সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

অনুবাদ কবিতাঃ আচরনের প্রতীক - আবুল কাইয়ুম

আচরণের প্রতীক

মূল কবিঃ হার্ট ক্রেন

ভাষান্তর : আবুল কাইয়ুম

উপদ্বীপের কাছে বসেছিলো ভবঘুরে এবং আঁকছিলো
উপত্যকার মসৃণ সমাধিক্ষেত্র। যখন ধর্ম প্রচারক
করুণা ভিক্ষা দিলেন বশংবদদের, অগ্নিগিরিটি উদগীরণ করলো
গন্ধক এবং সোনালি শিলাকণা------
আনন্দ ভেসে চললো বিশাল আবরণে
জীবিতদের প্রলোভিত করে আধ্যাত্মিক ফটকের দিকে।
বাগ্মীরা অনুসরণ করেন বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের গতিবিধি
এবং বেতারযন্ত্র মান্য করে মানুষের সম্পূর্ণ বিধান,
ধর্ম প্রচারক শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে তাঁর চিন্তাকে সংক্রামিত করেন।
ইতিহাসবেত্তারা ভক্তির অলঙ্কারে পূর্ণ করেন সকল ভাণ্ড ও পেয়ালা-
ভোঁতা ওষ্ঠগুলোই করে আধ্যাত্মিক ফটকের স্মরণোৎসব।
ভবঘুরে অবশেষে এই বিশ্রাম ক্ষেত্রটিকে বেছে নেয়-
যেখানে সাগরকে উৎসাহিত করে স্ফটিক মেঘেরা
এবং যেখানে অবশেষে জন্ম নিয়েছিলেন একজন মনোনীত মহানায়ক।
ঐ সময়ে উবে গিয়েছিলো গ্রীস্ম এবং ধূঁয়ো।
ডলফিনরা তখনো খেলা করছিলো দিগন্তে খিলান তুলে
শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক ফটকের স্মৃতিগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য।
মূল কবিতাঃ
Emblems Of Conduct
-------------------------------
Hart crane
----------------
By a peninsula the wanderer sat and sketched
The uneven valley graves. While the apostle gave
Alms to the meek the volcano burst
With sulphur and aureate rocks ...
For joy rides in stupendous coverings
Luring the living into spiritual gates.
Orators follow the universe
And radio the complete laws to the people.
The apostle conveys thought through discipline.
Bowls and cups fill historians with adorations,
কবি-পরিচিতি : হার্ট ক্রেন ও তাঁর প্রসিদ্ধ কবিতাঃ
আধুনিকতাবাদী (modernist) ধারার এক স্বতন্ত্র কবি হার্ট ক্রেন (১৮৯৯-১৯৩২)। জীবন-যাপনেও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। জন্ম আমেরিকার ওহায়ো রাজ্যে। পিতা ছিলেন একাধারে বণিক ও মিছরি কারখানার মালিক। তিনি চাননি ছেলে পারিবারিক পেশা ছেড়ে কবি বা সাহিত্যিক হোক। পরিবারের প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হয়ে ক্রেনকে মাত্র ষোল বছর বয়সে গৃহ ত্যাগ করতে হয় এবং এরপর তিনি বিপদাপন্ন ও ছন্নছাড়া জীবনের মুখোমুখি হন। চষে বেড়ান কিউবা, প্যারিস ও নিউইয়র্ক। জীবনধারণের জন্য তাঁকে কারখানার শ্রমিক, মেকানিক, বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপিলেখক –এসব নানা ধরনের পেশায় কাজ করতে হয়। আর তাঁর অবসরের অধিকাংশ সময় কাটে কবিতা লিখে ও মদ পান করে এবং বাকিটা লেখক বন্ধুদের সাথে আড্ডায়। অবশেষে ম্যাকমোহন নামে এক ব্যাংকারের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক তাঁকে ‘দ্য ব্রিজ’ কাব্যটি লেখার সময় আর্থিক সহায়তা দান করেন। ১৯৩২ সালে মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে এই কবি মেক্সিকো থেকে নিউইয়র্ক ফেরার পথে জাহাজ থেকে সাগরে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
হার্ট ক্রেনের প্রথম দিককার কবিতাগুলো সুইনবার্ন, ইয়েটস্, ইংরেজ রোমান্টিক কবিকূল ও ফরাসী সিম্বলিস্ট কবিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলো। এরপর তিনি এলিয়ট ও লা ফর্গের প্যাটার্নে লেখা শুরু করেন। ‘দ্য ব্রিজ’ কাব্যেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও পরিণতি। তাঁর কবিতার ভাষা অত্যন্ত দৃঢ়সংবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাতে প্রায়শ অসমঞ্জস শব্দাবলীর বিন্যাস পরিদৃষ্ট হয়। তিনি প্রচুর রূপক-প্রতীকের ব্যবহার করেছেন।
হার্ট ক্রেন মাত্র দুটো কাব্যগ্রন্থের লেখক। ‘দ্য ব্রিজ’ (১৯৩০) –এর আগে ‘দ্য হোয়াইট বিল্ডিংস’ (১৯২৬) নামে আর একটি কাব্য লিখেছিলেন্। জীবদ্দশায় ছন্নছাড়া ও বিশৃঙ্খল জীবনযাত্রার জন্য অনেকের কাছেই ধিকৃত ছিলেন। কিন্তু তাঁর অকাল আত্মহনন এই ধিক্কারকে মুছে দেয়। সহসা তাঁর প্রতি আমেরিকার পাঠককূল অনুরক্ত হয়ে ওঠে এবং তাঁর কবিতা বিপুলভাবে পঠিত হয়। ক্রেনের প্রথম কাব্যটির বিষয় ছিলো এক প্রকার বিকৃত প্রেম। খোলামেলাভাবে লেখা এই কাব্যটিতে কিছু দার্শনিক মেজাজও ফুটে ওঠে। কিন্তু ক্রেনের দীর্ঘ কবিতা ‘দ্য ব্রিজ’-এর মাঝে মহাকাব্যের অনেক গুণ মেলে। তিনি ব্রুকলীন ব্রিজকে প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে এই কবিতায় মার্কিন জীবন ও মিথ উপস্থাপন করেন। টি, এস, এলিয়টের ‘দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’ ও উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম-এর ‘প্যাটারসন’-এর মতোই এটি আধুনিক কবিতার ইতিহাসে একটি মহৎ কাব্য হিসেবে বিবেচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন