মশা
------
মূলঃ মাহমুদ দারবিশ ( ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি)
বাংলায়নঃ অরণ্য আপন
মশাটা, যার
আরবিভাষায় কোনো পুরুষ শব্দ আছে নাকি আমি জানি না
মশা একটা সেলেন্ডারের চেয়ে
একজন ট্রামের চেয়ে ভয়ানক
সে শুধু তোমার রক্ত খেয়েই সন্তুষ্ট হবে না
তোমাকে একটা ফলহীন যুদ্ধে নামাবে
তোমার কাছে অন্ধাকারে আসবে
যুদ্ধজাহাজের মতো তোমার কানের কাছে ঘ্যানরঘ্যানর করবে যা
তোমার রক্ত চুষে খাওয়া অব্দি তুমি শুনতে পাবে না
তুমি যখন বাতি জ্বালিয়ে দিবে
সে অদৃশ্য হয়ে যাবে
ঘরের কোণায় নিজেকে আড়াল করবে
দেয়ালের সাথে ভাব জমিয়ে মিশে যাবে
একটা নিরবতা, শান্তি আসবে
যেন সে চলে গেছে
তুমি পায়ের জুতা দিয়ে মারতে চাইবে
সে তোমাকে ধন্দে ফেলিয়ে দিবে
ছলনার ফাঁদ পাতাবে
তুমি চিৎকার দিয়ে শাপ শাপান্ত করবে
কিন্তু সে কানেই নিবে না
তুমি হয়তো নরম গলায় বন্ধুর মতো একটা বোঝাপড়া করে নিবে যে
তুমি ঘুমাও, আমিও ঘুমাই
তোমার মনে হবে যে তুমি তাকে বুঝাতে পেরেছ
তুমি বাতি নিভিয়ে দিলে
এবং তুমি ঘুমাতে নিলে
সে তোমার রক্তে খেয়ে আবার গুনগুন করে গান ভাজতে শুরু করবে
তোমার মেজাজ চড়ে যাবে
তোমাকে সে সহায়ক একটা যুদ্ধে আবার নামিয়ে ছাড়বে
তুমি ঘেমে গেছ
তুমি চড়ে গেছ
তুমি আবার বাতি জ্বালিয়ে দিলে
তুমি মশা আর ঘাম
দুটোরেই চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়লে
মশাটা তোমার খোলা বইয়ের ওপর বসে পড়ল
তুমি খুশি খুশি ভেবে নিলে যে এটা একটা ফাঁদ
তুমি বইয়ের মুখ বন্ধ করে দিলে
চেঁচালে, আমি মেরেই ফেলব
আমি শেষ করে ফেলব
তুমি যখন বইটা খুললে
দেখতে পেলে সেখানে কোনো মশা নেই
কোনো অক্ষর নেই
পুরো বই ফাঁকা
মশাটা, যার আরবি ভাষায় কোনো পুরুষ শব্দ আছে নাকি আমি জানি না
এটা কোনো রুপক নয়
এটা কোনো বিভ্রান্তি নয়
এটা কোনো শব্দের খেলাও নয়
এটা একটা কীট
যে তোমার রক্ত পছন্দ করে
বিশ মাইল দূরে থেকে রক্তের গন্ধ পায়
তুমি রেহাই পেতে পার একমাত্র যুদ্ধবিরতি দিয়ে
তোমার রক্তের গন্ধ পাল্টে দিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন