বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

প্রবন্ধঃ নববর্ষ ও অসাম্প্রদায়িকতা ।। চঞ্চল রায়

নববর্ষ ও অসাম্প্রদায়িকতা

ঋতুর পরিক্রমায় চৈত্র অবসানে বিদায়নেয় পুরাতন বছর । বিবণ, বিশীণ, জীণ অতীতকে পশ্চাতে ফেলে নতুন বছরের নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসে পহেলা বৈশাখ । আসে নববষের সমুজ্জল শুভলক্ষণ । বাঙালির আবহমান জীবন ধারায় নববষ এক বিশেষ তাৎপযের দিন । জীণ ক্লান্ত পুরাতনকে বিসজন দিয়ে নববষ জীবনকে এক নতুন অধ্যায়ে উপনিত করে । উৎসব আনন্দে মেতে উঠে সারা দেশ । অন্যদিকে বাংলা নববষ উদযাপন এখন আর নিছক কোন বষবরণ অনুষ্ঠান নয় , কালে কালে এটা সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতি বছর অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিয়তাবাদী চেতনায় উৎবদ্ধ হওয়ার , নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার উৎসবে পরিনত হয়েছে । নববষ আর নিছক সাংস্কতিক উৎসব নয় , প্রতিবাদ – প্রতিরোধের উৎসব ।  
            পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন । এই দিনে নতুন বছরের শুরু । বাঙালি সমাজে এই দিনটি নববষ হিসেবে পালিত হয় । পুরাতন বছরের ক্লান্তি ,জড়তা ,ব্যাথতাকে পেছনে ফেলে এই দিনে বাঙ্গলি জনগোষ্ঠি এক নতুন সম্ভাবনার স্বপ্নে উদ্বেলিত হয় । পহেলা বৈশাখের প্রথম আলোকে সম্পাতে বেজে ওঠে নতুনের জয়গান । প্রকৃতির পালবলের পটভূমিতে এক নতুন চেতনার আবেগে সকলের কন্ঠে উচ্চরিত হয়ঃ
                      ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো 
                       তাপসও নিঃশ্বাসও বায়ে
                      মুমূষরে দাও উড়ায়ে  
                      বৎসরের আবজনা দূর হয়ে
                      যাক  যাক যাক ।
              পুরাতনকে , ব্যাথ অতীত আর দুঃখ গ্লানি কে ধুয়ে মুছে মানুষ চিরকাল নতুনের স্বপ্নে রচনা করে চলে । মানুষের এই চিরন্তন প্রত্যাশাকে জাগ্রত করে তোলে নববষ ।
              পৃথিবীর প্রায় সব জাতিই নানাভাবে নববষ উৎযাপন করে থাকে । প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী মিশরীয় ,ফিনিশীয়, ইরানীয়রা পালন করতো বলে জানা যায় । প্রাচীন আরবীয়রা ও কাজের মেলায় এবং প্রাচীন ভারতীয়রা ‘ দোল পূণিমার ‍দিনে নববষ উদযাপন করতো । খ্রিস্টান জগতে পহেলা জানুয়ারী নববষ পালিত হয় । মধ্যপ্র‌াচ্যের মুসলিম জগতে নববষ আসে মহরমের আশুরা থেকে ।
              ইরানীয়দের নববষ হচ্ছে ‘নওরোজ’ । ইহাদের নববষ হচ্ছে ‘রাশহাসান ‘। বস্তুত বাঙ্গালি , ইংরেজ, ফরাসি , চীনা , জাপানি প্রত্যেকেই নিজ নিজ নববষ উৎসব পালন করে থাকে । যে যেভাবেই এই উৎসব পালন করুক না কেন থাকে এই নববষের মূল চেতনা হচ্ছে পুরাতন বছরের গ্লানি ও ব্যাথতাকে ভুলে জীবনকে আবার নতুন করে সাজানো । পৃথিবীর প্রতিটি জাতির সংস্কতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নববষের উৎসব ও আনন্দ এমনিভাবে সংযুক্ত ।
                ষোড়শ শতকে মোগল সম্রটি আকবরের আমল থেকে বাংলা নববষের প্রবতন হয় । সমসায়িক কালে বঙ্গদেশ ছিল মোগল সম্রাটের করদ রাজ্য অথাৎ খাজনা দাতা রাজ্য । খাজনা অদায়ের সুবিধার জন্য এই শুষ্ক মৌসুমকে বেছে নেয়া হয় । বাংলা সনের মূল স্রষ্টা পতেহউল্লাহ সিরাজী । মোগল সম্রাট আকবর যেদিন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলা সন ও নববষের প্রবতন করা হয়েছিল । সেই থেকে চাষাবাদ ,খাজনা পরিশোধ ,হিসাব-নিকাশ ,হালখাতা ,তারিখ নিধারণ প্রভৃতি বাংলা বষপঞ্জি অনুসারে পালিত হয়ে আসছে ।    
                 নববষ কেবল প্রত্যাহিকতার জীন জীবন থেকে মুক্তি আর নতুন সম্ভাবনার বাতা নিয়েই আসে না । বাঙ্গালির জীবনে নববষ আসে নানা অনুষ্ঠান আর উৎসবের ডালা সাজিয়ে । পহেলা বৈশাখ বাংলার প্রতিটি গৃহকোন হয়ে উঠে পরিস্কার –পরিচ্ছন্ন । নতুন পোশাকে , নতুন শাড়ি-গহনায় সাজে অনেকেই । হালখাতা , পুন্যাহ, বৈশাখী মেলায় মেতে ওঠে বাংলার গ্রাম –গঞ্জের জনপদ ।
              ‘ হালখাতা নববষের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান । এ দেশের বনিক –ব্যবসায়ী সমাজে সু-প্রাচীন কাল থেকেই হালখাতা প্রচলিত । এই দিনে দোকানী –ব্যাবসায়ী তার দোকান পাট ব্যবসা কেন্দ্র ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে পুরাতন বছরের লেনদেন , লাভ-ক্ষতির , হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নতুন বছরের হিসাব রাখার জন্য খোলেন হালখাতা । ব্যবসা কেনা-কাটার সঙ্গে কিংবা নানা কাজকমে জড়িত যারা তাদেরকে হালখাতার দিনে দই, চিড়া , মিষ্টান্ন ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ।ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পারিক সৌহাদে হালখাতার দিনটি হয়ে ওঠে আন্তরিকতাপূণ । এই দিনে বকেয়া পরিশোধের কোন তাগদা থাকে না । হালখাতার আপ্যায়ন সৌজন্য মূলক হলেও এই দিনে দোকানি কিংবা ব্যবসায়ীর অনেক বকেয়া পাওনা আদায় হয় । হালখাতার দিনে কেউ বাকির ঘরে নাম লেখাতে চায় না । নববষের দিনে হালখাতার মধ্যে দিয়ে ব্যবসায়ী মহলে আবার নতুন উদ্যমে বেচা-বিক্রি শুরু হয় ।
                 বাংলা নববষের সঙ্গে সংযুক্ত আরো একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান ‘ পূণ্যাহ ’ । নববষের দিনে জমিদার-তালুকদারদের কাছারিতে ‘ পূণ্যাহ ‘ অনুষ্ঠিত হতো । ‘ পূণ্যাহ ’ শব্দের মৌলিক অথ পূণ্য কাযাদি অনুষ্ঠানের পক্ষে জ্যোতিশ শাস্ত্রানুমোদিত প্রশস্ত দিন হলেও বাংলায় এর বিশেষ অথ দাড়িয়ে গিয়েছিল জমিদার কতৃক প্রজা-সাধারণের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানসূচক দিন । এই দিনে প্রজারা নানা উপটোকন সহ খাজনা পরিশোধ করতে জমিদার মহলে উপস্থিত হতো । জমিদার প্রজা-সাধারণকে পান-সুপারি এবং মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতেন । পূন্যাহ উপলক্ষে কেবল জমিদারের খাজনাই আদায় হতো না । এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জমিদার-প্রজার মধ্যে সম্পকের উন্নয়ন ঘটতো ।খাজনা আদায়ের পাশা-পাশি এ সময় জমিদার প্রজার সুখ-দুঃখের খোঁজ-খবর নিতেন । জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে । তবে পাবত্য অঞ্চলে উপজাতীয় রাজাদের মধ্যে এখনও ‘ পূণ্যাহ ‘ অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে ।
                  বাংলা নববষের একটি অন্যতম আকষণীয় অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলা । পহেলা বৈশাখ বাংলর গ্রাম –গঞ্জে বটের মূলে, নদীর কূলে বৈশাখী মেলা বসে । উৎসব মুখর বৈশাখী মূলত একঠি সবজনীন লোকজ মেলা । প্রাণের আবেগ আর উছলে পড়া আনন্দে বৈশাখী মেলা প্রঙ্গণে গ্রাম-বাংলার মানুষ এক অকৃত্রিম উৎসবের আনন্দ খুঁজে পায় ।
                নাগরদোলা ,সাকাস, তাল-পাতার ভেপু, মাটির খেলনা, হাড়ি-পাতিল, কাচের চুড়ি , কারুপন্য, মন্ডা-মিঠাই, বাউল গান, লোকগীতি প্রভৃতির সমারোহ বৈশাখ মেলার এক চিরায়ত ঐতিহ্য । নানা রকম জিনিস পত্রের সমারোহ, নানা বয়সী মানুষের সমাবেশে নববষের আনন্দময় রুপটি প্রত্যক্ষ করা যায় বৈশাখী মেলাতে । আধুনিক সভ্যতা ও ক্ষয়িষ্ঞু অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবলে বৈশাখী মেলা বাঙ্গালির সংস্কৃতিকে ঐতিহ্যের এক চিরায়ত আনন্দ-উৎসব ।
                  নগরজীবনেও বাংলা নববষ জাঁকজমকপূণ আয়োজনে ও উৎসাহে উদযাপিত হয় । এ যেন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন । এ দেশের বড় বড় মহরগুলো নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যদিয়ে নববষকে বরণ করে নেয় । উদ্যানে , লেকের ধারে , বৃহৎ বৃক্ষমূলে প্রত্যেষে নগরবাসিরা সমবেত হয় নববষকে স্বাগত জানাতে । ছেলেরা পরিধান করে পাজমা –পাঞ্জাবি। মেয়েরা করে লালপেড়ে সাদা শাড়ি কপালে টিপ , হাতে বাহাড়ি রঙের চুড়ি, খোপায় ফুল , গলায় ফুলের মালা । সবকিছু মিলিয়ে বাঙালি জীবনের এক অনিন্দ্য পটভূমি রচনা করে তারা । নানাবিধ রলাক-উপকরণ নববষের আয়োজনকে বণাঢ্য করে তোলে । নৃত্য-গীতি , রঙে-সঙে, পান্তাভাতের আয়োজনে নগরজীবনে এক মোহনীয় আনন্দে বাংলা নববষ উৎযাপিত হয় ।
                 পহেলা বৈশাখের শুভক্ষণে নতুন বছরকে বরণের আয়োজনে রাজধানী ঢাকায় এক বণাঢ্য আনন্দ মেলায় পরিনত হয় । পহেলা বৈশাখের প্রথম আলোক প্রভায় রমনা উদ্যানে ও এর আশেপাশে সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ । নববষকে স্বাগত জানাতে রমনা বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের কন্ঠ থেকে ঝরে পড়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাশ্বত আগমনী গান – ‘ এসো হে বৈশাখ এসো এসো । ’ রমণার বটমূলে ছায়ানটের বষবরণ অনুষ্ঠান এক অনবদ্য ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে ।
          ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুল তলার প্রভাঅনুষ্ঠানের স্বাগত জানানো হয় বাংলা নববষকে। চারুকলার ছাত্র-ছাত্রীদের বণাঢ্য র‌্যালিতে নাচে-গানে উপস্থাপন করা হয় বাংলার চিরায়ত রুপকে । চারুশিল্পীদের বণাঢ্য শোভাযাত্রা মুগ্ধ করে অবাল বৃদ্ধ-বণিতা সকলকে । বাউল গান, কবির লড়াই ,কবিতা পাঠ ,আলোচনা সভা ,পুতুল নাচ , বায়স্কোপ , লোক সামগ্রী পসরা প্রভৃতি রাজধানী ঢাকাতে বষবরণের এক অপরিহায অঙ্গ । মাটির সানকিতে ইলিশ ভাজা আর লঙ্কা-পেয়াঁজ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির এক উপভোগ্য নাগরিক আয়োজন। এটুকু ছাড়া বসবরণের বণাঢ আয়োজন নিষ্প্রভ ।
বাংলাদেশের বৃহৎ বাঙালি সমাজের পাশাপাশি রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন উপজাতীয় নৃগোষ্ঠী । এসব নৃগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। এরাও তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে বষবরণ করে থাকে । বাংলা নববষ উপলক্ষে পাবত্য উপজাতীয় নৃগোষ্ঠী আনন্দ মুখোর পরিবেশে তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’ পালন করে থাকে । এ উৎসবকে ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠী ‘বৈসুক ‘ মারমা নৃগোষ্ঠি ‘ সবাই  এবং চাকমা নৃগোষ্ঠী ‘বিজু ‘ নামে আখ্যায়িত করে থাকে । তবে সমগ্র পাবত্য এলাকায় ( রাঙ্গামাটি , বান্দরবান , খাগড়াছড়ি ) এই বষবরণ উৎসব ‘ বৈসাবি ‘ নামে পরিচিত।
           বাংলা নববষ উপলক্ষে জাতীয় পযায়ে কমসূচি গ্রহন করা হয় । এই দিনে বাংলা নববষকে বরণ করার জন্য ‘ বাংলা একাডেমি ‘, ‘নজরুল একাডেমি ‘,‘ নজরুল ইনস্টিটিউট’, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ‘, জাতীয় জাদুঘর ‘, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘,প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কমসূচি গ্রহণ করে থাকে । এদিনে রেডিও, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানপ্রচার করা হয় । বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলো ক্রোরপত্র প্রকাশ করে থাকে ।
           নববষ উৎসব অনুষ্ঠানে একটি সাবজনীন  অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান ।
এ বষবরণকে উপলক্ষ করে বাঙালি জীবনে এক আনন্দময় সামাজিক যোগাযোগ ঘটে । নববষ আমাদের সামনে সম্ভাবনার যে নতুন আহ্বান বয়ে আনে তাকে জীবনের আনন্দ ও কল্যানে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে । নববষের উৎফুল্ল মিলনোৎসবের মধ্য দিয়ে আমাদের সামষ্টিক চেতনা ও মানবিক চেতনা যেন আরো উজ্জীবিত হয় । আমরা যেন ধম,বণ, গোত্র, চেতনার উদ্ধে ওঠে পারস্পরিক প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিনিমাণ করতে পারি সুন্দর ও সমৃদ্ধ আগামী ।
     বাঙালি জাতীয় জীবনে যতগুলো উৎসব বা দিবস আছে , বাংলা নববষ হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রধানতম উৎসব । ধম-বণ নিবিশেষে বাঙালি জাতি এ দিবসটি পালন করে আসছে হাজারো বছর ধরে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে । তবে বাংলা নববষ এখন যেভাবে যে রুপে পালিত হচ্ছে তা কিন্তু বেশি দিনের নয় । বাংলা নববষ বা পহেলা বৈশাখ পালনের বতমান যে রুপে তা মূলত শুরু হয়েছে ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রতিবাদ স্বরুপ । এক কথায় বলা যায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও বাহক বাংলা নববষ উৎসব এখন বাঙ্গালির প্রানের উৎসবে পরিনত হয়েছে । এমনকি প্রবাস থেকেও অনেকে ছুটে যান ছায়ানটের বষবরণ অনুষ্ঠানসহ অন্য অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিতে । তবে অশুভ শক্তি বারবার নানাভাবে নববষ উৎসবকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে ,কখনো বা রাষ্টীয় পৃষ্ঠ পোষকতায় কখনো ধমীয় লেবাসের আড়ালে আবার কখনো বা হত্যা খুনের মাধ্যমে । যা এখনো  অব্যাহত রয়েছে । হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে অতিসম্প্রতি অভিজিত রায় এবং ওয়াশিকুর রহমানসহ মুক্তমনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ব্লগারদের হত্যা করাও এর অংশ্। উদ্দেশ্য একটাই , মুক্তমনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার লোকজনকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিনত করা । বাঙালি জাতিকে মেধাশূণ্যকরা , যার শুরু ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজবি হত্যার মাধমে । তবে আশার কথা হলো সমাজ প্রগতির ঢাকা পেছনের দিকে য়ায় না ।
             তাই শত চেষ্টা করেও এই অন্ধকারের অশুভ শক্তি তাদের লক্ষ্য হাসিল করতে পারবে না । এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত এবং জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দমন করতে হলে শুধু রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় । রাষ্ট্রীয় উদ্যেগের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি সন্মিলিত প্রতিরোধ ও প্রয়াসই কেবল পারে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে নববষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মানের পক্ষে সুগম করতে ।
            পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙ্গালি জীবনের এক অনবদ্য আনন্দের উৎস । পুরাতন গ্লানি ও ব্যথতাকে পশ্চাতে ফেলে নববষ বয়ে আনে নতুন স্বপ্ন নতুন সম্ভাবনা । কাল বৈশাখীর তাণ্ডব উড়িয়ে নিয়ে যায় জীবনের ব্যথ সঞ্চয়ের জীণস্তপ । নববষ নতুন অনিশ্চিতের সুনিশ্চিত সম্ভাবনার আহ্বান । এই দিনে চির নতুনের প্রথম গানে বিকশিত হয়ে ওঠে সবার জীবন । নববষ জীবনের তুচ্ছতাকে পশ্চাতে ফেলে নতুন আনন্দে যুক্ত হওয়ার এক অবিনাশী প্রত্যয় । বাংলা নববষ উৎযাপন এখন আর নিছক কোন বষবরণ অনুষ্ঠান নয় ,কালে কালে এটা সাম্প্রদয়িকতা  ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতি বছর অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার , নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার উৎসবে পরনিত হয়েছে । নববষ ও অসাম্প্রদায়িকতা নিছক সাংস্কৃতিক উৎসব বা হালখাতার উৎসব নয় , প্রতিবাদ-প্রতিরোধের উৎসব । নববষ ও অসাম্প্রদায়িকতাই পারে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নিমানের পথকে সুগম করতে । তাই নববষ ও অসাম্প্রদায়িকতা হোক আমাদের নতুন বছরের দৃঢ় প্রত্যয় ।
                                      (সমাপ্ত)
      
      
                            

            

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন