বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

বই আলোচনাঃ কবি সুশান্ত হালদার ও তার কাব্যগ্রন্থ "নক্ষত্রের পতন"।। পার্থ মল্লিক

কবি সুশান্ত হালদার ও তার কাব্যগ্রন্থ "নক্ষত্রের পতন"

আলোচকঃ পার্থ মল্লিক


কবি সুশান্ত হালদার। জন্মগ্রহণ করেছেন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার সুতালড়ী গ্রামে, ১৯৭৪৪ সালের ১০ জানুয়ারি।  কবি সুশান্ত হালদার বর্তমান সময়ের নবীন কবিদের মধ্যে একটি অন্যতম নাম। আমার জানামতে তিনি প্রধানত একজন প্রতিবাদী কবি। তার প্রতিটি কবিতাতেই ফুটে ওটে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তাছাড়াও কবির কবিতায় দেশপ্রেম, বিরহ, অন্তঃর্জ্বালা প্রভৃতি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। কবি সুশান্ত হালদারের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সংখ্যা ৯ টি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- মুক্তির গান, লাল সবুজের ভালোবাসা, অনির্বাণ, ধূলিঝড়, নীলা, স্মৃতির দেয়াল, নির্বাক ভালোবাসা ও রক্তাক্ত জমিন। কবিতায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ইতোমধ্যে কয়েকটি পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

এবার তার কাব্যগ্রন্থ "নক্ষত্রের পতন" নিয়ে আলোচনা করা যাক----
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ উপলক্ষে অন্যধারা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে কাব্যগ্রন্থটি। এই গ্রন্থটি মূলত প্রতিবাদ, প্রেমবোধ ও বিরহের বন্ধনে গড়া একটি স্বার্থক কাব্যগ্রন্থ। "নক্ষত্রের পতন" শিরোনামের কবিতাটি পাঠ করলেই বোঝা যাবে, কবি কতো সুন্দরভাবে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের ভালোবেসে অবেলায় পতন, তার আশা, দেশের প্রতি তার প্রেম ও ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলেছেন। নিচে পাঠকদের জন্য "নক্ষত্রের পতন" কবিতাটি উপস্থাপন করা হলো-


অন্ধকার আকাশে কোনো নক্ষত্রের
যদি হয় পতন কোনোকালে
জানিও প্রিয়ে, জীবন সায়াহ্নে
হয়তো কিছু অব্যক্ত কথা চেয়েছিলো বলতে তোমাকে!
হয়তো ভাববে সবাই-এ তেমন কিছু নয়
এ রকম ঘটে প্রতিদিন প্রতিরাতে!
কিন্তু তুমিতো জানো
 এ নক্ষত্র আরো কিছুকাল চেয়েছিলো থাকতে ঐ নীলাকাশে
যেখানে তারাদের উজ্জ্বল বিভায়
চেয়েছিলো নিজেকে উজ্জ্বল করে রাঙাতে!

যদি হয় পতন নক্ষত্রের পতন এ বাংলার মাটিতে
নিজেই হবে ধন্য এ নদী নারী দূর্বা লতা ঘাস ভালোবেসে
যদি হয় পতন এ নক্ষত্রের কোনোকালে
জানিও প্রিয়ে, জীবন মরণ সন্ধিক্ষণে
দিয়েছিলো কিছু আলো বাংলার আকাশ ভালোবেসে
যদি দেখো সন্ধ্যাকাশে তারাটিও নেই নৈঋত কোণে
জানিও প্রিয়ে, ধূপের গন্ধে সেও না হয় এসেছিলো
তোমার পরশে জ্বালবে বলে।



.
কবিতাটি পাঠের পর খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়, কবি তার কবিতায় নক্ষত্রকে উজ্জ্বল তারুণ্যের সাথে তুলনা করেছেন। আমরা জানি তরুণেরা অনেক আশাবাদী হয়। জীবনে অনেক বড়ো কিছু করতে চায়। কখনো কখনো তারা প্রকৃতির প্রেমে পড়ে। বয়ে যাওয়া নদী, নারীর রূপ, চিরসবুজ ঘাস এসব তাদের মুগ্ধ করে। তারা মাতৃভূমিকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসে। তরুণরা দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলে। কিন্তু কখনো কখনো জীবন থমকে যায়। দেশের জন্য অনেক সময় তরুণরা নিজের বলিদান দেয়। আমাদের সমাজ অন্যায় আর অবিচারে ভরে আছে। আর তরুণরাই তার প্রতিবাদ করে। কিন্তু কখনো কখনো ক্ষমতাসীনদের শক্তির মুখে তার জীবন দিতে হয়। তবু তারা পিছ পা হয়না কখনো। কারণ, তারা কখনো হারতে জানে না। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে এক অমর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
এই কবিতায় কবি তরুণের প্রেম, বর্তমান সমাজে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার বলিদান, কিছু আশা খুব সুন্দর ভাবে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন। তবু তরুণরাই বিজয়ী, উজ্জ্বল নক্ষত্র।


হে মানবী! করেছো দুরাশা
দিয়েছো অঢেল প্রেম ভালোবাসা
করেছো নিষ্কণ্টক দান
চাওনি তো কভু প্রতিদান
তবে কেনো আজ দীপাবলি জ্বেলে
অশ্রুজলে আঁখি ভেজাও? (সংক্ষেপিত)

এই কবিতায় কবি এক সবুজ প্রেমের গল্প তুলে ধরেছেন। যে কোনো কিছুর চাওয়া পাওয়া ছাড়াই শুধু ভালোবেসে গেছে, কোনোদিন কোনো প্রতিদান সে চায়নি। তবু শেষ পর্যন্ত সেই মানবী অশ্রুজল ফেলে গেছে।


যদি যাই চলে
এই বাংলা ছেড়ে কোনোকালে
জানিবে আমিও ছিলাম
এই আকাশ বাতাস মাটি ভালোবেসে। (সংক্ষেপিত)

আহা, কতো মধুর দেশপ্রেম প্রিয় কবির। তিনি একদিন ঠিকই চলে যাবেন। কিন্তু চলে যাওয়ার পরও তিনি থেকে যেতে চান এই বাঙলার আকাশে, বাতাসে, মাটিতে। কতোটা দেশপ্রেম থাকলে এভাবে লেখা যায়, তা আপনারাই ভালো করে বিচার করবেন। যার হৃদয়ে দেশের জন্য এতো ভালোবাসা, তিনি তো বাঙলাতেই মিশে থাকবেন।

আমরা কবি সুশান্ত হালদারের নক্ষত্রের পতন কবিতাটি এবং বাকি দুটি কবিতার কিছু অংশ পাঠ করেই বোঝতে পারি, কবির লেখা কতোটা শক্তিশালী, কতোটা সুতীক্ষ্ণ। নক্ষত্রের পতন কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই এভাবে সাজানো। সবগুলো কবিতাই কবিতা প্রেমিকদের সঠিক কবিতার স্বাদ দেবে আশা করি। পাঁচ ফর্মার এই বইটিতে মোট ৬৭ টি কবিতা রয়েছে। শিল্পি মোতালেব হোসেনের প্রচ্ছদে, ঝকঝকে কাগজ ও চমৎকার বাঁধাইয়ে বইটি সকলের মন কেড়ে নেবে। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। গ্রন্থটি এবারের বইমেলায় অন্যধারা পাবলিকেশন্সের ( স্টল নং-) স্টলে পাওয়া যাবে। পরিশেষে কবি সুশান্ত হালদারের জন্য অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। কবির কবিতা আরো শক্তিশালী ও দীর্ঘজীবী হোক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন