সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

ওর ঝরবে না ।। রওশন রুবী










ওরা ঝরবে না 


চিরকাল জল মিশে যায় শ্রমিকের নিঃশব্দ স্বপ্নে; 
সেই স্বপ্নগুলো জলের ক্ষত নিয়ে ঘুরে দিবারাত্রির ঘূর্ণায়মান সময়ের মোহমায়া;
হয়ে উঠে না দেখা জলের ক্ষত; তৃষ্ণার্ত আমি 
জলের জন্য হাত বাড়াই; অজস্র হাহাকার বলে না!
এখানে জলের পরতে মানুষের পঙক্তিগুলো বড্ড স্বাধীন! যতনের স-ব অবহেলা আজ মানুষমূখী, 
তুমি ফিরে যাও জলের স্পর্শে পাবে আর্তনাদ!
আমার বাড়ানো হাত জল স্পর্শ না করে গুটিয়ে আনি।
আনতে আনতে দেখি দূরে সরে যায় চেনা দৃশ্যপট, 
ওরা শ্রমের ভেতর কেবল পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাঁধা ঝাঁক ঝাঁক সফেদ পাখি; যে পাখির চোখে দেখি  কৃষ্ণপক্ষের সমুদয় পথে পথে বিশ্বাস হারিয়েও প্রজ্জ্বলিত ইচ্ছের শিখা ভালোবাসা চায়; 
চায় নিঠুর নিয়মের বন্দীশালা ভেঙে আকাশের পর আকাশে উড়বে, উড়াবে স্বাধীন ঘুড়ি।

ওদের স্প্রিহা ঈর্ষার যোগ্য; বাঁচুক ওরা যোগ্য 
সম্মান, শ্রদ্ধায়। সমস্ত বেদনার ঝড় লুকিয়েও 
নির্মল হাসি হেসে উঠতে পারে ওদেরই জীর্নঠোঁট; 
ওদের বিবর্ণ স্বপ্নগুলো তাকিয়ে থাকে মাটির মায়ায়;
স্বদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, সম্মান আর সভ্যতা বিকাশের পটভূমিতে ওদের শ্রমের ঘাম জাফরানী গন্ধ ছড়ায়।

থমকে থাকা অভিমান ক্রোধ; কখনও কখনও প্রতিবাদে ভাঙতে চায় অন্যায়ের প্রাচীর; ভাঙতে ভাঙতে কেবল হারিয়ে ফেলে শোষিতের শাণিত প্রতারণায় নিজেদের চেতনার অস্তিত্ব। প্রতিবাদ 
ভেতরে ভেতরে ফুলে ফেঁপে প্রতিশোধে রৃপান্তরিত হয়; এবং কখনো কখনো ওরা বেরিয়ে পড়ে রাজপথে।

কেন সবাই ভুলে যায় ওরাও মানুষ; ওরাও স্বপ্নের কড়িকাঠে পেরেক ঠুকে ঠুকে শিখেছে মানুষের কাছে
উড়তে নেই তারা ডানা ভেঙে সুখ পায় আর দুঃখের বেহালা বাজিয়ে বৃত্তের বৈভবে সুগন্ধী মেখে বাঁচে। 

আমি ছুটতে চাই; ছুটতে ছুটতে পেরুতে চাই ব্যবধান, পারি না; স্পর্শ করতে চাই চোখ জল মুচে দিতে,
পারি না; বারংবার ছায়া হতে চাই, পারি না। 
আজন্ম অযোগ্য আমার সব অপারগতা ছোবল হানে,
নীল হতে হতে অনুভব করি ঝরবার ইচ্ছে নেই বকুলের, তবু ঝরে যায়। ওরা ঝরেও বিলিন হবে না, যুগান্তরের জিজ্ঞাসায় বেঁচে থাকবে সুবাস হয়ে  বকুলের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন