বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

জংলা পরকীয় রাত্রী মোহে ।। সৌমিত্র চক্রবর্তী



জংলা পরকীয়া রাত্রি মোহে 

এই যে নিটোল অন্ধকারের দেহ চিরে ছায়া আবছায়া গাছের পাতা ডাল পালা মাঝেমধ্যে স্থির মাঝেমাঝে মাথা দেহ ঝাঁকিয়ে কিসের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করে চলেছে তারাই জানে।

ছোটনাগপুরিয়া ধামসা আর মাদল হাড়িয়ার ধুনকি চালে একটানা ছন্দে বেজে রক্তের শ্বেতকণার সাবধানী সতর্কতা ফুঁয়ে উড়িয়ে লালবিন্দুদের যুদ্ধ মাতনে দুলিয়ে দিচ্ছে ধিনকা ধিনা ... ধিনকা ধিনা ... ভাল্লা হাতে চল শিকারে চল শিকারে ...!

অন্ধকার গাঢ় হলেই আদিম মুন্ডা রমনীর ত্বক ঝলসে ওঠে তীব্র কামদহনে লাখ ওয়াটের ফ্লুরোসেন্ট আলোর ঝলকানিতে দেরে দ্রিম তুম না না তুম না না তুম না তুম না তুম দেরে না না দেরে না না...।

সরসর শব্দের মোলায়েম ছোঁয়ায় মাটিকে আদর করতে করতে ... করতে করতে দুই গাছের মাঝের মাহে আগাছার ঝোপের ফাঁকে খাবারের সন্ধানে চলে যায় ভয়ংকর চন্দ্রবোড়া।

ঝমঝম ঝমঝম লম্বা কাঁটার বিটে মোৎসার্ট সিম্ফনি বাজিয়ে বেরিয়ে আসে নির্বিরোধী লাজুক পাঁশুটে সজারু।

অন্ত্র হজম করা আব্রহ্মান্ড খিদে মাথায় করে অন্ততঃ এক পিস বনমোরগের অসতর্ক সেকেন্ড কাজে লাগানোর খল চাহিদায় ইতিউতি তাকায় গুলবাঘ।

দেশি খাঁটি মহুয়ায় নাক পর্যন্ত নেশা করে মাহাতো রাখোয়াল লাল আটার রুটি আর লহর দাল পাকানোর সূক্ষ্ম ফাঁকে দেশোয়ালির উত্তুঙ্গ স্তনের চিন্তা করে বিরহগান ধরে তরুনী জঙ্গলরাতে, কাঁহা গইলি রে পিয়া হামার হেনে আকেলাপন মারে মোহে ...

কাঠের ধিকিধিকি আগুনের হলদে লালচে নাচনের প্রতিবিম্ব প্রথম ফাল্গুনের না শীত না গরমেও ঘেমে ওঠা রাখোয়ালের নাক গাল চিবুকে আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় খেলা করে।

জঙ্গল রাত্রির নিজস্ব গায়ের গন্ধ অনেকটা অ্যাড্রিনালিনের ভেতরে গোঁজা অপ্রাকৃত কামান্ধ বাসের সমতুল বিকল্পহীন একক সম্রাট, অপরাজেয় কিন্তু ভয়াল।

ভালোবাসার চিঠি পুড়িয়ে তার ছাই অবশেষ উড়িয়ে সা রা রা রা রা রা হোলির মহাজাগতিক রঙ তৈরী শুরু হয়ে গেছে সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট তত্ত্বের উদ্গাতা জংলা ভূমের আনাচ কানাচে।

এই আকাশ কালো আর লালচে সিঁদুর খেলার মায়ায় একের পর এক আঁকে মোহমুদ্গর ছিন্ন করা নানান ছবি, যার আগেও নেই পিছেও নেই, নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ সৃষ্টি স্থিতি বিলয়ের একক ব্যক্তিত্ব।

এখানে অকারণ গাড়ীর ঝড়ের ধুলো নেই, পলি ভিনাইল ক্লোরিনের পুড়তে থাকা বিষগমণ নেই, একইসাথে পঞ্চপ্রেমের প্রেমহীন সঙ্গম নেই, মেকানিকাল হাসির তৈরী করা আস্তরণ নেই, আছে শুধুই দিগন্ত বিস্তৃত সত্যসন্ধান চরাচর আচ্ছন্ন করা ওহম শব্দব্রহ্মের কেন্দ্রস্থল।

রাখোয়াল মাহাতোদের বোধের ইসিজি করলে দেখা যাবে তার উত্থান নেই, পতন নেই, বক্রগতি নেই, সোজাসাপটা সরলরৈখিক, আপাত নজরে মনের অলিগলির অন্ধকারে হাঁটাচলা করা জটীল জীবের মনে হবে মৃত, কিন্তু এই আশ্চর্য সরল সাদাসিধে জগতের কল্পনাও তারা করতে পারবে না কোনোদিনই।

রাখোয়ালের পরকীয়া কিম্বা স্বকীয় বিভাজন বোধ নেই; তার প্রেম জ্যামুক্ত তীরের মত সোজা ছুটে গিয়ে বেঁধে, যার একপ্রান্তে সে আর অন্যপ্রান্তে দেহাতি ঘোমটা বিছানো মৈথিলি রমনী, মাঝে মহাশূন্য।

অম্বার চৌদ্দোশো তম উত্তরপুরুষ গর্ভের অতলে কোনোদিনই রোপিত না হওয়া বীজধানের খোঁজে মালেকাজানের কন্ঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় অনাবিস্কৃত সদ্য যুক্ত হওয়া বিকট ব্ল্যাকহোলের আগ্রাসী পেটে।

-সাঁইয়া মোরি তুহি বিছর যায়ে বারেবার...হো সাঁইয়া মোরি ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন