রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

মুক্তগদ্যঃ খোলা চিঠি ।। সীমন্তিনী সাহা












খোলা চিঠি
  

 রোদ্দুর, 
             
                আজকে যদি তোর জন্য কিছু একটা তৈরি করতে যেতাম তাহলে ঠিক আকার দিতে পারতাম না বোধহয়। স্বপ্ন আর তার ঠিক নীচে থাকা বিলাসী ভাবনাকে যদি মেঘ-বৃষ্টির বেহিসেবী খেলার সাথে খেলানো যায় তাহলে সত্যিই আর চিন্তা থাকে না। অনেকটা পথ পেড়োবার পর যখন পিছন ফিরবো তখন বারবার ঐ বর্ষার সীমাহীন শ্রীকেই ধরতে পারবো। আজ যেন সেই রং-মিলান্তি বর্ষাবেলা— যেখানে মনময়ূরী শুধু নাচে না প্রত্যেকটা ফেলে আসা বিভঙ্গ আরও একবার অভিনয় করে নিতে চায়। তোকে তো পাওয়া হয়নি কোনোদিন, আবার পেতে হয়েছে প্রতিদিন। যেমন করে সমস্ত সবুজ শুষে নিতে চায় মেঘের পৌরুষিক সম্মোহন কিন্তু পারে না, অথচ না চাইলেও ভিজতে হয় তার আবিলতায়। একদিন ভেসে যাওয়া দুপুরে যখন শহর- নদী মিলনাকাক্ষায় উদ্বেল সেদিন সহবাস তাড়িত রাস্তার সাথে মিশে যেতে যেতে বৃষ্টিকন্যার ঘোলাটে আস্পর্ধা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি, শরীরী ছন্দের চেয়ে অনেক বেশি জ্যান্ত ছিল চোখ। হঠাৎ কালো গেঞ্জি আর টাইট জিন্স এ রেস্টুরেন্টের পর্দা সরলো, হারিয়ে গেলে তুমি, ফিরে চললাম আমি। বৃষ্টি কিন্তু সেদিন সারাটা পথ আমাকে লোভ দেখিয়েছিলো, বলেছিলো-"ঐ কালো দরজা খুললেই একটা লাল পিংপং বল পাবি "। কিন্তু না!  সেদিন সাদা খামের কোনো ঠিকানা দিতে পারেনি বলে আবার হাঁটা শুরু করলাম। আবার একদিন সারা শহর কাকভেজা ভিজে চুপচুপে হয়ে নাচতে নাচতে বলতে এলো — "দেখনা আজ বোধহয় খাম আছে একটা "। সেদিন পরীক্ষার পড়া মুখস্ত করছিলাম, হেরে যাবার ভয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে বললাম —" এমন অনেক নির্জন ছাতা, টুপটাপ বৃষ্টিসঙ্গ, কুলকুল নদীসঙ্গ পেড়িয়েই তো সাদা খামের অপেক্ষা করছি, তাই বলে সে খাম শূণ্য হলেও বুঝি তা নিয়ে ভাবতে বসবো!!
এমন অনেক প্রকৃতিলিপ্সা বারবার সেধে গেছে আমায় তোর হয়ে। তবে ভয়ের দানাটা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি।তারপর একদিন হঠাৎ ই চেনা বন্ধুদের মাঝে, চেনা জলসিঁড়ির ভাজে হালকা হাওয়ায়, টাপুরটুপুর তরঙ্গস্রোতে সেই খামের হদিশ উড়ে এলো;যেখানে অনেক আঁকিবুঁকি... অনেক হিজিবিজি...। চেষ্টা... চেষ্টা...চেষ্টা...মন বললো আরো চেষ্টা... নাঃ, কিছুতেই পড়া গেলো না। তারপরই আকস্মিক বজ্রপাতের মতো এলো সুযোগ। অঝোর শ্রাবন, হাজার কলতান,বন্ধুহিল্লোল আর তারই মাঝে আমার নিত্যদিনের সহবাস সঙ্গী ঘর-বারান্দা -বিছানা লুফে নিলো তোকে, তোর টলোমলো ইচ্ছেকে। কাউকে বিশ্বাস না করলেও ওদের বিশ্বাস করতাম। জানতাম ওরা আমার কান্না, হাসি, আনন্দ,ভালোলাগার সবটুকু জানে; ওরা আমার নির্দেশ ছাড়াই গিলে নিয়েছিলো তোকে ততটাই , যতটা না হলে আমি সম্পূর্ণতা পেতাপ না কোনোদিনই। সেদিন আমার আজন্ম লালিত অধিকৃত জন্মভূমি একটা আলতো ঠেলা দিয়ে তোকে তোর পরবর্তী জীবনপথ বেছে নেবার উৎসাহ জুগিয়েছিলো। তবু সেদিন সেই খামের আঁকিবুঁকি অক্ষর হতে পারেনি বলেই অপেক্ষার অবসান হল না।              
                                       
                                                   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন