সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

চা উইথ চানক্য কাকা ।। বিশ্বজিত চৌধুরী


চানক্য কাকা এবং সন্দীপ। চা'র দোকানে
চা উইথ চানক্য কাকা (রম্য গল্প)


ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার পরদিনই গ্রামের বাড়িতে ফিরে এল সন্দীপ।শহরে মেসে থেকে পড়াশুনা করে সে।তার খুব ইচ্ছা ছিল মনোবিজ্ঞানে ভর্তি হওয়ার।মানুষের সাইকোলজি সম্পর্কে জানার প্রচণ্ড আগ্রহ তার।কিন্তু মনোবিজ্ঞানে চান্স না পাওয়ায়, সে পড়ছে ইতিহাসে।তবে ইতিহাসে পড়লেও, মনোবিজ্ঞানের প্রতি তার আকর্ষণ একটুও কমেনি।অনেক কষ্ট করে সে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের একটি বই সংগ্রহ করেছে, যদিও বইটির একটি পাতাও তার পড়া হয়নি।এই মুহুর্তে তার ইচ্ছা, পাগলদের পাগল থাকাকালীন সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে জানার।আর তাই পরীক্ষা শেষ হবার পরপরই তাড়াহুড়া করে গ্রামে ফিরে এসেছে সে।তার কারণ, সে তার অবসর সময়ের কিছু অংশ কাটাতে চায় তার গ্রামের চানক্য কাকার সাথে।

চানক্য রায় অমিত প্রতিভাধর একজন ব্যাক্তি।ছাত্রজীবনে পরীক্ষার ফলাফলে মেধা তালিকায় সবসময় থাকতেন প্রথম দিকে।মেধার জোরে বেশ উচ্চ পদে চাকুরিও পেয়েছিলেন।তবে সহকর্মীদের সাথে তার কী যেন একটা বিষয় নিয়ে খুব ঝামেলা হয়েছিল।তারা একজোট হয়ে তাকে খুব পিটুনি দিয়েছিল।কয়েকজন নাকি খুব জোরে তার মাথায় বেশ কয়েকবার আঘাত করেছিল।
তারপর থেকেই অতি গরমে আর অতি শীতে চানক্য রায়ের মাথায় সমস্যা হয়।এমনকি বছরের কোন সময়ে তার মাথা ভাল থাকে আর কোন সময়ে  খারাপ থাকে তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না।তবে সন্দীপ খোঁজ নিয়ে জেনেছে, এই মুহুর্তে চানক্য রায় বেশ সুস্থ আছেন।চানক্য রায়ের সাথে সময় কাটানোর এখনই মোক্ষম সময়।

সেদিন ছিল ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ।আগে যতবার সে বাড়ি এসেছে, বাড়িতে পা ফেলতে না ফেলতেই, মা ও বাবাকে জড়িয়ে ধরে নানান গল্পে সে মেতে উঠেছে।একমাত্র সন্তান হওয়ায় মা-বাবার কাছে সে খুব আদরের।তবে এবার বাড়ি ফিরে সন্দীপ কারও সাথে তেমন কোনো কথা বলল না।ভেতরে ভেতরে সে খুব উত্তেজিত।দুপুরের খাবার সেরে, বিকালবেলা সে গেল চানক্য রায়ের বাড়িতে।
চানক্য রায়ের বাড়িতে তার সাথে শুধু একজন কাজের লোক থাকে।
সন্দীপ দরজায় নক করলে, কাজের লোকটি দরজা খুলে দিল।
সন্দীপ বহুবার এ বাড়ির পাশ দিয়ে যাতায়াত করলেও এর আগে কখনও এই বাড়িতে ঢোকেনি।বাইরে থেকে বাড়িটিকে অনেক সরু ও ছোট মনে হলেও ভেতরে ঢুকে সন্দীপ দেখল বাড়ির ভেতরটা বেশ প্রশস্ত।বাড়িতে আধুনিকতার প্রায় সব ছোঁয়াই আছে।
ড্রয়িং রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর, চানক্য রায়ের দেখা পেল সন্দীপ।

চানক্য রায় ঘরে ঢুকে সন্দীপের দিকে তাকালেন, তবে তাকে চিনতে পারলেন না।
সন্দীপ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, নমস্কার কাকু।আমি সন্দীপ।গগন সেনের ছেলে।আপনার কথা ছোটবেলা থেকে অনেক শুনেছি কিন্তু আপনার সাথে সামনাসামনি কোনো আলাপ হয়নি।তাই ভাবলাম, যাই একটু কাকুর সাথে আলাপ করে আসি।
-তুমি গগনদার ছেলে? এত বড়  হয়ে গেছ তুমি! কীসে পড়াশুনা কর তুমি?
-কাকু, গতকাল আমার অনার্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।আমি ইতিহাসে পড়ি।
-বাহ, তাই নাকি! ইতিহাস তো আমার খুব প্রিয় বিষয়।শশাঙ্ক, গোপাল, ধর্মপাল থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্য, জুলিয়াস  সিজার এরা সকলেই আমার খুব প্রিয়।সত্যি কথা বলতে কি তোমার মত একজন ইয়ং লার্নারের সাথে চা খেতে খেতে ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আমার বেশ ভালই লাগবে।আজ তোমাকে আমি নিজহাতে তৈরি করে স্পেশাল চা খাওয়াব।তুমি একটু অপেক্ষা কর।
চানক্য রায় পাশের ঘরে চা তৈরি করতে গেলেন।ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেল সন্দীপ।সে কাজ করতে চায় চানক্য রায়ের মনস্তত্ত্ব নিয়ে, অথচ তাকে আলোচনা করতে হবে ইতিহাস নিয়ে।ইতিহাসে পড়লেও, সন্দীপের কাছে ইতিহাস বড়ই বিরক্তিকর একটি বিষয়।

দুই হাতে বড় দুটি কাপে চা নিয়ে চানক্য রায় ঘরে ঢুকে টেবিলের ওপরে এক কাপ রেখে,  সন্দীপকে তা নিতে ইশারা করলেন।তারপর সহাস্যবদনে বললেন, মৌলভীবাজারের সর্বোৎকৃষ্ট চাপাতি, সাথে দুটি লবঙ্গ, তিনটি বাসক পাতা ও চার ইঞ্চি পরিমান যষ্টিমধু।খেয়ে দেখ, একদম অমৃত।তবে চা খাওয়ার পূর্বে আমাকে একটি প্রশ্নের জবাব দাও তো।বল তো ভুটানের প্রথম রাজার নাম কী? এবং তিনি কোন ভয়ংকর জিনিস দিয়ে চা তৈরি করে খেতেন?
ভারী অপ্রস্তুত হয়ে গেল সন্দীপ।সে ভুটানের বর্তমান রাজারই নাম জানে না, প্রথম রাজা তো দূরের কথা।চায়ে চুমুক না দিয়েই সে বলে ফেলল, আসলে কাকু, আমি যদিও ইতিহাসে পড়ছি, তবে ইতিহাসে আমার কোনো আগ্রহ নেই।আমার আগ্রহ আসলে সাইকোলজিতে।আপনাকে সত্য কথাই বলি।আমি জানি, আপনি নাকি মাঝে মাঝে অপ্রকৃতস্থ থাকেন।আর তাই আমি এসেছি আসলে, পাগল থাকাকালীন আপনার অনুভূতি কেমন, তা জানতে।
চানক্য রায় চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিতে যাচ্ছিলেন।কিন্তু সন্দীপের কথা শেষ হতে না হতেই তার হাত থেকে কাপটি মাটিতে পড়ে সশব্দে ভেঙ্গে গেল।তার মুখ ছোট হয়ে এল।মুখে পড়ল একরাশ কাল মেঘের ছায়া।
নিজেকে সামলে নিয়ে চানক্য রায় বললেন, তুমি কি এ বিষয়ে জানার জন্যই আমার বাড়িতে এসেছে?

সন্দীপ বলল, হ্যা, শুধু এ কারণেই এসেছি।আপনি কিছু মনে করেননি তো?

চানক্য রায় স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সন্দীপের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।সন্দীপ চায়ের কাপে চুমুক দেবে, ঠিক এমন সময় চানক্য রায় তার হাত থেকে চায়ের কাপটি কেড়ে নিলেন।তাকে বললেন, সাইকোলজি নিয়ে আলোচনার জন্য এ চা নয়।সাইকোলজি নিয়ে আলোচনার জন্য তোমাকে আমি অন্যরকম চা খাওয়াব।সেই চা প্রকৃতই এক্সট্রা অরডিনারি।

চানক্য রায় পাশের ঘরে চলে গেলেন।

সন্দীপ সোফায় বসে ঘরের চারদিক লক্ষ্য করতে লাগল।ঘরটির চারদিকের দেয়ালে শুধু একটি দেয়াল ঘড়ি ও একটি ক্যালেন্ডার ছাড়া আর কিছু নেই।ঘড়িতে সাড়ে ছয়টা বাজে।ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের পাতায় একটি বিশাল পেঁচার ছবি আছে।সোফার সাথে লাগোয়া বক্স খাটের ওপরে একটি চিরুনি পড়ে আছে।সন্দীপ চিরুনিটা  হাতে নিয়ে, সেটা দিয়ে তার এক মাসের জমানো দাঁড়ি আঁচড়াতে লাগল।

এমন সময় চানক্য রায় দুই হাতে দুই কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকে এক কাপ চা সন্দীপের হাতে দিয়ে বললেন, খাও।

সন্দীপ কয়েকবার চুমুক দেবার পরে, চানক্য রায় বললেন, এবার এক থেকে একশ পর্যন্ত গোনো।

সন্দীপ অবাক হয়ে গুনতে লাগল, এক, দুই, তিন...

সে বাষট্টি পর্যন্ত গুনতে পারল। তারপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ল।
চোখ মেলে তাকাল সন্দীপ।প্রথমে বুঝতে পারল না, সে কোথায় আছে।মাথার ওপরে ফ্যান ঘুরছে ধীরে ধীরে।মাথাটা বেশ ভারী মনে হচ্ছে তার।সারা শরীরে ব্যথা।সন্দীপের মনে হল, সে বোধহয় দীর্ঘদিন পরে ঘুম থেকে উঠল।দেয়ালে ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার দেখে বুঝতে পারল, সে শুয়ে আছে চানক্য রায়ের ড্রয়িং রুমের বক্স খাটে।ঘড়িতে  বাজে সোয়া পাঁচটা।সে মনে করতে পারল না, সেদিন ছিল কী বার।বারের নাম মনে করার জন্য সে ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাল।ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেল।অবাক হয়ে সে লক্ষ্য করল ক্যালেন্ডারটিতে সেই প্যাঁচার ছবিটি আর নেই, তার বদলে আছে একটি খেঁক শিয়ালের ছবি।।আরও অবাক করা হল, সে সময়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় ছিল মে ও জুন মাস।সন্দীপের গালে বোধহয় একটি মশা কামড়িয়েছিল।চুলকানোর জন্য গালে হাত দিতেই সে লক্ষ্য করল, তার গালের বড় দাঁড়িগুলো আর নেই।গাল একদম পরিষ্কার।গায়ে শার্ট নেই।একটি স্যান্ডো গেঞ্জি আছে, তবে সে সাধারণত যেমন স্যান্ডো গেঞ্জিটি তেমন নয়, এটি অনেক বড় ও ঢিলেঢালা।প্যান্টটিও অন্যরকম।কিছু বুঝতে না পেরে, সন্দীপ বিছানায় উঠে বসল।

সন্দীপ বিছানায় উঠে বসতেই, চানক্য রায়ের বাড়ির কাজের লোক ঘরে ঢুকল।সন্দীপকে বসে থাকা দেখে সে চিৎকার করে বলল, স্যার, এ ঘরে আসুন, বাবু উঠে গেছেন।হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন চানক্য রায়।সন্দীপের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তোমার নাম কী?
সন্দীপ অবাক হয়ে উত্তর দিল, কেন সন্দীপ সেন!
-বাবার নাম?
-গগন সেন।
-তোমার বাড়ি কোথায়?
-জামশেদপুর।
 চানক্য রায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, যাক, তোমার অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে তাহলে!
-কেন, আমার কী হয়েছিল?
-শোন তাহলে, আজ থেকে প্রায় মাস তিনেক আগে তুমি প্রথম আমার বাড়িতে এসেছিলে আমার সাথে গল্প গুজব করতে।আমি তোমাকে এক কাপ স্পেশাল চা খেতে দিয়েছিলাম।খুব অসাধারণ চা ছিল সেটা।কিন্তু অত ভাল চা বোধহয় তোমার সহ্য হয়নি।তুমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে।তারপর থেকেই তুমি অসুস্থ।শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে।যেহেতু দায়ভারটা আমারই, তাই তোমাকে আমি হাজার হাজার টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখাচ্ছি।তুমি এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছ।এতদিন তো নিজের নামই বলতে পারনি।আজ বেশ তোমার নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নাম বলতে পারলে।তোমায় অভিনন্দন।

সন্দীপের মাথায় কিছু কাজ করছিল না।সে অনেকক্ষণ ধরে অনেক কিছু মনে করার চেষ্টা করল, পারল না।

চানক্য রায়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে সন্দীপ জিজ্ঞেস করল, আমার বাবা মা আমার খোঁজ করে নি?
-তুমি তোমার মা-বাবার একমাত্র সন্তান।তারা তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসেন।তোমার বাবা তোমার এ অবস্থা সহ্য করতে পারেননি।তোমাকে দেখে হার্ট এটাকে মারা গেছেন।

বাবার মৃত্যুর কথা শুনে সন্দীপ বেশ কিছুক্ষণ মুখে হাত দিয়ে চুপ করে থাকল।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল।তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার মা কোথায়?
-তোমার মা তোমার দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিয়ে তীর্থবাসী হয়েছিলেন।তবে খবর পেয়েছি, তিনি নাকি গতকাল রাতে বাড়ি ফিরেছেন।আজ হয়তো তোমাকে দেখতে আসতে পারে।  
-মা বাড়ি এসেছে, তাহলে আমিই গিয়ে মায়ের সাথে
দেখা করি।
-আহা, তুমি যাবে কী করে, তুমি তো অনেক অসুস্থ!
-না না আমি যেতে পারব।
একথা বলে সন্দীপ দরজার দিকে যেতে উদ্যত হল।
চানক্য রায় তার হাত ধরে বললেন, না, তুমি পারবে না।
সন্দীপ হেঁচকা টানে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
চানক্য রায় তাকে ধরতে গেলে, সে দৌড় দিল।
চানক্য রায় চিৎকার করে বলল, এই নরহরি, হা করে দেখছ কী, ওকে ধর।
চানক্য রায়ের চিৎকার শুনে  সন্দীপ চানক্য রায়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণপণে দৌড় দিল।

রাস্তার লোকজন দেখল, সন্দীপ ঢিলেঢালা গেঞ্জি ও ঢিলেঢালা প্যান্ট পরে উদ্ভ্রান্তের মত করে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছে আর মুখে বলছে, বাবা, তুমি কোথায় চলে গেলে বাবা, তুমি কোথায় চলে গেলে?
রাস্তার পাশে একটি মাঠে কিছু ছেলেপেলে ফুটবল খেলছিল, তারা সন্দীপের দৌড় দেখে উৎসাহি হয়ে খেলা ফেলে তার পিছন পিছন দৌড়াতে লাগল।সন্দীপ বাড়িতে এসে দেখল, তার মা কল পাম্প করছে।
সন্দীপ দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ও মা, মা, বাবা আমাদের ফেলে কোথায় চলে গেল, মা?
সন্দীপকে কিছু একটা বলতে যাবে, এমন সময় তার মা দেখল, বাড়ির মাঝে হুড়মুড় করে অনেক ছেলেপেলে ঢুকে পড়েছে।
সন্দীপ কাঁদতে কাঁদতে মায়ের  মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, মা তোমার মাথায় সিঁদুর কেন? হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার হাতে শাঁখা কেন? তুমি তো এখন বিধবা!
সন্দীপের মা তার গালে ঠাস ঠাস করে দুটি চড় মেরে বললেন, কী বলছিস আবোল তাবোল?
ইতোমধ্যে বাড়িতে মুরুব্বী গোছের কিছু লোক ঢুকলেন।সন্দীপ তাদেরকে উপেক্ষা করে বলল, কেন, আমি যে কিছুদিন আগে পাগল হয়ে গেছিলাম, আর আমাকে দেখে বাবা হার্ট এটাক করে মারা গেল!
'পাগল' শব্দটি শুনে ছেলেগুলো হো হো করে হেসে উঠল।
ছেলেগুলোর হাসি সন্দীপের সহ্য হল না।সে হাতের মুঠি শক্ত করে তাদেরকে তাড়া করল।
এমন সময় তার কানে ভেসে এল, এসব কী হচ্ছে সন্দীপ?
সন্দীপ অবাক হয়ে দেখল, বারান্দায় তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
সন্দীপ একপা দুপা করে এগিয়ে এসে তার মুখের দিকে কয়েক সেকেণ্ড তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বলল, বাবা, তুমি মরনি? ইয়াহু, হৈ হৈ বাবা মরেনি, মরেনি।
সন্দীপের কাণ্ডকীর্তি দেখে ছেলে বৃদ্ধ সকলেই হেসে উঠল।
সন্দীপের মা সন্দীপের কাছে এসে বলল, তোর কী হয়েছে, বাবা? পরশুদিন বাড়ি এসে ভাত  খেয়ে বিকেলে সেই যে বোরোলি আর এলি না।ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিস।আজ হঠাৎ এসে আবার পাগলামি করছিস!কী হয়েছে বাবা তোর? তুই কি নেশাঠেশা করেছিস নাকি?
মায়ের কথা শুনে সন্দীপের মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগল।চারদিক কেমন জানি অন্ধকার হয়ে যেতে লাগল?
তার পাশেই একজন বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন।সন্দীপ  তাকে জড়িয়ে ধরল।এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে গেল।কিছুক্ষণ পরে সেই লোকটি সন্দীপের কানে কানে বলল, এখন তোমার কেমন অনুভূতি হচ্ছে, সন্দীপ?
কণ্ঠটা সন্দীপের খুব পরিচিত মনে হল।সে লোকটির মুখের দিকে তাকাল।
অবাক হয়ে সে লক্ষ্য করল, লোকটি আর কেউ নন, তিনি হলেন চানক্য রায়, তার চানক্য কাকু।তিনি তার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন