তিনি অনেক কবিতায় অন্ত্যমিল প্রয়োগ করেছেন। পংক্তির অভ্যন্তরে পর্ববিন্যাস না থাকলেও টানা পাঠ বা আবৃত্তিতে কবির একটি আপন ছন্দের প্রকাশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর অধিকাংশ কবিতার পংক্তিগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অপ্রবহমানতা; অর্থাৎ তাঁর একটি পংক্তিতে একটি চিত্রকল্প বা পূর্ণ বক্তব্য পরিদৃষ্ট হয় এবং এমনি সব পংক্তি একের পর এক সাজিয়ে সুচারুভাবে বিন্যাসের ফলে সবগুলো পংক্তি নিয়ে একটি সমন্বিত ভাব গড়ে ওঠে।আঙ্গিক গঠনে এসব বৈশিষ্ট্য আরোপের পরও কবিতার সেীন্দর্য ও মূল বক্তব্য অক্ষুন্ন থাকে। এর একটি দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হলো-
স্পর্শসুখ তালিকায় নেই কোন জলপ্রপাত
দূরদর্শনের কাচ ফ্রেমে রেখেছি দুরন্ত স্রোত
নৌ বিলাসে ছোটে রেইনকোটে বন্দি সংঘাত
নদীর চোখে মওজুদ এখন ষোড়শী রোদ
অনুভূতির জলকণায় রামধনুর বিমূর্ত হাসি
জল পতনে নদীর খোলা চুলে অশ্ব খুরের প্রতিচ্ছবি
বজ্র দেবতা হিনোর কথায় ঝাঁপ দিল কুয়াশা দাসী
অন্য পিঠে হিনোর আত্মাহূতিতে কিশোরীর জলছবি।
(পুরুষ বৃক্ষে সানাই বাজাও)
এই প্রক্রিয়াতে লেখা কবিতাগুলো চিত্রকল্পঘন এবং এসবের বেলায় প্রতিটি পংক্তি স্বতন্ত্রভাবে ভাবার্থের গভীরতায় অধিকতর ঋদ্ধ। তাঁর প্রবহমান ধারার কবিতাগুলো চিত্রল, নান্দনিক এবং সহজবোধ্য।
সবশেষে বলতেই হয়, বাঙালি সমাজকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরা অপসংস্কৃতি, অপরাজনীতি ও ভিনদেশী অপসভ্যতা থেকে রক্ষার মানসিকতায় কবি তাঁর দৃপ্ত লেখনী ধারণ করেছেন। জাতি ও সংস্কৃতির হারানো ঐতিহ্যকে ফিরে পাবার জন্য তাঁর অন্তরের যত আকৃতি কাব্যিক ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে। এই দেশ ও এই দেশের মানুষ তাঁর মননে যে ইতিবাচক চেতনার সঞ্চার করেছে তা তুলনারহিত। তাই তো, ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ শীর্ষক কবিতায় যেমন দেখি, তিনি এই দুরবস্থা থেকে উ্ত্তরণের লক্ষ্যে নির্লিপ্ত জনগণকে জাগ্রত করার জন্য একজন নূরুলদিনের জন্ম প্রত্যাশা করেন। কবির এই স্বপ্ন সফল হোক।
আমি গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার ও পাঠ আশা করি।
(কাব্যটি একুশে বইমেলা, ২০১৭ উপলক্ষে বিভি রঞ্জন, নন্দিতা প্রকাশ, বিচিত্রা বই মার্কেট (৩য় তলা), ৩৬, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ কর্তৃক প্রকাশিত এবং নন্দিতা প্রিন্টার্স, ঢাকা কর্তৃক মুদ্রিত। এর দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী অনুপম কর। কাগজ, বাঁধাই ও ছাপা উন্নত মানের। ছয় ফর্মার এই গ্রন্থের মূল্য ২০০ টাকা।)

সুভাষণ ।। শোয়েব শাহরিয়ার

















সুভাষণ


এক.
ভাতেরও কী ক্ষুধা পায়? অভিমানে কেউ না খেলে?
জলেরো পিপাসা জাগে,মনে না-ভোলা অাঘাত পেলে?

দুই.
লরেলের কোল থেকে রাত তুলতাম।
দুজনে স্বপ্নের ছাদে গোলাপ খেতাম।।

তিন.
শহর শ্বাস নিতো দিঘি-নদী-পুকুরে,
মাটিচাপা পড়ে কাঁদে শহর কাঁকরে।
বৃক্ষের বল্কলে বুঝি হল শেষ দম,
মানুষের মনে অাজ হাজারো জখম।।

আগমন নির্গমন সূত্রু ।। ভাস্কর চৌধুরী


















আগমন নির্গমন সূত্র 

তুমি যদি আসো, তুমি যদি এসে বসো বসতবাড়িতে,
এক কোয়া রসুনের মতো তুমি যদি সাদা শাড়ি পরে আসো , 
যে শাড়িতে, নীলাভ অথবা সবুজাভ, মেরুন রং হয়
পেঁয়াজের পরত খুলে খুলে শত রঙের খোলসে একটা পেঁয়াজ সাজে
কত শত বৃক্ষ হলে বনভূমি হয়, বনভূমি মানে মানুষের পাড়া
পাতার পাড়াগুলো বৃক্ষ শাখায় দোলে, একটু বাতাস পেলে শাখা গলে কিছু পাতা পড়ে যেতে পারে
মানুষের পাড়ায় বাতাস এলে, ঝাপ্টা মেরে কিছু কিছু ঝরিয়ে নিয়ে যায়
প্রাণে প্রাণে দোলা এলে প্রাণের উচ্ছাস বাড়ে, মনে মনে হওয়া এলে মনের উচ্ছাস বাড়ে
সাগরের তীরে জোস্নার উচ্ছাস এলে, বিয়ারের ক্যান বাড়ে
সকালে বালকগুলো বিয়ারের ক্যান গুলো কুড়িয়ে কোথায় হারিয়ে যায়
পাতা ঝরা বনের ভেতরে পাতা কুড়ানো মেয়েগুলো পাতার মৃত্যু কুড়িয়ে লোকালয়ে হারিয়ে যায়
লোকালয় থেকে কেউ কেউ ফের কারো টানে, কোথাও হারিয়ে যায়
মানুষের নাগরিক শাখার বসতিতে এক ভিটে বাড়িতে শতেক মানুষ বাস করে
তাদের অনেক ঘর মোছা গৃহকর্মী লাগে, তারাও ঘরের সকল ময়লা সরিয়ে 
আরেক ধরণের বসতিতে হারিয়ে যায়,
ঠিক এইভাবে, পাতা ও পাখি, মানুষের বিয়ারের ক্যান এবং মানুষের নানা পথে নির্গমন ঘটে
নির্গমন এক চলমান ক্রিয়া জগৎ সংসারে
নির্গমন ছাড়া আগমন কিভাবে ঘটে?
এভাবে চিন্তা রাজ্যে কিছু চিন্তা হাঁটে, কিছু চিন্তার নির্গমন ঘটে আর কিছু চিন্তা প্রবিষ্ট হয়
এটিও চিন্তা জগতের চলমান ক্রিয়া, ক্রিয়া ঘটে গেলে ভেতরে ভেতরে প্রতিক্রিয়া ঘটে যায়
প্রক্রিয়াগুলো প্রায় একই রকম ভাবে, মিলিত হয়ে ফের পরমাণু ফেটে বিস্ফোরণ ঘটে
চিন্তার বিস্ফোরণ ঘটে গেলে, গ্যালাক্সির পর গ্যালাক্সির জন্ম হয়
বিগ বাং তৈরি হয়, কত কিছু আড়ালে আবডালে হয়ে গেলে
আবার আঁতুর ঘরে মানুষ জন্ম লয়, মানুষের জন্ম অতি আঁধারে, নিত্য কাল ঘটে,
নীরবে নীরবে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ায় যেখানে যেমন পারে, আগমন গুলো শিশু থেকে বড় হয়ে ফের চলে যায়
বিয়ারের ক্যান হতে ফস করে জল গুলো, গলাতে গড়ায়
প্রতি লোকমা খাদ্য , পেটে গেলে, পরিনাম হয়, 
জীবন ও জন্ম এক বর্জ্যের নাম
নাক্ষত্রিক বর্জ্য গুলো মহাকাশে ভাসে
মানুষ এসে চলে গেলে বলো, কি যায় আসে ?

ডাক ।। মেহেদী ইকবাল












ডাক

ডিসেম্বরতো এসেই গেল !চা দোকানে
আড্ডা জমিয়েছে তূখোড় গণিতবিদেরা।
সকালে যারা পাহাড়ে গিয়েছিলো, তারা এখন
ফিরে আসছে কানের পর্দা ফাটানো গান বাজিয়ে!
নতমুখ কোন্ শ্বশুর পুত্র বসে আছে?
অংক ভুলে গণিতবিদেরা হেসে লুটোপুটি!


শিশুরা মন দিয়েছে পড়ালেখায়
যে শিশু ফুটপাতে, তার কথা ভাববে কি ভাবীকালের মানুষেরা?
উত্তেজনায় তৈরী হচ্ছে একটা মোরগ
কুক্ কুরুক কো
আমি শুনছি ডাক আগামীদিনের!

গলির পথে ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়













গলির পথে 



মাঝে মাঝেই রাস্তা সরু হয়ে যায়
যেতে যেতে  তেমাথায় টাল সামলে নেয়
তারপর হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে
গলিতে এসে পড়ে ।

আজন্ম চেনা পথ
গলিতে এসে অচেনা হয়ে যায়

গলির চেনা পথে আমি কেন ?
তাহলে চেনা আমিই কী গলির পথে অচেনা ?


নাগরিক প্রেম ।। কামরুজ্জামান হেলাল



















নাগরিক প্রেম


বািলশের নিচে থাকা ইচ্ছেগুলো উড়াল দিতে চায় পশ্চিমা হাওয়ায়
শতাব্দীর শেষ রশ্মির মতো ধরে রাখি যুবতীপ্রেম মাতাল মায়ায়
উল্লাসরত বালিকারা সেফটিপিন ফেলে দিয়ে হিমধরা অন্ধকারকে-
রািঙয়ে তোলে আপন ভঙ্গিমায়
.
মাঝেমাঝে আত্মার বিচ্ছেদে কোলাহলের মাত্রা কমে গেলেও
ফের জেগে ওঠে পাড় ভাঙ্গা ঢেউয়ের শক্তিতে আঁধার তাড়িয়ে নামায়
চন্দ্রখচিত অজস্র মায়াবী রাত

অতঃপর পশ্চিমের দিকে মুখ রেখে শেষ করে সহবাসপর্ব
কবির কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বলে-
হে নাগরিক কবি! লিখুন,
নাগরিক প্রেমে কেউ ক্ষুধার্ত থাকে না
নিঃসঙ্গতা বলতে কোনোকিছু নেই নাগরিক প্রেমে
নাগরিক প্রেম মানে অবাধ ভোগের উৎসব
নাগরিক প্রেমের প্রেমিক-প্রেমিকেরা প্রতিটি নষ্টরাত শেষে
আবার শুদ্ধ হয়ে ওঠে ভোরের কোমল বায়ুর স্পর্শে

ভালোবাসার স্বাধীনতা ।। নাসির ওয়াদেন












ভালবাসার স্বাধীনতা  

         
আন্দোলিত দিনসমূহ বৃক্ষের শাখা হয়ে
অনবরত দুলছে বাৎসল্যের ঢেউয়ে

একটি স্বাধীনতা দিবস মুঠো মুঠো
লাবণ্য ছিটোচ্ছে দুই হাতে

কচি কচি শিশুর মাথায় জটিল গণিত •••

বইখাতা ফেলে আমাদের শিশুরা
অন্যরকম অমলিন সাজে সেজেছে
ইউনিফর্ম নেই, নেই বাক্সপাটরা, কলম
শুধু খেলা আর একরাশ উচ্ছ্বাস ---

শ্রাবণের মিষ্টিধারা ক্লান্তিহীন বাতাসে
একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি ছুঁড়ে মারে
স্বাধীনতার শপথে
বিষন্নতা ভেঙেচুরে জমে ওঠে ভালবাসা ---

পৌনঃপুনিক ।। আবু আশফাক্ব চৌধুরী












পৌনঃপুনিক
সে দুরন্ত দশমিক
মাঝপথে বসার পর
শুধু শুন্যের পর শুন্য দিয়ে যেতে হয়
ক্ষান্ত নেই অবিরাম...
সংখ্যাটা বারবার ফিরে আসে
ক্রমধারায় গতানুগতিক...
এ যেন আমার বাড়ি ফেরা
কোনদিন ভুল হয়নি পথ
ভুল করেও চুল হয়না কখনও
পৌনঃপুনিক ধারাক্রম
একটা বিন্দু তারপর...
আবার ফিরে আসা আবার
চলতে চলতে সেই পুরনো মুখ
সেই সময় সেই ভালবাসা...
আবার দাঁড়িয়ে থাকা...

আমাদের স্বাধীকার স্বাধীনতা ।। আহমেদ মুনীর



















আমাদের স্বাধীকার স্বাধীনতা

মা জননীর ওষ্ঠাধারে
প্রিয়তম শব্দ প্রিয়তা স্বাধীনতা
অস্থিমজ্জায় রক্তরেণুতে পূর্ণেন্দু স্বরাজ
বিস্তৃত অন্তরীক্ষে সহস্র শহীদ মিনার
স্বাদেশিকতা সকাশ স্বর্ণস্তম্ভ
কণ্ঠনালী উচ্চকিত হয়
রণিত রণতরঙ্গে
চির জাগরুক আমাদের
নাগরঙ্গা গঙ্গা মেঘনা যমুনা ।।
নক্ষত্র আলোয় উদ্ভাসিত আজ
আমার অতি প্রীণন বঙ্গজ মৃত্তিকা
বিস্ময়ে বৈভবে মেতেছে মানুষ
সন্ধিক্ষণে সময়ে লহরী দোলে
জেগেছে চির সবুজ তারুণ্য যুবক
প্রলম্বিত আলোকে বেড়ে ওঠে জর্জি
তৃণ গুল্মলতা বৃক্ষ
ভালোবাসার স্রোতস্বতী নির্ঝর নদী
বহে চলে কালে মহাকালে নিরবধি
জ্যোৎস্নালোকের পত্র পল্লবে
শাখা প্রশাখায়
দুর্মদ ফাল্গুনী ভাষা
অতলান্ত অন্ধকার আর প্রত্নস্তূপে
বর্ণমালার আলোকচ্ছটা
পাখীর ঠোঁটে হেমাঙ্গী
সঙ্গীত আধান খড়কুটো
সভ্যতার আরাধ্য ভুবন ।।
বিপুল ধ্বংসস্তূপে অধর্ম অসত্য সন্ত্রাস
পশুত্ব শৃগাল
দুর্যোগ দুর্নীতির বিধ্বংসিত বিনাশ
ক্ষয়ে অবক্ষয়ে
ধর্ম-ব্যবসায়ীদের নিঃশেষিত অবসা
অবশেষে হবে শেষ-
এটাই হউক আমাদের স্বাধিকার
স্বাধীনতা বারোমাস ।।

জল - সংসার । ওবাইদুল্লাহ সাইফ

















জল-সংসার 

বিহঙ্গ চেনে উড়ালপুর,
আমি চিনিনা আজও
তোমার মধ্য দুপুর....
কেন রোদ একপাশে সরিয়ে--
ছায়াকেই রাখো বুকে জড়িয়ে ?
এদিকে আমি--- বেনামী চিঠি পড়ি কার? 
তবুও টিকে থাকে আমাদের জল-সংসার !

মরুতে উঠবে ঢেউ ।। মোঃ আশতাব হোসেন




মরুতে উঠবে ঢেউ


কবি হওয়ার উপায়টা
বলতে পারেন কেউ?
কেমনে লিখলে কবিতা
মরুতে উঠবে ঢেউ?

পাহাড়টা কাছে এসে
বলবে কথা কানে,
আকাশটা যখন তখন
কাঁদবেনা অভিমানে।

করবেনা কারও ক্ষতি
সাগর ক্ষেপে গিয়ে,
শুষ্কো দিনে আসবে জল
তিস্তা নদীটি  দিয়ে।

উপন্যাসঃ স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় ।। তৈমুর মল্লিক

স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় 
                   ( খণ্ড ৫) 

কে-কে ওখানে? 
ছায়ার মত কিছু একটা দেখেছে সাগর । কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে গুটি গুটি পায়ে সাগর এগিয়ে যায় বই রাখারা আলমারির পাশে । এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পায়না সে। তাহলে কি ভুল দেখেছে ? না ভুল দেখার কথা নয়। কিছু একটা ছিলো ওখানে । তাহলে গেলো কোথায় ? জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পায় জানালা খোলাই আছে ।
কিছুদিন থেকে একটা ছায়া সাগরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তার কেবলি মনে হচ্ছে কেউ একজন অনুসরণ করছে তাকে। এই ভাবনা সাগরকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে । আজ পাঠাগারে এসেও সেরকম মনে হয়েছে তার । কিছুটা উৎকণ্ঠা , কিছুটা ভয়ের সংমিশ্রণে সাগরের অবয়ব কেমন একটা হয়ে গেছে । শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে এখন । হাটতে হাটতে জানালার কাছে এগিয়ে যায় , বুক ভরে বাতাস নেবার চেষ্টা করে। কেন যেন ফুসফুস বাতাস গ্রহন করতে অপরাগতা স্বীকার করছে । অনেকটা জোর করেই বাতাস গ্রহন করতে হচ্ছে 
হটাৎ করে সাগরের চোখ জলতে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম চোখের মধ্যে প্রবেশ করেছে কখন বুঝতেও পারেনি। 
পকেট হাতড়ে টিশুপেপার বের করে মুখটা মুছে নেয় সে । ঘামযুক্ত পেপারটা জানালা দিয়ে বাহিরে নিক্ষেপ করতেই নিজের দিকে ফিরে আসে পেপারটি। 
ভালো করে খেয়াল করতেই দেখতে পায় জানালা বন্ধ। আস্তে আস্তে হাত দিয়ে জানালা ধরে বুঝতে পারে পরিস্কার কাঁচ লাগানো। 
পরিচ্ছন্ন একটি দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় সে। পাশে পড়ে থাকা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ে। আপন মনে ভাবতে থাকে---
ক্যাম্পাসের দুইতলায় লাব্রেরিতে যখন প্রথম সে প্রবেশ করে তখন শুধু একজন মানুষকে দেখতে পেয়েছে। একটা কম্পিউটার নিয়ে প্রবেশ গেটের পাশে নিজের কাজ করছিল সে । আর কাউকে সে দেখতে পায়নি । কেউ থাকলে অবশ্যই তার উপস্থিতি বুঝতে পারতো । এভাবে লাইব্রেরী কখনও মানুষ শূন্য থাকে আজ প্রথম দেখলো সে। 
কিন্তু আমি এখানে কেন এসেছিলাম – নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে সাগর । মাথার চুল টানতে টানতে মনে পড়ে , জরুরী একটা বই দরকার ছিল তার। বইটা নিয়ে ক্লাসে যাবে। খুব গুরুত্ত পুর্ন ক্লাস ছিল আজ। আর অপেক্ষা করেনা সাগর । এতক্ষনে ক্লাস শুরু হয়েগেছে , দ্রুত প্রয়োজনীয় বই নিয়ে কদম বাড়ায় ক্লাসের দিকে।
আসবো স্যার? 
রফিক স্যার দরজার দিকে তাকাতেই দেখে সাগর দাঁড়িয়ে আছে। 
সাগরকে দেখে রফিক স্যারের উত্তেজনা কমে জায়।
এই ব্যাচের সবচেয়ে ভাল ছাত্র সাগর। মানুষ হিসাবে রফিক স্যার সাগর কে খুব ভালবাসে। 
রফিক স্যারের ধারনা একজন মানুষের যে সব গুণাবলী থাকার কথা, সাগরের মাঝে তার সব কিছু আছে। হাসি মুখে সাগরকে আসার অনুমতি দেয় সে। 
রফিক স্যার আবার শুরু করে তার ক্লাস।
সাগর কিছুতেই ক্লাসে মনযোগ দিতে পারছে না । স্যার কি পড়াচ্ছেন শুনছে ঠিক কিন্তু তার মাথার মধ্যে পাঠাগারের ঘটনা উঁকি দিয়ে চলেছে । রফিক স্যারের মুখের কথা গুলো মনে হচ্ছে অনেক দুর থেকে ভেসে আসছে । 
কি ছিল ওই লাইব্রেরীতে? কেন সে বার বার ছায়া মুর্তি দেখছে? এ সব ভাবতে ভাবতে সাগরের কপালে চিন্তার রেখা আবার ভেসে ওঠে । তাহলে কি ----- ঐ ঘটনাই এর জন্য দায়ী?

এখনকার বাংলাদেশ ।। টিপু সুলতান








এখনকার বাংলাদেশ

আমি যুদ্ধ দেখিনি
দেখিনি রক্ত প্রলয়
শুনেছি ইতিহাস।

কালের কালেন্তর থেকে উঠে আসা রক্তগঙ্গা,
সবুজঘাসের কান্না
মাটির পাঠশালা
বিধ্বস্ত একাত্তর!

তারপর
জল্লাদখানা বধ্যভূমি সৃতিপীঠ এসে দাঁড়িয়েছি।
দেখেছি
হন্তকের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত একটি মানচিত্র,
টিপাইমুখ থেকে তিস্তার সম্মুখে ধানক্ষেত,
দৈনিক গণতন্ত্র,

পূর্ব পাকিস্তান থেকে এখনকার বাংলাদেশ!

ক্রুশবিদ্ধ সময় ।। মোঃ নূরুল গনী















ক্রুশবিদ্ধ সময় !!!


হাটতে হাটতে এক সময়
সময় থাকেনা হাতে, তুমিও থাকনা ধরা ছোঁয়ায় !
ঠোঁটে ধরে সময়টুকু আমার
কোথায় হারায় তোমার অশরীরি মুখ !
পোষ্টারে পোষ্টারে তখন নিরুদ্দেশ সংবাদ
তোমার মুখের আদল নগরীর দেয়ালে দেয়ালে শোভিত !
গোলাপী গোলাপ সেঁটে দেয় কেউ সাথে-বড় বেমানান
এভাবে কি প্রেম হয় !
দৃষ্টিতে তেমার প্রেম না-কি সম্মোহন
চোখে চোখ রেখে সাগর উঠে আসে ক্ষীণকায় নদীতেে
এবং বৃষ্টির মত ঝরে ঝরে নদী মুছে ফেলে পথ
যে পথ ফেরার -সাগরে !
এখন কোন পোষ্টার নেই দেয়ালে ! ফিরে এসো !
তোমার ঠোঁটে ধরা আমার সময় ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মত
রক্ত ঝরাচ্ছে -দেখো কার জন্য !

পাশের মানুষ কাছের মানুষ ।। প্রতীক ওমর



















পাশের মানুষ কাছের মানুষ

জানিস তোরে আজো ভাবি
রাতটা গভীর হলেই
ঘুম ছুটে যায় সেই ভাবনায়
পাশে এখন নেই বলেই
মনের মাঝে বুকের মাঝে
আকাশ সমান পাহাড়
সেই পাহারে দু:খ অনেক
দু:খগুলোই আহার
পাশের মানুষ কাছের মানুষ
দূরের মানুষ তুই এখন
চোখ মেললেই যায় না দেখা
আহারে কী ছুঁই এখন!
জমিয়ে রাখা আদরগুলো
কোথায় এখন বিলাশ
কার বুকে সেই বুকটা এখন 
হরহামেশাই মিলাস
আমায় কি তুই আজো ভাবিস
আমার মতই রাত্রি জাগিস
আগের মতই ঠুমকো কথায়
এখনো কি খুব রাগিস?

মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

জীবনের পথে ।। এলিজা আজাদ

















জীবনের পথে


কিছু শব্দ তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে 
আমি চললাম জীবনের পথে
খণ্ডিত আয়োজনে জীবন এখানে বন্ধকি 
দেনায় জরাজীর্ণ
কাঁচের ঘরটাতে তুমি থাকো...
দেয়াল ভেদ করে আমার সেখানে যাওয়া দুর্ভেদ্য

অলৌকিকভাবে আঙ্গুলের ছাপ রেখে
হ্যাচকা টানে ফিরে আসি জীবনে...
জীবনের শেষপ্রান্তে ঝুলতে থাকা দীর্ঘশ্বাসে
তোমার অনুভূতি আমাকে অস্থির করে তোলে
শেষচিঠি লিখেছিলাম কবে মনে নেই!
তোমার হাতে দিয়েছিলাম কিনা তাও মনে নেই!

শুধু, দুঃস্বপ্নের পাড় ঘেঁষে শব্দগুলো জ্বলন্ত 
অগ্নিপিণ্ডের মতো জ্বলতে থাকে;
মধুময়, আজকাল জ্বলতে জ্বলতে ছাইভস্ম 
হওয়াটাই অভ্যেস হয়ে গেছে...!!

আর কিছুই কি পাবে না এ স্বাধীনতা ।। সাইদুর রহমান















আর কিছুই কি পাবে না এ স্বাধীনতা


নিই বুকখানি ভরে গভীর নিশ্বাস 
দাঁড়িয়ে, সাজানো সে স্মৃতিসৌধের কোণে; 
তাকিয়ে দেখি বারে বারে ঐ আকাশ 
অশ্রু ফেলি তাদের তরে অশান্ত মনে। 

নীরবতা করি, গণ কবরের পাশে 
শুনি চিৎকার যোদ্ধার, আকাশ ফাঁটা; 
কত বুড়ো যোদ্ধাও ওখানে রয় বসে 
খুক খুক কাশি আর বিবস্ত্র সে গাটা। 

ভাঙ্গা ঐ দেয়ালে এখনো গুলীর ছিদ্র 
ফিনকি দিয়ে বেরোয় এখনো ঐ রক্ত; 
মুক্তিযোদ্ধা সয়ে গেছো  নির্যাতন তীব্র 
করলেই তবু এই দেশখানি মুক্ত। 

দিই এ দিনে তাদের শুধু পুষ্পস্তুপ 
শত বক্তৃতা, মিটিং, রচিও কবিতা; 
ছিটাই সুগন্ধ, জালাই আগর ধূপ 
আর কিছুই কি পাবে না এ স্বাধীনতা?

জ্যামিতিক খসড়া ।। মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান খসরু



















জ্যামিতিক খসড়া

বাবা ও বাবা
দ্যাখে যাও
তোমার সন্তান মরে অনাহারে
বুলেটের দায় কার ঘাড়ে ?
জমিতে ফসলের পরিবর্তে
ফলিয়েছি হিংসা রবিশস্য।
তুমি হিংসা নেবে বাবা ?
তোমার সন্তানের চর্ষিত হিংসা।
হিংসা পুড়ে আকাশে উড়ছে ---- ছাইরঙা হিংসা।
যে হিংসায় মানব বসতি নাগাসাকি
উপহার পেয়েছিলে দাদামহের সাম্রাজ্যে ।
বাবা ও বাবা
দ্যাখে যাও
তোমার সন্তান মরে রিফিউজি হয়ে
পারমাণবিক অস্ত্রের দায় কার ঘাড়ে ?
মাঠে কৃষকের পরিবর্তে
আমদানিকৃত বিভাজনের সুপ্রাচীর।
তুমি বিভাজন নেবে বাবা ?
তোমার সন্তানের রপ্তানিকৃত বিভাজন।
বিভাজনের হাট বসেছে---- বহুরূপী বিভাজন।
যে বিভাজনে লেগেই আছে যুদ্ধ, খুন-খারাবি।
বাবা ও বাবা
দ্যাখে যাও
মানবতার মৃত্যু যন্ত্রণা পৃথিবীর দেশে দেশে
ভুলুন্ঠিত ইনসাফ, সত্য ঢাকা ছলনার চাদরে।
দায় কার ঘাড়ে বর্তায় - সমাজ?  রাষ্ট্র ?  বিশ্ব ?
না কি আমরা নিজেরাই ?

স্বপ্ন ।। শ্রীলেখা চ্যাটার্জ্জি



















 স্বপ্ন 
দারিদ্র্যের ঘুন পোকা ছড়িয়ে গেছে ---- পৃথিবীর পাকস্থলী , 
প্রকৃতির হৃদয় , মানবের বিবেক ! 
চেতনার অভ্যুত্থানে বাতাসের ডানায় 
একটাই বাণী ভেসে বেড়ায় -- 
ভালোবাসা চাই ! ভালোবাসা চাই ! 
অন্তরের নিভৃতে কে স্বপ্নের ঝাঁকা নিয়ে হাঁক দিচ্ছে --- 
স্বপ্ন লাগবে গো ? নতুন নতুন স্বপ্ন ?         
আমি স্বপ্ন ফেরি কোরি ! 
বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন ! ভালোবাসার অথৈ সাগরে স্নাত হওয়ার স্বপ্ন  ! 
এক মুঠো শপথ ছড়ানো সোনালি 
ভোর মুক্তির আলোয় নেচে ওঠে ! 
দারিদ্র্যতার মহামন্ত্র --ছড়িয়ে দেবে নব 
জাগরণের কোলাহল মুখরিত বিশ্বে ! 
স্বপ্ন --হারিয়ে যাবে জনারণ্যে ,  
বিলিয়ে যাবে স্বপ্নের তারুণ্যে , 
ভঙ্গুর সমাজের বেহিসাবি শরীরটাকে 
ছিন্ন ভিন্ন কোরে মিলিয়ে যাবে | 
স্বপ্ন উড়ে যায় বিষাদের তীর বেঁধা 
আঁধারের গায়ে গায়ে  , দ্বিখণ্ডিত  
মানচিত্রে ! 
স্বপ্ন ভরা থাকে জোনাক খচিত মায়াবী 
রাতের কলসে ! 
অরণ্যের পাতায় পাতায় , মাটির গর্ভে 
যেখানে শিকড় অনুসন্ধান করে 
ভূতাত্ত্বিক তথ্যপ্রযুক্তি ! 
সমুখে স্বপ্নের শরশয্যা ! মহাকাশ জুড়ে চলেছে অগ্নিদাহ -- স্বপ্নের চিতা !! 

                        

ওরা কাজলির কথা শুনলো না ।। সজল মালাকার















ওরা কাজলির কথা শুনলো না


কাজলির মায়ের বুকের ওপর লাফ দিয়ে উঠে ছাগল ছানা
কুকুরটা চাটছে করম আলীর শীতল পা
পোষা বিড়ালটি খুকির শিয়রে বসে আছে; স্তব্দ বারান্দায়
খাঁচার ভিতর ছটপট করছে ময়না পাখি
প্যাঁক প্যাঁক করে উঠানময় ছুটছে চারটে পাতিহাঁস
হাম্বা হাম্বা ডাকছে দুধেলা গাই; দড়ি টানছে অচেনা লোক।
মায়ের বুকের রক্ত মেখে
বাবার নিস্তেজ হাত আঁকড়ে ধরে
কাকুতি মিনতি করে কাজলি বলছে-
'আমারে ছাইড়্যা দেন
আমারে কই নিয়া যাইতে চান?
আমারে ছাইড়্যা দেন...'
ওরা কাজলির কথা শুনলো না।

স্বাধীনতা মানে ।। বশিরুজ্জামান












স্বাধীনতা মানে


স্বাধীনতা মানে ভোরের ঘাসে শিশিরের মিষ্টি হাসি,
স্বাধীনতা মানে সবুজ মাঠে রাখালের করুন বাঁশি।
স্বাধীনতা মানে মুক্তাকাশে পাখিদের উড়াউড়ি,
স্বাধীনতা মানে বালক মন ইচ্ছে মতো ঘুরাঘুরি।

স্বাধীনতা মানে কিশোরী মেয়ের নির্ভয়ে ঘরফেরা,
স্বাধীনতা মানে একখন্ড জমিন সবুজ স্বপ্নঘেরা।
স্বাধীনতা মানে কৃষকের মনে সোনালি স্বপ্নিল সুখ,
স্বাধীনতা মানে জেলেদের স্বপ্নময় হাসিমাখা মুখ।

স্বাধীনতা মানে মায়ের কোলে ফিরে পাওয়া হারানো ধন,
ভেদাভেদহীন বাংলার বুকে সবাই সবার বড়ো আপন।

ডোরাকাঁটা নীল প্রজাপতি ।। মনিরুজ্জামান জীবন













ডোরাকাঁটা নীল প্রজাপতি
   

ডোরাকাঁটা নীল প্রজাপতি পড়লো পাখা নিয়ে বিপদে,
কী করে যে পাখা নিয়ে, উড়ে হেথা সেথায়।
সময় যাচ্ছে হারিয়ে কৃষ্ণচূড়া-কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরে-সাঁঝে,
বর্ণিল ডানায় ডানায় উড়াল দিয়ে, ফুলের-ফুলেল মধু মুলে
ছিলে নীল প্রজাপতি এ ঠোঁট শঙ্খ চুড়াল।

সাত সাতটি পল্লবের সাতটি বর্ণের দুটি ডানায়,
উড়াল দিয়েছিলে লুকায়িত সুখ প্রজাপতি।
নিঝুমদ্বীপের-নিঝুমরাতে নিদ্রঘোরে, বিদগ্ধ প্রতিক্ষায়,
কাটিয়েছিলে নীল প্রজাপতি তাদের গিলে, খেয়েছিলে লাজ।
ডোরাকাঁটা নীল প্রজাপতি জেনেছিলো, পৃথিবীর কোন এক
রহস্যপ্রিয় তার কোমল স্পর্শের উন্মোচন-উন্মুক্ত করবে,
সুখের ফল্গুনী প্রজাপতীমন। নীলাকাশের-নীলাপাথরটি ছুঁবে
বানানো কাহিনীতে, নেই ধারাবাহিকতা
ভ্যাম্পায়ার-ভ্যাবাচ্যাকা খাপ ছাড়া, বলে যে কতকথা।

ডোরাকাঁটা নীল প্রজাপতির দু'টি ডানার খন্ডচিত্রে প্রলেপ
সাতটি রঙের ঝিলিক-ঝিলিমিলি রহস্যময়ী লুকায়িত সুখ ছিলো সাময়িক

মা -( ২) ।। সুশান্ত হালদার


















মা-(২)
     

মা
রাত আসে,ঘুম নাই চোখে
সদা জাগ্রত আঁখি আমার
নিষ্ঠুরতায় অশ্রুজলে ভাসে
বোনের মেহেদি রাঙা হাত রক্ত লাল
ভাইয়ের আস্তিনে বাজের হিংস্র থাবা
কী করে ফেলবো নিঃশ্বাস ঘাড়ে যে খুনির শাণানো তলোয়ার 

মা
ঘুম আসে না
পিতার কষ্টার্জিত স্বাধীনতা খুবলে খেয়েছে ওরা
বাসন্তী হরিদাসীরা আজও নিঃস্ব সর্বহারা
কেঁদে কেঁদেই গেলো হারিয়ে অথচ বলেছিলো পিতা
এখানে  অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠবে বাংলা
বৃক্ষের সরলতায় বড় হবে মানবতা
বোধের শিখায় পুড়বে বিবেকের চেতনা

মা
তবুও বলে ওরা এখানে থাকবে বড় বড় বৃক্ষের ছায়া
স্বর্ণলতা নাকি এখানে হয়েছে অবাঞ্ছিত ঘোষনা
তবে কী উলুখাগড়ায় খেয়ে ফেলেছে সবুজ ক্ষেতের বেড়া
নাকি বিষাক্ত নিঃশ্বাসে পুড়ে গেছে তোমার ছেলের বাসনা? 

মা
হাতে পায়ে ফোস্কা, চোখে রক্তের ফোয়ারা
ভেসে যায় বাংলা যেন সীমার করেছে ধাওয়া
রক্তাক্ত খঞ্জরে অর্ধমৃত প্রেমিকা
যেমনটা দেখেছিল পিতা একাত্তরে বাংলা
সবুজ শ্যামলীমায় এখনো পিতার পদচারণা
যেন সন্তানের ভালোবাসায় গর্বিত মা

এখানে শুকিয়ে গেছে পদ্মা মেঘনা যমুনা
যাও ছিল জল আঁচল ধোয়া তাও খেয়ে ফেলেছে হায়েনা
এখন শুধু ধূধূ বালুচর, দেখি না আশা নিরাশা
তবুও স্বপ্ন আমার বুকে বেঁধেছে বাসা
নিশ্চয়ই শহীদের রক্ত যাবে না বৃথা

মা
হেমন্তের সকাল যদি হয় ভোরের কুয়াশা
শিশিরের জলেই না হয় করবো আচমন আমরা
কার্তিকেই করবো ব্রত গায়ে নামাবলী ছাড়া
বলেছিলে -কবিতাই তোর ধর্ম যদি না থাকে বাঁধা-ধরা
কী করবে ধর্ম  বিচার-বুদ্ধি ছাড়া
তিলকে হয় না শুদ্ধ যদি না থাকে মন্দিরে ভালোবাসা
যতই করিস নামাজ রোজা মন যদি হয় আঁধারে ঢাকা
তাহলে পাবি না হাসরের ময়দানে আল্লাহ্-ঈশ্বর-নবী ঈসা।।
                    

কখনওই কেউ সাথে ছিল না ।। চঞ্চল দেবনাথ



















কখনওই কেউ সাথে ছিল না


কখনওই কেউ সাথে ছিল না 
তবু হারিয়ে যাওয়ার কী ভয়!

কত স্যাঁতসেঁতে অপরাহ্ন
শস্য বোঝাই গরুর গাড়ি
পথের দু'ধারে হামাগুড়ি দিয়ে থাকা 
হলুদ ধানক্ষেত 

মঙ্গা-দেশ থেকে আসা ধানকাটা মানুষের
পুষ্ট ধান-শীষের মতন ন্যুব্জ শরীরজুড়ে
অঘ্রাণের কর্পূর গন্ধ 
পেটে ক্ষুধা আর গলায় গান,
হারিয়ে গেছে অনেকদিন
অনেক রাতের ভালোবাসা 

এসময় মেলা বসে
মুখোশের আড়ালে নাচে
অদ্ভুত ক্ষুধার্ত মানুষগুলো, 
বাবার হাত শক্ত করে ধরে রাখি
হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে

সে হাত একদিন শিথিল হতে হতে বলেছিল
কখনওই কেউ সাথে ছিল না
মিছেমিছি হারিয়ে যাওয়ার ভয়।

০৭/১২/২০১৭, ঢাকা।

গল্পঃ বীরাঙ্গনার সন্তান ।। রওশন রুবী

বীরাঙ্গনার সন্তান 

  
  
হাসপাতালের রুমে ঢুকেই আলী উল দেখে বড়মামা শিশুর মত ঘুমাচ্ছেন বকের পালক রঙা বিছানায়। বড় মামার বন্ধু হাসমত আলী সাহেব এক কোনে সোফায়   চুপচাপ বসে আছেন। যার স্নেহের পরশ এখনও মাথায় লেগে আছে আলী উলের। তাঁর বৈঠকখানায় সেবার বসেছিল মামার পাশে। অনেক জানাশুনা তাঁর, সেই সুবাদে মামা চেয়েছিল যদি আলী উলের মাকে খুঁজে পাওয়ার কোন পথ বের করা যায়? যেতেই শুনে হাসমত আলী সাহেব বৈঠকখানায় উপস্থিতিদের বলছেন - দেশে কি যে চলছে। কিছুই তার ঠিক ঠিকানা নেই। যার যেমন লুটেপুটে খাচ্ছে। আমরা দেখছি আর আঙুল চুষছি।  যেই দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়েছিলাম।  সেই দেশে ছেয়ে গেছে কুটিল জটিল লোকজনে। আগুনে ঝলসে দিচ্ছে মানুষদের। পথে ঘাটে আতঙ্কিত মানুষের চলাচল। জানমালের একপয়সা নিরাপত্তা নেই।  এই দেশে মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে প্রকৃতজনদের খুঁজে পাওয়া মুসকিল হবে। শত্রুদের আবার কি তাড়াতে হবে রুহুল? আবার কি অস্ত্র হাতে নিতে হবে? আলী উলের মামার দিকে চেয়ে রইলেন কথাগুলো বলে। আলী উলের মামা রুহুল আমিন বলে
-  তাইতো দেখছি।  প্রয়োজনে আবার তাড়াব ওদের। আবার তুলে নিবো অস্ত্র।  অস্তিত্ব যদি বিলুপ্ত হয় তবে  কি থাকবে বাঙালির?  যদি এখন হাঁটুর উপর প্যান্ট  তুলে দাগটা দেখিয়ে দেই পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ছোড়া গুলির দাগটা। যদি হাসমত আলীর পাজামা নামিয়ে পেছনটা দেখাতে পারত তবে কিছুটা হলেও বুঝতে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে কি গভীর ক্ষত পেয়েছে দেশের প্রকৃতজনেরা এবং তা কতটা যন্ত্রণাময় ছিল। কিড়া পড়ে ছিলো পর্যন্ত সেই ক্ষতে। একদিন তো যন্ত্রণা সইতে না পেরে দা গরম করে কোমরের ক্ষতের মধ্যে লাগিয়ে আজরাইলের থাবায় পড়ে দ্বিতীয়বার মরতে মরতে বেঁচে গেলেন হাসমত আলী। আজো শিউরে উঠি কতো খান্নাশ ছিল সেইসব মানুষ, কত নাফরমান বেইমান ছিল। নিজ জাতি ধর্মের মানুষের সাথে এমন কুকর্ম, এমন পিচাশের মত আচরণ করে কেউ? অথচ তারাও জ্ঞানী ছিলো, কোরআন পড়ত, কোরআনের তর্জমাও জানতো। বিদায় হজের ভাষণ সম্পর্কেও কম জানতো না। তারা কিন্তু তাদের কার্যকলাপে জাহেলিয়া যুগকেও হারমানিয়েছে। আসলে তারা ছিলো জ্ঞান পাপী, ইয়াজিদের গোষ্ঠি। দয়া মায়া বুদ্ধি বিবেচনা বলতে কিছুই ছিল না তাদের। এর মধ্যে একজন বলে উঠলো
-  ওদের বিরুদ্ধে মামলা কইরে দেই এলাকাবাসীরা? ওরা স্বায়ধীনতার শত্রু, যুদ্ধ অপরায়ধী হইয়েও দিব্বি বুক ফুলাইয়া ঘুইরে বেড়ায় । দেইশপ্রেমিক, সায়ধারণ মানুষের উয়পর অত্যাচার কয়রে।  ভিন্ন ধর্মের মায়নুষদের অত্যাচারে অতিইষ্ঠ কইরে তুইলছে। গাড়ি, ঘরবাড়ি, দোকান পাট জ্বালায়ে দেয় আইজো। মাইয়ারা ঘরের বাইরে হবার পারে না।  আয়সলে এইদের বুক পিঠ নাই। ডাণ্ডার ঘা পইড়লে আর জয়নসাইধরণের লাত্থিউষ্টা খাইলে ঠিক হইয়া যাইবো বেইমানেরা। নায়মে মুসলমান। আরেক জন বলে
-   এতো ভাবা ভাবির কাম নাইক। হেরা কোন কামই ঠিক কয়রে নাই। চইলেন থানায় যাই । হাসমত আলী স্নেহের গলায় থামালেন ঐ ব্যাক্তিকে।  বললেন
-   আরে বাবা প্যাটপ্যাট না কইরে ভোট নে সবার থেকে। কে কে মামলা করার পক্ষে । তোরা তরুণ। তোগর দিকেই তো এখন সমাজের সব কাম চেয়ে থাকবে। মামলা দিতে কয়জন চায় দেখি। প্রায় সবাই হাত তুলল। বাড়ির ভেতরে খবর পাঠালেন  রান্না করতে। মজলিসে বললেন আপনেরা আজ দু'টো ডাল ভাত খেয়ে যাবেন। আমার নাতি আসছে। ওর ওছিলায় খাইবেন। আর ওর মায়ের জন্য দোয়া করবেন। সে নিরুদ্দেশ হয়েছে। আলী উলের কচি মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন সরলতায় ভরা। ও একজন বীরাঙ্গনার সন্তান। তার জন্ম নিয়ে সন্দেহ করবার কিছু নেই। সরল রেখার চেয়েও সরল তার জন্ম কথা। আলী উলের চৌদ্দ বছরের চোখ মজলিসের সবার মুখকে দর্শন করে।  ওর ঘন লোমে ঢাকা ভ্রু আর মসৃন বুক কাঁপে। সেই কাঁপন দেখে মনে হয় সত্য কখনও কখনও যুদ্ধের চেয়ে ভয়াবহ। আলী উলের রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। ওর বোধে উপছে পড়া কষ্টের   পরিমান কম নয়। সেই উপলব্ধি কতটা প্রগাঢ় ও মৌলিক তা তার শিরা উপশিরা জানে। আর বুঝি যেনে ছিলেন হাসমত আলী। তাই তিনি প্রশান্তির ছায়া দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আলী উলকে। তার বুকে ওর মাথাটা আশ্রয় পেয়ে হেলে থাকে বেশ কিছু সময়। এবয়সেই আলী উল বুঝেছে বিরাঙ্গনার সন্তানেরা সমাজের ডাস্টবিন। ওদের দেখলেই গন্ধ বেরুক আর না বেরুক নাকে রুমাল চেপে সরে যায় মানুষ। ঘৃণা পেয়ে বেড়ে উঠে তারা।  যেখানে যায় সেখানেই তারা দেখে মানুষের নিঠুরতা, ঘৃণা, অবহেলা। যেন যুদ্ধের সময় তারাই আর্মি ছিল, আর বিভৎস নির্যাতনের পর হত্যা করেছে অগণিত মা, বোনকে। যেন দিনের পর দিন নির্বিচারে হত্যা করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের।

সেই ছোট বেলা আলী উলকে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছেন লজ্জা, ঘৃণা, ক্ষোভে, দুঃখে তার মা। হাঁটতে শেখা , চলতে শেখা ছিল তার কম বেশি অনাদর অবহেলায় মামার বাড়িতেই। ছোট ও মেজ মাসী ছিলো সহোদরা। তাই তারা মিল করেই যে অবেহেলাগুলো করতো আলী উলের প্রতি। সেই অসহনীয় অবহেল মামাদের সামনে কখনোই প্রকাশ করতো না সে। মামারা তাকে যথেষ্ট ভালোবাসতো। তারা ঐসব জানতে পারলে মামীদের সাথে হয়তো খারাপ আচরণ করবে। তাই সব হযম করেই বেড়ে উঠেছে সে। বড় মামা এবং তার পরিবার ছিল ভিন্ন। ভিন্ন হলেও তাদের কাছে থাকা ছিল অসম্ভব। কারণ বড় মামা একজন রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে আহত হওয়াতে তার শারীরিক অক্ষমতার জন্য কোন কাজ করা তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক মানুষ জনের মতো নয় বলে। একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। যার আয় দিয়ে কোন ভাবে তাঁর সংসার চলে। সেই সংসারে বাড়তি একজন মানুষ সত্যি অবিচার করা হবে। মামা তবু মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে যায় । মামীও খুব যত্ন করে তখন তার সামর্থ্য অনুযায়ী । একটা যুদ্ধ একটা জাতির কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নেয়। আলী উলের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তার মাকে। পরিবার হয়না কোন বীরাঙ্গনার। আলী উলের মাও পরিবার পায়নি। গতকাল ভোরে আলী উল বাজারে বটগাছের শিকড়ে বসে মনের সুখে গান গাইছিল আর কুড়িয়ে আনা বকুলগুলো এ হাত থেকে ও হাতে নিচ্ছ, নাকের কাছে ধরে সুবাস নিচ্ছে এমন সময়  দোকানী রাহাত এসে বললো " ফোন এসেছে। " অবাক হয়েছে আলী উল। তবু ছুটলো ফোন দোকানের দিকে। ফোনে বড় মামার অসুখের খবর পেয়ে ঢাকায় এসেছে। তবে মামাকে দেখে আজই ফিরতে হবে আগামী পরশু ষোল ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এইবার অন্যরকম ভাবে পালন করার কথা গ্রামের যুবকদের দিবসটি। হয়ত সেই প্রোগ্রামে তার উপস্থিতি টের পেলে যথেষ্ট অপমান করবে তারা তাকে। তবু স্মৃতিসৌধের একটু দূরে ঝোঁপের আড়ালে বসে প্রস্তুতি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন সব দেখবে আলী উল। তার এই ইচ্ছে পূর্ণ  হবে কিনা এখন সে সন্দিহান। প্রতি বছর এই দিনে  বিশিষ্টজনেরা যখন বক্তৃতায়  মহান মুক্তিযোদ্ধাদের  কথা বলে, যখন তাঁরা বীরাঙ্গনাদের কথা বলে। বলে বীরাঙ্গনারাও মুক্তিযোদ্ধা। তখন গঙ্গার স্নান করে উঠে আসা মানুষের মতো পবিত্র লাগে তার। আর সেসময় ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমি বীরাঙ্গনার ছেলে। দেখুন দেখুন আমি বীরাঙ্গনা ছেলে। কিন্তু পারে না পর মুহূর্তে ওদের কন্ঠ যখন ঝাঁঝালো হয়ে উঠে। যখন তারা সেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে " ঐসব হারামির বাচ্চারা তাদের যে বীজ রেখে গেছে সেই বীজ থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে কুকুরেরাই কুকুরের  জন্মদাতা হয়। ঐ কুকুরদের বীজ কুকুরই হবে। ওদের দেখলেই বয়াবহ যুদ্ধ সময় স্থির হয়ে যায়, মনে পড়ে যায় সেই জ্বলন্ত গ্রাম, শহরের ছবি। মা মেয়েকে চুলের সাথে বেঁধে বাবার ছেলেকে ধর্ষণ করতে বলা। তারা অস্বীকৃতি জানালে নির্দয় ভাবে তাদের সামনে ধর্ষণ ও পরে ওদের হত্যা করে মেয়েদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া। মায়ের কোল থেকে শিশুকে নিয়ে উপর দিকে ছুঁড়ে ফেলে ব্রাসফায়ার করে শিশুর ছিন্ন ভিন্ন দেহের টুকরোর দিকে তাকিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠা ।  ওদের নিঃসংশতার কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে কোটি কোটি উদাহরণ আছে নিসংশতার । ইয়াহিয়া তার পোষাকুত্তা আর্মিদের বলেছেন "যে ভাই হয়ে ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করে এমন বাঙালিদের সত্য পথে আনার জন্য যতো পারো সুসন্তানের জন্ম দাও।" সেই ইয়াহিয়ার জঘন্যতম নির্দেশের নির্মম স্বীকার আমাদের মা বোনেরা। তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা । আর সেই পাকির জারজ সন্তানের প্রতি ঘৃণা। উপস্থিতির মধ্যে এ কথার পক্ষে বিপক্ষে গুঞ্জন উঠলেও জোরালো হয়না। তখন শুধু মনে হয় এই পাপ জন্ম থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার। এই পৃথিবীর কেউ এই জীবনকে চায় না। এই পৃথিবীর সব অবহেলা অবজ্ঞা শুধু তার মতো সন্তানদের জন্য। যারা কোন দিনই পরিচয় পায় না মানুষের । তারা সমাজ পায় না। পরিবার পায় না। পায় অবহেলা আর অবহেলা। তাদের বেঁচে থাকার কি প্রয়োজন ? কিন্তু আলী উলের মৃত্যুর আগে সেই দুঃখীনি মাকে দেখতে ইচ্ছে করে। তার মন বলে মা ফিরে আসবেই। মা দেখতে আসবেই তাঁর সন্তানের ঘৃণ্য অবস্থান। ঝোঁপের আড়াল থেকে স্মৃতিসৌধকে তার মায়ের মতো লাগে। কতো গভীর রাতে এই স্মৃতিসৌধের ধূলিমেখে মনে প্রশান্তি পেয়ে নিজেকে ধন্যবাদ মনে করতো যে সে বীরাঙ্গনার সন্তান।

বাড়ি যাওয়া হলো না রুহুল মামার অবস্থা বাড়াবাড়ি হওয়ার কারণে আলী উলের। কালই ষোল ডিসেম্বর। এখানে কোথায়আছে স্মৃতিসৌধ কে জানে। কাউকে জিজ্ঞেস ও তো করা যাবে না। যদি গ্রামের মানুষের মতো এরাও আলী উলকে কটাক্ষ করে? তবে হাসপাতালে এসেছে অব্দি কেউ তাকে বাঁকা চোখে বা ঘৃণার চোখে দেখেনি সে লক্ষ্য করেছে। যে যার মতো ছুটছে। কারোরই ভ্রুক্ষেপ নেই কোথায় বীরাঙ্গনার সন্তান পড়ে আছে আর কোথায় পড়ে আছে সুস্থ পরিবারের সন্তান । যে যার মতো ছুটছে। এই এতো বছরে দুটো রাত একটা দিন বেহেস্তি সুখে কাটে আলী উলের। কিন্তু কাল সকালে কি করে সে সেই স্মৃতিসৌধের কাছে যাবে? দূর থেকে হলেও মাকে দেখবে? ভাবতে ভাবতে জল গড়ায় চোখ দিয়ে । সেই জল বুকের ভেতর সমুদ্রের মতো ঢেউ তোলে আর হুহু করে বাড়তে থাকে বেগ। এখানেও ভেসে আসছে যুদ্ধের গান, বিজয়ের গান, সর্বহারার গান। এখানের মানুষেরাও নিশ্চয় সম্মান জানায় সে সব বীর এবং বীরাঙ্গনাদের। ষোল ডিসেম্বর গভীর রাতে ক্লিনিকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফুলের তোড়া হাতে রাস্তায়  মানুষের ঢল নামতে দেখে আলী উল। তারও ঐ শোভাযাত্রার সাথে যেতে ইচ্ছে করে। ওরা নিশ্চয়ই কোন না কোন স্মৃতিসৌধের দিকে যাচ্ছে। রুহুল মামা বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন। মনটাকে আর ধরে রাখতে পারে না আলী উল। সে নিচে নেমে যায় । দারোয়ানকে অনুরোধ করে গেইট খুলে বেরিয়ে পড়ে। একটা শোভাযাত্রার একটু দূর দিয়ে  হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে। সে লক্ষ্য করে তাকে অনেকেই দেখছে কিন্তু সে চোখ বাঁকা নয়। তার মন বড় হতে থাকে সে আরো কাছে আসে। তখনও কেউ তাকে ছাল উঠা কুকুরের মতো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছেনা। সে আরো ঘন হয়ে মিশে যায় শোভাযাত্রার সাথে। ঠিক তখনই  তার শরীর বেয়ে বুক থেকে নেমে যায় বড় এক কালো পাথর। পাথরের ভারহীন হয়ে সে হাঁটে। জীবন এখানে বেহেস্তের মতো লাগছে তার কাছে। এই প্রথম সে শ্বাস নিচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাসে। স্মৃতিসৌধের  সামনে এলে সবাই সবার হাতের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সরে যায়। আলী উলের হাতে ফুল নেই দেখে তার পাশের সাদা পাঞ্জাবী পরা লোকটি একটি ফুল এগিয়ে দেয়। স্বপ্নের মতো লাগে আলী উলের। সে হাত বাড়িয়ে ফুলটি নিয়ে। নিজের গায়ে চিমটি কাটে। না, এ স্বপ্ন নয়। এই বাস্তবতার জগত তাকে ধিক্কার দিচ্ছে না। ঘৃণা করছেনা। অবহেলার বিষ বাণেও ক্ষতবিক্ষত করছেনা। ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়েও তাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে হচ্ছে না। কি আশ্চর্য! কি অদ্ভুত! দীর্ঘ  বছরের অপমানের অগ্নিগিরীর লাভা নির্গত হয়। আলী উল স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গিয়ে ফুল বিছানো সিঁড়ি পর সিঁড়ি চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে তোলে আর আবেগে পাগলের মতো  চিৎকার করে বলে আমি বীরাঙ্গনার সন্তান। আমি বীরাঙ্গনার সন্তান। অসংখ্য তেজি আলো মুহূর্তে আলী উলকে ঘিরে ধরে। অসংখ্য মাইক্রোফোন আলী উলের মুখের সামনে ছুটে আসে। অসংখ্য প্রশ্ন বানে আলী উল বিদ্ধ হতে থাকে। অসংখ্য চোখ তাকে অবাক হয়ে দেখছে। সে সেই সবের সামনে দু'হাত পাখির মতো মেলে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফের চিৎকার করে উঠে " আমি বীরাঙ্গনা নসিমনের সন্তার। আমি নসিমনের সন্তান।" 
হঠাৎ তার হাতে অসংখ্য হাতের টান পড়ে। হাতগুলো তাকে টেনে যে সিঁড়ি গুলো দিয়ে উপরে উঠে এসেছে তা দিয়ে নামিয়ে আনে। এবং একটি গাড়িতে তুলে দেয় । একজন সাদা পোশাকের মানুষ ইনজেকশন হাতে এগিয়ে আসে। সব হাতগুলো তাকে চেপে ধরে। ইনজেকশনের ক্রিয়া তার শিরা-উপশিরায় প্রবেশ করতে থাকে আর সব মুহুর্তে ঘোলা হয়ে উঠে। ঘোলা চোখগুলো বন্ধ হবার আগের মুহূর্তে একটি ভারি কন্ঠস্বর শুনতে পায়। সেই কন্ঠস্বর বলছে " এর কন্ডিশন ভালো নয়। একে পাবনার পাগলা গারদে পাঠাও দ্রুত।" কথাটি শুনে আলী উল প্রাণপণে চিৎকার করে। কিন্তু সেই চিৎকার কেউ শোনে না।