শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭

পাপের দৌড় ( গল্প) - জুঁই জেসমিন

পাপের দৌড়
                সুমিতাকেএই অচেনা শহরের ফুর্তি মহলে উলঙ্গ হয়ে ঘুরতে হবে?
সুমিতা কোন ক্রমেই রাজী না।
মরে গেলেও শরীর সে, বস্ত্র শূন্য করবেনা।
পরনে সুমিতার লালসাদা প্রিন্টের ফরগ।
পায়ে রুপোর নূপুর। বুকের সামনে চুলের দুটি বেণী দোল খায় লাল সাদা ফিতের অরূপ শোভায়।
যার আজ শৈশবের কোলে, হেসে দুলে আপন মনে বেড়াবার কথা, সেই সুমিতা আজ শহরের দুষ্টু প্রকৃতির মানুষের
সামনে হাজির, আহার হিসেবে।
সুমিতা ও রুবিনার কি বাঁচার কোন পথ নেই?
বন্দি থাকবে সমস্ত জীবন কি, অচিন পুরুষদের কামুকা রাজ্যে?
সুমিতার চোখের সামনে, তারই বড় বোনকে চুল ধরে, গালে চড় মেরে শরীরের সব কাপড় খুলে,, চপলা ও আরো কয়েকজন মিলে টেনে, পাশের ঘরে নিয়ে যায়। কি করুণ আকুতি মিনতি
অবলা রুবিনার!
অদ্ভুত,
কারো মাঝে দয়া মায়ার লেশ টুকুমাত্র নেই!
বুবুর এমন অবস্থা দেখে সুমিতা স্থির থাকতে পারেনি,, বাধা দিতে গিয়ে কপাল তার, দেয়ালে চোট লেগে আহত হয়।
কি করবে এখন সুমিতা?
চপলা জানিয়ে দেয়, ঠিক সন্ধ্যায় তাকেও বোনের মতই বস্ত্র শূন্য করে, পাশের সেই ফুর্তি মহলে নিয়ে যাবে।
সুমিতা ঘোর ভাবনায় বিরামহীন যুদ্ধ করে,কি আছে ওই ঘরে?
তার বুবুকে কি করছে, ওই মহিলা?
কেন নিয়ে গেল নগ্নদেহে?
থেমে থেমে এক ঝাঁক পুরুষের হাসি ভেসে আসে- ওই মহল থেকে, তার কলজে কেঁপে উঠে বারংবার।
কিছু প্রহর কাটতে না কাটতেই বোনের বাঁধভাঙ্গা চিৎকার ওয়াল ফাটিয়ে আসে।
সুমিতা ছটপট করে, আঁধার চাপা বদ্ধ ঘরে। কে বাঁচাবে তার বুবু কে?
যে শহরের গর্ভে, দুবোন লোভাতুরের গ্রীবাই,,,,,,সে শহরে যে-
মানুষ মানুষকে খায়। এখানে রক্ষা করার মতো কেউই নেই।
চাঁদ সূর্য্যের কোন মোকাবেলা নেই,, কখন রাত আসে আঁধারের ঝুলি খুলে, কখন দিন আসে সূর্য্যের আলো ঢেলে,,,
সুমি রুবিনার মতো , যা অনেকের অজানা।
শহরের দক্ষিণ প্রান্তে আঁকাবাঁকা গলি পথে ফুর্তি ঘরে কামুকদের আনাগোনা।
চপলা রানী, তর্জনীর ইশারায় জমজমাট আয়োজন করে।
দুজন কুমারীকে ভোগের খোরাক হিসেবে পেয়েছে ফুর্তির বাজারে।
আজ কামুকদের মহা উল্লাস!
চপলার উদ্দেশ্য, প্রথমে রুবিনা, সুমিতাকে -দু কুমারিকে উলঙ্গ করে সবার সামনে ঘুরালে, একদিকে ভাঙবে এদের লজ্জা , অন্যদিকে কামুকেরা আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসবে পয়সার ঝুলি নিয়ে, কোমল সুশ্রী দেহর ঘ্রাণে।
সুমিতার আঁধার ঘর, আরো বেশি আঁধার হয়ে আসে। চপলা ঘরে ঢুকে -আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে, চিবুক ধরে বলে; কচি যৌবনা? তোকে দেখার জন্যে জোড়া জোড়া চোখ যে অপেক্ষায় ছুটোছুটি করছে। এ বলে চপলা পিছন হতে সুমিতার জামার চেইন খুলে,,,,,
সুমিতা চিৎকার করে উঠে চপলাকে ধাক্কা দেয়। চিৎকার শুনে ঘরে প্রবেশ করে দুজন রমণী। সুমিতার হাত দুটো শক্ত করে ধরে থেকে, তারা তার গায়ের জামাটা খুলে ফেলে,,
নীচের পেন্টটা খুলার চেষ্টা করলে,, সুমিতা একজনের হাত এমন ভাবে কামড়ে মাংস পর্যন্ত উবড়ে ফেলে। প্রচুর যে গায়ে শক্তি সুমিতার, ব্যাপারটা ভেবে রেগে, ওই অবস্থায় সুমিতাকে তারা ফুর্তি ঘরে নিয়ে যায়, সুমিতা শক্ত করে পেন্টের গিট ধরে থাকে যাতে, তারা খুলতে না পারে।
কিন্তু,,,,,
খোলা বুকটা কি করে ঢাকবে সে?
লোভাতুর সব কটা চোখ যে বুকের জমিনে জিহ্বা দোলায়---
চপলা, সুমিতার মুখটা উচু করে দেখাতে চেষ্টা করলে সুমিতা গর্জে উঠে, জোড়ে মহিলাদের ধাক্কা দিয়ে, ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে সবাই কাচা বয়স ভেবে , বেশি আর তাকে নিয়ে, মাথা না ঘামিয়ে
-
রুবিনাকেই নিয়ে জমজমাট ফুর্তি করার মতলব আঁটে।
সুমিতা প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে বাঁচাবার,,পালাব
ার। শেষমেশ গায়ের সবটুকু শক্তি নিংড়ে, জানালা ভাঙে ।
আর ছুটে চলে রাতের আঁধারে, বিপদের বুক চিড়ে অজানার দিকে।
ভোরের হাওয়ায় প্রকৃতির সব- একরকম শিহরিত।
সমস্ত আঁধার শুষে, রবি উদিত হয় স্নিগ্ধকর আলোয়।
বিরাম চাচা রোজ ফজরের নামাজ আদায় করে, খেত খামার দেখে, ঘুরে ঘুরে।
দুর্বা ঘাসে ভরা চিকন আইল দিয়ে যেতেই
পিছন হতে মেয়েলি চিৎকার কানে আসে,
চাচা আমারে বাঁচান।
এ বলে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে, জ্ঞান হারায় সুমিতা।
রহমপুরের বেশির ভাগ মানুষ এখনো ঘুমের ঘরেই,
বিরাম চাচা এমন অবস্থায় কি করবে?
দীর্ঘ সময়ের পর এক পথচারীকে ডেকে
সুমিতাকে বিরাম চাচা নিজের বাড়িতে, নিয়ে আসে।
সুমিতার জ্ঞান ফিরে, বিলকিশ বানুর জল ছিটায়।
সুমিতার ডান হাতে জ্বলজ্বলে মেহেদীর মত এক শীল,, লেখা 'পতিতা'
বিষয়টা সবাই টিপাটিপি করে। বিরামের বউ চিৎকার চেঁচামেচি,, পাপী মেয়েটিকে ঘর থেকে বিদায় করার জন্য।
বিরাম চাচা কারো কথায় কান না দিয়ে সুমিতার কাছে সব কিছু জানতে চায়,, কি হয়েছে, কি ঘটেছে কেন তার এই অবস্থা?
সুমিতা সব খুলে বলে।
সুমিতার বাবা মা বেঁচে নেই, ফুফা ফুফুর কাছে বড় হয়। ফুফা ফুপু নিজের সন্তানের মতই দেখা শোনা করে। যেন দু বোন ফুফা ফুপুর প্রাণ। রুবিনা আই, এ -প্রথম বর্ষের ছাত্রী। একদিন ঈদের কেনা কাটার জন্য ফুফার হাত ধরে দু বোন শহরে আসে,,,
রাতের গলিতে হঠাৎ সুমিতার ফুপার মাথায়, কারা জানি আঘাত করে! আর দু বোনকেই বস্তিতে টেনে নিয়ে যায়। সুমিতা তার বোনের জন্য ডুকরে কাঁদে, কাঁদে পিতার মতো ফুপার জন্য।রহম পুরের লোক, দলে দলে ভেঙে আসে-
সুমিতার কান্নায়!
বিরাম চাচা সুমিতার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দেয়,
এবং তাকে একদিন তার বাড়িতে দিতে আসে।
বাড়ি এসেই শুনে,তাঁর ফুপা বেঁচে নেই,
ফুপু কেঁদে কেঁদে মরার পথে।
সুমিতাকে পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে ফুপু।
জড়িয়ে ধরে বলে, মা আমার, রুবিনাটা কই,?
তোর ফুপা তোদের এমন সর্বনাশ করবে, কে জানতো -! সুমিতা চমকে উঠে, বলে,,
আমাদের সর্বনাশ, মানে?
এসব কি কউ ফুপু?
হ্যা মা তোদের নামে সব সম্পত্তি
একাই ভোগ করার জন্য-
দু বোনকে পতিতালয়ে দিতে যায়-
মরার সময় শুধু এই কথাটিই বলে গেছে।
কোথায়?
কার কাছে , তোদের দিয়ে এসেছে? এ কথা আর বলে যেতে পারেনি তোর ফুপা।
সুমিতা কথা শুনে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে।
সুমিতা রাতের আঁধারে কিভাবে ওই ভয়াল জগত থেকে বের হয়ে এসেছে,,
সে পথের নাম জানেনা,, ঠিকানা জানেনা।
কোথায় খুঁজবে বুবুকে সে?
কামুকদের আহার হিসেবে, বুবুর সমস্ত জীবন কি তাহলে ওভাবেই শেষ হবে-
সুমিতা, বুবুর কথা ভেবে আজো অশ্রু ঝরায় সময় অসময়, নিরবে নিভৃতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন