রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বটগাছ ।। দেবাশিষ রায়


বটগাছ                                                       


এই বাড়িতে বউ হয়ে যেদিন এসেছিল সুচেতনা,দেখেছিল ছাদের রেলিংয়ের একপাশে
একটা বেশ বডসড় বট গাছ কংক্রীট ভেদ করে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে.নিজের
মতের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়েতে তাকে মত দিতে হয়েছে. বাবার আচমকা
একটা ভালো মাপের স্ট্রোক আচমকাই তাদের পরিবারকে বেশ শক্ত একটা
প্রশ্নচিহ্নের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল. কন্যাদায়গ্রস্ত বলাটা ঠিক
হবে না. তবে সুচেতনা বুঝতে পেরেছিল বাবা চাইছেন যত তাড়াতাড়ি হোক ওর একটা
বিয়ে দিয়ে যেতে পারলে উনি সুখী হবেন. সুচেতনা পাত্রী হিসেবে যথেষ্ট
গুণবতী. তাই কন্যার পছন্দের নাকটিও মুখের ওপর বসানো নাকটির মতই তীক্ষ্ণ
ছিল. কিন্তু বাবার আচমকা স্ট্রোকটা সব পছন্দ অপছন্দকে নডবডে করে তুললো.
ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়েতে তাকে মত দিতে হোল. টাকমাথা কালো গোলগাল
দাঁত উঁচু স্বামীর সাথে সেদিন সে ওই ছাদের বট গাছটার এক অদ্ভুত সাদৃশ্য
খুঁজে পেয়েছিল. তার মনের প্রাসাদের দেওয়ালে অনাহুত অতিথির মত জোরজার করে
ঠাঁই করে নেওয়া স্বামীটিকে মনে হয়েছিল যেন ওই গাছটি.
বিয়ের পর থেকে একটা বিষয়ে তার খটকা লাগছিল. অফিস থেকে স্বামীর ফেরত আসবার
সময়টি যেন মনে হোত অস্বাভাবিক দেরী হচ্ছে. বললে সে বলে-জানো না তো আমাদের
অফিসে কেমন কাজের চাপ. তাই বলছো.



একদিন ওর এক সহকর্মীর কাছ থেকে একটা খবর পেলো. একটু সন্ধ্যে করে বাসে এসে
খান্নার সামনে নামলো. চুপ করে উদ্দিস্ট জায়গায় পৌঁছে দেখলো যা শুনেছে তা
নির্ভুল. সে ফুটপাতের এককোনায় মাদূর পেতে বসে সাত আটটি অল্পবয়সী
বস্তিবাসীর সন্তানদের তন্ময় হয়ে পড়াচ্ছে.
রাত্রিবেলায় খাওয়ার টেবিলে বসে সুচেতনা বললো- “আমার কাছে লুকোনোর কোন
দরকার ছিলো কি? আমি কি বাধা দিতাম?”
শুকনো হেসে সে উত্তর দিলো-“নতুন বউ তুমি. ভয় ছিল.শুনলে যদি বেঁকে
বসো.নতুন বউকে সময় না দিয়ে বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়ানো? আসলে অনেককেই
দেখেছি বিয়ের পরে এই কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে. তাই ভয় তো একটু ছিলোই.”
সেই রাতে সুচেতনা স্বপ্ন দেখলো ছাদের বটগাছটা বিশাল বড় হয়েছে. বহু মানুষ
তার ছায়ায় নিশ্চিন্ত আশ্রয় নিয়েছে.
সুচেতনার ছাদে এখন রুফটপ গার্ডেন. অনেক রকম গাছের ঝলমলানো হাসিতে মনের
আকাশ উজ্জ্বলতর.বট গাছটা আছে এখনও. তার শেকড় ছড়িয়েছে বাড়িটার দেওয়াল
জুড়ে. কংক্রীট ভেদ করে ভেতরে ঢুকে এসেছে অনেকটা.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন