বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

অণুগল্পঃ বাসভূমি ।। সিলভিয়া ঘোষ


বাসভূমি

রেডিওটা কানের কাছে চালিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকেন বছর আশির কণিকা। গান তার জীবন। কাজে কর্মে  নিপুণা করে তুলতে পারেন নি একমাত্র কন্যা কমলকলি কে। সে  বি.এ পাশ করেছে ঠিকই  কিন্তু কথা বার্তা বা রান্নাবান্নায় তার তেমন শ্রী নেই। তাই এক মেয়ে আর দুই ছেলে কে গান, বাজনা শেখাতে লাগলেন, তখন রেলে চাকুরিজীবীদের  কতই বা আর মাইনা ছিলো ! 
নিয়নের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে  ফ্ল্যাটের চারধারের রাস্তাঘাট। চোখের জল গড়িয়ে  বালিশের কোণা ভিজে গেছে  কখন... ঘরে-বাইরে আলো জ্বললেও  চালসেতে অন্ধ কণিকার কি বা দিন!  কি বা রাত! রেডিও তে তখন  গান চলে ' দূরে  কোথাও দূরে  দূরে... '
দু বছর হলো ষাট বছরের মেয়েটা চলে গেছে ঐ চাঁদের দেশে। যার দু বছরের সাংসারিক সফর শেষে,  ঠিকানা  হল আমৃত্যু বাপের বাড়ি। কাজ কর্ম না পারায় দেড় বছরের মেয়ে কমলিকা কে রেখে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিল বাবার ঠিকানায়... 
রাত বাড়তে থাকে...   নিঃশব্দ ফ্ল্যাটে  হাইওয়েতে ধেয়ে আসা বিরতি বিহীন যানজটের আওয়াজ যেন গিলে খেতে আসে বৃদ্ধা কে। আর একটু রাত  গভীর হলে ছোট ছেলে শ্রীলঙ্কার  ভারত মহাসাগরের  ওদের জাহাজ থেকে ফোন করবে। নতুন একটা মোবাইল মা কে ছমাস আগে দিয়ে গেছে সে। রিংটোনটাও খুব সুন্দর। হঠাৎ ই চেনা রিংটোন বেজে ওঠে 'আমার যে  সব দিতে হবে ...'
হাতিয়ে হাতিয়ে বালিশের তলা থেকে মোবাইলটা নিয়ে কানে দিতেই অচেনা কণ্ঠস্বর বলে ওঠে ঃ 'আমার মায়ের মা মানে আমার দিদা কোথায়  বড় দিদা? ' বাচ্চার গলার স্বর। কার খোঁজ করছে কে এ? তবে কি ত্রিশ বছর পর কমলিকার সন্তান কমলকলির খোঁজ করছে? প্রত্যাবর্তন ঘটবে কি তাদের বাড়িতে...!
শুক্লা পঞ্চমীর জ্যোৎস্না চাঁদোয়া হয়ে এসে ঢেকে দিয়েছ একাকী কণিকার দেহ। আজ সকল দুঃখ কষ্টগুলো, তাপ অনুতাপ সব কিছু থেকে নিজেকে হাল্কা লাগছে তার। কোথায়  যেন ভাসতে ভাসতে চলে যাচ্ছেন তিনি। শরীর মন সব হাল্কা হয়ে যাচ্ছে... আবহে বেজে চলেছে 'তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে... ' 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন