বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

গল্পঃ অনঘ লগন ।। মোহাম্মদ ইকবাল

অনঘ লগন 


ঘুম ভাঙ্গার পর চলচ্চিত্রের দৃশ্যপটের মত মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে গত রাতের ঘটনাবলী মেঝেতে পড়ে থাকা মেয়েলী অন্তর্বাস দেখেই সম্বিৎ ফিরলো
তড়িঘড়ি পাশের ফ্লাটে তোমার দরজায় গিয়ে দেখি দরজায় তালা!
ফোন,ফেইস বুক, কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না টেবিলে রেখে যাওয়া তোমার চিরকুট ততক্ষণে পেয়ে যাই।
তাতে লিখেছ;
তোমাকে অবজ্ঞা কিংবা দুরে ঠেলে দেয়া কখনই অবলেহা ছিল না। ছিল বিশুদ্ধ গভীর প্রেম!
যখন জেনেছি শরীরে বাসা বেঁধেছে সংক্রামক মরণ ব্যাধি তখন থেকে তোমাকে সব সময় সুকৌশলে দুর রাখার চেষ্টা করেছি!
কিন্তু দেখো নিয়তির কাছে আমরা কেমন অসহায়!
নিয়তি যা চেয়ে ছিল আমার সহস্র চেষ্টায় তা রোধ সম্ভব হল কি!?

মনে পড়লো গত রাতের ঘটনা;
মন থেকে তোমাকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলতে নামী  কড়া ব্যান্ডির তীব্র নেশায় ডুবে আছি নিঃসঙ্গ! 
আমাকে অবজ্ঞা, দুরে ঠেলে দেয়ার প্রবনতায় দ্বিধান্বিত, বিভ্রান্ত, অপমানিত আমি!

নৈশ্যপ্রমোদ শেষে বাড়ী ফিরছো!
লিফ্ট থেকে বের হয়ে এলোমেলো পায়ে কোনো ভাবেই ফ্লাটের ফটকে পৌছাতে পারছোনা!
নেশা পুরোপুরিভাবে তোমাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে! সহায়তার হাত বাড়ালাম, কিন্তু চাবির সন্ধান মিলছে না।
বাহিরে ঘন তুষারপাত, 
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কয়েক ডিগ্রী নিচে!
অনুষ্ণতা রীতিমত হাত পায়ে হুল ফুটাতে শুরু করে দিয়েছে, গত্যন্তর না দেখে ঘরে তোলে প্রথমেই ভারি কম্বলে জড়াই,কালবিলম্ব না করে ফায়ার প্লেসের আগুনটা দেই উস্কে,মাথায় জড়িয়ে থাকা বরফ কুঁচি সরিয়ে দিয়ে আলতো করে কপালে অধরের ছোঁয়া দিতেই দুচোখ বেয়ে নেমে আসে অবেগী ধারা!
নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধে নিলে আমাকে!
এরই মধ্যে কখন পূর্ণ যৌবনা নারী হয়ে উঠলে!
নেশায় মাঝে নিখাদ ভালোবাসার প্রবল টান প্রণয়কে আরো ছন্দায়িত করে তোলে!!
প্রমিক আমি অবলিলায় হয়ে উঠি প্রেমিক পুরুষ! 
প্রাণের সাথে মিশে প্রাণ,শরীরের সাথে শরীর!

তুমি আরো লিখেছো;
মৃত্যুকে ভয় নেই তবে, চোখের সামনে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে তোমাকে দেখা সম্ভব নয় তাই দুরে সরে গেলাম,অনেক দুরে,চিরকুটে দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো!

আজকাল দিন কাটেছে বিষণ্নতায়,সংক্রামক ব্যাধি পুনর্বাসন কেন্দ্রে! আমার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষটি বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা!
অসুস্থতার কারণ জানার পর একে একে সবাই ছিন্ন করেছেন প্রায় সব রকমের যোগাযোগ, বিন্দুমাত্র দুঃক্ষবোধ নেই তাতে।কেন্দ্রের সামনের ঝীলের জলে পানকৌড়িদের জলকেলির দৃশ্য পুনশ্চ কবি হতে উদ্বুদ্ধ করে,নৈসর্গিক নান্দনিকতা এখনো স্পন্দিত হয় হৃদয়!

সময় যেন এখন আর কাটতেই নারাজ! 
একাকিত্বের নির্দয় চাবুক বাতাসে শিস কেটে যায় সাপের ছোবলের মত,অপেক্ষার অসহায় পিঠ রক্তাক্ত হয় সময়ের আঁচড়ে!

তুমি বেঁচে আছো? 
না কি নেই? 
জানিনা!
মৃত্যুর প্রহর গুনছি প্রতিনিয়ত!
তবুও প্রষন্নতা এবং আত্মতৃপ্তিতে মন!
এই ভেবে;
প্রেমহীন অনন্তকাল বেঁচে থাকার চেয়ে শ্রেয়
আমাদের এক পলকের সেই নৈকষ্য প্রণয়ী অনঘ লগন!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন