বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

অণুগল্পঃ শত শুয়োরের মুখোশ ও ব্যবচ্ছেদ প্রকৃয়া ।। প্রিতম গোর্কী


শত শুয়োরের মুখোশ ও ব্যবচ্ছেদ প্রকৃয়া





লোকটা শুয়ে আছে।হালকা হিম হিম ঠাণ্ডায় চল্লিশ বছর বয়সী বৌটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে না ধরলে তার ঘুমই আসেনা। গায়ে পাতলা নক্সিকাঁথা জড়ানো দু'টি শরীরে উষ্ণতা জমেছে। 

সে রোজকার মতো।একই দিকে ফিরে শুয়ে থাকা;পায়ে-পা,বুকে বুক.... তারপর ঘন্টাখানেক বাদে বৌটা পাশ ফিরে শোয়। 

তখন পেছন থকে শরীর লেপ্টে হাত দু'টো পেঁচিয়ে ধরে দুটো কুচ। হাতের মধ্যে রসালো কিছু না থাকলে তার খুব ছটফটানি শুরু হয় দেহে-মনে। হৃদয়ে?
হৃদয়ে অপার শূণ্যতা জমে থাকে লোকটার।

তখন সে দূরের গাঙে বৈঠা বাওয়ার স্বপ্ন দ্যাখে।
সে এক স্বপ্ন বটে!
সেখানে পাল ওঠে নৌকোয়।হাওয়ারা দোলাতে থাকে মন পবনের নাও।জলের ছলাৎছল্.......
এরিন?এরিন?
ঘুমিয়ে কাদা হয়ে আছে বৌ এরিন।লোকটার ঘুম টুটে যায়। তার মনের ঘোড়াটা দড়ি ছিড়েছে এখন। হ্রেস্বা রবে ডাকছে!
!

কাঁথাটা সরিয়ে উঠে পড়ে সে।এখন রাত একটার কাঁটা পেরিয়ে পনেরো। 

আলমিরার ড্রয়ারটা টেনে একটা বোতল বের করে।আজ সন্ধ্যায় যখন বন্ধুদের সাথে বসে পান করছিল তখন বেঁচে গিয়েছিল একস্ট্রা একটা বোতলের অর্ধেকটার মতো। পেগ ছয়েক হবে। উফ্! বাব্বা,বাঁচা গেল!

গ্লাসটা আস্তে করে বের করে সে টেবিলে রাখে।এখন হালকা শীত তবুও আইচ না হলে জমেনা।দুটুকরো নেয় সে।পেগ ঢালে। ব্লিন্ড করা বেদানার জুস একটু মিশিয়ে নেয়।
আহ্! দারুণ দেখতে হয়েছে!

জম্পেস! 
সতেরো বছরের লিজার শরীরের রঙ যেন গ্লাসে মেশানো। ওহ্ লিজা! কী দুর্দান্ত মাইরি! 
বুক খুললেই রঙিন হরিণ ছানা দুটো লাফিয়ে ওঠে।
পাশে ঝর্ণা তরঙ্গায়িত জলধারা চুঁইয়ে গড়িয়ে পড়া হৈমন্তিক সন্ধার মতো সময়। 
আপগ্রেটেড, এভরিথিংস ইজ আপগ্রেটেড। লিজা সো---না-টা আমার। মাই সুইটহার্ট!মাই ওয়াণ্ডারফুল বেবি!
গ্লাসটা নড়ে ওঠে, কেঁপে ওঠে!

টুং করে দরজা খোলার শব্দ আসে।পাশের বেডরুম থেকে।ওখানে তার য়্যুনুভার্সিটি পড়া মেঝো মেয়েটা ঘুমায়। লোকটা সামলানোর চেষ্টা করেনা।মেয়েটা এদিকে এতো রাতে আসবেনা। শিওর।

রমিজ আলি অতোটা বোকা নয়।ছিলোওনা কোনও কালে। ইন্টারমিডিয়ট পাশ করে হাইয়ার এডুকেশন নেয়ার ক্ষমতা ছিলোনা তার।

বাবা দিনমজুর।হাভাতে সংসার ছিল রমিজের বাবার।তার উপর আটজন ছেলেমেয়ের সংসারে নিত্যদন না খাওয়া শরীর তাদের।
বাবা আর পারেনি খরচ চালাতে। ট্যুশনি করে খুব কষ্টে সে ইন্টারটা করে।
রমিজ একটি ক্লারিক্যাল জব জোগাড় করে নেয় একটি কর্পোরেট অফিসে। 
ক্লার্ক।

রমিজ আলি স্বপনে -শয়নে ধনি হতে থাকে। বিশাল বিত্তবান সে।টাকা আর টাকা।

কোটি কোটি টাকা। বিশাল বড় বাড়ি, গাড়ি,সম্মান-বৈভব-প্রতিপত্তি সব,সব, সবকিছু তার প্রয়োজন। সে ভাবে অাপিসের বড়বাবু যদি হতে পারতো! ইশ, কীভাবে টাকা বানাতে হয় দেখিয়ে ছাড়তো!
নগত লাখ টাকা যৌতুকে বিয়ে করে এরিন মেয়েটাকে বৌ করে ঘরে আনে সে ও আজ নয়।দুই যুগেরও বেশি হয়ে এলো।

এরিনের তখন কতইবা তের-চৌদ্দ হবে। শরীরে মেয়েটির তখন কাঁপুনি আসে,পরনের পাজামা রক্তে ভেসে যায়। মাকে বলেনা লজ্জায়। 
এমনি সময়ে চাকুরে ছেলে দেখে নগত যৌতুকে ঘরে জামাই করে আনে রমিজালিকে।

রমিজালি ওরফে করণিক রমিজ ওরফে সিবিএ লিডার ;একসময়ের কালো শুকনো পটলা বিয়াল্লিশ কিলো ওজনের লোকটার শরীরে এখন মেদ-ভূঁড়ির পাল্লা চলছে। ছিয়ানব্বুই কিলো ওজনে বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হাঁটেন তিনি।

পকেট থেকে দামি সিগারেট প্যাকেট হামেশায় বের হয়।কৃত্রিম হাসি ঠোঁটে ঝুলন্ত। 
তিনি সরকারী দলের বড় নেতা। চারজন ছেলে, দুজন মেয়ে আর এরিন।
ছেলেগুলো ছাত্রনেতা। সফেদ পাজামামা-পানজাবি আর মার্সিডিজ বেঞ্জ চড়ে শহর দাপিয়ে বেড়ায়!
মদ-নারী -ফাস্টফুড আর মিথ্যে কথার ফুলঝুরি!
জয়বাংলা।

নতুন। নতুন কিশোরী ছাড়া তার কী একদিনো চলে?অবশ্য অল্পবয়সী বিধবা এসবও তার তালিকা
সেদিন খুকু মেয়েটাকে নিয়ে ওরা একটা রিসোর্টে গেল।চারজন মিলে একাকার হলো রাতভর।

আহা,বাইরে তখন বরষার তোড়,ভেতরে উলঙ্গ কিশোরীর নবান্ন শরীরের ঢেউ।গ্লাসে-গ্লাসে মাদকতা।লাল লাল চোখ,মনোরম খিস্তিখেউড়!এটাই জীবন! জয় হোক।ছেলের বয়সী জামিল সিগারেটে জোরসে টান দিয়ে বলেন 'ক্যান য়্যু ফাক হার হার্ড আঙ্কল'?

রমিজ আংকল জবাব দেয়না চিৎকার করে ওঠে স্টপিট।আই ফাক অল মাই লেডিস উইথ মাই কানট্রি। জয় বাংলা।
তখন চারজনের ভারী শরীরের নিচে উদোম খোখে জল।নিজেকে পথের সারমেয় মনে হচ্ছে এখন। তারা চিৎকার করে গাইছে জাতীয় সংগীত। গাইছে জয়বাংলা।

ঘুমুতে হবে তার।দেখতে দেখতে ছয় ছটি পেগ শেষ হলে সে দাঁড়িয়ে যায় ওয়াশে।
ছছ্ছড় শব্দ হয়।
সে আর একবার উত্তপ্ত হয়ে ডাকে এড়ি-ন, এ-ড়ি-ন, মাই সুইটহার্ট।
উহ্, মাল খেয়ে এলে? হুম। 
আমাকে ভালোবাস? রিয়েলি? 

এরিনের চল্লিশোর্ধ শরীরের খাঁজে ভরে নিজেকে রমিজ রত হয় লিজা, জিনি,লিডিয়া,সুষমা -খুকুদের শরীরে। ঠোঁট থেকে শুষে নেয় অসংখ্য তরুনীর জল। মুঠোভরা কালো টাকা,গাড়ির চাবি,দামি এ্যানড্রয়েড ফোন। এরিন বহন করে ছিয়ানব্বুই কিলোর মিথ্যাবাদী, প্রতারকের শরীর.........

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন