বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

প্রবন্ধঃকবিতা আন্দোলনে অনুকবিতার ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা ।। নাসির ওয়াদেন



কবিতা আন্দোলনে অনুকবিতার ভূমিকা ও  প্রাসঙ্গিকতা  

            

কবিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলতে চাই যে, কবিতা মানুষের জীবনের বিশেষ বিশেষ মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে পারে ।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ যারা তারা কবি, কবি যাই করুক, অপরাধমূলক কাজ করতে পারে না ।তাই আমি কবিদের পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মতো মনে করি ।শব্দ, ছন্দ, লয় তাল দিয়ে গানের সুরের ভেতর দিয়ে হৃদয়ে যেমন প্রবেশ করা যায়, তেমনি কবিতার শব্দ বন্ধনের মধ্য দিয়ে জীবন  নৈরাশ্যের, হতাশার অভিব্যক্তি, মগ্নচৈতন্যের ক্ষেত্রভূমিতে বারি সঞ্চার করে । তাই কবিতা আমার পরম প্রাণ বস্তু ।আধুনিক কবিতার বিবর্তনে কবিতা তার দিক যেমন পাল্টাচ্ছে, তেমনি আঙ্গিকে, অবয়বেও  নিয়ত রূপান্তর ঘটছে ।
       "অনুকবিতা কি অপারগতার শিল্প? না-বলা বাণীর ঘন যামিনী? আবেগের চাপে যে কথাকে আর বিশদ করতে পারলাম না, তারা তাই কি অনুকবিতা? "সৈকত মুখোপাধ্যায়ের কথা দিয়ে শুরু করছি বিষয়ের ।আধুনিক কবিতায় মিথের প্রয়োগ একটি সুনির্দিষ্ট বহুমাত্রিক প্রকরণ শিল্পের বহিঃপ্রকাশ । সাধারণ মিথ অতিলৌকিক   মিথ্যা, কল্পনাপ্রসূত রূপে ব্যাখ্যাত হলেও, মৌখিক সাহিত্য হলেও মিশ্র-সাংস্কৃতিক উপাদানে তার বিনির্মাণ বহু আলোচিত। মিথ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, কোন জনজীবনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, ব্যক্তিগত শিল্প সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে গোষ্ঠীজীবনের নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণা যা মুখ পরম্পরাগত বংশধরের গোষ্ঠী জীবনে যে সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, সেখানে চালু থাকা বিশ্বাস, সংস্কার, আচার অনুষ্ঠান , ক্রিয়াকলাপের মধ্য দিয়েই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো। কালে কালে তার বিস্তৃতি হলে লোকজীবনে নানান গোষ্ঠীর মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটতো এবং তাকে কেন্দ্র করে আচার অনুষ্ঠান পরিচর্চিত হয়ে আসত।আমাদের দেশে মহাকাব্য, বিভিন্নতা নিয়ে প্রতিভাসিত হয়েছে। পাশ্চাত্য সাহিত্যের সাহিত্যিকগণ তাকে লালন পালন করে নতুনত্বের মোড়কে উন্মোচিত করে এক নতুন দিগন্ত তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। বিশেষতঃ এলিয়ট, এজরা পাউন্ড, জেমস জয়েস, ফ্রানংস কায়ফা টমাসমান প্রভূত লেখকগণ এর নব কলেবর চিত্রায়িত করেছেন আধুনিক কবিতা সাহিত্যে ।
       তিরিশের দশকের কবিদের মধ্যে অমিয় চক্রবর্তী বহুল শব্দ ব্যবহার করেছেন, ত্রিশ পরবর্তী কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রাম বসু, সমর সেন, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবিগণও মিথের বিনির্মাণও ঘটিয়েছেন।ফলে, তিরিশ থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত অজস্র কবিতার মধ্যে নতুন নতুন কাহিনী নব আঙ্গিকে নির্মিত হয়ে--সাধনার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে এবং আচার অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে দেশ-কাল-পাত্র সংলগ্ন হয়ে বহুমাত্রিক রূপে প্রতিভাসিত হয়ে ঐতিহাসিক তত্বের অনুক্ত সূচিত হয়ে ওঠেছে। বিষয় স্বাতন্ত্র্য,ক্ষেত্রের অনুকূল ভূমি, পরিবেশিত আবহাওয়া, সূক্ষাতিসূক্ষ অনুভূতির বারি সিঞ্চনে নব-সত্ত্বার আচরণ উন্মোচিত হয়েছে । 
            যাই হোক, যে কথা নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে আলোকপাত, তার প্রসঙ্গে গিয়ে প্রথমেই বলা যেতে পারে যে, অনুকবিতার অবয়ব নিঃসন্দেহে সংক্ষিপ্ত ,ছোটাকৃতি।সময়ের বিবর্তনে মানুষের জনজীবনে চলাফেরা, জীবন জীবিকা সংগ্রহ, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। তেমনি কবিতার মধ্যে পরিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত। পরাবাস্তববাদ থেকে প্রতীকবাদে বিবর্তিত হয়েছে, তেমনি উত্তর আধুনিকতার নামে নতুন নতুন সংস্করণ ঘটছে, magic reality বা যাদু-বাস্তববাদে উন্নীতকরণ হয়েছে। যে কথা বলছিলাম যে, অনুকবিতা আঙ্গিকে যাই হোক, শব্দ বন্ধনে যা ঘটুক, নিগূঢ় তথ্যের সমবিহারে তার বক্তব্য অপূর্ণ মনে হলেও কোথাও যেন পূর্ণতা পেয়েছে। অন্তর্জাল সাহিত্যে নতুন নতুন বিন্যাসের নানান প্রকার প্রকরণ দেখে উচ্ছ্বসিত হচ্ছি, না অন্যকিছু ভাবছি সেটা আসল কথা নয়--সত্যটা হচ্ছে যে,অতি অল্প আয়াসে পূর্ণাঙ্গ ভাব-ভাবনার ইচ্ছাসমূহকে তুলে ধরে  নতুন আলোর মোড়কে মেলে ধরা।
            কবিতা সম্পর্কে শোপেন হাওয়ারের বক্তব্য : Everything in the world is capable of being found beautiful, perhaps in many different ways, if only we have been necessary genius. কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই অনুকবিতাটি উল্লেখ করে বলতে চাই যে, কবির মননশীলতা, অভিব্যক্তি ও নৈব্যক্তিকতার প্রকাশ কিভাবে ঘটেছে । " আমার কাছে একবেলা খাও, একবেলা /খাও ওর কাছে /পোকায় আমার কাটলে পাতা, ফুল /ফোটালে ওর গাছে।"বেদনা সিক্ত জীবনের চির আকাঙ্খার চিত্রকল্প কবি সুনিপুণ দক্ষ কারিগরি হাতে তুলিত করে হৃদয় মর্মে আঘাত হেনেছেন।এরপর আর কি কোন কথা থাকার প্রয়োজন আসে?আমরা দু লাইনের গল্প কিংবা উপন্যাস -এরকম ভাষ্য অন্তর্জাল ওয়েব ম্যাগে দেখি বা শুনি।একটা উদাহরণ তুলে ধরি --এক অতিশয় বৃদ্ধ তার প্রিয় মোবাইলখানি গলির মোড়ের মোবাইলের দোকানে গিয়ে বলে--ভাই, আমার খারাপ মোবাইলটা সারিয়ে দাও না!  মেকানিক্স মোবাইলটা খুলে অনেকক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বৃদ্ধকে জানাল যে, তার মোবাইল সচলই  আছে, শুনে দুচোখে অশ্রু ঝরিয়ে বৃদ্ধ শুধায়,তাহলে কেন তার

1 টি মন্তব্য: