রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

বেদনা শ্রীলেখা চ্যাটার্জি

 বেদনা   
        (ছোট গল্প) 


                  আমি মন | আমার ঘরে নিয়ত নিয়তির পরীক্ষা চলে | বেদনারা কথা বলে | আমি আমার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাই বাইরে ! সারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করি আমার দোসরকে | কত রংবেরঙের মনের সাথে প্রাণের কথা বলি | বন্ধুত্ব হয়না সবার সাথে | ম্যাচ করেনা আত্মার সাথে | হঠাৎ  গেলাম হারিয়ে | একা একা অন্ধকারকে জড়িয়ে ধরলাম | পেলাম সঙ্গীকে | নাম তার আদিত্য | বন্ধু হয়ে গেল আমার |কত কথা হল ! সে বললো তার বিরহের
কথা |  প্রিয়া তার চলে গেছে | বহু সংগ্রাম অনাহার , বহু অনাদরে বেদনার বলি হয়ে | আমিতো চেয়েছিলাম আদিত্যের হৃদয়ে স্থাপত্য গড়তে | কিন্তু পারিনি | বলেছিলাম একবার দীপ জ্বালাতে আমার ঘরে | কিন্তু জ্বালেনি ! অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আলোর পৃথিবীতে যাত্রা করলাম | চোখ ধাঁধিয়ে গেল ! চারিদিক ঘন সাদা রং ! হারিয়ে যাচ্ছি আমি | মনে হলো এ যে অন্ধকারের চেয়েও গাঢ় ! কিছুই দেখা যায় না ! যেতে যেতে আলোর দেয়ালে ধাক্কা খেলাম ! কে আমায়  টেনে নিল ! পরিচয়  হলো | নাম তার ঐশী ! সে খুঁজে চলে তার প্রিয়কে | কিন্তু ঐশীর সাথে ওরা কারা ? প্রাণেশ ও শিখা | ওরাই ঐশীর বল ভরসা ! 
                        ঐশীকে ডেকে বললাম -- তার প্রিয় চলে গেছে রাত্রির সাথে ! ওরা নতুন কোরে ঘর বাঁধবে | শঙ্খ  আর রাত্রি ঘর বেঁধেছে কালাপাহাড়ে ! 
তাদের নতুন বসতি ! ওরা ভালো আছে | খুব আনন্দে আছে | ঐশীর চোখ দুটো জলে ভরে গেল ! বাঁধ মানতে চাইছেনা | বললো --" জান মন আমরা অরণ্যের মাঝে শপথ করেছিলাম , কখনো কেউ কারুর হাত ছাড়ব না যতদিন বেঁচে থাকব | একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কেউ আমাদের আলাদা কোরতে পারবে না | আগুন ছিল সাক্ষী , অরণ্যের বৃক্ষরা ছিল সাক্ষী , নীলাকাশ তার রং বিছিয়ে দিয়েছিল , তারকারা মুগ্ধ নয়নে আলো জ্বেলে দিয়েছিল |  চাঁদ তার ভালবাসা ঢেলেছিল আমাদের মিলন শয্যায় |কিন্তু  বাতাস উতলা হয়েছিল ; কানে কানে বলেছিল দ্বিধা হও | " বাতাসের অঙ্গ জুড়ে এক অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল | তারপরেও আমরা একসঙ্গে এতগুলো বছর কাটিয়েছি |  শিখা আর প্রাণেশ কে পেয়েছি | সেদিন আদিত্যর ঘরে রাত্রির সাথে পরিচয় হয়েছিল | কিছু বুঝতে পারিনি ! এমন ও ঘটতে পারে ?"
হঠাৎ আদিত্যর কথা মনে পড়ায় ঐশী 
শিখা আর প্রাণেশকে নিয়ে আদিত্যের বাড়ি গেল | আদিত্য ঘরে ছোট্ট মেয়ে দীপ্তিকে নিয়ে বসে আছে | চারিদিকে ঘিরে আছে বেদনারা | ঐশী দীপ্তিকে নিজের কোলে তুলে নেয় | আদিত্য পুরুষ ; তাই নীরবতার আরশীতে তার কান্নাকে বন্দী করে | 
                    ছোট্ট মেয়ে দ্বীপ্তি ঐশীকে জড়িয়ে ধরে ছোট ছোট হাতদুটো দিয়ে |ঐশী তাকে কোলে তুলে নেয় ! কাঁদতে থাকে | আদিত্য মেঘের আড়ালে হারিয়ে যেতে থাকে | মন বললো "এমন কোরে জীবনকে অন্ধকারে নির্বাসিত করা কোনো প্রকল্প হতে পারে না | আদিত্য , তোমার স্থাপত্যে তুমি বিকীর্ণ হও ! মেঘকে বিদীর্ণ কোরে তোমায় প্রকট হতে হবে |রাত্রি কোনোদিন তোমার ছিল না ! সে যার তার কাছেই গেছে | " মন এবার ঐশী র অস্তিত্বে আদিত্যের উপলব্ধিকে একাত্ম কোরে 
শিখা দ্বীপ্তি ও প্রাণেশ কে স্থাপত্য দিল | তারা একসাথে জ্বলুক জীবনের সন্ধানে | বেদনারা আজো কথা বলে ! বলবে ! চিরদিন বলবে | এ যে আদিত্যের বেদনা | 
 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন