বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রুপা সাধুখা'র চারটি কবিতা














অনুভূতি


অনুভূতিদের আসতে দেরী হলো
অপ্রয়োজনীয় সম্পর্কের শব যাত্রায় ব্যস্ত ছিল বলে ।
শেষ ছাইটুকু দেখার ইচ্ছেতে
শ্বশান অবধি গিয়েছিল ,
তারপর নিঃসঙ্গ একাকী পথে
হাঁটতে হাঁটতে
আকাশকে ছোঁয়ার বাসনায়
দেরী হলো
বড়ো বেশী দেরী হলো ।
রাতের আঁধারে চাঁদ ডুবে গেলে
হাওয়াদের স্পর্শে
উষ্ণ অনুরাগে
অনুভূতিরা জেগে থাকে
ভালোবাসাকে ভালোবেসে ।



বুনন

মেঘ ছিলো, ছিলো কিছু রোদ্দুর
আকাশে আকাশে, কিছু সুখের সাথে
ছিলো কিছু এলোমেলো দুঃখ একাকার
মিলেমিশে।

পরিপাটি চোখের কাজলে
গোপন বিষাদ ঢেকে
ফুলশয্যায় ডুব দিলো
যে মায়াবতী মেয়ে,
সে এখন গোধুলী উঠোনে
রূপকথা কুড়োয় হাওয়ায়
হাওয়ায় একঢা্ল এলোচুল মেলে।

দীঘির শান্ত জলে রোদ মরে এলে
কুহকিনী পিছু ডাকে কাঁচপোকা টিপ,
ডুরে শাড়ীর জমিনে থৈ থৈ অন্ধকারে
ভাসে তার জলজ প্রেম। শাপলা বিকেলে
দুরন্ত যুবা এক ছায়াঘন মেঘ এঁকে
পানকৌড়ি হৃদয়ে বলেছিলো,
"পাশে থেকো।"

দূরে থাকা কি শুধুই দূর
দুঃখনীল ক্যানভাসে ?
ভুলে থাকা মানে ভুলে যাওয়া
নির্জন অবকাশে ?
নাকি নিরন্তর বুনে চলা
নীলাভ এক রেশমী প্রহর
অভিমানের বিনি সুতোয় ?


খুন !

এইতো একটু আগেই প্রত্যাখানের ছুরিতে
নিজ হাতে গলা চিরে খুন করে এলাম
আমার ভালোবাসা পূর্ণিমা চাঁদের তিথিকে।
দেবতার মুখোশের আড়ালে প্রতারক
দন্তবিকশিত হাসির ফোয়ারা তার
দিয়েছি চাপা ক্রোধের বজ্রনির্ঘোষে।

চেনা সময়ের মোলায়েম হাতে
পরিয়েছি অচেনার হ্যান্ডকাফ।
তস্করের হাতে দিয়েছি তুলে স্বেচ্ছায়
জীবনের ভল্টে সঞ্চিত সুখের ডিপোজিট।
ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই করে সজ্ঞানে
ভালো্বাসাকে দিয়েছি নির্বাসন দ্বীপান্তরে।

রক্তমাখা আমার আততায়ী দু'হাতের পানে চেয়ে
মৃদু হেসে স্মৃতিরা বলে, " বেশ তো, যাবজ্জীবন দণ্ডে
দন্ডিত আসামীর চোখের জলে সিঞ্চিত হোক তবে
আগামীর দীর্ঘশ্বাসের কচি পাতা বিটপির কান্ড-মূল।"


ইচ্ছেগুলো

ইচ্ছেগুলো সেই আগের মত
উত্তাল বসন্তে প্রস্ফুটিত হওয়ার জন্য
ঝকঝকে কুঁড়ি হতে চায় না
শরতের শাদা বিকেলে কিংবা জাফরানি সন্ধ্যায়
ঘুড়ি হয়ে আকাশে ওড়ার কোন তাড়নাই নেই
এলোমেলো বরষায় বিষ্টির ফোঁটা হয়ে
মাটির বুকে একাকার হতে বড্ড অনীহা
পূর্ণিমায় জ্বলজ্বলে স্ফটিকরাতে
চায় না হতে পাগলকরা তারকাপুঞ্জ
কিংবা নিস্তব্ধ অমাবস্যায় ক্ষুদ্র আগুনের জোনাকি
অথবা মোলায়েম ভোরে ভৈরবীর মোহময় তান
কি জানি, হয়ত কোন এক ঝড়ো দুপুরে
বোঁটা ছিঁড়ে গেছে না ফোঁটা কুঁড়ির
ঘুড়িটাও হয়ত গোৎ খেয়ে পড়ে গেছে
আকাশের বুকে খরা, অজানা গন্থব্যে মেঘ
তারা খসে গেছে এক নিকষ রাতে
এখানে ওখানে ঝোঁপ ঝাড়ের স্বল্পতা
সুর হারিয়ে গেছে বেসুরের মাঝে
ইচ্ছেগুলো সেই আগের ছটফটে রূপে নেই
কেমন নিস্প্রভ নির্লিপ্ত নিশ্চুপ ।


1 টি মন্তব্য: